ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই উৎসব। এই উৎসব আনন্দের প্রধান অনুষঙ্গ হলো নতুন পোশাক। ঈদের আনন্দ অনেকটাই ফিকে হয়ে যায় মন মতো নতুন পোশাক না পেলে।
ঈদের কয়েক মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি চলতে থাকে দেশের ফ্যাশন হাউসগুলোতে। নানা রং-ঢং ও আকার-আকৃতির বৈচিত্রে তৈরি হয় নতুন সব পোশাক। এবারের ঈদকে সামনে রেখে এরই মধ্যেই রকমারি পোশাকের পসরায় সেজেছে ফ্যাশন হাউসগুলো। এরইম মধ্যে শপিং মল থেকে শুরু করে সাধারণ রেডিমেড পোশাকের শোরুম এমনকি ফুটপাত ঘিরেও জমে উঠেছে ঈদের বাজার।
এবারের ঈদে লং কামিজ ও শাড়িকেই প্রধান্য দেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ফ্যাশন হাউসগুলোর কর্মকর্তারা। ছেলেদের ক্ষেত্রে বরাবরের মতোই থাকছে পাঞ্জাবী, শার্ট, টি-শার্ট। হাল ফ্যাশন, দেশীয় সংস্কৃতি, আর আরামের কথা মাথায় রেখেই এবার দেশিয় ফ্যাশন হাউজগুলো ডিজাইনে নিয়ে এসেছে নানা বৈচিত্র্য।
আসুন, এই ঈদে ফ্যাশন হাউসগুলোর বর্ণিল পোশাক আয়োজনে চোখ রাখি।
আড়ং
দেশীয় পোশাকের অন্যতম প্রধান হাউস আড়ংয়ের প্রতিটি শো-রুম সেজেছে বর্ণাঢ্য পোশাক সম্ভারে। এবারের ঈদ আয়োজনে থাকছে কাতান, বোহিমিয়ান, জাপানিজ আর্ট, কনটেমপরি জিওমেট্রিক, হ্যান্ড অ্যামব্রয়ডারি, জামদানির নকশাসহ বিভিন্ন ধরনের পোশাকের পসরা সাজিয়েছে আড়ং। আরও থাকছে জুতা, জুয়েলারি, ব্যাগ ইত্যাদি।
আড়ংয়ের ‘তাগা’ পোশাকের দাম পড়বে ১ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। সালোয়ার কামিজ ও শাড়ির ক্ষেত্রে দাম শুরু ২ হাজার টাকা থেকে। কাপড়ের ধরণ ও নকশার মান ভেদে দাম হতে পারে ৭০ হাজার বা তারও বেশি।
রঙ
চারটি বিশেষ বিষয়কে কেন্দ্র করেই সাজানো হয়েছে রঙয়ের এবারের ঈদ কালেকশন। বিষয়গুলো হল তুরস্কের হায়া সাফিয়া মসজিদ, ইন্দোনেশিয়ান বাটিক, কাঠখোদাই করে তৈরি গয়না এবং বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী গয়নার নকশা। ছেলেদের পোশাকের রং-এ প্রাধান্য পেয়েছে মেরুন, গাঢ় পেস্ট, সাদা, কালো, সবুজ, ছাই রং এবং ফিরোজা। মেয়েদের পোশাকের রংয়ে রয়েছে হলুদ, কমলা, ম্যাজেন্টা, সবুজ, নীল, ফিরোজা, বেগুনি, মেরুন ইত্যাদি রং। শাড়ির দাম ৫শ’ থেকে ১৫ হাজার টাকা, ছেলেদের পোশাকের দাম ৮শ’ থেকে সাড়ে ৫ হাজার টাকা। শিশুদের পোশাকের দাম ৩শ’ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে। গয়নার মূল্য আড়াইশ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা।
সাদাকালো
সাদা-কালো ফ্যাশন ঘরের এবারের ঈদ পোশাকের ডিজাইনে এবার অনুসরণ করা হয়েছে কিউবিজম শিল্পধারা। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ইউরোপে এই শিল্পধারার বিকাশ ঘটে। বিশ্বখ্যাত শিল্পী পাবলো পিকাসো এই ধারা নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তবে এই ধারাটির প্রবর্তক ছিলেন জর্জ ব্রাক। জ্যামিতিক আকার আয়তন এই শিল্পধারা উপস্থাপিত হয়। আমাদের দেশে কিউবিজম ধারা নিয়ে কাজ করেছেন বেশ কিছু শিল্পী। তাই এই আর্ট ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে সাদাকালোর এবারের পোশাকগুলো।
কিউবিজমের বিভিন্ন মোটিফ ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, টপস, স্কার্ট, পাঞ্জাবি, শার্ট, টি-শার্ট ইত্যাদি। সাদাকালোর পাঞ্জাবির দাম ১ হাজার ৪শ’ থেকে ১ হাজার ৭শ’ টাকা, শাড়ির দাম আড়াই হাজার থেকে চার হাজার টাকা, সালোয়ার কামিজের দাম পড়বে ২ হাজার ১শ’ থেকে ৩ হাজারের মধ্যে। এছাড়া আরও আছে টপস, কুর্তি, সালোয়ার কামিজ ইত্যাদি। সাদা-কালোর প্রতিটি বিপণন কেন্দ্রে পাওয়া যাবে ঈদের নতুন পোশাকগুলো।
অঞ্জনস্
গরম এবং বর্ষা এই দুইয়ে মিলিয়ে এবারের ঈদ। তাই এবারের ঈদে অঞ্জনসের পোশাকে প্রাধান্য পেয়েছে উজ্জ্বল রংগুলো। কমলা, বেগুনি, লাল, মেজেন্টা, মেরুন, নীল, ফিরোজা, সবুজ, গোলাপি ইত্যাদি রংগুলোই বেশি ব্যবহার করা হয়েছে। এমব্রয়ডারি, অ্যাপ্লিক, স্ক্রিনপ্রিন্ট, লেইস ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়েছে এবারের পোশাক ডিজাইনে। অঞ্জনস এবারের ঈদের পোশাকে মূলত সুতি ও লিলেনের কাপড় ব্যবহার করেছে। একই সঙ্গে উৎসবের আমেজ আনতে ব্যবহার করা হয়েছে সিল্ক। কাটিং ও প্যাটার্নে নানা বৈচিত্র্য দেখা যাবে এবারের ঈদ ফ্যাশনে। বিশেষ করে কামিজের ঝুলে বিভিন্ন ধরনের কাটিং বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। এবারো লম্বা লেন্থ থাকছে কামিজে। কামিজের পাশাপাশি লম্বা আনারকলি স্টাইলের জামাও থাকছে। অঞ্জনস এবারের ঈদের পোশাকে নতুনত্ব এনেছে কটির ব্যবহারের মাধ্যমে। কামিজের সঙ্গে থাকছে একই কাপড়ের লম্বা কটি। কটিগুলো কামিজের সঙ্গে সংযুক্ত করেই ডিজাইন করা হয়েছে। পোশাকে নকশা ফুটিয়ে তুলতে এমব্রয়ডারিকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
পোশাকের দাম নির্ভর করে কাপড় ও এর নকশার উপর। সালোয়ার কামিজের দাম হতে পারে ১৬০০ টাতা থেকে ৭৫০০ টাকা। শাড়ির দাম পড়বে ১ হাজার ৩শ’ টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা। পাঞ্জাবির দাম ৭শ’ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকার মধ্যে।
কে ক্রাফট
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প নিয়ে সাজানো হয়েছে কে ক্রাফটের ঈদ আয়োজন। ঈদ আয়োজনের পোশাক তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে নিজস্ব ডিজাইনে উইভিং করা তাঁতের কাপড়, সুতি, অ্যান্ডি, জয়সিল্ক, বেক্সি ভয়েল, বেক্সি জর্জেট, বেক্সি পপলিন, ক্রেপসিল্ক, অ্যান্ডিসিল্ক, ধুপিয়ানসিল্ক, বলাকাসিল্ক এবং মসলিন। স্ক্রিন প্রিন্ট, ব্লক, হাতের কাজ দিয়ে পোশাক ডিজাইন করা হয়েছে। তাছাড়া পোশাক অলংকরণে আরও ব্যবহৃত হয়েছে ইয়োক, পুঁথি, চুমকি, কারচুপি ইত্যাদি।
ঈদের উৎসবের আমেজ ধরে রাখতে রংয়ের ক্ষেত্রে বেছে নেওয়া হয়েছে উজ্জ্বল রংগুলো। উজ্জ্বল নীল, ম্যাজেন্টা, বাদামি, লাল, সি-গ্রিন, নীল ও সবুজের বিভিন্ন শেইড প্রাধাণ্য পেয়েছে পোশাকে। মেয়েদের পোশাকে রয়েছে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, টপস, কুর্তা। পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে গহনা, স্যান্ডেল এবং ব্যাগও পাওয়া যাবে এখানে।ছেলেদের জন্য রয়েছে শার্ট, পাঞ্জাবি, শর্ট-পাঞ্জাবি। বাচ্চাদের জন্যও রয়েছে বর্ণিল সব পোশাক। তাছাড়া কে ক্রাফট ঈদ আয়োজনে যুক্ত করেছে ঘর সাজানোর কিছু উপকরণ। কে ক্রাফটের এবারের পোশাকগুলো পাওয়া যাবে বনানী, বেইলি রোড, সীমান্ত স্কয়ার, সোবহানবাগ, মালিবাগ মৌচাক, মিরপুর, উত্তরা, চট্টগ্রাম এবং দেশীদশের আউটলেটগুলোতে।
সুঁইসুতা
ক্রেতাদের পছন্দ ও রুচি এবং চলতি ফ্যাশনের বিষয় মাথায় রেখে ফ্যাশন ঘর ‘সুঁইসুতা’ সাজিয়েছে এবারের ঈদ আয়োজন। এবারের আয়োজনে ছেলেদের জন্য আছে ফুল স্লিভ টি-শার্ট, ভি-নেক, পলো-শার্ট, পাঞ্জাবি। হ্যান্ড পেইন্ট, ব্লক, বাটিক, এম্ব্রয়ডারি ও বিভিন্ন মোটিফের পাঞ্জাবি পাওয়া যাবে। আজিজ সুপার মার্কেট, শহীদ ফারুক সড়ক, যাত্রাবাড়ি, বরিশাল ইত্যাদি আউটলেটে ঈদ আয়োজনের পোশাকগুলো পাইকারি ও খুচরা কিনতে পাওয়া যাচ্ছে।
জেন্টাল পার্ক
পুরুষদের জন্য স্লিমফিট ট্রেন্ডের পাঞ্জাবি নিয়ে ঈদ আয়োজন সাজিয়েছে জেন্টাল পার্ক। বিভিন্ন প্যাটার্নের শর্ট এবং লং পাঞ্জাবির সম্ভার রয়েছে এবারের ঈদ আয়োজনে। জেন্টাল পার্ক ওমেন শোরুমে থাকছে কামিজ, স্কার্ট, টপস, কেপ, কুর্তা ইত্যাদি। বাড়ির ছোট সদস্যদের জন্যও থাকছে জেন্টাল পার্কের আয়োজন। থাকছে জুতা, স্যান্ডেল আরও কিছু ফ্যাশন এক্সেসরিজ।
ঢাকা, সিলেট, খুলনা, বগুড়া, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার সহ দেশের প্রতিটি আউটলেটেই পাওয়া যাবে জেন্টাল পার্কের ঈদ আয়োজন।
ক্যাটস আই
ক্যাটস আইয়ের ঈদ কালেকশনে উৎসবের আমেজ আনতে, রংয়ের ক্ষেত্রে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। গতানুগতিক প্যাটার্নের পোশাক থেকে বেরিয়ে আনা হয়েছে ভিন্নতা।মেয়েদের জন্য ঈদ সম্ভারে রয়েছে গাউন কামিজ এবং ম্যাক্সি টিউনিক।
ক্যাটস আই-এর কো ব্র্যান্ড মুনসুন রেইনে রেয়েছে শুধু ছেলেদের পোশাক। ফরমাল এবং ক্যাজুয়াল শার্ট ও স্যুট থাকছে পুরুষদের জন্য। ট্রেন্ডি ফ্যাশন এক্সেসরিজও পাওয়া যাবে ক্যাটস আই ব্র্যান্ড নির্ধারিত আউটলেটে। এবারের ঈদে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে বিকাশ বা ক্রেডিট কার্ডে কেনাকাটায় ক্রেতারা পাবেন সর্বোচ্চ ১০% পর্যন্ত ছাড়।
চরকা
এবারের ঈদে চরকার সালোয়ার কামিজের প্রধান ট্রেন্ড থাকছে কাটিং ও প্যাটার্নে ভেরিয়েশন। নেকলাইন, বটমলাইন ও হাতা সবটাতেই এই বৈচিত্র্য চোখে পড়বে। লিলেন, কটন, শামু সিল্কের সঙ্গে সঙ্গে জর্জেট কাপড় বেশি ব্যবহার করা হয়েছে পোশাকের ফেব্রিক্স হিসেবে। আবহাওয়ার কারণে এই ঈদে প্রিন্টের প্রাধান্য বেশি দেখা যাবে। সালোয়ার কামিজ ওড়না তিনটি অংশে নানা বৈচিত্র্য থাকবে। সিঙ্গেল সালোয়ার কামিজের সঙ্গে প্রিন্টের ওড়না করা হয়েছে। কোথাও প্রিন্টের কামিজের সঙ্গে থাকছে সিঙ্গেল কালারের সালোয়ার কামিজ। কাপড়ের নকশায় মিক্সড মিডিয়ামের কাজ প্রাধান্য পেয়েছে। সিঙ্গেল কামিজগুলোতে মাল্টিকালার ও মাল্টি মিডিয়ামের ব্যবহারও দেখা যাবে। ওড়নায় লেস, কালারসহ বিভিন্ন এক্সেসরিজ ব্যবহার করে বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। বৃষ্টির একটা আবহ থাকবে বলে পোশাকের রঙে নীল ও সবুজের প্রাধান্য থাকবে। নীল ও সবুজের প্রায় সব টোন ব্যবহার করা হয়েছে ঈদের পোশাকে।
মেনজ ক্লাব
খাটো আর আটসাট পাঞ্জাবির পাশাপাশি ঈদ উপলক্ষ্যে মেনজ ক্লাব এনেছে লং লেন্থ স্লিমফিট প্যাটার্নের নতুন পাঞ্জাবির কালেকশন। অ্যাম্ব্রয়ডারি, ব্লক ইত্যাদি দিয়ে কাজ করা হয়েছে সুতি, সিল্ক, অ্যান্টি-কটনসহ বিভিন্ন ফেব্রিকের উপর। তরুণদের পছন্দের বিষয় মাথায় রেখে কালেকশনে রাখা হয়েছে প্রিন্টেড এবং উজ্জ্বল রংয়ের পাঞ্জাবি। তাছাড়া ডিজাইনের ক্ষেত্রে চোখে পড়বে প্যাটার্নের ভিন্নতা। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও সিলেট শোরুমে পাওয়া যাবে ঈদ কালেকশনের পাঞ্জাবি, শার্ট, টি-শার্ট, প্যান্ট, জুতাসহ নানা ফ্যাশন অনুষঙ্গ।
আবর্তন
বিশেষ প্যাটার্নে তৈরি ঈদ পোশাকের পসরায় সেজেছে আবর্তন। ব্যবহার করা হয়েছে মিক্সড কটন, এন্ডি-সিল্কসহ ঈদ উপযোগী সব কাপড়। কিছু ক্ষেত্রে উৎসবের রং প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। লিলেন কটন ও তাঁতের শাড়ির বিশেষ ডিজাইন আনা হয়েছে এবার। এছাড়াও যমুনা ফিউচার পার্কের শোরুমে থাকছে নারী ও পুরম্নষদের জন্য ডিজাইন বৈচিত্র্যের সিঙ্গেল কামিজ, পাঞ্জাবি, শাড়ির বিশেষ ঈদ কালেকশন। অন্যান্য শোরম্নম: মালিবাগ, ধানমণ্ডি, মিরপুর-১০ ও ওয়ারি।
বিএইচ