ঢাকা , মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘ঘরে খাওন নাই, হাতে কাজ কাম নাই, কেমনে বাঁচবাম’

প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে অথৈ তলিয়ে গেছে কৃষক-কৃষাণীদের স্বপ্নসাধ। বোরো মওসুমের এই সময়ে গোটা হাওরাঞ্চলে ধান কাটা, মাড়াই আর ঘরে ফসল তোলায় ব্যস্ত সময় পার করার কথা তাদের। নতুন ধানের মৌ মৌ গন্ধ, পাখির কলরব, দুরন্ত শিশুদের দৌঁড়ঝাপ আর রাখালির সুমধুর বাঁশির সুরে যেখানে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠার কথা চিরচেনা গ্রাম বাংলার। কিন্তু সেখানে ফসলহারা কৃষকদের এখনো দুঃস্বপ্ন তাড়া করছে।

সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনার ৪৮টি উপজেলার প্রায় ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে বৃহত্তর হাওর অঞ্চল। এই সাতটি জেলার সমষ্টিগত হাওরাঞ্চল শুধু বাংলাদেশ নয় এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ হাওরাঞ্চল। উদ্বৃত্ত খাদ্যভাণ্ডার ও মৎস্যসম্পদের আঁধার গোটা হাওরাঞ্চলে এখন হাজার হাজার নারী-পুরুষ খাদ্যাভাব, বিশুদ্ধ পানীয়, চিকিৎসাসহ হাজারো সমস্যার বেড়াজালে ঘুরপাক খাচ্ছেন। বাধ্য হয়ে খাদ্য ও কাজের সন্ধানে অসংখ্য লোকজন এখন শহরে ছুটছেন।

বর্ষায় একেকটা হাওরের বিশাল রুদ্ররূপ ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে। সে সময় জীবন ও জীবিকার সন্ধানে বিশাল ঢেউ অতিক্রম ছোট ছোট ডিঙ্গি নিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জেলেরা মাছ ধরেন। কিন্তু তীব্র গ্যাসের কারণে বিপুল পরিমাণ মাছ মরে যাওয়ায় তাও রুদ্ধ হয়ে গেছে। হাওরকেন্দ্রিক জীবনব্যবস্থার কারণে ভরা বর্ষায় নানা পার্বন ও বিয়ের ধূম পড়লেও এবার দিন-তারিখ ধার্য করার পরেও অসংখ্য বিয়ে ভেঙে গেছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে। এতে দায়গ্রস্ত পিতামাতাও কন্যাসন্তান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। উৎসবের পরিবর্তে হাওরাঞ্চলে এখন কেবলি বিষাদের কালোছায়া বিরাজ করছে। তাই বাঁচার তাগিয়ে অসহায় মানুষের কাফেলা শহরমুখী। এতদিন শহরের বিভিন্ন স্থানে ১৫ টাকা মূল্যের যে ওএমএসের চাল দেয়া হতো তাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শহরেও তাদের এখন এক অনিশ্চিত সময়ের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করতে হচ্ছে।

স্মরণকালের ভয়াবহতম বিপর্যয়ে বিপর্যস্ত সেখানকার ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সরকার যে ত্রাণসহায়তা দিচ্ছে সেখানেও অসহায় মানুষের


ত্রাণ গ্রাস করা শুরু করেছেন প্রভাবশালী দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা। এই অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের বেশির ভাগই ত্রাণ থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়েছেন। ইতোমধ্যে নেত্রকোনার খালিয়াজুরী, কলমাকান্দা, কেন্দুয়াসহ বিভিন্ন স্থানে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বঞ্চিত ক্ষতিগ্রস্তরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন।

হাওরাঞ্চলে ফসলহারা অভাবী মানুষের সাহায্যার্থে এখন পর্যন্ত এনজিওদের ত্রাণসহায়তা প্রদানের লক্ষণ বা তৎপড়তা দেখা যাচ্ছে না। বরং সুদে দেয়া কিস্তির টাকা কোন কৌশলে আদায় করা যায় সেই সুযোগের প্রহর গুনছে এনজিওরা। অনেক সুযোগ-সন্ধানী এনজিওর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের এক ধরনের ক্ষোভ পরিলক্ষিত হচ্ছে। এতদিন কৃষক আর গরিব মানুষের অধিকার ও অসহায়ত্বকে পুঁজি করে যেসব রাজনীতিক, বিত্তশালী ও মানবাধিকার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ গলাবাজি করেছেন তারাও আজ নীরব হয়ে গেছেন। এর বাইরে অবশ্য সচেতন ব্যক্তিদের বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণসহায়তার দাবি জানিয়ে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।

চলতি বোরো মওসুম শুরুর আগেই অকাল বন্যা ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মোহনগঞ্জের চরহাইজদা, খালিয়াজুরীর কিত্তনখলাসহ একেক করে সব বাঁধ ভেঙে নেত্রকোনার ছোট-বড় ১৪০টি হাওর তলিয়ে ৮০ থেকে ৯০ ভাগ ফসল তলিয়ে যায়। জেলায় ১ লাখ ৮০ হাজার ১০২ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়। তন্মধ্যে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৩২০ হেক্টর ফসল অর্জিত হলেও আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে কাঁচাপাকা ফসল তলিয়ে যায়। ফসল হারানোর শোক কাটিয়ে না উঠতেই গোটা হাওরাঞ্চলে অজ্ঞাত বিষাক্ত গ্যাসে শত শত টন মাছ মরে হাওরের পানিতে ভাসতে থাকে। সেই মাছ খেয়ে হাজার হাজার হাঁসও মরতে থাকে। একের পর এক বিপর্যয়ে কৃষক-কৃষাণীদের বুকফাটা আর্তনাদে হাওরাঞ্চলে বিষাদের কালোছায়া নেমে আসে।

খালিয়াজুরী উপজেলার কৃষ্টপুর এলাকার কৃষক তারা মিয়া, রুস্তম আলী, ঈমান আলী সাতগাঁও গ্রামের পরিমল বিশ্বাস ও বেলারানী সাহা তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘ফসল হারাইয়া আমরা এহন নিঃস্ব হইয়্যা পড়ছি। ঘরে খাওন নাই, হাতে কাজ কাম নাই, কেমনে বাঁচবাম কিছুই বুজতাছি না। হগলে কইতাছে প্রধানমন্ত্রী নাহি এহানে আইবো। আমরার দুঃখ-কষ্ট দূর করার লাইগ্যা এইবার যদি তিনি কিছু একটা করেন এই আশাই করতাছি।’

বিভিন্ন তথ্য সূত্র ও অনুসন্ধানে দেখা যায়, গোটা হাওরাঞ্চলে বোরো ফসল রক্ষার জন্য প্রতি বছর বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের একশ্রেণীর দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা ও ঠিকাদারেরা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সামান্য পানির তোরে নড়বড়ে বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়ে যাওয়ার ঘটনা বারবারই ঘটছে। অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের অভাবে পাউবোর কর্মকর্তা ও ঠিকাদারেরা পার পেয়ে যান বলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। এর আগেও যখন বাঁধ ভেঙে ফসলহানির ঘটনা ঘটে তখনো গণমাধ্যমে এ নিয়ে লেখালেখি ও আলোচনা-সমালোচনা হলেও সময়ের সাথে সাথে এক সময় সব চাপা পড়ে যায়। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা জানান, যতদিন পর্যন্ত ফসল রক্ষার বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের বিষয়টির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া না হবে এবং দুর্নীতিগ্রস্তদের শাস্তির মুখোমুখি দাঁড় করাতে না পারলে কখনোই এর কোনো পরিবর্তন ঘটবে বলে আশা করা যায় না।

নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক বিলাস চন্দ্র পাল বলেন, অকাল বন্যায় ফসল নিমজ্জিত হয়ে জেলায় কমপক্ষে ৭০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। যদিও এই মুহূর্তে সৃষ্ট পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার জন্য কিছু করার নেই। কিন্তু রোপা-আমন, ভুট্টা, গম, সরিষা, কলাইসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদনে কৃষকদের যাতে সহায়তা করা যায় আমরা সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছি। নেত্রকোনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন আহমদ বলেন, হাওরে বিষাক্ত গ্যাসের প্রভাবে জেলায় ১১৮ টন মাছ মরে পানিতে ভেসে ওঠে। এই ক্ষতি অন্য যেকোনো জেলার চেয়ে অনেক বেশি। ক্ষতি যাতে কিছুটা হলেও কাটিয়ে ওঠা যায় সেই লক্ষ্যে জুন-জুলাই মাসে মুক্ত জলাশয়ে ১১ টন রুই, কাতলা, মৃগেলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পোনা অবমুক্ত করা হবে।

 

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

‘ঘরে খাওন নাই, হাতে কাজ কাম নাই, কেমনে বাঁচবাম’

আপডেট টাইম : ০২:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ মে ২০১৭

প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে অথৈ তলিয়ে গেছে কৃষক-কৃষাণীদের স্বপ্নসাধ। বোরো মওসুমের এই সময়ে গোটা হাওরাঞ্চলে ধান কাটা, মাড়াই আর ঘরে ফসল তোলায় ব্যস্ত সময় পার করার কথা তাদের। নতুন ধানের মৌ মৌ গন্ধ, পাখির কলরব, দুরন্ত শিশুদের দৌঁড়ঝাপ আর রাখালির সুমধুর বাঁশির সুরে যেখানে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠার কথা চিরচেনা গ্রাম বাংলার। কিন্তু সেখানে ফসলহারা কৃষকদের এখনো দুঃস্বপ্ন তাড়া করছে।

সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনার ৪৮টি উপজেলার প্রায় ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে বৃহত্তর হাওর অঞ্চল। এই সাতটি জেলার সমষ্টিগত হাওরাঞ্চল শুধু বাংলাদেশ নয় এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ হাওরাঞ্চল। উদ্বৃত্ত খাদ্যভাণ্ডার ও মৎস্যসম্পদের আঁধার গোটা হাওরাঞ্চলে এখন হাজার হাজার নারী-পুরুষ খাদ্যাভাব, বিশুদ্ধ পানীয়, চিকিৎসাসহ হাজারো সমস্যার বেড়াজালে ঘুরপাক খাচ্ছেন। বাধ্য হয়ে খাদ্য ও কাজের সন্ধানে অসংখ্য লোকজন এখন শহরে ছুটছেন।

বর্ষায় একেকটা হাওরের বিশাল রুদ্ররূপ ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে। সে সময় জীবন ও জীবিকার সন্ধানে বিশাল ঢেউ অতিক্রম ছোট ছোট ডিঙ্গি নিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জেলেরা মাছ ধরেন। কিন্তু তীব্র গ্যাসের কারণে বিপুল পরিমাণ মাছ মরে যাওয়ায় তাও রুদ্ধ হয়ে গেছে। হাওরকেন্দ্রিক জীবনব্যবস্থার কারণে ভরা বর্ষায় নানা পার্বন ও বিয়ের ধূম পড়লেও এবার দিন-তারিখ ধার্য করার পরেও অসংখ্য বিয়ে ভেঙে গেছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে। এতে দায়গ্রস্ত পিতামাতাও কন্যাসন্তান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। উৎসবের পরিবর্তে হাওরাঞ্চলে এখন কেবলি বিষাদের কালোছায়া বিরাজ করছে। তাই বাঁচার তাগিয়ে অসহায় মানুষের কাফেলা শহরমুখী। এতদিন শহরের বিভিন্ন স্থানে ১৫ টাকা মূল্যের যে ওএমএসের চাল দেয়া হতো তাও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। শহরেও তাদের এখন এক অনিশ্চিত সময়ের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করতে হচ্ছে।

স্মরণকালের ভয়াবহতম বিপর্যয়ে বিপর্যস্ত সেখানকার ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সরকার যে ত্রাণসহায়তা দিচ্ছে সেখানেও অসহায় মানুষের


ত্রাণ গ্রাস করা শুরু করেছেন প্রভাবশালী দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা। এই অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের বেশির ভাগই ত্রাণ থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়েছেন। ইতোমধ্যে নেত্রকোনার খালিয়াজুরী, কলমাকান্দা, কেন্দুয়াসহ বিভিন্ন স্থানে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বঞ্চিত ক্ষতিগ্রস্তরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন।

হাওরাঞ্চলে ফসলহারা অভাবী মানুষের সাহায্যার্থে এখন পর্যন্ত এনজিওদের ত্রাণসহায়তা প্রদানের লক্ষণ বা তৎপড়তা দেখা যাচ্ছে না। বরং সুদে দেয়া কিস্তির টাকা কোন কৌশলে আদায় করা যায় সেই সুযোগের প্রহর গুনছে এনজিওরা। অনেক সুযোগ-সন্ধানী এনজিওর বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের এক ধরনের ক্ষোভ পরিলক্ষিত হচ্ছে। এতদিন কৃষক আর গরিব মানুষের অধিকার ও অসহায়ত্বকে পুঁজি করে যেসব রাজনীতিক, বিত্তশালী ও মানবাধিকার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ গলাবাজি করেছেন তারাও আজ নীরব হয়ে গেছেন। এর বাইরে অবশ্য সচেতন ব্যক্তিদের বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণসহায়তার দাবি জানিয়ে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।

চলতি বোরো মওসুম শুরুর আগেই অকাল বন্যা ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মোহনগঞ্জের চরহাইজদা, খালিয়াজুরীর কিত্তনখলাসহ একেক করে সব বাঁধ ভেঙে নেত্রকোনার ছোট-বড় ১৪০টি হাওর তলিয়ে ৮০ থেকে ৯০ ভাগ ফসল তলিয়ে যায়। জেলায় ১ লাখ ৮০ হাজার ১০২ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়। তন্মধ্যে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৩২০ হেক্টর ফসল অর্জিত হলেও আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে কাঁচাপাকা ফসল তলিয়ে যায়। ফসল হারানোর শোক কাটিয়ে না উঠতেই গোটা হাওরাঞ্চলে অজ্ঞাত বিষাক্ত গ্যাসে শত শত টন মাছ মরে হাওরের পানিতে ভাসতে থাকে। সেই মাছ খেয়ে হাজার হাজার হাঁসও মরতে থাকে। একের পর এক বিপর্যয়ে কৃষক-কৃষাণীদের বুকফাটা আর্তনাদে হাওরাঞ্চলে বিষাদের কালোছায়া নেমে আসে।

খালিয়াজুরী উপজেলার কৃষ্টপুর এলাকার কৃষক তারা মিয়া, রুস্তম আলী, ঈমান আলী সাতগাঁও গ্রামের পরিমল বিশ্বাস ও বেলারানী সাহা তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, ‘ফসল হারাইয়া আমরা এহন নিঃস্ব হইয়্যা পড়ছি। ঘরে খাওন নাই, হাতে কাজ কাম নাই, কেমনে বাঁচবাম কিছুই বুজতাছি না। হগলে কইতাছে প্রধানমন্ত্রী নাহি এহানে আইবো। আমরার দুঃখ-কষ্ট দূর করার লাইগ্যা এইবার যদি তিনি কিছু একটা করেন এই আশাই করতাছি।’

বিভিন্ন তথ্য সূত্র ও অনুসন্ধানে দেখা যায়, গোটা হাওরাঞ্চলে বোরো ফসল রক্ষার জন্য প্রতি বছর বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের একশ্রেণীর দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা ও ঠিকাদারেরা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সামান্য পানির তোরে নড়বড়ে বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়ে যাওয়ার ঘটনা বারবারই ঘটছে। অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের অভাবে পাউবোর কর্মকর্তা ও ঠিকাদারেরা পার পেয়ে যান বলে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। এর আগেও যখন বাঁধ ভেঙে ফসলহানির ঘটনা ঘটে তখনো গণমাধ্যমে এ নিয়ে লেখালেখি ও আলোচনা-সমালোচনা হলেও সময়ের সাথে সাথে এক সময় সব চাপা পড়ে যায়। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা জানান, যতদিন পর্যন্ত ফসল রক্ষার বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের বিষয়টির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া না হবে এবং দুর্নীতিগ্রস্তদের শাস্তির মুখোমুখি দাঁড় করাতে না পারলে কখনোই এর কোনো পরিবর্তন ঘটবে বলে আশা করা যায় না।

নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক বিলাস চন্দ্র পাল বলেন, অকাল বন্যায় ফসল নিমজ্জিত হয়ে জেলায় কমপক্ষে ৭০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। যদিও এই মুহূর্তে সৃষ্ট পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার জন্য কিছু করার নেই। কিন্তু রোপা-আমন, ভুট্টা, গম, সরিষা, কলাইসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদনে কৃষকদের যাতে সহায়তা করা যায় আমরা সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছি। নেত্রকোনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন আহমদ বলেন, হাওরে বিষাক্ত গ্যাসের প্রভাবে জেলায় ১১৮ টন মাছ মরে পানিতে ভেসে ওঠে। এই ক্ষতি অন্য যেকোনো জেলার চেয়ে অনেক বেশি। ক্ষতি যাতে কিছুটা হলেও কাটিয়ে ওঠা যায় সেই লক্ষ্যে জুন-জুলাই মাসে মুক্ত জলাশয়ে ১১ টন রুই, কাতলা, মৃগেলসহ বিভিন্ন প্রজাতির পোনা অবমুক্ত করা হবে।