ঢাকা , সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শতশত কোটি টাকা লুটপাট: চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছেন কামালপুত্র জ্যোতি

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ছেলে শাফি মুদ্দাসির খান জ্যোতির বিরুদ্ধে তাদের বাসায় বস্তায় বস্তায় টাকা প্রবেশের অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, বাবার ক্ষমতার অপব্যবহার করে শত শত কোটি টাকা লুটপাট করেছেন তিনি। ঢাকার আশুলিয়া থানার একটি মামলায় গ্রেপ্তারের পর রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) জ্যোতিকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ডে পুলিশকে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য দিচ্ছেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং এর অধীনস্থ বিভিন্ন সংস্থায় নিয়োগ, বদলি ও টেন্ডার বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের ছেলে সাফি মুদ্দাসির খান জ্যোতি। তিনি বাবার ক্ষমতার অপব্যবহার করে বাসায় বস্তায় বস্তায় টাকা আনতেন। শত শত কোটি টাকা লুটপাট করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ঘিরে বাবা-ছেলে মিলে গড়ে তুলেছিলেন বিশাল সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই গড়ে উঠেছে বিপুল অবৈধ সম্পদ।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শুধু অনপনেয় বা অমোছনীয় কালি কেনার ক্ষেত্রে যে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে, এর সঙ্গেও ওই সিন্ডিকেট জড়িত বলে বেরিয়ে এসেছে।

জানা যায়, কেবল মন্ত্রণালয় বা এর অধীন প্রতিষ্ঠানেই নয়, বাইরেও দাপট দেখাতেন সিন্ডিকেট সদস্যরা। রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় ছিল জ্যোতির একচ্ছত্র আধিপত্য। ধানমন্ডি এলাকায় কোনো রেস্টুরেন্ট ব্যবসা করতে গেলে জ্যোতিকে চাঁদা দিতে হতো।

তাকে মোটা অঙ্কের টাকা দিলে অনায়াসেই মিলত রেস্টুরেন্টের লাইসেন্স। এছাড়াও কাওরান বাজার থেকে প্রতিদিন চাঁদা তোলা হতো। ফুটপাতে ব্যবসা, বাজার, মাদক ব্যবসায়ী ও আবাসিক হোটেল থেকে উঠত চাঁদা। এ টাকা মন্ত্রীর হাতে পৌঁছে দেয়ার জন্য দায়িত্ব ছিল মন্ত্রীর এপিএস মনির হোসেনসহ আরো দুইজনের ওপর। এ টাকার মোটা অংশ পেতেন আসাদুজ্জামান খান কামাল।
পাশাপাশি এ টাকার একটা ভাগ পেতেন তার ছেলে।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলপ্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। আন্দোলন নেতৃত্বহীন করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে তুলে নেয়ার নির্দেশও এসেছিল তার কাছ থেকে। আন্দোলন দমাতে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করার নির্দেশও দেন তিনি।

এদিকে আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্ত্রী লুৎফুল তাহমিনা খান, ছেলে জ্যোতি, মেয়ে সোফিয়া তাসনিম খান এবং একান্ত সচিব মনির হোসেনকে আসামি করে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে দুদক। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যাতে দেশের বাইরে পালাতে না পারেন, সেজন্য ইতোমধ্যে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

আরও জানা যায়, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঘুস হিসাবে বস্তা বস্তা টাকা নিতেন। পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিস থেকে এ টাকা আদায় করা হতো। ঘুস আদায়ে তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব ড. হারুন অর রশীদ বিশ্বাসের নেতৃত্বে সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন তৎকালীন মন্ত্রী। এ সিন্ডিকেটের সদস্য ছিলেন যুগ্মসচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস, মন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মনির হোসেন, জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোল্লা ইব্রাহিম হোসেন ও মন্ত্রীর ছেলে সাফি মুদ্দাসির খান জ্যোতি। টাকা আদায় বা উত্তোলনে মূল ভূমিকা পালন করতেন ড. হারুন অর রশীদ বিশ্বাস। আসাদুজ্জামান খানের ছেলে জ্যোতি একপর্যায়ে হারুন অর রশীদ অবসরে গেলেও মন্ত্রণালয়ের সব ঘুস, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

শতশত কোটি টাকা লুটপাট: চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছেন কামালপুত্র জ্যোতি

আপডেট টাইম : ০৫:২৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ছেলে শাফি মুদ্দাসির খান জ্যোতির বিরুদ্ধে তাদের বাসায় বস্তায় বস্তায় টাকা প্রবেশের অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, বাবার ক্ষমতার অপব্যবহার করে শত শত কোটি টাকা লুটপাট করেছেন তিনি। ঢাকার আশুলিয়া থানার একটি মামলায় গ্রেপ্তারের পর রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) জ্যোতিকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ডে পুলিশকে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য দিচ্ছেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং এর অধীনস্থ বিভিন্ন সংস্থায় নিয়োগ, বদলি ও টেন্ডার বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের ছেলে সাফি মুদ্দাসির খান জ্যোতি। তিনি বাবার ক্ষমতার অপব্যবহার করে বাসায় বস্তায় বস্তায় টাকা আনতেন। শত শত কোটি টাকা লুটপাট করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ঘিরে বাবা-ছেলে মিলে গড়ে তুলেছিলেন বিশাল সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেটের মাধ্যমেই গড়ে উঠেছে বিপুল অবৈধ সম্পদ।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শুধু অনপনেয় বা অমোছনীয় কালি কেনার ক্ষেত্রে যে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে, এর সঙ্গেও ওই সিন্ডিকেট জড়িত বলে বেরিয়ে এসেছে।

জানা যায়, কেবল মন্ত্রণালয় বা এর অধীন প্রতিষ্ঠানেই নয়, বাইরেও দাপট দেখাতেন সিন্ডিকেট সদস্যরা। রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় ছিল জ্যোতির একচ্ছত্র আধিপত্য। ধানমন্ডি এলাকায় কোনো রেস্টুরেন্ট ব্যবসা করতে গেলে জ্যোতিকে চাঁদা দিতে হতো।

তাকে মোটা অঙ্কের টাকা দিলে অনায়াসেই মিলত রেস্টুরেন্টের লাইসেন্স। এছাড়াও কাওরান বাজার থেকে প্রতিদিন চাঁদা তোলা হতো। ফুটপাতে ব্যবসা, বাজার, মাদক ব্যবসায়ী ও আবাসিক হোটেল থেকে উঠত চাঁদা। এ টাকা মন্ত্রীর হাতে পৌঁছে দেয়ার জন্য দায়িত্ব ছিল মন্ত্রীর এপিএস মনির হোসেনসহ আরো দুইজনের ওপর। এ টাকার মোটা অংশ পেতেন আসাদুজ্জামান খান কামাল।
পাশাপাশি এ টাকার একটা ভাগ পেতেন তার ছেলে।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলপ্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। আন্দোলন নেতৃত্বহীন করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে তুলে নেয়ার নির্দেশও এসেছিল তার কাছ থেকে। আন্দোলন দমাতে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করার নির্দেশও দেন তিনি।

এদিকে আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্ত্রী লুৎফুল তাহমিনা খান, ছেলে জ্যোতি, মেয়ে সোফিয়া তাসনিম খান এবং একান্ত সচিব মনির হোসেনকে আসামি করে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে দুদক। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা যাতে দেশের বাইরে পালাতে না পারেন, সেজন্য ইতোমধ্যে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

আরও জানা যায়, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঘুস হিসাবে বস্তা বস্তা টাকা নিতেন। পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও ফায়ার সার্ভিস থেকে এ টাকা আদায় করা হতো। ঘুস আদায়ে তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব ড. হারুন অর রশীদ বিশ্বাসের নেতৃত্বে সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন তৎকালীন মন্ত্রী। এ সিন্ডিকেটের সদস্য ছিলেন যুগ্মসচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস, মন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মনির হোসেন, জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোল্লা ইব্রাহিম হোসেন ও মন্ত্রীর ছেলে সাফি মুদ্দাসির খান জ্যোতি। টাকা আদায় বা উত্তোলনে মূল ভূমিকা পালন করতেন ড. হারুন অর রশীদ বিশ্বাস। আসাদুজ্জামান খানের ছেলে জ্যোতি একপর্যায়ে হারুন অর রশীদ অবসরে গেলেও মন্ত্রণালয়ের সব ঘুস, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন।