প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই (যারা ক্ষমতায় যেতে চায়) দেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার জন্য একটি কার্যকর অর্থনৈতিক নীতি থাকা উচিত এবং দেশের আমলাতন্ত্রকেও সেভাবে লক্ষ্য অর্জনে আন্তরিকতার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তখনই দেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হব যখন আপনারা (সরকারি কর্মচারীরা) জনগণের সেবক হিসেবে ঠিকভাবে কাজ করবেন।’
তিনি বলেন, ‘সরকার হিসেবে আমরা মনে করি যে, আমাদের একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকবে, দেশটাকে আমরা কিভাবে আরো উন্নত সমৃদ্ধ করতে পারি।’
দেশকে বর্তমান বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের কর্মফলই আমাদেরকে মর্যাদার আসনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।’
বৃহস্পতিবার সব মন্ত্রণালয় বিভাগ ও দপ্তরের সচিবদের সঙ্গে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি ২০১৭-১৮ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি হচ্ছে সিভিল প্রশাসনের একটি অভ্যন্তরীণ কর্মকৌশল। এটি দেশের জনগণের কল্যাণে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে নিয়ে যেতে সরকারি কর্মচারীদের জন্য একটি দাপ্তরিক দায়বদ্ধতার স্মারক। এটির মাধ্যমে জনগণের কাছে সরকারের স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়।
‘আমাদের জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয়,’ কারণ সরকার হিসেবে যোগ করেন তিনি।
সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সরকারি সম্পদের সদ্ব্যবহার এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের সঙ্গে এই নিয়ে চতুর্থবারের মত বার্ষিক কর্মসম্পাদক চুক্তি স্বাক্ষর করে সরকারের মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে মন্ত্রী পরিষদ সচিব এবং মন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে ৫১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবরা এই চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
বাজেট পাস হবার পরপরই এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এর ফলে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আরো বেশি সময় হাতে পাওয়া যাবে।
তিনি এই বর্ষা মওসুমে উন্নয়ন প্রকল্পের সমস্ত পেপার ওয়ার্ক সম্পন্ন করে ফেলার জন্যও সরকারি কর্মচারীদের নির্দেশনা প্রদান করেন। যাতে বর্ষা শেষ হলেই মাঠ পর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া যায়।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, মন্ত্রী পরিষদ সচিব মো. শফিউল আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (নিরাপত্তা বিভাগ) ফরিদ উদ্দীন আহমেদ চৌধুরী এবং মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) এনএম জিয়াউল আলম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী পরিষদ সদস্য, সংসদ সদস্য, সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের প্রধান এবং জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের উন্নয়নের বড় লক্ষ্য আয় বৈষম্য দূর করা, ধনী ও গরিবের বৈষম্য দূর করা এবং উন্নয়নটা শুধু শহরে হবে না, উন্নয়নটা একবারে গ্রাম থেকে উঠে আসবে। গ্রামের সাধারণ মানুষ একেবারে মাঠ পর্যায়ের মানুষ সবরকম নাগরিক সুবিধা যাতে পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাটা মাথায় রেখেই তিনি সরকারি কর্মচারীদের দায়িত্ব পালনে আরো আন্তরিক হবার অনুরোধ জানান।
তিনি এ সম্পর্কে আরো বলেন, আমরা চাই, আমাদের প্রত্যেকটা নাগরিকের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা। সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের দায়িত্বগুলি যেন কার্যকর হয় তার ব্যবস্থা করবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারণ ’৯৬ সালের আগের চিত্রটা যদি দেখেন তাহলে দেখবেন তারপরে কিন্তু ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। আমরা আওয়ামী লীগই কিন্তু বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম। লক্ষ্য ছিল একটাই আরো বেশি কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা, সেজন্য বেসরকারি খাতকে আমরা আরো বেশি সুযোগ করে দিয়েছি। কিন্তু সরকারকেও এখানে থাকতে হবে। কারণ, কোনো ক্ষেত্রেই কোনো স্বেচ্ছাচারিতা হোক আমরা তা চাই না।
সংবিধানের ১৩ অনুচ্ছেদের উদ্বৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধানের ১৩ অনুচ্ছেদে স্পষ্ট বলা আছে সরকারি, বেসরকারি এবং কো-অপারেটিভ। কারণ, মাত্র ৫৪ হাজার বর্গমাইলের চেয়ে কিছু বেশি জায়গায় ১৬ কোটি মানুষের বাস। সেখানে কো-অপারেটিভের মাধমে চাষবাস করা, ফসল উৎপাদন করা এবং সেভাবে কার্যক্রম হাতে না নিলে কিন্তু আমরা খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি বা দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে পারব না। সেটাও বাস্তব। আর এই বাস্তবতার ভিত্তিতেই আমাদের সংবিধানে জাতির পিতা এটা দিয়ে গেছেন। সেভাবেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
জনগণের কাছে সরকারের দায়বদ্ধতার প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মনে রাখতে হবে আমরা সংসদ সদস্য হিসেবে যখন নির্বাচিত হয়ে আসি, আমাদেরও দায়বদ্ধতা থাকে সংসদের কাছে। আর সংসদ সদস্যদের ভোটেই পালামেন্টারি কমিটির নেতা নির্বাচিত হন। যে হন প্রধানমন্ত্রী। এখানে কেবিনেট সদস্যসহ সকলে সংদের কাছে দায়বদ্ধ। আর সংসদ সদসরা দায়বদ্ধ জনগণের কাছে।
তিনি বলেন, আমাদের সংবিধানের ৭ম অনুচ্ছেদে স্পষ্ট বলা আছে-প্রজাতন্ত্রের মালিক জনগণ। কাজেই প্রজাতন্ত্রের মালিক যেহেতু জনগণ সেই জনগণের কাছে আমরা দায়বদ্ধ এবং আমাদেরকে সেই জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন নির্বাচন হবে আমরা কিন্তু সেই জনগণের কাছেই যাব।
আওয়ামী লীগ সরকার এসব বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কিন্তু নির্বাচনী ইশতেহার ভুলে যাই না বরং আরো ভালো কি করা যায় সেটাই চিন্তা করি।
দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ অর্জন এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা প্রায় সাড়ে ৬ ভাগের ওপরে বাজেট বাড়াতে সক্ষম হয়েছি। বাংলাদেশ কখনও ৪ লক্ষ কোটি টাকার বাজেট দেবে এটা কখনো কেউ ভাবতেই পারেনি। এই সংখ্যাটা শুনলেই মাথা গরম হয়ে যাবার কথা যে, এত বড় বাজেট আমরা দিতে পারব কিভাবে। কিন্তু, আমরা এটা দিতে পেরেছি। এখন এটা আমাদের বাস্তবায়নের সময়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমরা সরকার হিসেবে কাজ করবো। কিন্তু এই সরকারি কাজগুলো বাস্তবায়ন করবে কারা? এটা একটা ধাপে ধাপে একদম তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছায়। সেখানে আমাদের অগ্রাধিকার কি, সেটাকে সুনির্দিষ্ট করা। আর সেটাকে বাস্তবায়নের জন্য করণীয় নির্ধারণ করতে হয় এবং এজন্য সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব বন্টনের প্রয়োজন পড়ে।
তিনি বলেন, আমাদের সংবিধানের ৩৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হচ্ছেন আপনারা সরকারি কর্মচারীরা। এখানে কিন্তু কর্মচারী বলা আছে। সেক্ষেত্রে আপনাদেরও দায়বদ্ধতা রয়েছে। দায়বদ্ধতা রয়েছে সংবিধানের কাছে দায়বদ্ধতা রয়েছে জনগণের কাছে। কারণ, জনগণ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যা কামাই করে সেটা দিয়েই আজকে সকলের বেতন-ভাতা, যা কিছু তা হচ্ছে। জনগণের শ্রমেরই এই ফসল।
তথ্যসূত্র : বাসস