ঢাকা , শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারী ২০২৫, ২০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গাদের জন্মনিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা হচ্ছে

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা বর্বরতার মুখে প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারীদের সন্তানের সংখ্যা বেশি। প্রতিটি পরিবারে ৫ থেকে ১০টির মতো সন্তান রয়েছে। রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে আশ্রয় নেয়া অনেক নারী এখন গর্ভবতী। স্থানীয়রা মনে করছেন, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা না থাকা এবং অল্পবয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়ায় তাদের এ অবস্থা। বাংলাদেশে আসার পর এসব নারীকে জন্মনিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা হচ্ছে। ক্যাম্পে ক্যাম্পে গড়ে তোলা হচ্ছে সচেতনতা। এর ফলে রোহিঙ্গা নারীদের জন্মনিয়ন্ত্রণে আগ্রহ বেড়েছে। বৃহস্পতিবার উখিয়ার থাইংখালী, পাইনংখালী, বালুখালী, কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গা শিবিরগুলো ঘুরে রোহিঙ্গা নারীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। কক্সবাজার পরিবার পরিকল্পনা  অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজারের প্রত্যেকটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে নারীদের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা দেয়া হচ্ছে। জন্মনিয়ন্ত্রণ ইনজেকশন, খাবার বড়ি এবং কনডম দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ক্যাম্পগুলোতে জন্মনিয়ন্ত্রণবিষয়ক প্রচারণা চালাচ্ছেন মাঠকর্মীরা। এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৮০ নারীকে ৩ মাস মেয়াদের জন্মনিয়ন্ত্রণ ইনজেকশন দেয়া হয়েছে। জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খাওয়ানো হয়েছে এক হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা নারীকে। ৯০০ জনেরও বেশি পুরুষকে কনডম দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কক্সবাজার পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের উপপরিচালক ডা. পিন্টু কান্তি ভট্টাচার্য্য বলেন, মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের উদ্যোগে রোহিঙ্গাদের জন্মনিয়ন্ত্রণসহ অন্যান্য চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাতটি মেডিকেল টিম কাজ করছে। এর মধ্যে উখিয়ায় চারটি ও টেকনাফে তিনটি। এসব টিমে কাজ করার জন্য বিভিন্ন উপজেলা থেকে ২০০ কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এসব কর্মী ক্যাম্পে ক্যাম্পে গিয়ে রোহিঙ্গাদের জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে অবহিত করছেন।
থাইংখালীর বাসিন্দা মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গারা জন্মনিয়ন্ত্রণ না করাটা মিয়ানমারের সমস্যা বা সে দেশের চিত্র। কিন্তু জনসংখ্যাবহুল ও উন্নয়নশীল দেশের জন্য এ চর্চা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তাই অস্থায়ীভাবে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের থাকা, খাওয়া, চিকিৎসাসেবাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে হবে। এটি এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। কক্সবাজার জেলা দায়রা জজ আদালতের অ্যাডভোকেট আবদুর রহিম বলেন, রোহিঙ্গাদের খুব দ্রুত জন্মনিয়ন্ত্রেণের ব্যাপারে সচেতন করতে হবে। এর আগে যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে তাদের কাছে জন্মনিয়ন্ত্রণের বার্তা পৌঁছালেও আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি। ফলে বরাবরই রোহিঙ্গাদের সন্তান সংখ্যা বেড়েই চলছে।
উখিয়া উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি সোলতান মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মানবিক দিক বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের অস্থায়ীভাবে এদেশে থাকতে দেয়া হয়েছে। তাদের থাকা, খাওয়া ও চিকিৎসাসেবাসহ নানাভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। তাই বলে এ নয় যে, জনবহুল দেশে অপরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গার সংখ্যা বাড়াতে থাকবে। তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদেরও সচেতন থাকতে হবে।
এ বিষয়ে কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালাম বৃহস্পতিবার বলেন, ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারীরা ৭ শতাধিক শিশু জন্ম দিয়েছেন। আর গর্ভবতী রোহিঙ্গা নারী রয়েছেন ২২ হাজারের কাছাকাছি। তাদের খুব দ্রুত জন্মনিয়ন্ত্রণের আওতায় নিয়ে আসার জন্য কাজ করছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
এসবি এনজিও কর্মী বিপুল শীল বলেন, শরণার্থী ক্যাম্পের সব পরিবারের স্বাস্থ্য ঠিক রয়েছে। যাদের সমস্যা দেখা দিচ্ছে আমরা তাদের চিকিৎসা দিচ্ছি। ক্যাম্পে অনেক গর্ভবতী রয়েছে। আমাদের কর্মীরা ক্যাম্পে প্রতিটি ঝুপড়িতে গিয়ে জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে নারীদের সঙ্গে কথা বলছেন। রোহিঙ্গা নারীরা তাতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। পাশাপাশি পুরুষদেরও সে বিষয়ে অবগত করা হচ্ছে। মহিলাদের বড়ি, ইনজেকশন ও পুরুষদের কনডম দেয়া হচ্ছে। আশা করছি জন্মনিয়ন্ত্রণের আওতায় আনার সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সভাপতি আবু সিদ্দিক বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোর প্রতিটি ঝুপড়িতে গর্ভবতী নারী রয়েছে। তাদের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির কোনো ধারণা নেই। সরকারি ও বেসরকারিভাবে রোহিঙ্গা নারীদের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে। এতে বেশ সাড়াও পাওয়া গেছে। রোহিঙ্গা নারীরা এদেশে এসে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পেরে তাদের মধ্যে খুব উৎসাহ দেখা গেছে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

রোহিঙ্গাদের জন্মনিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা হচ্ছে

আপডেট টাইম : ০৪:৫৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা বর্বরতার মুখে প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারীদের সন্তানের সংখ্যা বেশি। প্রতিটি পরিবারে ৫ থেকে ১০টির মতো সন্তান রয়েছে। রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে আশ্রয় নেয়া অনেক নারী এখন গর্ভবতী। স্থানীয়রা মনে করছেন, জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা না থাকা এবং অল্পবয়সে বিয়ে হয়ে যাওয়ায় তাদের এ অবস্থা। বাংলাদেশে আসার পর এসব নারীকে জন্মনিয়ন্ত্রণের আওতায় আনা হচ্ছে। ক্যাম্পে ক্যাম্পে গড়ে তোলা হচ্ছে সচেতনতা। এর ফলে রোহিঙ্গা নারীদের জন্মনিয়ন্ত্রণে আগ্রহ বেড়েছে। বৃহস্পতিবার উখিয়ার থাইংখালী, পাইনংখালী, বালুখালী, কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গা শিবিরগুলো ঘুরে রোহিঙ্গা নারীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। কক্সবাজার পরিবার পরিকল্পনা  অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজারের প্রত্যেকটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে নারীদের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা দেয়া হচ্ছে। জন্মনিয়ন্ত্রণ ইনজেকশন, খাবার বড়ি এবং কনডম দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ক্যাম্পগুলোতে জন্মনিয়ন্ত্রণবিষয়ক প্রচারণা চালাচ্ছেন মাঠকর্মীরা। এ পর্যন্ত ১ হাজার ১৮০ নারীকে ৩ মাস মেয়াদের জন্মনিয়ন্ত্রণ ইনজেকশন দেয়া হয়েছে। জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খাওয়ানো হয়েছে এক হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা নারীকে। ৯০০ জনেরও বেশি পুরুষকে কনডম দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কক্সবাজার পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের উপপরিচালক ডা. পিন্টু কান্তি ভট্টাচার্য্য বলেন, মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের উদ্যোগে রোহিঙ্গাদের জন্মনিয়ন্ত্রণসহ অন্যান্য চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাতটি মেডিকেল টিম কাজ করছে। এর মধ্যে উখিয়ায় চারটি ও টেকনাফে তিনটি। এসব টিমে কাজ করার জন্য বিভিন্ন উপজেলা থেকে ২০০ কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এসব কর্মী ক্যাম্পে ক্যাম্পে গিয়ে রোহিঙ্গাদের জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে অবহিত করছেন।
থাইংখালীর বাসিন্দা মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গারা জন্মনিয়ন্ত্রণ না করাটা মিয়ানমারের সমস্যা বা সে দেশের চিত্র। কিন্তু জনসংখ্যাবহুল ও উন্নয়নশীল দেশের জন্য এ চর্চা কোনোভাবেই কাম্য নয়। তাই অস্থায়ীভাবে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের থাকা, খাওয়া, চিকিৎসাসেবাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে হবে। এটি এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। কক্সবাজার জেলা দায়রা জজ আদালতের অ্যাডভোকেট আবদুর রহিম বলেন, রোহিঙ্গাদের খুব দ্রুত জন্মনিয়ন্ত্রেণের ব্যাপারে সচেতন করতে হবে। এর আগে যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে তাদের কাছে জন্মনিয়ন্ত্রণের বার্তা পৌঁছালেও আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি। ফলে বরাবরই রোহিঙ্গাদের সন্তান সংখ্যা বেড়েই চলছে।
উখিয়া উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি সোলতান মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মানবিক দিক বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের অস্থায়ীভাবে এদেশে থাকতে দেয়া হয়েছে। তাদের থাকা, খাওয়া ও চিকিৎসাসেবাসহ নানাভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। তাই বলে এ নয় যে, জনবহুল দেশে অপরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গার সংখ্যা বাড়াতে থাকবে। তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদেরও সচেতন থাকতে হবে।
এ বিষয়ে কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালাম বৃহস্পতিবার বলেন, ২৫ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারীরা ৭ শতাধিক শিশু জন্ম দিয়েছেন। আর গর্ভবতী রোহিঙ্গা নারী রয়েছেন ২২ হাজারের কাছাকাছি। তাদের খুব দ্রুত জন্মনিয়ন্ত্রণের আওতায় নিয়ে আসার জন্য কাজ করছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
এসবি এনজিও কর্মী বিপুল শীল বলেন, শরণার্থী ক্যাম্পের সব পরিবারের স্বাস্থ্য ঠিক রয়েছে। যাদের সমস্যা দেখা দিচ্ছে আমরা তাদের চিকিৎসা দিচ্ছি। ক্যাম্পে অনেক গর্ভবতী রয়েছে। আমাদের কর্মীরা ক্যাম্পে প্রতিটি ঝুপড়িতে গিয়ে জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে নারীদের সঙ্গে কথা বলছেন। রোহিঙ্গা নারীরা তাতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। পাশাপাশি পুরুষদেরও সে বিষয়ে অবগত করা হচ্ছে। মহিলাদের বড়ি, ইনজেকশন ও পুরুষদের কনডম দেয়া হচ্ছে। আশা করছি জন্মনিয়ন্ত্রণের আওতায় আনার সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি। কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সভাপতি আবু সিদ্দিক বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোর প্রতিটি ঝুপড়িতে গর্ভবতী নারী রয়েছে। তাদের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির কোনো ধারণা নেই। সরকারি ও বেসরকারিভাবে রোহিঙ্গা নারীদের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে। এতে বেশ সাড়াও পাওয়া গেছে। রোহিঙ্গা নারীরা এদেশে এসে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পেরে তাদের মধ্যে খুব উৎসাহ দেখা গেছে।