ঢাকা , শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অ‌তি‌রিক্ত মাংস খাওয়া ৮০লাখ গাড়ির দূষণের সমান

প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে সারা বিশ্বে মাংসের কোন তুলনা নাই। পৃথিবীর প্রায় শতকরা  ৮৬ ভাগ মান্ষুই প্রত্যক্ষভাবে মাংসের উপর নির্ভরশীল। আর ভোজন রসিক মানুষের খাবারের তালিকায় সর্বপ্রথম প্রাধান্য থাকে মাংসের। কিন্তু সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের এক সমীক্ষায় অতিরিক্ত মাংস খাওয়ার কুফল উঠে এসেছে। অতিরিক্ত মাংস খাওয়ার ফলে বাড়ছে গ্রিন হাউজ গ্যাসের প্রভাব এমনটাই বলা হয়েছে সমীক্ষায়। তুলনামূলক আলোচনায় বলা হচ্ছে, ‘বেশি মাংস খাওয়া ৮০ লাখ গাড়ি দূষণের সমান।’ অতিরিক্ত মাংস খাওয়ায় পরিবেশের বিরূপ এ প্রভাবগুলো বিবিসির প্রতিবেদনে উঠে আসে ।

লাইভস্টক এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড পিপল (এলইএপি) সংস্থাটি ৫৫,০০০ মানুষের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে এ সিদ্ধান্তে আসে। জরিপে দেখা যায়, যারা নিয়মিত বেশি মাংস ভক্ষণ করে তাদের খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন অন্তত ১০০ গ্রাম মাংস থাকে। অন্যদিকে যারা পরিমিত মাংস খাদক তারা প্রতিদিন ৫০ গ্রাম বা তারও কম মাংস ভক্ষণ করে।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির করা নতুন এক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, যারা পরিমাণে মাংস বেশি খায় তারা গড়ে প্রতিদিন ১০.২৪ কেজি পরিবেশ উষ্ণায়নকারী গ্রিনহাউজ গ্যাস তৈরি করে। এ সংখ্যাটি কম মাংস ভক্ষণকারীদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেশি। তুলনামূলক যারা কম মাংস খায় তারাও প্রায় ৫.৩৭ শতাংশ গ্রিনহাউজ গ্যাসের প্রভাবে দায়ী। মাছ খাওয়া মানুষেরা যেখানে ৪.৭৪ কেজি বৈশ্বিক উষ্ণায়নে প্রভাব ফেলে। অন্যদিকে নিরামিষভোজি ও ভেগানরা প্রতিদিন যথাক্রমে মাত্র ২.৪৭ ও ২.৪৭ কেজি গ্রিনহাউজ গ্যাসে প্রভাব ফেলে।

গবেষণাটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিটার স্ক্রারবোরো বলেছেন, ‘আমাদের জরিপে উঠে আসা তথ্যে বোঝা যায়, একজন অতিরিক্ত মাংস ভক্ষণকারী যদি তার মাংস খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দেয় তবে এটি সত্যিই পরিবেশের ওপর একটি বড় পার্থক্য তৈরি করবে। তবে এর জন্য আপনাদের খাদ্য তালিকা থেকে পুরোপুরিভাবে মাংস বাদ দেওয়ার প্রয়োজন নেই।’

অতিরিক্ত মাংস গ্রহণকারীদের ডায়েটে পানির প্রয়োজনীয়তাও তুলনামূলক বেশি। খাদ্য প্রস্তুত করতে ও হজম করতে প্রায় গড়ে ৮৯০ লিটার পানির প্রয়োজন হয়। তূলনামূলক কম মাংসাশীদের পানির প্রয়োজন হয় ৭১০ লিটার। নিরামিষভোজী ও ভেগানদের পানির পরিমাণটা নিতান্তই কম, মাত্র ৫৩০ ও ৪১০ লিটার। জরিপটি পর্যালোচনার পর যুক্তরাজ্যের পরিবেশ খাদ্য ও গ্রামীণবিষয়ক সংস্থা (ড্রেফা) ইতোমধ্যেই দেশটিতে ২০৩২ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ মাংসের ব্যবহার কমাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।

জরিপে আরও দেখা যাচ্ছে, অতিরিক্ত মাংস ভক্ষণকারীদের চাহিদার জোগান দিতে ১৬.৭৮ বর্গমিটার জমির প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে কম মাংস গ্রহণকারীর জন্য জমির পরিমাণ লাগছে ৮.৩১ বর্গমিটার। মাছ খাওয়া মানুষদের জন্য জমির প্রয়োজন ৬.৩১ বর্গমিটার। আবার সেই তুলনায় নিরামিষভোজী ও ভেগানদের জন্য কেবল ৬.০১ ও ৪.৩৭ বর্গমিটার জমির প্রয়োজন হচ্ছে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

অ‌তি‌রিক্ত মাংস খাওয়া ৮০লাখ গাড়ির দূষণের সমান

আপডেট টাইম : ০৪:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৯ জুলাই ২০২৩

প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে সারা বিশ্বে মাংসের কোন তুলনা নাই। পৃথিবীর প্রায় শতকরা  ৮৬ ভাগ মান্ষুই প্রত্যক্ষভাবে মাংসের উপর নির্ভরশীল। আর ভোজন রসিক মানুষের খাবারের তালিকায় সর্বপ্রথম প্রাধান্য থাকে মাংসের। কিন্তু সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের এক সমীক্ষায় অতিরিক্ত মাংস খাওয়ার কুফল উঠে এসেছে। অতিরিক্ত মাংস খাওয়ার ফলে বাড়ছে গ্রিন হাউজ গ্যাসের প্রভাব এমনটাই বলা হয়েছে সমীক্ষায়। তুলনামূলক আলোচনায় বলা হচ্ছে, ‘বেশি মাংস খাওয়া ৮০ লাখ গাড়ি দূষণের সমান।’ অতিরিক্ত মাংস খাওয়ায় পরিবেশের বিরূপ এ প্রভাবগুলো বিবিসির প্রতিবেদনে উঠে আসে ।

লাইভস্টক এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড পিপল (এলইএপি) সংস্থাটি ৫৫,০০০ মানুষের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে এ সিদ্ধান্তে আসে। জরিপে দেখা যায়, যারা নিয়মিত বেশি মাংস ভক্ষণ করে তাদের খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন অন্তত ১০০ গ্রাম মাংস থাকে। অন্যদিকে যারা পরিমিত মাংস খাদক তারা প্রতিদিন ৫০ গ্রাম বা তারও কম মাংস ভক্ষণ করে।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির করা নতুন এক সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, যারা পরিমাণে মাংস বেশি খায় তারা গড়ে প্রতিদিন ১০.২৪ কেজি পরিবেশ উষ্ণায়নকারী গ্রিনহাউজ গ্যাস তৈরি করে। এ সংখ্যাটি কম মাংস ভক্ষণকারীদের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেশি। তুলনামূলক যারা কম মাংস খায় তারাও প্রায় ৫.৩৭ শতাংশ গ্রিনহাউজ গ্যাসের প্রভাবে দায়ী। মাছ খাওয়া মানুষেরা যেখানে ৪.৭৪ কেজি বৈশ্বিক উষ্ণায়নে প্রভাব ফেলে। অন্যদিকে নিরামিষভোজি ও ভেগানরা প্রতিদিন যথাক্রমে মাত্র ২.৪৭ ও ২.৪৭ কেজি গ্রিনহাউজ গ্যাসে প্রভাব ফেলে।

গবেষণাটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিটার স্ক্রারবোরো বলেছেন, ‘আমাদের জরিপে উঠে আসা তথ্যে বোঝা যায়, একজন অতিরিক্ত মাংস ভক্ষণকারী যদি তার মাংস খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দেয় তবে এটি সত্যিই পরিবেশের ওপর একটি বড় পার্থক্য তৈরি করবে। তবে এর জন্য আপনাদের খাদ্য তালিকা থেকে পুরোপুরিভাবে মাংস বাদ দেওয়ার প্রয়োজন নেই।’

অতিরিক্ত মাংস গ্রহণকারীদের ডায়েটে পানির প্রয়োজনীয়তাও তুলনামূলক বেশি। খাদ্য প্রস্তুত করতে ও হজম করতে প্রায় গড়ে ৮৯০ লিটার পানির প্রয়োজন হয়। তূলনামূলক কম মাংসাশীদের পানির প্রয়োজন হয় ৭১০ লিটার। নিরামিষভোজী ও ভেগানদের পানির পরিমাণটা নিতান্তই কম, মাত্র ৫৩০ ও ৪১০ লিটার। জরিপটি পর্যালোচনার পর যুক্তরাজ্যের পরিবেশ খাদ্য ও গ্রামীণবিষয়ক সংস্থা (ড্রেফা) ইতোমধ্যেই দেশটিতে ২০৩২ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ মাংসের ব্যবহার কমাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।

জরিপে আরও দেখা যাচ্ছে, অতিরিক্ত মাংস ভক্ষণকারীদের চাহিদার জোগান দিতে ১৬.৭৮ বর্গমিটার জমির প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে কম মাংস গ্রহণকারীর জন্য জমির পরিমাণ লাগছে ৮.৩১ বর্গমিটার। মাছ খাওয়া মানুষদের জন্য জমির প্রয়োজন ৬.৩১ বর্গমিটার। আবার সেই তুলনায় নিরামিষভোজী ও ভেগানদের জন্য কেবল ৬.০১ ও ৪.৩৭ বর্গমিটার জমির প্রয়োজন হচ্ছে।