বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ একটি শিশুর ওজনের ১০ শতাংশের বেশি তার স্কুল ব্যাগের ওজন হবে না। এটা হাইকোর্টের আদেশ। এজন্য আইন বিধিমালা প্রনয়নের আদালতের নির্দেশনা আছে। কিন্তু তারপরও স্কুল ব্যাগের ওজন থেকে এখনো রেহাই পচ্ছে না শিশুরা।
বিশেষ করে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোর পরিস্থিতি ভয়াবহ। বই ও খাতাসহ ব্যাগের ওজন গড়ে ১২ কেজি।
ডয়চে ভেলের খবরে বলা হয়- হাইকোর্টের বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও আশিস রঞ্জন স্কুল ব্যাগ নিয়ে এই রায় দেন ২০১৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর। তারা তখন সরাসরি শিশুর ওজনের ১০ শতাংশের বেশি স্কুল ব্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। তারা ছয় মাসের মধ্যে এ নিয়ে আইন ও বিধি প্রনয়নের নির্দেশ দেন আইন সচিব, শিক্ষা সচিব, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও মানবাধিকার কমিশনকে। আর স্কুলগুলোকে ব্যাগের ওজন তদারকি করতে বলা হয়। কিন্তু দুই বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও এনিয়ে কোনো আইন ও বিধি প্রনয়ন করা হয়নি। কমেনি স্কুল ব্যাগের ওজন।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস এম মাসুদ হোসেন দোলন এ নিয়ে রিট করেছিলেন ২০১৫ সালে।
তিনি বলেন, ‘আদালতে শুনানির সময় আমরা দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের মতামত উপস্থাপন করি। আর তাতে দেখা যায় একটি শিশুর ওজনের ১০ ভাগের বেশি স্কুল ব্যাগের ওজন হতে পারবে না। যদি বেশি হয় তাহলে শিশুর শরীরের হাড় বেঁকে যেতে পারে। আর এটা চিকৎসায়ও ভালো না হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।
আমরা সাধারণ পর্যবেক্ষণে দেখেছি বাংলাদেশে শিশুদের স্কুল ব্যাগের ওজন তার শরীরের ওজনের শতকরা ৩০ ভাগেরও বেশি। তার শরীরের ওজনের এক তৃতীয়াংশ তার ব্যাগের ওজন। সাধারণভাবে ১০-১২ কেজি।’
হাইকোর্টের নির্দেশ মানতে আইনগতভাবে সবাই বাধ্য। না মানলে শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়। কিন্তু তা মানা হয়নি৷ ফলে আদেশটি বাস্তবায়ন করতে ২০১৬ সালের দেয়া আদেশের ছয় মাস পরই হাইকোর্টে আবার আদালত অবমাননার মামলা করা হয়।
কিন্তু ওই বিচারকেরা অবসরে চলে যাওয়ায় এখনো অদালত অবমাননার মামলার শুনানি হয়নি বলে জানান আইনজীবী দোলন। তিনি বলেন, ‘যদি আইন করা হতো তাহলে নির্ধারিত ওজনের বেশি স্কুল ব্যাাগের ওজন হলে শাস্তির আওতায় আনা যেত’৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মজিবুর রহমান বলেন, ‘বইয়ের বোঝায় শিশুরা স্থায়ীভাবে কুঁজো হয়ে যাওয়া ছাড়াও তাদের সুকুমার বৃত্তির বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। এখানে যারা শিক্ষা নিয়ে পরিকল্পণা করেন তারা সাধারণভাবে মনে করেন যত বেশি বই হবে তত বেশি শিখবে। কিন্তু এটা ঠিক নয়৷ একটি বিষয় দিয়েই নৈতিকতাসহ আরো অনেক বিষয় শিক্ষা দেয়া যায়। যেমন গণিতের মাধ্যমেও নৈতিক শিক্ষা হতে পারে। গোয়ালার দুধে পানি মেশানোর গণিত শিক্ষা না দিয়ে নারী পুরুষ সম-অধিকারের গণিত দিয়ে নৈতিক শিক্ষা দেয়া যায়৷ আর খেলার মধ্য দিয়েও বই ব্যবহার না করে শিশুদের অনেক কিছু শিখানো যায়’।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ন চন্দ্র সাহা বলেন, ‘নতুন শিক্ষা আইন নিয়ে মন্ত্রণালয় কাজ করছে। সেই আইনে শিশুর ওজনের ১০ শাতাংশের বেশি বইসহ স্কুল ব্যাগের ওজন না হওয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তবে আমরা এরইমধ্যে বইয়ের সংখ্যা কামনোর উদ্যোগ নিয়েছি’।
সরকার ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শিশুদের বইয়ের বোঝা কমানো নিয়ে কাজ হচ্ছে, তবে সেটা কার্যকর হতে ২০২১ সাল পর্যন্ত লেগে যাবে। ওই বছর থেকে প্রাথমিকে বাংলা, ইংরেজি ও গণিত এই তিনটি বিষয়ে তিনটি বই থাকবে। সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে অ্যাকটিভ লার্নিং। আর ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও কলা এই বিভাগগুলো তুলে দিয়ে সবার জন্য ১০টি বই এবং একই বিভাগ প্রচলনের কাজও চলছে। কিন্তু সেটা প্রস্তাব হিসেবেই আছে। ২০২১ সালে এটা শুরু হলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত কার্যকর হতে ২০২৫ সাল পর্যন্ত লেগে যাবে।