বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া/ ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া,/ একটি ধানের শীষের উপর/ একটি শিশির বিন্দু। প্রকৃতির রূপ-সৌন্দর্য্য কাছ থেকে উপভোগ করতে আমরা দূর-দূরান্তে ছুটে যাই। চেনা সব পর্যটন কেন্দ্রের দিকে তাকাতে গিয়ে বাড়ির কাছেই দৃষ্টির অবহেলায় পড়ে থাকে কত না রূপের পসার। এ রকমই একমুষ্টি রূপসুধা নিয়ে দর্শনার্থীদের আনন্দ দিচ্ছে টাঙ্গাইলের বাসুলিয়া।
জেলার বাসাইলে বাসুলিয়ার অপরূপ সৌন্দর্য নজর কেড়েছে এ অঞ্চলের মানুষের। বাসুলিয়ার মনোরম সৌন্দর্যে তৃপ্ত ঘুরতে আসা মানুষ। চারদিকে পানির বিস্তার। এর মধ্যে মাথা তুলে ডালপালা ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে হিজলগাছ। পানির সঙ্গে গাছের মিতালিতে এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশের তৈরি হয়েছে। গাছের ফাঁকে নৌকায় ঘুরে বেড়ানো আনন্দকে আরও বাড়িয়ে দেয়।
টাঙ্গাইল শহর থেকে বাসুলিয়ার দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। টাঙ্গাইল থেকে বাসাইল, তারপর সখীপুর সড়ক ধরে তিন কিলোমিটার পেরোলেই বাসুলিয়া। সখীপুর যাওয়ার সময় হাতের ডান দিকে পড়ে এক বিশাল বিল। নাম চাপড়া বিল। এর পূর্ব-দক্ষিণাংশে পানিতে দাঁড়িয়ে আছে হিজল গাছ। যেন পানিতে ভাসছে। সড়কে দাঁড়ালে দক্ষিণের জলরাশি ছুঁয়ে আসা মিষ্টি হাওয়া গা জুড়িয়ে দেয়।
প্রথম দিকে লোকজন এখানে দাঁড়িয়ে ঢাকার আশুলিয়া বাঁধের দক্ষিণে অনিন্দ্য সুন্দর জল-হাওয়ার সাথে তুলনা করত এই স্থানকে। হয়তো তখন কেউ চাপড়া বিলের কিনারাকে বাসুলিয়া বলে প্রকাশ করেছিল। সেই থেকে লোকমুখে স্থানটি বাসুলিয়া নামে পরিচিতি পায়।
পানিতে দাঁড়িয়ে থাকা হিজলগাছ নিয়ে আছে কিংবদন্তি। এসব গাচের জন্ম এখানে নয়। সেই প্রাচীন যুগে আসাম রাজ্য থেকে ভেসে আসে গাছগুলো। ইতোমধ্যে এই বাসুলিয়া জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে। শুধু এলাকার লোকজন নয় বিভিন্ন জেলা থেকেও দর্শনার্থীরা আসে এই বাসুলিয়ায়।
প্রতিদিন লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে এলাকাটি। মনোরম পরিবেশে কিছুটা সময় কাটাতে দর্শনার্থীরা ছুটে আসে পরিবার-পরিজন নিয়ে। নৌকায় উঠতে লাইন দিতে হয় দর্শনার্থীদের। ঈদ ও অন্যান্য পার্বণে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় জমে।
বাসুলিয়ায় বেড়াতে আসা সৌন্দর্যপিয়াসীরা জানান, বাড়ির পাশেই অপরূপ সৌন্দর্য। সময় পেলেই ছুটে আসেন তারা। মুক্ত বাতাস, অথৈ পানি আর হিজল গাছের সৌন্দর্য মাতিয়ে তোলে। নৌকায় চড়ে বেড়ানো, সন্ধ্যার প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য তাদের মুগ্ধ করে। সবচেয়ে বড় কথা স্বল্প সময় ও অর্থ ব্যয়ে সৌন্দর্যসুধা উপভোগ করতে পারছেন সবাই।
দর্শনার্থীদের খাবারের চাহিদা পূরণের জন্য বসে অস্থায়ী দোকান। এ ছাড়া স্থায়ীভাবে রয়েছে কয়েকটি ফাস্ট ফুডের দোকান। বাসুলিয়াকে আরও সৌন্দর্যম-িত করতে সড়কের বিভিন্ন স্থানে লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সড়ক ঘেঁষে আছে বেঞ্চ ও মঞ্চ।
যদিও বাসুলিয়ায় বেড়ানোতে নিরাপত্তা ভালো, তবে সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে এই এলাকা ছাড়তে দর্শনার্থীদের আহ্বান জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামছুন নাহার স্বপ্না। তিনি বলেন, ‘উপজেলায় কোনো দর্শনীয় স্থান না থাকায় বাসুলিয়াকেই বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে বেছে নিয়েছে লোকজন।
এখানে অনেক মানুষের সমাগম হয়। নিরাপত্তার স্বার্থে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে বাসুলিয়া এলাকা ছেড়ে যাওয়ার জন্য দর্শনার্থীদের প্রতি আহ্বান জানাই।’
বাসাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান বলেন, ঈদ উপলক্ষে দর্শনীয় স্থান বাসুলিয়ায় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পুলিশি টহল থাকে। এ ছাড়া প্রতিদিনই রাতে বাসুলিয়ায় পুলিশ টহল দেয় বলে জানান তিনি।
সূত্রঃ ঢাকাটাইমস