ঢাকা , রবিবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৯ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
শেখ হাসিনা বার্নসহ নাম পরিবর্তন হলো ১৪ হাসপাতালের ইমাম ও খতিবরা রাষ্ট্রীয়ভাবে অবহেলার শিকার ট্রেনের টিকিট বিক্রিতে এলো নতুন নির্দেশনা শিল্পকলায় মাঝপথে নাটক বন্ধের বিষয়ে যা বললেন মহাপরিচালক ৮ তারিখ লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া যাত্রার সব চূড়ান্ত তারেক রহমানের নেতৃত্বে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সমাজ গড়বো: আমিনুল হক দেশের পরিবর্তন আনতে তরুণদের স্বপ্ন দেখতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা ব্যাপক সমালোচনার মুখে ইফা বোর্ড থেকে আওয়ামী ঘরানার আলেমদের নাম পরিবর্তন করলেন ধর্ম উপদেষ্টা ইউরোপের কোন ক্লাবের প্রস্তাব পেয়েছেন, জানালেন সাবিনা সাইফপুত্রও বেশ কয়েকবার অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন পাপারাজ্জিদের দেখে

অবশেষে বিদায় নিলেন দূর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সমবায় সচিব প্রশান্ত কুমার

অবশেষে অানুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিলেন দূর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সমবায় সচিব প্রশান্ত কুমার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প ঘিরে লুটপাটের মুলনায়ক এই সমবায় সচিব। সে প্রকল্পটির পরিচালক থাকা অবস্হায় অনিয়ম, দুর্নীতির কারণেই পুরো প্রকল্প তখন থমকে দাড়িয়ে ছিল। যে স্বপ্ন নিয়ে দারিদ্র্যকে জয় করার লক্ষ্যে যাত্রা শুরু হয়েছিল ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের, সেই স্বপ্নের ছিটেফোঁটাও বাস্তবায়ন করতে পারিনি তার মেয়াদ কালে।তার সময়ে প্রকল্পের সর্বক্ষেত্রেই দুর্নীতি জড়িয়ে ছিল সাপের মতো। কী প্রশিক্ষণ, কী কর্মশালা, কী বায়োগ্যাস প্রকল্প স্থাপন- কোনো কিছুই বাদ যায়নি দুর্নীতি থেকে। আর এসব দুর্নীতির প্রতিটির মুলহোতা ছিলেন এই প্রশান্ত কুমার।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের অধীন এ প্রকল্পটির শুরুতেই যখন প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে ড. প্রশান্ত কুমার রায়কে নিয়োগ দেওয়া হয় তখনই আপত্তি ওঠে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ থেকে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর দফতরের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও আপত্তি জানান এ নিয়োগের ক্ষেত্রে। তার পরিপ্রেক্ষিতে বিগত মহাজোট সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক ও তৎকালীন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় সচিব প্রকল্প পরিচালক হিসেবে প্রশান্ত কুমার রায়কে নিয়োগ না দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের লিখিতভাবে জানান। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তৎকালীন এক প্রভাবশালী কর্মকর্তা বর্তমানে একটি মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রতিমন্ত্রীর ওই আপত্তিকে আমলে না নিয়ে প্রশান্ত কুমার রায়কে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর পুরো প্রকল্পকেই নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন প্রশান্ত কুমার রায়। প্রকল্পের অন্য কর্মকর্তাদের মতামতকে আমলে না নিয়ে প্রকল্প পরিচালক নিজের ইচ্ছামতো প্রকল্পের কার্যক্রম চালাতে থাকেন। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের একজন পদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, একটি স্বপ্নকে শেষ করে দিয়েছিেন শুধু ওই প্রকল্পের তৎকালিন পরিচালক। দুর্নীতিরও একটা সীমা থাকে। কিন্তু একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে এর কোনো সীমারেখা ছিল না।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাঁর অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে বেশ কিছু প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগের তদন্তও শুরু করে মন্ত্রণালয়। অদৃশ্য শক্তির ইশরায় তার চাকুরী মেয়াদ কালে এসব তদন্তের কোনো সুরাহাও হয়নি। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন ওই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের কাজকর্মে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি মন্ত্রণালয়ের একাধিক সভায় প্রশান্ত কুমারকে ভর্ৎসনা করেন।

Prosanto

সরকারের সচিব হয়েও তিনি একাধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এমডি হিসেবে দুটি প্রতিষ্ঠান চালাতে গিয়ে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী এক ব্যবসায়ীর কাছে কোম্পানির শেয়ার বিক্রির চুক্তি করে মোটা অঙ্কের টাকাও নিয়েছেন। ওই ব্যবসায়ী যখন জানতে পারেন সরকারের সচিব হয়ে বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা বা এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা বেআইনি তখন তিনি শেয়ার কিনবেন না জানিয়ে টাকা ফেরত চান। সচিব শেয়ারের ২৫ লাখ টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য একাধিকবার তারিখ নেন। কিন্তু কয়েক দফা তারিখের পর টাকা ফেরত না পেয়ে ওই ব্যবসায়ী এই সচিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।ঐ সময় সরকারি চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে ব্যবসা করায় প্রশান্ত কুমার রায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে ছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর দুদক সচিব আবু মোহাম্মদ মোস্তফার সই করা চিঠিতে ওই সচিবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে দুদককে অবহিত করতে বলা হয়েছিল ।অদৃশ্য খুটির জোরে দুদকের চিঠি ও কার্যকর হয়নি।

Prosanto Kumar

অবসরের পূর্বে চাকুরীর মেয়াদ বৃদ্বির জন্য অথবা আরো ভালো কোন সরকারী পদ বাগিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারের উচ্চপর্যায়ে দৌড়ঝাপ শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু সহ বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিকস মিডিয়ায় ধারাবাহিক ভাবে তার দূর্নীতির খবর প্রচার হওয়ায় তার সব প্রচেষ্টা বিফলে যায়। অবশেষে আজই বিদায় নিতে হলো দূর্নীতিবাজ এই সরকারী কর্মকর্তাকে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

শেখ হাসিনা বার্নসহ নাম পরিবর্তন হলো ১৪ হাসপাতালের

অবশেষে বিদায় নিলেন দূর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সমবায় সচিব প্রশান্ত কুমার

আপডেট টাইম : ০৭:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ এপ্রিল ২০১৭

অবশেষে অানুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিলেন দূর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সমবায় সচিব প্রশান্ত কুমার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প ঘিরে লুটপাটের মুলনায়ক এই সমবায় সচিব। সে প্রকল্পটির পরিচালক থাকা অবস্হায় অনিয়ম, দুর্নীতির কারণেই পুরো প্রকল্প তখন থমকে দাড়িয়ে ছিল। যে স্বপ্ন নিয়ে দারিদ্র্যকে জয় করার লক্ষ্যে যাত্রা শুরু হয়েছিল ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের, সেই স্বপ্নের ছিটেফোঁটাও বাস্তবায়ন করতে পারিনি তার মেয়াদ কালে।তার সময়ে প্রকল্পের সর্বক্ষেত্রেই দুর্নীতি জড়িয়ে ছিল সাপের মতো। কী প্রশিক্ষণ, কী কর্মশালা, কী বায়োগ্যাস প্রকল্প স্থাপন- কোনো কিছুই বাদ যায়নি দুর্নীতি থেকে। আর এসব দুর্নীতির প্রতিটির মুলহোতা ছিলেন এই প্রশান্ত কুমার।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের অধীন এ প্রকল্পটির শুরুতেই যখন প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে ড. প্রশান্ত কুমার রায়কে নিয়োগ দেওয়া হয় তখনই আপত্তি ওঠে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ থেকে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর দফতরের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও আপত্তি জানান এ নিয়োগের ক্ষেত্রে। তার পরিপ্রেক্ষিতে বিগত মহাজোট সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক ও তৎকালীন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় সচিব প্রকল্প পরিচালক হিসেবে প্রশান্ত কুমার রায়কে নিয়োগ না দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের লিখিতভাবে জানান। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের তৎকালীন এক প্রভাবশালী কর্মকর্তা বর্তমানে একটি মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রতিমন্ত্রীর ওই আপত্তিকে আমলে না নিয়ে প্রশান্ত কুমার রায়কে প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর পুরো প্রকল্পকেই নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন প্রশান্ত কুমার রায়। প্রকল্পের অন্য কর্মকর্তাদের মতামতকে আমলে না নিয়ে প্রকল্প পরিচালক নিজের ইচ্ছামতো প্রকল্পের কার্যক্রম চালাতে থাকেন। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের একজন পদস্থ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, একটি স্বপ্নকে শেষ করে দিয়েছিেন শুধু ওই প্রকল্পের তৎকালিন পরিচালক। দুর্নীতিরও একটা সীমা থাকে। কিন্তু একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পে এর কোনো সীমারেখা ছিল না।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাঁর অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে বেশ কিছু প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগের তদন্তও শুরু করে মন্ত্রণালয়। অদৃশ্য শক্তির ইশরায় তার চাকুরী মেয়াদ কালে এসব তদন্তের কোনো সুরাহাও হয়নি। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন ওই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের কাজকর্মে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি মন্ত্রণালয়ের একাধিক সভায় প্রশান্ত কুমারকে ভর্ৎসনা করেন।

Prosanto

সরকারের সচিব হয়েও তিনি একাধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এমডি হিসেবে দুটি প্রতিষ্ঠান চালাতে গিয়ে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী এক ব্যবসায়ীর কাছে কোম্পানির শেয়ার বিক্রির চুক্তি করে মোটা অঙ্কের টাকাও নিয়েছেন। ওই ব্যবসায়ী যখন জানতে পারেন সরকারের সচিব হয়ে বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা বা এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা বেআইনি তখন তিনি শেয়ার কিনবেন না জানিয়ে টাকা ফেরত চান। সচিব শেয়ারের ২৫ লাখ টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য একাধিকবার তারিখ নেন। কিন্তু কয়েক দফা তারিখের পর টাকা ফেরত না পেয়ে ওই ব্যবসায়ী এই সচিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।ঐ সময় সরকারি চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে ব্যবসা করায় প্রশান্ত কুমার রায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে ছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর দুদক সচিব আবু মোহাম্মদ মোস্তফার সই করা চিঠিতে ওই সচিবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে দুদককে অবহিত করতে বলা হয়েছিল ।অদৃশ্য খুটির জোরে দুদকের চিঠি ও কার্যকর হয়নি।

Prosanto Kumar

অবসরের পূর্বে চাকুরীর মেয়াদ বৃদ্বির জন্য অথবা আরো ভালো কোন সরকারী পদ বাগিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারের উচ্চপর্যায়ে দৌড়ঝাপ শুরু করেছিলেন তিনি। কিন্তু সহ বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিকস মিডিয়ায় ধারাবাহিক ভাবে তার দূর্নীতির খবর প্রচার হওয়ায় তার সব প্রচেষ্টা বিফলে যায়। অবশেষে আজই বিদায় নিতে হলো দূর্নীতিবাজ এই সরকারী কর্মকর্তাকে।