ঢাকা , সোমবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৪, ২৯ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বঙ্গভবনে ‘বন্দি’ রাষ্ট্রপতি

জাকির হোসাইনঃ আবদুল হামিদের অমৃত বচন ষ তৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজনীতিকদের জন্য বঙ্গভবনের নিয়ন্ত্রিত জীবন আরামদায়ক নয় ষ খাঁচার পাখিরে যতই ভালো খাবার দেয়া হোক, সে তো আর বনের পরিবেশ পায় না ষ ইচ্ছা করলেই অনেক কিছু করতে পারি না। আর ইচ্ছা করতেও তো অনেক সমস্যা ষ আসলে রাষ্ট্রপতি হিসেবে তেমন কোনো কাজ নেই। যেটা করি, রুটিন কাজ ষ এখানে পারসোনাল, প্রাইভেট লাইফ বলে কিছু না।
রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ-ফাইল ছবিতৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজনীতিকদের জন্য বঙ্গভবনের নিয়ন্ত্রিত জীবন ‘আরামদায়ক’ নয় বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, ‘আমি মোটেই মুক্ত মানুষ নই।’

তিনি বলেন, ‘আমি একটা দায়িত্ব নিয়ে এখানে এসেছি। সংসদে মনের খোরাক পেতাম, বঙ্গভবনে পাই না। আসলে গ্রাসরুটে রাজনীতি করা মানুষের জন্য এ জায়গাটা সবসময় আরামদায়ক হওয়ার কথা নয়। খাঁচার পাখিরে যতই ভালো খাবার দেয়া হোক, সে তো আর বনের পরিবেশ পায় না।’

বঙ্গভবনে সংযুক্ত গণমাধ্যমগুলোর সঙ্গে রাতে এক আলাপচারিতায় রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন। এ সময় উঠে আসে তার শৈশব-কৈশোরের রাজনৈতিক কর্মকা-থেকে শুরু করে সর্বশেষ বঙ্গভবনের অভিজ্ঞতা।
বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে কয়েক বছর পূর্ণ করেছেন ‘ভাটির শার্দূল’ আবদুল হামিদ। দেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান অসুস্থ হওয়ার পর গত ২০১৩সালে ১১ মার্চ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন তিনি। জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন কিশোরগঞ্জ থেকে সাত বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া আবদুল হামিদ।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার আগে দুই দফা জাতীয় সংসদের স্পিকারের দায়িত্ব সামলেছেন আবদুল হামিদ। স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় তার স্বভাবজাত হাস্যরস দিয়ে সংসদ মাতিয়ে রাখতেন। আর এ কারণে সাধারণ মানুষের মাঝেও জনপ্রিয়তা পান তিনি।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে বঙ্গভবনে কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, ‘আসলে রাষ্ট্রপতি হিসেবে তেমন কোনো কাজ নেই। যেটা করি রুটিন কাজ। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সবাইকে বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে পরামর্শ দিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘ইচ্ছা করলেই অনেক কিছুই করতে পারি না। আর ইচ্ছা করলেও তো সমস্যা। ধরেন, মনে হলো কারো বাসায় যাব। আধা ঘণ্টার মধ্যে গাড়ি রেডি। কিন্তু রাস্তা বন্ধ হবে। যে বাসায় যাব সেখানকার রান্নাঘর থেকে শুরু করে সব কিছু চেক হবে। এটা আমার জন্য বিব্রতকর। তাই ইচ্ছা হলেও চেপে রাখতে হয়। নিতান্তই বিশেষ প্রয়োজন বা সরকারি কোনো অনুষ্ঠান ছাড়া বের হই না। বাইরে যদিও যাই দশটা মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারি না। ওখানেও নিরাপত্তা কর্মীরা থাকে।’

‘আসলে এখানে পারসোনাল, প্রাইভেট লাইফ নেই। বিদেশে গেলেও একই অবস্থা। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর প্রথম যেবার গেলাম, ভাবলাম কিছুটা হলেও ফ্রি। কিন্তু সেখানেও একা থাকতে দেবে না। নিরাপত্তা কর্মীরা সঙ্গে থাকে। আই এম নট অ্যাট অল এ ফ্রি ম্যান।’

‘যখন কোর্টে প্র্যাকটিস করতাম, চেম্বারে মানুষ আসত, কথা বলতাম। যদি কখনও না আসত, তবে যেখানে আড্ডা হতো সেখানে চলে যেতাম। সংসদেও আড্ডা দিতাম। এমপিরা আসতেন, সাংবাদিকরা আসতেন। বঙ্গভবনে সে সুযোগ নেই। যারা ফ্রিলি মানুষের সঙ্গে মেশে না, তাদের কথা আলাদা। এর আগে বঙ্গভবনে বেশির ভাগই ছিলেন বিচারপতি-শিক্ষক। স্বভাবত তারা বেশি মানুষের সঙ্গে মেশেন না।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, স্পিকার থাকার সময় মাঝে-মধ্যে ৫-৭ দিন এলাকায় গিয়ে থাকতাম। এখন সে অবস্থা নেই। বললে হয়তো থাকতে পারব। কিন্তু আমি গেলে আশপাশের এলাকা থেকে পুলিশ ফোর্স নিয়ে আসে। ৫-৬শ’ মানুষ। ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রামে এত লোক রাখার উপায় নেই। আমি তো আরামে থাকব। কিন্তু পুলিশের কনস্টেবল, যারা আসে তারা হয়তো ভালো করে খেতে-ঘুমাতে পারবে না।’

কোন দায়িত্বটি সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেছেন প্রশ্ন করা হলে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘যখন ডেপুটি স্পিকার ছিলাম। দায়-দায়িত্ব বেশি ছিল না। স্পিকার হাউজে (সংসদ) না গেলে হাউস পরিচালনা করতে হতো। আর কোনো কাজ নেই। তেমন কোনো প্রশাসনিক দায়িত্বও নেই। স্পিকারকে অনেক কিছু খেয়াল রাখতে হয়। অনেক সজাগ থাকতে হয়।

‘সংসদে থাকার সময়ে আমি অনেক কিছু পরিকল্পনা করেছি। এটা-ওটা বাদ দিয়েছি। বঙ্গভবনে দেখার তেমন কিছু নেই। তবে হ্যাঁ, আমি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর বিদেশ সফরে হোটেলের ভাড়া কমিয়েছি। সিঙ্গাপুরে আমার হোটেলের ভাড়া ছিল ৬ হাজার সিঙ্গাপুরিয়ান ডলার। সেটা কমিয়ে ৬শ ডলারে এনেছি। স্পিকার থাকার সময় একা যেতাম। এখন তো আর সে উপায় নেই। তবে সফরসঙ্গীদের হোটেল ভাড়াও অর্ধেক করেছি।’

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তার কিশোর বয়সের রাজনীতির স্মৃতিও রোমন্থন করেন।
তিনি বলেন, ‘ক্লাস নাইনে থাকতে ২১ ফেব্রুয়ারি পালনের মধ্য দিয়ে তৎকালীন শাসক গোষ্ঠীবিরোধী চেতনা শুরু হয়। তখন তো আর এখনকার মতো শহীদ মিনার ছিল না। বাঁশ দিয়ে কাঠামো তৈরি করে তার ওপর কাগজ লাগিয়ে তৈরি করতাম শহীদ মিনার। এগুলো তৎকালীন সরকার ভালোভাবে নেয়নি।’

‘ক্লাস নাইনে থাকতেই প্রথম থানায় ধরে নিয়ে গিয়েছিল আমাদের চার-পাঁচজনকে। সারাদিন-সারারাত থানায় আটকে রেখেছিল। আমাদের দোষ, আমরা কেন একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করলাম। ‘আসলে পলিটিক্যাল টার্মের কথা যদি বলেন, সেটা ম্যাট্রিক শেষ করে যখন কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজে ভর্তি হলাম। ‘৬১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পালন করি বিশাল করে। ওই সময় ২১ উদযাপন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলাম। দেড়-মাইল দীর্ঘ ২১ ফেব্রুয়ারির মিছিল হলো। ওখান থেকে সবার কাছে পরিচিত হলাম।’

৬২-র ৩১ ডিসেম্বর ফজলুল কাদের চৌধুরী কিশোরগঞ্জ আসেন। তিনি তখন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি। তার সভা ভ-ুল করার জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছিল আমাকে। পরদিন শুধু কিশোরগঞ্জ নয়, আশপাশের দশ মাইলের মধ্যে যত স্কুল আছে সব ছাত্র মিছিল করল। সারা কিশোরগঞ্জে শুধু ছাত্র আর ছাত্র। তৎকালীন এসডিও সাইদ সাহেব বুঝলেন জামিন না দেয়া হলে কোর্টের একটা ইট-কাঠ দরজা-জানালাও থাকবে না। পরে ছাত্ররা আমাকে কাঁধে করে মিছিল করে নিয়ে গেল। ‘৬২-৬৩ সেশনে কলেজ ছাত্র সংসদে জিএস পদে দাঁড়ালাম। আমার বিরুদ্ধে ছয় জন দাঁড়ালেন। তারা ছয়জন ভোট পেলেন ১০ শতাংশ। আর আমি ৯০ শতাংশ। এটা ছিল আমার প্রথম নির্বাচন।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

বঙ্গভবনে ‘বন্দি’ রাষ্ট্রপতি

আপডেট টাইম : ০৯:১৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

জাকির হোসাইনঃ আবদুল হামিদের অমৃত বচন ষ তৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজনীতিকদের জন্য বঙ্গভবনের নিয়ন্ত্রিত জীবন আরামদায়ক নয় ষ খাঁচার পাখিরে যতই ভালো খাবার দেয়া হোক, সে তো আর বনের পরিবেশ পায় না ষ ইচ্ছা করলেই অনেক কিছু করতে পারি না। আর ইচ্ছা করতেও তো অনেক সমস্যা ষ আসলে রাষ্ট্রপতি হিসেবে তেমন কোনো কাজ নেই। যেটা করি, রুটিন কাজ ষ এখানে পারসোনাল, প্রাইভেট লাইফ বলে কিছু না।
রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ-ফাইল ছবিতৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজনীতিকদের জন্য বঙ্গভবনের নিয়ন্ত্রিত জীবন ‘আরামদায়ক’ নয় বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, ‘আমি মোটেই মুক্ত মানুষ নই।’

তিনি বলেন, ‘আমি একটা দায়িত্ব নিয়ে এখানে এসেছি। সংসদে মনের খোরাক পেতাম, বঙ্গভবনে পাই না। আসলে গ্রাসরুটে রাজনীতি করা মানুষের জন্য এ জায়গাটা সবসময় আরামদায়ক হওয়ার কথা নয়। খাঁচার পাখিরে যতই ভালো খাবার দেয়া হোক, সে তো আর বনের পরিবেশ পায় না।’

বঙ্গভবনে সংযুক্ত গণমাধ্যমগুলোর সঙ্গে রাতে এক আলাপচারিতায় রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন। এ সময় উঠে আসে তার শৈশব-কৈশোরের রাজনৈতিক কর্মকা-থেকে শুরু করে সর্বশেষ বঙ্গভবনের অভিজ্ঞতা।
বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে কয়েক বছর পূর্ণ করেছেন ‘ভাটির শার্দূল’ আবদুল হামিদ। দেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান অসুস্থ হওয়ার পর গত ২০১৩সালে ১১ মার্চ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন তিনি। জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন কিশোরগঞ্জ থেকে সাত বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া আবদুল হামিদ।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার আগে দুই দফা জাতীয় সংসদের স্পিকারের দায়িত্ব সামলেছেন আবদুল হামিদ। স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় তার স্বভাবজাত হাস্যরস দিয়ে সংসদ মাতিয়ে রাখতেন। আর এ কারণে সাধারণ মানুষের মাঝেও জনপ্রিয়তা পান তিনি।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে বঙ্গভবনে কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, ‘আসলে রাষ্ট্রপতি হিসেবে তেমন কোনো কাজ নেই। যেটা করি রুটিন কাজ। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সবাইকে বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে পরামর্শ দিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘ইচ্ছা করলেই অনেক কিছুই করতে পারি না। আর ইচ্ছা করলেও তো সমস্যা। ধরেন, মনে হলো কারো বাসায় যাব। আধা ঘণ্টার মধ্যে গাড়ি রেডি। কিন্তু রাস্তা বন্ধ হবে। যে বাসায় যাব সেখানকার রান্নাঘর থেকে শুরু করে সব কিছু চেক হবে। এটা আমার জন্য বিব্রতকর। তাই ইচ্ছা হলেও চেপে রাখতে হয়। নিতান্তই বিশেষ প্রয়োজন বা সরকারি কোনো অনুষ্ঠান ছাড়া বের হই না। বাইরে যদিও যাই দশটা মানুষের সঙ্গে কথা বলতে পারি না। ওখানেও নিরাপত্তা কর্মীরা থাকে।’

‘আসলে এখানে পারসোনাল, প্রাইভেট লাইফ নেই। বিদেশে গেলেও একই অবস্থা। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর প্রথম যেবার গেলাম, ভাবলাম কিছুটা হলেও ফ্রি। কিন্তু সেখানেও একা থাকতে দেবে না। নিরাপত্তা কর্মীরা সঙ্গে থাকে। আই এম নট অ্যাট অল এ ফ্রি ম্যান।’

‘যখন কোর্টে প্র্যাকটিস করতাম, চেম্বারে মানুষ আসত, কথা বলতাম। যদি কখনও না আসত, তবে যেখানে আড্ডা হতো সেখানে চলে যেতাম। সংসদেও আড্ডা দিতাম। এমপিরা আসতেন, সাংবাদিকরা আসতেন। বঙ্গভবনে সে সুযোগ নেই। যারা ফ্রিলি মানুষের সঙ্গে মেশে না, তাদের কথা আলাদা। এর আগে বঙ্গভবনে বেশির ভাগই ছিলেন বিচারপতি-শিক্ষক। স্বভাবত তারা বেশি মানুষের সঙ্গে মেশেন না।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, স্পিকার থাকার সময় মাঝে-মধ্যে ৫-৭ দিন এলাকায় গিয়ে থাকতাম। এখন সে অবস্থা নেই। বললে হয়তো থাকতে পারব। কিন্তু আমি গেলে আশপাশের এলাকা থেকে পুলিশ ফোর্স নিয়ে আসে। ৫-৬শ’ মানুষ। ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রামে এত লোক রাখার উপায় নেই। আমি তো আরামে থাকব। কিন্তু পুলিশের কনস্টেবল, যারা আসে তারা হয়তো ভালো করে খেতে-ঘুমাতে পারবে না।’

কোন দায়িত্বটি সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেছেন প্রশ্ন করা হলে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘যখন ডেপুটি স্পিকার ছিলাম। দায়-দায়িত্ব বেশি ছিল না। স্পিকার হাউজে (সংসদ) না গেলে হাউস পরিচালনা করতে হতো। আর কোনো কাজ নেই। তেমন কোনো প্রশাসনিক দায়িত্বও নেই। স্পিকারকে অনেক কিছু খেয়াল রাখতে হয়। অনেক সজাগ থাকতে হয়।

‘সংসদে থাকার সময়ে আমি অনেক কিছু পরিকল্পনা করেছি। এটা-ওটা বাদ দিয়েছি। বঙ্গভবনে দেখার তেমন কিছু নেই। তবে হ্যাঁ, আমি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর বিদেশ সফরে হোটেলের ভাড়া কমিয়েছি। সিঙ্গাপুরে আমার হোটেলের ভাড়া ছিল ৬ হাজার সিঙ্গাপুরিয়ান ডলার। সেটা কমিয়ে ৬শ ডলারে এনেছি। স্পিকার থাকার সময় একা যেতাম। এখন তো আর সে উপায় নেই। তবে সফরসঙ্গীদের হোটেল ভাড়াও অর্ধেক করেছি।’

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তার কিশোর বয়সের রাজনীতির স্মৃতিও রোমন্থন করেন।
তিনি বলেন, ‘ক্লাস নাইনে থাকতে ২১ ফেব্রুয়ারি পালনের মধ্য দিয়ে তৎকালীন শাসক গোষ্ঠীবিরোধী চেতনা শুরু হয়। তখন তো আর এখনকার মতো শহীদ মিনার ছিল না। বাঁশ দিয়ে কাঠামো তৈরি করে তার ওপর কাগজ লাগিয়ে তৈরি করতাম শহীদ মিনার। এগুলো তৎকালীন সরকার ভালোভাবে নেয়নি।’

‘ক্লাস নাইনে থাকতেই প্রথম থানায় ধরে নিয়ে গিয়েছিল আমাদের চার-পাঁচজনকে। সারাদিন-সারারাত থানায় আটকে রেখেছিল। আমাদের দোষ, আমরা কেন একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করলাম। ‘আসলে পলিটিক্যাল টার্মের কথা যদি বলেন, সেটা ম্যাট্রিক শেষ করে যখন কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজে ভর্তি হলাম। ‘৬১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পালন করি বিশাল করে। ওই সময় ২১ উদযাপন কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলাম। দেড়-মাইল দীর্ঘ ২১ ফেব্রুয়ারির মিছিল হলো। ওখান থেকে সবার কাছে পরিচিত হলাম।’

৬২-র ৩১ ডিসেম্বর ফজলুল কাদের চৌধুরী কিশোরগঞ্জ আসেন। তিনি তখন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি। তার সভা ভ-ুল করার জন্য গ্রেপ্তার করা হয়েছিল আমাকে। পরদিন শুধু কিশোরগঞ্জ নয়, আশপাশের দশ মাইলের মধ্যে যত স্কুল আছে সব ছাত্র মিছিল করল। সারা কিশোরগঞ্জে শুধু ছাত্র আর ছাত্র। তৎকালীন এসডিও সাইদ সাহেব বুঝলেন জামিন না দেয়া হলে কোর্টের একটা ইট-কাঠ দরজা-জানালাও থাকবে না। পরে ছাত্ররা আমাকে কাঁধে করে মিছিল করে নিয়ে গেল। ‘৬২-৬৩ সেশনে কলেজ ছাত্র সংসদে জিএস পদে দাঁড়ালাম। আমার বিরুদ্ধে ছয় জন দাঁড়ালেন। তারা ছয়জন ভোট পেলেন ১০ শতাংশ। আর আমি ৯০ শতাংশ। এটা ছিল আমার প্রথম নির্বাচন।