ঢাকা , মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
বাম রাজনীতি থেকে ‘অগ্নিকন্যা’, নৌকায় উঠে ক্ষমতায়, আ. লীগের দুঃসময়ে প্রস্থান ১০০ রানের লিড হলেই চলবে দক্ষিণ আফ্রিকার লেবানন থেকে দেশে ফিরেছেন ৫৪ বাংলাদেশি মৃত্যুর পর মরদেহ কী হবে, বলে গেছেন মনি কিশোর দুর্নীতি দমাতে ডিজিটাইজেশনে গুরুত্ব প্রধান উপদেষ্টার হাসিনার পদত্যাগ ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাংবিধানিক বৈধতা ‘মীমাংসিত’ ইস্যু, নয়া বিতর্ক সৃষ্টি আর নয় : প্রেসিডেন্ট বঙ্গভবনের বিলাসিতা ছেড়ে নিজের পথ দেখুন : রাষ্ট্রপতিকে হাসনাত জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সম্পাদক সারজিস, প্রধান নির্বাহী স্নিগ্ধ শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র ইস্যুতে মতিউর রহমান চৌধুরীকে যা বলেছেন রাষ্ট্রপতি জামায়াত নিষিদ্ধের বিপক্ষে ছিল জাতীয় পার্টি, দাবি জিএম কাদেরের

বিএনপিতে চলছে রাজতন্ত্র, রাণী আর যুবরাজ দল চালায়: এম কে আনোয়ার

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ  বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার এলিফ্যান্ট রোডের বাড়ি থেকে আজকাল খুব একটা বের হন না। বাড়িতে কর্মীদেরও আনাগোনা নেই। বলা যায় অবসর জীবন যাপনই করছেন। দলের নেতারাও আজকাল তাঁর খোঁজ খবর নেন না। অথচ ক’দিন আগেও জেল খাটলেন। নেতারা তার খবরও নেননি তখন। আত্মীয় স্বজনরাও এটা ভালোভাবে নেয়নি। তারা অভিযোগ করছেন ‘বিএপির জন্য তো কত কিছুই করলেন, বেগম জিয়া তো আপনার খবরও নেয় না।’ উত্তরে হেসে বলেছেন ‘বিএনপিতে তো রাজতন্ত্র। রাণী আর যুবরাজ দল চালায়। আর বাকী সবাই প্রজা, কেউ কেউ ক্রীতদাস। আপনি কি- এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন আরো দার্শনিক ভাবে, বলেছেন ‘রাণী এবং যুবরাজকে যারা খাজনা দিতে পারে তারা প্রজা, আর যারা পারে না, তারা তো ক্রীতদাসই। আমিও ক্রীতদাস’।

এম কে আনোয়ার ডাকসাইটে আমলা ছিলেন, মন্ত্রী ছিলেন দু’দফায়। জানা গেছে, শারীরিক অসুস্থতায় সেভাবে চলাফেরা করতে না পারায় কোথাও যাচ্ছেন না এম কে আনোয়ার। এমনকি তিনি দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও অংশ নিতে পারছেন না।

জানা গেছে, ডাক্তারি পরীক্ষায় তার শরীরে সেভাবে মারাত্মক সমস্যা ধরা না পড়লেও শরীর ভীষণ দুর্বল। বেশির ভাগ সময় এলিফ্যান্ট রোডের নিজ বাসায় শুয়ে-বসে তার সময় কাটছে। নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর এম আব্দুল্লাহর তত্ত্বাবধানে নিয়মিত চিকিৎসা নেন।

৩৪ বছরের পেশাজীবনে যেমন সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন, তেমনি রাজনীতিতে যোগ দিয়ে অল্পদিনেই হয়ে ওঠেন দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। সজ্জন ও মেধাবী রাজনীতিবিদ হিসেবেও পরিচিত পান তিনি। পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তাকে সরব দেখা গেছে মাঠে-রাজপথে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার এখন অনেকটা ‘ঘরবন্দি’।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতাকে গত প্রায় দুই

বছর ধরে রাজনীতিতে দেখা যাচ্ছে না। নাশকতার মামলায় আটক হয়ে ছয় মাস কারাগারে থেকে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে মুক্তি পান তিনি। কিছুদিন পর চিকিৎসার জন্য চলে যান ভারতে। চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে আসার পরও তাকে আর তেমন দেখা যায়নি।

দলীয় কর্মসূচি তো দূরের কথা, সবশেষ গত ২১ মে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও তিনি যেতে পারেননি শারীরিক দুর্বলতার কারণে। এর মধ্যে কেবল দুই দিন তাকে দেখা গেছে বেরোতে। গত ১০ মে খালেদা জিয়ার ভিশন-৩০ ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন তিনি। এরপর নাশকতার এক মামলায় গত ১৫ মে ঢাকার সিএমএম কোর্টে হাজিরা দিতে যান এম কে আনোয়ার।

এম কে আনোয়ারের রাজনীতিতে আসাটা ছিল এক বিস্ময়। ৯০ এর ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচারী এরশাদের পতন হলো। তিন জোটের পক্ষ থেকে এরশাদের দোসরদের তালিকা প্রকাশিত হলো। তালিকায় নাম ছিল দুজন সচিবের। একজন প্রয়াত কেরামত আলী অন্যজন এম কে আনোয়ার। এরা দুজনই এরশাদের আস্থাভাজন সচিব ছিলেন। তিন জোটের ঘোষণায় বলা হয়েছিল ‘এরশাদের দোসরদের কেউ কোনো রাজনৈতিক দলে নেবে না, মনোনয়নও দেবে না।’

ডিসেম্বরের এক সকালে প্রধানমন্ত্রীর ৩২ নম্বরে ওই দুই এরশাদের দোসর আমলাকে নিয়ে এলেন তোফায়েল আহমেদ। আওয়ামী লীগ সভাপতি তখন প্রচ- ব্যস্ত। মনোনয়ন, নির্বাচনী ইশতেহার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বৈঠকের পর বৈঠক হচ্ছে। তোফায়েল আহমেদ শেখ হাসিনাকে বললেন, কেরামত আলী এবং এম কে আনোয়ার এসেছেন, তারা নমিনেশন চায়। আসন্ন নির্বাচনে বিজয় নিয়ে আওয়ামী লীগের কোনো সংশয় নেই। নির্বাচন যেন কেবল এক আনুষ্ঠানিকতা। শেখ হাসিনা একটু রেগেই গেলেন। তিনি ওই দুই আমলার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেও অস্বীকৃতি জানালেন। বললেন এরশাদের কোনো দোসরকে দলে নিয়ে আমি মানুষের কাছে ভোট চাইবো কীভাবে?

শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে ব্যর্থ হয়ে দুজনই চলে গেলেন, বেগম জিয়ার কাছে। দেখাতো পেলেনই, সঙ্গে দুজনই পেলেন বিএনপির টিকিট। নির্বাচনে অবিশ্বাস্য ভাবে জয়ী হলো বিএনপি। জামায়াতের সমর্থনে সরকারও গঠন করল। বেগম জিয়ার মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় পেলেন, এরশাদের ঘনিষ্ঠ দুই আমলা।

কুমিল্লার হোমনায় এম কে আনোয়ার আগে থেকেই জনপ্রিয় ছিলেন। সচিব থাকার ফায়দা নিয়ে এলাকায় রাস্তাঘাট বিদ্যুৎ করেছিলেন। আমলা থেকে মন্ত্রী হলেন কোনো বিরতি ছাড়াই। মন্ত্রণালয়ের কাজের অভিজ্ঞতা থাকায় মন্ত্রী হিসেবেও দক্ষতার পরিচয় দেন। অনভিজ্ঞ মন্ত্রিসভায় তিনি হয়ে ওঠেন গুরুত্বপূর্ণ। ৯৬ তে বিএনপি ক্ষমতাচ্যুত হয়। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে জয়ী হয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু এম কে আনোয়ার ঠিকই এমপি হন। এসময় দলেও তিনি নেতৃত্বে আসেন। মাঠের কর্মীদের কাছে জনপ্রিয় না হলেও, দক্ষ আমলা হবার সুবাধে প্রশাসনিক কাজে বেশ দক্ষতারই পরিচয় দিয়েছিলেন।

১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে সরকারি চাকুরে হিসেবে পেশাজীবন শুরু হয় এম কে আনোয়ারের। ১৯৯০ সাল পর‌্যন্ত তার ৩৪ বছরের পেশাগত জীবনে তিনি ফরিদপুর ও ঢাকার ডেপুটি কমিশনার, জুটমিল কর্পোরেশনের সভাপতি, টেক্সটাইল মিল কর্পোরেশনের সভাপতি, বাংলাদেশ বিমানের সভাপতি এবং প্রশাসনে বিভিন্ন উচ্চপদে দায়িত্ব পালন করেন। প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদ মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন তিনি। ১৯৭২ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত তিনি প্রশাসনে বিভিন্ন উচ্চপদে পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। সিএসপি কর্মকর্ত এম কে আনোয়ার ১৯৭১ সালে ঢাকা জেলার প্রশাসক ছিলেন।

১৯৯১ সালের নির্বাচনের আগে এম কে আনোয়ার বিএনপিতে যোগ দেন। ওই বছর অনুষ্ঠিত পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এরপর ২০০৮ সাল পর‌্যন্ত টানা পাঁচবার তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন।

তিনি বিএনপি সরকারের বাণিজ্য, নৌ-পরিবহন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।-পূর্বপশ্চিম

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

বাম রাজনীতি থেকে ‘অগ্নিকন্যা’, নৌকায় উঠে ক্ষমতায়, আ. লীগের দুঃসময়ে প্রস্থান

বিএনপিতে চলছে রাজতন্ত্র, রাণী আর যুবরাজ দল চালায়: এম কে আনোয়ার

আপডেট টাইম : ০৫:৩০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ জুলাই ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ  বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার এলিফ্যান্ট রোডের বাড়ি থেকে আজকাল খুব একটা বের হন না। বাড়িতে কর্মীদেরও আনাগোনা নেই। বলা যায় অবসর জীবন যাপনই করছেন। দলের নেতারাও আজকাল তাঁর খোঁজ খবর নেন না। অথচ ক’দিন আগেও জেল খাটলেন। নেতারা তার খবরও নেননি তখন। আত্মীয় স্বজনরাও এটা ভালোভাবে নেয়নি। তারা অভিযোগ করছেন ‘বিএপির জন্য তো কত কিছুই করলেন, বেগম জিয়া তো আপনার খবরও নেয় না।’ উত্তরে হেসে বলেছেন ‘বিএনপিতে তো রাজতন্ত্র। রাণী আর যুবরাজ দল চালায়। আর বাকী সবাই প্রজা, কেউ কেউ ক্রীতদাস। আপনি কি- এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন আরো দার্শনিক ভাবে, বলেছেন ‘রাণী এবং যুবরাজকে যারা খাজনা দিতে পারে তারা প্রজা, আর যারা পারে না, তারা তো ক্রীতদাসই। আমিও ক্রীতদাস’।

এম কে আনোয়ার ডাকসাইটে আমলা ছিলেন, মন্ত্রী ছিলেন দু’দফায়। জানা গেছে, শারীরিক অসুস্থতায় সেভাবে চলাফেরা করতে না পারায় কোথাও যাচ্ছেন না এম কে আনোয়ার। এমনকি তিনি দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও অংশ নিতে পারছেন না।

জানা গেছে, ডাক্তারি পরীক্ষায় তার শরীরে সেভাবে মারাত্মক সমস্যা ধরা না পড়লেও শরীর ভীষণ দুর্বল। বেশির ভাগ সময় এলিফ্যান্ট রোডের নিজ বাসায় শুয়ে-বসে তার সময় কাটছে। নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর এম আব্দুল্লাহর তত্ত্বাবধানে নিয়মিত চিকিৎসা নেন।

৩৪ বছরের পেশাজীবনে যেমন সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন, তেমনি রাজনীতিতে যোগ দিয়ে অল্পদিনেই হয়ে ওঠেন দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। সজ্জন ও মেধাবী রাজনীতিবিদ হিসেবেও পরিচিত পান তিনি। পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তাকে সরব দেখা গেছে মাঠে-রাজপথে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার এখন অনেকটা ‘ঘরবন্দি’।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতাকে গত প্রায় দুই

বছর ধরে রাজনীতিতে দেখা যাচ্ছে না। নাশকতার মামলায় আটক হয়ে ছয় মাস কারাগারে থেকে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে মুক্তি পান তিনি। কিছুদিন পর চিকিৎসার জন্য চলে যান ভারতে। চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে আসার পরও তাকে আর তেমন দেখা যায়নি।

দলীয় কর্মসূচি তো দূরের কথা, সবশেষ গত ২১ মে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও তিনি যেতে পারেননি শারীরিক দুর্বলতার কারণে। এর মধ্যে কেবল দুই দিন তাকে দেখা গেছে বেরোতে। গত ১০ মে খালেদা জিয়ার ভিশন-৩০ ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন তিনি। এরপর নাশকতার এক মামলায় গত ১৫ মে ঢাকার সিএমএম কোর্টে হাজিরা দিতে যান এম কে আনোয়ার।

এম কে আনোয়ারের রাজনীতিতে আসাটা ছিল এক বিস্ময়। ৯০ এর ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচারী এরশাদের পতন হলো। তিন জোটের পক্ষ থেকে এরশাদের দোসরদের তালিকা প্রকাশিত হলো। তালিকায় নাম ছিল দুজন সচিবের। একজন প্রয়াত কেরামত আলী অন্যজন এম কে আনোয়ার। এরা দুজনই এরশাদের আস্থাভাজন সচিব ছিলেন। তিন জোটের ঘোষণায় বলা হয়েছিল ‘এরশাদের দোসরদের কেউ কোনো রাজনৈতিক দলে নেবে না, মনোনয়নও দেবে না।’

ডিসেম্বরের এক সকালে প্রধানমন্ত্রীর ৩২ নম্বরে ওই দুই এরশাদের দোসর আমলাকে নিয়ে এলেন তোফায়েল আহমেদ। আওয়ামী লীগ সভাপতি তখন প্রচ- ব্যস্ত। মনোনয়ন, নির্বাচনী ইশতেহার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বৈঠকের পর বৈঠক হচ্ছে। তোফায়েল আহমেদ শেখ হাসিনাকে বললেন, কেরামত আলী এবং এম কে আনোয়ার এসেছেন, তারা নমিনেশন চায়। আসন্ন নির্বাচনে বিজয় নিয়ে আওয়ামী লীগের কোনো সংশয় নেই। নির্বাচন যেন কেবল এক আনুষ্ঠানিকতা। শেখ হাসিনা একটু রেগেই গেলেন। তিনি ওই দুই আমলার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেও অস্বীকৃতি জানালেন। বললেন এরশাদের কোনো দোসরকে দলে নিয়ে আমি মানুষের কাছে ভোট চাইবো কীভাবে?

শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতে ব্যর্থ হয়ে দুজনই চলে গেলেন, বেগম জিয়ার কাছে। দেখাতো পেলেনই, সঙ্গে দুজনই পেলেন বিএনপির টিকিট। নির্বাচনে অবিশ্বাস্য ভাবে জয়ী হলো বিএনপি। জামায়াতের সমর্থনে সরকারও গঠন করল। বেগম জিয়ার মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় পেলেন, এরশাদের ঘনিষ্ঠ দুই আমলা।

কুমিল্লার হোমনায় এম কে আনোয়ার আগে থেকেই জনপ্রিয় ছিলেন। সচিব থাকার ফায়দা নিয়ে এলাকায় রাস্তাঘাট বিদ্যুৎ করেছিলেন। আমলা থেকে মন্ত্রী হলেন কোনো বিরতি ছাড়াই। মন্ত্রণালয়ের কাজের অভিজ্ঞতা থাকায় মন্ত্রী হিসেবেও দক্ষতার পরিচয় দেন। অনভিজ্ঞ মন্ত্রিসভায় তিনি হয়ে ওঠেন গুরুত্বপূর্ণ। ৯৬ তে বিএনপি ক্ষমতাচ্যুত হয়। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে জয়ী হয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু এম কে আনোয়ার ঠিকই এমপি হন। এসময় দলেও তিনি নেতৃত্বে আসেন। মাঠের কর্মীদের কাছে জনপ্রিয় না হলেও, দক্ষ আমলা হবার সুবাধে প্রশাসনিক কাজে বেশ দক্ষতারই পরিচয় দিয়েছিলেন।

১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে সরকারি চাকুরে হিসেবে পেশাজীবন শুরু হয় এম কে আনোয়ারের। ১৯৯০ সাল পর‌্যন্ত তার ৩৪ বছরের পেশাগত জীবনে তিনি ফরিদপুর ও ঢাকার ডেপুটি কমিশনার, জুটমিল কর্পোরেশনের সভাপতি, টেক্সটাইল মিল কর্পোরেশনের সভাপতি, বাংলাদেশ বিমানের সভাপতি এবং প্রশাসনে বিভিন্ন উচ্চপদে দায়িত্ব পালন করেন। প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদ মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন তিনি। ১৯৭২ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত তিনি প্রশাসনে বিভিন্ন উচ্চপদে পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। সিএসপি কর্মকর্ত এম কে আনোয়ার ১৯৭১ সালে ঢাকা জেলার প্রশাসক ছিলেন।

১৯৯১ সালের নির্বাচনের আগে এম কে আনোয়ার বিএনপিতে যোগ দেন। ওই বছর অনুষ্ঠিত পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এরপর ২০০৮ সাল পর‌্যন্ত টানা পাঁচবার তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন।

তিনি বিএনপি সরকারের বাণিজ্য, নৌ-পরিবহন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।-পূর্বপশ্চিম