ঢাকা , বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্মৃতিতে হুমায়ূন আহমেদ

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ হুমায়ূন আহমেদ সদলবলে ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসেন। তার ছোট গাড়িতে গাদাগাদি করে বসলেও পাঁচজনের বেশি বসা যায় না বলে তিনি একটা মাইক্রোবাস কিনে ফেললেন। আর কিনেই পুরো পরিবার নিয়ে ঢাকার বাইরে যাত্রা হলো শুরু। ১৯৯২ সালের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ, ‘সময় প্রকাশন’-এর একটি উপন্যাস লেখা প্রায় শেষ পর্যায়ে। লেখা শেষ হওয়ার পরপরই বই দেখার জন্য অস্থির হয়ে যেতেন তিনি। আমরা যারা তখন হুমায়ূন আহমেদের নিয়মিত প্রকাশক ছিলাম, তারা এটা মাথায় রেখেই বইয়ের কাজ করতাম। যখন যতটুকু লেখা শেষ হতো, ততটুকুই মেকআপ দিয়ে ফর্মা মিল করে প্রেসে পাঠিয়ে দেওয়া হতো ছাপার জন্য। বইয়ের প্রচ্ছদও অগ্রিম ছাপিয়ে রাখা হতো। অক্টোবরের শেষ দিন হুমায়ূন ভাই আমার হাতে জলপদ্ম বইয়ের শেষ অংশ এবং উৎসর্গ দিয়ে বললেন, ‘আমি যশোর যাচ্ছি।

তুমি বই নিয়ে কাল আসো।’ যশোরে একটি বইমেলা শুরু হয়েছে ঢাকার প্রকাশকদের অংশগ্রহণে। এক দিনের মধ্যে বইয়ের কাজ শেষ করে খুব ভোরে ১০০ বইয়ের বান্ডিল নিয়ে যশোরগামী বাসে উঠে বসলাম। দুপুরে যশোর পৌঁছে বইমেলায় চলে গেলাম। সেখানে বইয়ের বান্ডিল রেখে দুটি বই হাতে নিয়ে সার্কিট হাউসের দিকে রওনা হলাম। হুমায়ূন আহমেদের কক্ষে ঢুকে দেখি, স্বভাবসুলভভাবে তিনি খালি গায়ে একটা চেয়ারে বসে আছেন। ঘরের মেঝেতে এক ফুটফুটে শিশু খালি গায়ে হামাগুড়ি দিয়ে বেড়াচ্ছে। রুমে একটা কিছু কাজে ব্যস্ত হুমায়ূন গিন্নি গুলতেকিন আহমেদ। আমি হুমায়ূন আহমেদের দিকে বই দুটি বাড়িয়ে দিলাম, বই দুটি হাতে নিয়ে হুমায়ূন ভাই আনন্দে প্রায় লাফিয়ে উঠলেন। প্রতিবার নতুন বই হাতে নিয়ে এ রকম একটি অনুভূতি প্রকাশ করতেন তিনি।

যশোর থেকে ঢাকায় ফেরার পরদিন বিকেলে শহীদুল্লাহ হলের বাসায় গেলাম হুমায়ূন ভাইয়ের নতুন বইয়ের রয়্যালটি দিতে। তিনি আমাকে বললেন, ‘ফরিদ, ১৩ নভেম্বর আমার জন্মদিন। অনেক বছর পর আমার ছোট ভাই জাফর ইকবাল পরিবার নিয়ে দেশে আসছে। এ উপলক্ষে একটি বই বের করতে চাই। এক সপ্তাহ সময় আছে, তুমি পারবে তো? রয়্যালটি এখন দিতে হবে না। এই টাকা দিয়ে তুমি কাল কাগজ কিনে আর আজ রাতেই সমর মজুমদারের সঙ্গে দেখা কর। এই নাও বইয়ের নাম, একটা কভার বানাতে বলো খুব তাড়াতাড়ি; না, একটা না, দু-তিনটা ডিজাইন করতে বোলো। না থাক, তোমাকে একা যেতে হবে না। আমিও যাব।’

সন্ধ্যার পর আমার বাইকের পেছনে চেপে বসলেন হুমায়ূন ভাই। আমার বাইকে চড়ে হুমায়ূন ভাই সম্ভবত খুব মজা পেতেন। আমরা শিল্পী সমর মজুমদারের বাসায় এলাম। শিল্পীর কাছে তার তৈরি করা কী কী ডিজাইন আছে, সেগুলো দেখতে চাইলেন হুমায়ূন ভাই। সমরদা একের পর এক ডিজাইন দেখিয়ে চলেছেন আর হুমায়ূন ভাই ঘাড় নাড়ছেন। পরে সিদ্ধান্ত হলো সমরদা নতুন ডিজাইন বানাবেন। অনেকক্ষণ বসলাম আমরা, চা-সিগারেট পান করা হলো। ‘এখন উঠতে হয়।’ ওঠার সময় সমরদা বললেন, ‘হুমায়ূন ভাই, একটা ডিজাইন আপনাকে দেখাতে চাই। এটা আপনার বইয়ের জন্য নয়। আমি একটা ভিন্ন ধরনের ডিজাইন করেছি, তা-ই আপনাকে দেখাব।’ ডিজাইনটা হুমায়ূন ভাই হাতে নিলেন, একদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। তারপর আমার হাতে ডিজাইনটা দিয়ে বললেন, ‘এটাই আমার পছন্দ। তুমি কাল প্রসেস করতে দিয়ে দাও। আর কাল বিকেলে কপি নিতে আসো।’

পরদিন বিকেল থেকে শুরু হলো নতুন বইয়ের কাজ। সকালে শহীদুল্লাহ হলের বাসায় গিয়ে কপি নিয়ে আসি আর রাতে সেই কপির প্রুফ দিয়ে আসি। বই প্রায় শেষ পর্যায়ে। একদিন সকালে বাসায় গেলাম। গুলতেকিন ভাবি দরজা খুলে আমার হাতে কয়েকটি কপি দিয়ে বললেন, ‘এগুলো কম্পোজে দিয়ে আপনাকে জামালপুর চলে যেতে বলেছে ও।’ আমি রওনা দিলাম জামালপুরের উদ্দেশে।

নানা ঘটনায় নির্দিষ্ট দিনে বইটি আর বের করা গেল না। আমার মন বেশ খারাপ। ১৩ নভেম্বর, ১৯৯২, বিকেলে হুমায়ূন ভাইয়ের বাসায় গেলাম কেক নিয়ে। একান্ত পারিবারিকভাবে হুমায়ূন ভাই জাফর ইকবালসহ সবাইকে নিয়ে জন্মদিন পালন করলেন। হুমায়ূন ভাই আমাকে পরদিন সকালে আসতে বললেন।

১৪ নভেম্বর খুব সকাল, হুমায়ূন ভাই আমার হাতে কিছু কপি দিয়ে বললেন, ‘তুমি কাজ শুরু কর, আমি ইউনিভার্সিটির ক্লাসটা নিয়ে আসছি। আজই বই শেষ করে দেব।’ আজিমপুর সুপার মার্কেটের ‘নূশা কম্পিউটার’-এ বইয়ের শেষ অংশের কাজ চলছে। তখন সকাল নয়টার দিকে আমার এক আত্মীয় সেখানে এল ভয়াবহ এক দুঃসংবাদ নিয়ে। কাল রাতে আমার আম্মা মারা গেছেন। আমার চোখ বুজে এল, সবকিছু অন্ধকার হয়ে গেল। আমি বাড়ি চলে এলাম। পরবর্তী চার দিন আমার আর কোনো কিছু মনে ছিল না। কুলখানি শেষে আবার রওনা দিলাম ঢাকার পথে। বাসে বসে মনে হলো, একটি বইয়ের কাজ করছিলাম আমি, বইটির কী হলো? হুমায়ূন ভাই নতুন বইয়ের মুখ দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে ছিলেন। তিনি কি জানেন আমি কোথায়? তাকে তো কোনো খবর দিতে পারিনি। নিশ্চয় লেখক রাগ করেছেন।

ঢাকা পৌঁছেই লেখকের বাসায় গেলাম। সন্ধ্যারাত, শহীদুল্লাহ হলের দ্বিতলের বাসার দরজা খুলল লেখকের বড় কন্যা নোভা। সে আমাকে বসতে বলে ভেতরে চলে গেল, একটু পর ফিরে এসে আমার সামনের টেবিলে একটা বই রেখে বলল, ‘বইটা দেখেন, ড্যাডি ক্লাবে গেছে, চলে আসবে, আপনি বসেন আঙ্কেল, আপনাকে চা দিতে বলি।’ আমার সামনে সমর মজুমদারের করা প্রচ্ছদে মোড়া হুমায়ূন আহমেদের আয়নাঘর বইটি দেখে আমি চমকে উঠলাম। এ কী? এই বই তো আমার প্রকাশ করার কথা! তবে কী

পূর্বাপর ঘটনা: সেদিন ইউনিভার্সিটির ক্লাস শেষে বাসায় এসে আমার জন্য অপেক্ষা করেছেন হুমায়ূন ভাই। পরে আমার খোঁজে আসেন নূশা কম্পিউটারে। সেখানে অপারেটরের কাছ থেকে শোনেন আমার দুঃসংবাদ। এরপর তিনি নিজেই কম্পিউটারের সামনে বসে অসমাপ্ত প্রুফ সংশোধন করে, বইয়ের ট্রেসিং অর্ডার দেন। যে প্রেসে কাগজ দেওয়া ছিল, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বইটি ছাপার ও বাঁধাইয়ের ব্যবস্থা করেন। এভাবেই সময় প্রকাশন থেকে লেখক নিজে বের করেন হুমায়ূন আহমেদের আয়নাঘর।

লেখক: প্রকাশক, সময় প্রকাশন

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

স্মৃতিতে হুমায়ূন আহমেদ

আপডেট টাইম : ১১:১৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ নভেম্বর ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ হুমায়ূন আহমেদ সদলবলে ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসেন। তার ছোট গাড়িতে গাদাগাদি করে বসলেও পাঁচজনের বেশি বসা যায় না বলে তিনি একটা মাইক্রোবাস কিনে ফেললেন। আর কিনেই পুরো পরিবার নিয়ে ঢাকার বাইরে যাত্রা হলো শুরু। ১৯৯২ সালের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ, ‘সময় প্রকাশন’-এর একটি উপন্যাস লেখা প্রায় শেষ পর্যায়ে। লেখা শেষ হওয়ার পরপরই বই দেখার জন্য অস্থির হয়ে যেতেন তিনি। আমরা যারা তখন হুমায়ূন আহমেদের নিয়মিত প্রকাশক ছিলাম, তারা এটা মাথায় রেখেই বইয়ের কাজ করতাম। যখন যতটুকু লেখা শেষ হতো, ততটুকুই মেকআপ দিয়ে ফর্মা মিল করে প্রেসে পাঠিয়ে দেওয়া হতো ছাপার জন্য। বইয়ের প্রচ্ছদও অগ্রিম ছাপিয়ে রাখা হতো। অক্টোবরের শেষ দিন হুমায়ূন ভাই আমার হাতে জলপদ্ম বইয়ের শেষ অংশ এবং উৎসর্গ দিয়ে বললেন, ‘আমি যশোর যাচ্ছি।

তুমি বই নিয়ে কাল আসো।’ যশোরে একটি বইমেলা শুরু হয়েছে ঢাকার প্রকাশকদের অংশগ্রহণে। এক দিনের মধ্যে বইয়ের কাজ শেষ করে খুব ভোরে ১০০ বইয়ের বান্ডিল নিয়ে যশোরগামী বাসে উঠে বসলাম। দুপুরে যশোর পৌঁছে বইমেলায় চলে গেলাম। সেখানে বইয়ের বান্ডিল রেখে দুটি বই হাতে নিয়ে সার্কিট হাউসের দিকে রওনা হলাম। হুমায়ূন আহমেদের কক্ষে ঢুকে দেখি, স্বভাবসুলভভাবে তিনি খালি গায়ে একটা চেয়ারে বসে আছেন। ঘরের মেঝেতে এক ফুটফুটে শিশু খালি গায়ে হামাগুড়ি দিয়ে বেড়াচ্ছে। রুমে একটা কিছু কাজে ব্যস্ত হুমায়ূন গিন্নি গুলতেকিন আহমেদ। আমি হুমায়ূন আহমেদের দিকে বই দুটি বাড়িয়ে দিলাম, বই দুটি হাতে নিয়ে হুমায়ূন ভাই আনন্দে প্রায় লাফিয়ে উঠলেন। প্রতিবার নতুন বই হাতে নিয়ে এ রকম একটি অনুভূতি প্রকাশ করতেন তিনি।

যশোর থেকে ঢাকায় ফেরার পরদিন বিকেলে শহীদুল্লাহ হলের বাসায় গেলাম হুমায়ূন ভাইয়ের নতুন বইয়ের রয়্যালটি দিতে। তিনি আমাকে বললেন, ‘ফরিদ, ১৩ নভেম্বর আমার জন্মদিন। অনেক বছর পর আমার ছোট ভাই জাফর ইকবাল পরিবার নিয়ে দেশে আসছে। এ উপলক্ষে একটি বই বের করতে চাই। এক সপ্তাহ সময় আছে, তুমি পারবে তো? রয়্যালটি এখন দিতে হবে না। এই টাকা দিয়ে তুমি কাল কাগজ কিনে আর আজ রাতেই সমর মজুমদারের সঙ্গে দেখা কর। এই নাও বইয়ের নাম, একটা কভার বানাতে বলো খুব তাড়াতাড়ি; না, একটা না, দু-তিনটা ডিজাইন করতে বোলো। না থাক, তোমাকে একা যেতে হবে না। আমিও যাব।’

সন্ধ্যার পর আমার বাইকের পেছনে চেপে বসলেন হুমায়ূন ভাই। আমার বাইকে চড়ে হুমায়ূন ভাই সম্ভবত খুব মজা পেতেন। আমরা শিল্পী সমর মজুমদারের বাসায় এলাম। শিল্পীর কাছে তার তৈরি করা কী কী ডিজাইন আছে, সেগুলো দেখতে চাইলেন হুমায়ূন ভাই। সমরদা একের পর এক ডিজাইন দেখিয়ে চলেছেন আর হুমায়ূন ভাই ঘাড় নাড়ছেন। পরে সিদ্ধান্ত হলো সমরদা নতুন ডিজাইন বানাবেন। অনেকক্ষণ বসলাম আমরা, চা-সিগারেট পান করা হলো। ‘এখন উঠতে হয়।’ ওঠার সময় সমরদা বললেন, ‘হুমায়ূন ভাই, একটা ডিজাইন আপনাকে দেখাতে চাই। এটা আপনার বইয়ের জন্য নয়। আমি একটা ভিন্ন ধরনের ডিজাইন করেছি, তা-ই আপনাকে দেখাব।’ ডিজাইনটা হুমায়ূন ভাই হাতে নিলেন, একদৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। তারপর আমার হাতে ডিজাইনটা দিয়ে বললেন, ‘এটাই আমার পছন্দ। তুমি কাল প্রসেস করতে দিয়ে দাও। আর কাল বিকেলে কপি নিতে আসো।’

পরদিন বিকেল থেকে শুরু হলো নতুন বইয়ের কাজ। সকালে শহীদুল্লাহ হলের বাসায় গিয়ে কপি নিয়ে আসি আর রাতে সেই কপির প্রুফ দিয়ে আসি। বই প্রায় শেষ পর্যায়ে। একদিন সকালে বাসায় গেলাম। গুলতেকিন ভাবি দরজা খুলে আমার হাতে কয়েকটি কপি দিয়ে বললেন, ‘এগুলো কম্পোজে দিয়ে আপনাকে জামালপুর চলে যেতে বলেছে ও।’ আমি রওনা দিলাম জামালপুরের উদ্দেশে।

নানা ঘটনায় নির্দিষ্ট দিনে বইটি আর বের করা গেল না। আমার মন বেশ খারাপ। ১৩ নভেম্বর, ১৯৯২, বিকেলে হুমায়ূন ভাইয়ের বাসায় গেলাম কেক নিয়ে। একান্ত পারিবারিকভাবে হুমায়ূন ভাই জাফর ইকবালসহ সবাইকে নিয়ে জন্মদিন পালন করলেন। হুমায়ূন ভাই আমাকে পরদিন সকালে আসতে বললেন।

১৪ নভেম্বর খুব সকাল, হুমায়ূন ভাই আমার হাতে কিছু কপি দিয়ে বললেন, ‘তুমি কাজ শুরু কর, আমি ইউনিভার্সিটির ক্লাসটা নিয়ে আসছি। আজই বই শেষ করে দেব।’ আজিমপুর সুপার মার্কেটের ‘নূশা কম্পিউটার’-এ বইয়ের শেষ অংশের কাজ চলছে। তখন সকাল নয়টার দিকে আমার এক আত্মীয় সেখানে এল ভয়াবহ এক দুঃসংবাদ নিয়ে। কাল রাতে আমার আম্মা মারা গেছেন। আমার চোখ বুজে এল, সবকিছু অন্ধকার হয়ে গেল। আমি বাড়ি চলে এলাম। পরবর্তী চার দিন আমার আর কোনো কিছু মনে ছিল না। কুলখানি শেষে আবার রওনা দিলাম ঢাকার পথে। বাসে বসে মনে হলো, একটি বইয়ের কাজ করছিলাম আমি, বইটির কী হলো? হুমায়ূন ভাই নতুন বইয়ের মুখ দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে ছিলেন। তিনি কি জানেন আমি কোথায়? তাকে তো কোনো খবর দিতে পারিনি। নিশ্চয় লেখক রাগ করেছেন।

ঢাকা পৌঁছেই লেখকের বাসায় গেলাম। সন্ধ্যারাত, শহীদুল্লাহ হলের দ্বিতলের বাসার দরজা খুলল লেখকের বড় কন্যা নোভা। সে আমাকে বসতে বলে ভেতরে চলে গেল, একটু পর ফিরে এসে আমার সামনের টেবিলে একটা বই রেখে বলল, ‘বইটা দেখেন, ড্যাডি ক্লাবে গেছে, চলে আসবে, আপনি বসেন আঙ্কেল, আপনাকে চা দিতে বলি।’ আমার সামনে সমর মজুমদারের করা প্রচ্ছদে মোড়া হুমায়ূন আহমেদের আয়নাঘর বইটি দেখে আমি চমকে উঠলাম। এ কী? এই বই তো আমার প্রকাশ করার কথা! তবে কী

পূর্বাপর ঘটনা: সেদিন ইউনিভার্সিটির ক্লাস শেষে বাসায় এসে আমার জন্য অপেক্ষা করেছেন হুমায়ূন ভাই। পরে আমার খোঁজে আসেন নূশা কম্পিউটারে। সেখানে অপারেটরের কাছ থেকে শোনেন আমার দুঃসংবাদ। এরপর তিনি নিজেই কম্পিউটারের সামনে বসে অসমাপ্ত প্রুফ সংশোধন করে, বইয়ের ট্রেসিং অর্ডার দেন। যে প্রেসে কাগজ দেওয়া ছিল, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বইটি ছাপার ও বাঁধাইয়ের ব্যবস্থা করেন। এভাবেই সময় প্রকাশন থেকে লেখক নিজে বের করেন হুমায়ূন আহমেদের আয়নাঘর।

লেখক: প্রকাশক, সময় প্রকাশন