ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের প্রকল্প পুনর্বিবেচনা করা হবে : প্রধান উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ আমলে রাজনৈতিক উদ্দেশে নেওয়া প্রকল্প পুনর্বিবেচনা করা হবে। এখন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বেশি নজর দিতে হবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রথম অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তিনি এ কথা বলেন। গতকাল প্রথমবারের মতো তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এখন থেকে প্রকল্পের সব তথ্য ওপেন থাকবে। মেগা প্রকল্প না নিয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ ছোট প্রকল্প নেওয়ার বিষয়ে উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যরা এক হয়েছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া প্রকল্পে চিন্তা দরকার। মেগা প্রকল্পও বাদ দিতে হবে। নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে কাজ করতে হবে। প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নিয়ে কাজ করতে হবে। প্রকল্পের সবকিছু ওপেন থাকবে। শুধু পিডি জানবে তা নয়, সবাই জানবে। সামনে বড় প্রকল্প নয়, জনগুরুত্বপূর্ণ ছোট প্রকল্প নেওয়া হবে।
এদিকে একনেক সভাশেষে পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, দাতাগোষ্ঠী হাত খুলে টাকা দিতে চাচ্ছে। ইউএসএইড বলছে, তোমরা প্রকল্প তৈরি করো আমরা টাকা দেবো। যেসব প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল কিন্তু টাকা নেওয়া হয়নি এসব টাকা বাজেট সহায়তা দিতে চায় বিশ্বব্যাংক। তিনি বলেন, সব দাতাগোষ্ঠী আমাদের নতুন চাহিদা জানতে চেয়েছে। কিছু প্রকল্পে ত্বরান্বিত হবে যা বৈদেশিক সাহায্যের প্রকল্প। অনেক প্রকল্প হিমাগারে আছে, মৃত প্রকল্পে ছাড় করে দেবে বিশ্বব্যাাংক। এছাড়া দেশে গ্যাসের সম্ভাবনা থাকার পরও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি ভ্রান্ত নীতি। একই সঙ্গে আপাতত পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা স্থগিত থাকবে। ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা স্থগিত থাকবে। কারণ বিগত সরকার কখনোই এই পরিকল্পনা অনুযায়ী বাজেট প্রণয়ন করেনি। কাজেই পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এই মুহূর্তে দরকার নেই। নতুন করে রাজনৈতিক সরকার এলে তারা নতুন করে পরিকল্পনা করবে বলে জানান তিনি।

ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম একনেক সভায় ১ হাজার ২২২ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪ টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর আগে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একনেকে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পের মধ্যে ৭০ কোটি টাকায় গ্যাস পাইপলাইন ও ৫৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে গ্যাস কূপ খননের প্রকল্প রয়েছে। নিজেদের গ্যাসের সম্ভাবনা থাকতেও এলএনজি আমদানি ভ্রান্ত নীতি। আপাতত পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা স্থগিত থাকবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, নিরপেক্ষভাবে অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য নতুন প্রকল্পকগুলোকেই শুধুমাত্র একনেকে অনুমোদন হবে। কিছু প্রকল্প অনেকদিন ধরে ঝুলে আছে, সেগুলোও দেখা হবে

রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত প্রকল্প বাদ দেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, চলমান প্রকল্প কোন পর্যায়ে আছে সেগুলো যাচাই-বাছাই করতে চান উপদেষ্টারা। বৈদেশিক সাহায্য পুষ্ট প্রকল্প একনেকে পাস করা হবে। তারপর সেগুলো নজরে রাখা হবে। বিদেশি অর্থের পরিপূর্ণ ব্যবহার করা হবে।
অপচয় ও দুর্নীতি রোধে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমাতেও সরকার কাজ করছে বলে জানান পরিকল্পনা উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ১ হাজার ২২২ কোটি ১৪ লাখ টাকার অনুমোদনের মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে অর্থায়ন হবে ৯৬৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা। আর বিদেশি ঋণ ও অনুদান ১০০ কোটি ১৬ লাখ টাকা ও সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ১৫৮ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

একনেকে অনুমোদিত চারটি প্রকল্প হলো
শিল্প ও শক্তি বিভাগের বাখরাবাদ-মেঘনাঘাট-হরিপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্প (১ম সংশোধিত), ২টি মূল্যায়ন কাম উন্নয়ন কূপ (সুন্দলপুর-৪ ও শ্রীকাইল-৫) এবং ২টি অনুসন্ধান কূপ (সুন্দরপুর সাউথ-১ ও জামালপুর-১) খনন প্রকল্প, আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের মহিলাদের ক্ষমতায়ন প্রকল্প (২য় পর্যায়) (২য় সংশোধিত) তথ্য আপা নামক প্রকল্প এবং কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগের পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্প (২য় পর্যায়) প্রকল্প।#

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের প্রকল্প পুনর্বিবেচনা করা হবে : প্রধান উপদেষ্টা

আপডেট টাইম : ০৪:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ আমলে রাজনৈতিক উদ্দেশে নেওয়া প্রকল্প পুনর্বিবেচনা করা হবে। এখন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বেশি নজর দিতে হবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রথম অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় তিনি এ কথা বলেন। গতকাল প্রথমবারের মতো তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এখন থেকে প্রকল্পের সব তথ্য ওপেন থাকবে। মেগা প্রকল্প না নিয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ ছোট প্রকল্প নেওয়ার বিষয়ে উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্যরা এক হয়েছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নেওয়া প্রকল্পে চিন্তা দরকার। মেগা প্রকল্পও বাদ দিতে হবে। নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে কাজ করতে হবে। প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নিয়ে কাজ করতে হবে। প্রকল্পের সবকিছু ওপেন থাকবে। শুধু পিডি জানবে তা নয়, সবাই জানবে। সামনে বড় প্রকল্প নয়, জনগুরুত্বপূর্ণ ছোট প্রকল্প নেওয়া হবে।
এদিকে একনেক সভাশেষে পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, দাতাগোষ্ঠী হাত খুলে টাকা দিতে চাচ্ছে। ইউএসএইড বলছে, তোমরা প্রকল্প তৈরি করো আমরা টাকা দেবো। যেসব প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল কিন্তু টাকা নেওয়া হয়নি এসব টাকা বাজেট সহায়তা দিতে চায় বিশ্বব্যাংক। তিনি বলেন, সব দাতাগোষ্ঠী আমাদের নতুন চাহিদা জানতে চেয়েছে। কিছু প্রকল্পে ত্বরান্বিত হবে যা বৈদেশিক সাহায্যের প্রকল্প। অনেক প্রকল্প হিমাগারে আছে, মৃত প্রকল্পে ছাড় করে দেবে বিশ্বব্যাাংক। এছাড়া দেশে গ্যাসের সম্ভাবনা থাকার পরও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি ভ্রান্ত নীতি। একই সঙ্গে আপাতত পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা স্থগিত থাকবে। ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা স্থগিত থাকবে। কারণ বিগত সরকার কখনোই এই পরিকল্পনা অনুযায়ী বাজেট প্রণয়ন করেনি। কাজেই পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এই মুহূর্তে দরকার নেই। নতুন করে রাজনৈতিক সরকার এলে তারা নতুন করে পরিকল্পনা করবে বলে জানান তিনি।

ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম একনেক সভায় ১ হাজার ২২২ কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪ টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর আগে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একনেকে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পের মধ্যে ৭০ কোটি টাকায় গ্যাস পাইপলাইন ও ৫৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে গ্যাস কূপ খননের প্রকল্প রয়েছে। নিজেদের গ্যাসের সম্ভাবনা থাকতেও এলএনজি আমদানি ভ্রান্ত নীতি। আপাতত পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা স্থগিত থাকবে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, নিরপেক্ষভাবে অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য নতুন প্রকল্পকগুলোকেই শুধুমাত্র একনেকে অনুমোদন হবে। কিছু প্রকল্প অনেকদিন ধরে ঝুলে আছে, সেগুলোও দেখা হবে

রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত প্রকল্প বাদ দেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, চলমান প্রকল্প কোন পর্যায়ে আছে সেগুলো যাচাই-বাছাই করতে চান উপদেষ্টারা। বৈদেশিক সাহায্য পুষ্ট প্রকল্প একনেকে পাস করা হবে। তারপর সেগুলো নজরে রাখা হবে। বিদেশি অর্থের পরিপূর্ণ ব্যবহার করা হবে।
অপচয় ও দুর্নীতি রোধে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমাতেও সরকার কাজ করছে বলে জানান পরিকল্পনা উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ১ হাজার ২২২ কোটি ১৪ লাখ টাকার অনুমোদনের মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে অর্থায়ন হবে ৯৬৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা। আর বিদেশি ঋণ ও অনুদান ১০০ কোটি ১৬ লাখ টাকা ও সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ১৫৮ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

একনেকে অনুমোদিত চারটি প্রকল্প হলো
শিল্প ও শক্তি বিভাগের বাখরাবাদ-মেঘনাঘাট-হরিপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্প (১ম সংশোধিত), ২টি মূল্যায়ন কাম উন্নয়ন কূপ (সুন্দলপুর-৪ ও শ্রীকাইল-৫) এবং ২টি অনুসন্ধান কূপ (সুন্দরপুর সাউথ-১ ও জামালপুর-১) খনন প্রকল্প, আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের মহিলাদের ক্ষমতায়ন প্রকল্প (২য় পর্যায়) (২য় সংশোধিত) তথ্য আপা নামক প্রকল্প এবং কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগের পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্প (২য় পর্যায়) প্রকল্প।#