বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের আসন্ন সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণগুলো তুলে ধরে কোফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবি জানাবেন। সেই সঙ্গে শরণার্থী সংকটের নিরসনে তিনি বাংলাদেশের প্রস্তাব বিশ্বনেতাদের সামনে তুলে ধরবেন।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী এ কথা বলেন। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে বক্তব্য দেওয়ার সময় এই প্রস্তাব দেবেন।
অধিবেশনে যোগ দিতে ১৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে পৌঁছানোর কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। তিনি ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বরাবরের মতই বাংলায় বক্তব্য দেবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এবার জাতিসংঘের সম্মেলন এমন এক সময় হতে যাচ্ছে, যখন হাজার হাজার নিরীহ রোহিঙ্গা প্রতিদিন প্রাণভয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছে। গত তিন সপ্তাহে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে সীমান্তের ৪০ কিলোমিটার ব্যাপ্তির মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এদের বেশিরভাগই মহিলা, শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে সহিংসতার শিকার হয়ে বাংলাদেশে আসা আরও চার লাখ অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা কক্সবাজারের অস্থায়ী ক্যাম্পে বসবাস করছে।
মন্ত্রী বলেন, লাখ লাখ অসহায় রোহিঙ্গাকে মানবিক সহায়তা দিতে এবং তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে বাংলাদেশ আজ এক নজিরবিহীন সংকটের মুখোমুখি। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে এই শরণার্থী সংকট অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে গুরুতর আকার ধারণ করেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘে বক্তব্য দেওয়ার সময় রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিষয়টিতে গুরুত্ব দেবেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার কথাও বলবেন।
জাতিসংঘের অধিবেশনে রোহিঙ্গা সমস্যার মূল কারণসমূহ তুলে ধরে তার সমাধানে বাংলাদেশের প্রস্তাবসমূহ সুস্পষ্টভাবে পেশ করা হবে। সেই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সরকারের চলমান ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ অবিলম্বে বন্ধ করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া সব রোহিঙ্গার নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে মিয়ানমার সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখার চেষ্টা চলমান থাকবে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী এবার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশ নেবেন বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর ওআইসি কন্ট্যাক্ট গ্রুপের একটি সভা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সেখানে মিয়ানমারের সহিংসতা ও শরণার্থী সঙ্কট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। ওই সভায় অংশগ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের দুর্দশা তুলে ধরবেন। এ সমস্যার আশু সমাধানে তিনি মুসলিম বিশ্বের কাছে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ চাইবেন।
নিরাপত্তা পরিষদ রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে যে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ তা কীভাবে মূল্যায়ন করে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা চেয়েছিলাম নিরাপত্তা পরিষদ এই পরিস্থিতিতে একটা অবস্থান তুলে ধরুক। সেদিক থেকে এই বিবৃতি আমরা সময়োপযোগী ও জোরাল বলে মনে করি।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইনে ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ঘাঁটিতে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি হামলা করেছে এ অভিযোগ করে সেখানে অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।
এরপর সীমান্ত অতিক্রম করে করে দলে দলে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে থাকে রোহিঙ্গারা। এ পর্যন্ত প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা এসেছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বলছেন, মিয়ানমারের নিরাপত্তাবাহিনী রোহিঙ্গাদের নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করছে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে রোহিঙ্গাদের বাড়ি-ঘরে আগুন দিচ্ছে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইনরা।