ষড়ঋতুর নাগরদোলায় চেপে এগিয়ে অাসছে শীত। বর্ষপঞ্জিকার হিসেবে হেমন্তের পরই আসে শীত, তবুও প্রকৃতিতে এখন শীত অনুভত হচ্ছে। সন্ধ্যার পর বইছে হালকা হিমেল হাওয়া। মধ্যরাতে কাঁথার খোঁজ আর ভোরবেলাতে গাছের পাতা ঘাসের ডগায় মুক্তার মতো জমা কুয়াশার দানা জানিয়ে দিচ্ছে শীত এলো বলে।
গ্রীষ্মপ্রধান এই দেশে শীত আসার আগেই আগাম প্রস্তুতি নেয়া উচিত। কারণ ইদানিং ঝুপ করেই হঠাৎ নেমে আসে হাঁড়কাঁপানো শীত। আগেভাগে প্রস্তুতি না নিলে শীতের অসুখ-বিসুখ সহজেই কাবু করে তুলতে পারে যে কাউকে।
গরম পোশাক বা লেপ-কম্বল ব্যবহারের প্রয়োজন এখনই হয়তো পড়ছে না। তবু সেসব নামিয়ে গোছগাছ করে নেওয়ার এই তো সময়।
পারিবারিক উষ্ণতার জন্য
শীতের রাতে সম্পর্কে উষ্ণতা থাকলেই চলবে না, পরিবারের সদস্যদের উষ্ণ রাখার জন্য চাই লেপ-কম্পল-কাঁথা।গত মৌসুমে তুলে রাখা লেপ-কম্বলে বের করে কড়ে রোদে রাখার এখনই সময়। দীর্ঘদিন গুটিয়ে রাখার ফলে লেপ-কম্বল-কাঁথাতে স্যাতস্যাতে ভাব আর গোমট গন্ধ অনুভূতি হতে পারে, কড়া রোদে কমপক্ষে ছয় ঘণ্টা রাখলে এ সমস্যা থাকবে না।
রোদে শুকানোর পর এগুলো কপাটবন্ধ আলমারিতে না রেখে ওয়ারড্রোবে ভাঁজ করে রাখতে পারেন। লেপ রোদে দেওয়ার পর অবশ্যই রোল করে ভাঁজ করে রাখতে হবে। লেপ বা কম্বলের কভার, ধুয়ে রোদে শুকিয়ে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করে নিন।অনেক দিন তুলে রাখা হলে লেপ বা কম্বলে পোকা ধরতে পারে। প্রয়োজনমতো ঠিক করিয়ে নিন বা নতুন কিনে নিন।
তৈরি রাখুন গরম পোশাক
প্রায় বছর খানেক ধ:রে আলমারিতে পড়ে থাকা গরম পোশাক শীত নামার আগেই ব্যবহারের উপযোগী করে নিন।সোয়েটার, শাল, চাদর, জ্যাকেট ইত্যাদি পোশাক ভালো করে ধুয়ে অবশ্যই কড়া রোদে শুকিয়ে রাখতে হবে। রোদ থেকে তোলার পর ভালোভাবে ঝেড়ে রাখতে হবে শীত পোশাকগুলো।
শীতকালে সুতি, লিলেনের বদলে সিল্ক ও তসরের পোশাক বাছাই করুন। বাইরে বের হলে জ্যাকেট, পুলওভার ও কার্ডিগান নিন। প্রয়োজন হলে মোজা, টুপি ও গ্লাভস পরতে পরেন। বয়স্ক ও ছোটদের জামাকাপড়ের বিষয়ে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখবেন। শিশুদের অতিরিক্ত গরমের পোশাক পরাবেন না, এতে ঘেমে বরং ঠাণ্ডা বসে যেতে পারে। শিশুদের পোশাক বাছাই করুন দেখে শুনে।
ত্বক ও চুলের যত্ন
শীতকালে ত্বক আর্দ্রতা হারায়। ঘরের ভেতর ও বাইরের তাপমাত্রায় যেহেতু একটা পার্থক্য দেখা যায়, তাই ত্বকের আর্দ্রতার ভারসাম্যও নষ্ট হয়ে যায়। স্বাভাবিকভাবেই শুকনো হাওয়ায় ত্বক ফাটতে শুরু করে। তাই দিনে তিন-চারবার ময়শ্চারাইজার লাগানো দরকার। মুখ ধোয়ার পর মুখে ভেজে ভাব থাকা অবস্থায় ময়শ্চারাইজার লাগান। শীতকালে শরীরের অয়েল গ্রান্ড থেকে তেল কম নিঃসৃত হয় বলে হাত-পায়ের ত্বক শুষ্ক ও খসখসে হয়ে যায়। তাই গোসলের পরপরই ত্বকে অলিভ অয়েল ম্যাসাজ করে নিতে হবে, এতে আর্দ্রভাব অনেকক্ষণ বজায় থাকে। মাঝে মাঝে ম্যানিকিউর ও প্যাডিকিওর করাতে পারেন। এ সময় চুলের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। আগা ফাটা, নির্জীব হয়ে যাওয়া, গ্রোথ কমে যাওয়া, খুশকি ও চুল পড়া শীতকালে বেড়ে যায়। তাই চুলে নিয়মিত তেল ম্যাসাজ করতে হবে। সপ্তাহে দুইবারের বেশি শ্যাম্পু না করাই ভালো। চুলে ময়শ্চারাইজার বজায় রাখার জন্য ভালো কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
ব্যায়াম চর্চা শুরু
শীতের দিনে ব্যায়াম দারুণ উপকারী। তাই এখন থেকেই একটু একটু করে ব্যায়াম চর্চা শুরু করুন।সর্দি কাশির মতো সমস্যা থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। তবে এক্সারসাইজ করা ছাড়াও ব্যাডমিন্টন, টেনিস ও সাইক্লিং করা যেতে পারে। পরিবারের সবাই মিলেও একটা খেলার আয়োজন করতে পারেন। এক্সারসাইজের সাথে সাথে আনন্দও পেতে পারেন।