ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বন্ধ হচ্ছে পুরোনো পোশাক আমদানি

এক সময় দেশে পুরোনো কাপড়ের চাহিদা ছিল। তবে তৈরি পোশাকখাতের সমৃদ্ধিতে গত এক দশকে কমেছে পুরোনো পোশাক আমদানি। প্রায় অর্ধেক কমেছে এ ধরনের পোশাক আমদানিকারকের সংখ্যা। তবে ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে চূড়ান্তভাবে পদার্পণের পর এ ধরনের কাপড়ের আমদানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। জানা যায়, দেশে বর্তমানে প্রায় শতকোটি টাকার পুরোনো পোশাক আমদানি করা হয়।  সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুরোনো কাপড় আমদানির ব্যবসা অন্য ব্যবসার মতো নয়। এতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগে। একদিকে দেশের বাজারে পুরোনো পোশাকের চাহিদা কমে যাওয়া, অন্যদিকে সরকারের বিধিনিষেধ কঠোর করার কারণে এ ধরনের কাপড় আমদানি কমছে। এ ছাড়া এখন দেশেও তৈরি হচ্ছে ভালো মানের শীতবস্ত্র। আগে কম দামের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলে পুরোনো কাপড়ের ব্যাপক চাহিদা ছিল। এখন দেশে উৎপাদিত শীতবস্ত্রই কম দামে মিলছে। তাই চাহিদা থাকছে না আমদানি কাপড়ের। এ বিষয়ে পুরোনো কাপড় আমদানিকারকরা বলেন, বছরের শুরুতে ব্যবসায়ীরা কাপড় আমদানির জন্য এলসি করেন। শীতের আগে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের মধ্যে কাপড় চলে আসে। এখন আর পুরোনো কাপড়ের সেই বাজারটা নেই। বাজারে পুরোনো শীতবস্ত্রের চাহিদা নেমে এসেছে অর্ধেকে। গত বছরের আমদানি করা কাপড় এখনো অনেকের গোডাউনে পড়ে আছে।  বাংলাদেশ পুরাতন কাপড় আমদানিকারক সমিতির সূত্রে জানা যায়, একটা লাইসেন্সে এখন এক লাখ টাকার মাল আনা যায়। জাপান, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, আমেরিকা থেকে আমদানিকারকরা কম্বল, সোয়েটার, লেডিস কার্ডিগান, জিপার জ্যাকেট, পুরুষদের ট্রাউজার, সিনথেটিক, ব্লেন্ডেড কাপড়ের শার্ট ও পশমের জ্যাকেট আমদানি করেন। তবে এই ব্যবসাটা পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করে সরকার। ইচ্ছে করলেই যে কেউ পুরাতন কাপড় আমদানি করতে পারে না। প্রত্যেক জেলায় ডিসিরা কমিটি করে দেন। সেই কমিটির মাধ্যমে জেলা কোটায় পোশাক আমদানি করতে হয়। আমদানিকারকের লাইসেন্স থাকলেই যে তারা ১২ মাস কাপড় আনতে পারবেন না।  স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ, মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি ও পোশাকখাতের ক্রমবর্ধমান উন্নতিতে আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে পুরোনো কাপড় আমদানি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে চায় সরকার। সে লক্ষ্যে ক্ষুদ্র আমদানিকারকদের মাধ্যমে দেশে পুরোনো কাপড় আমদানি বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তাতে দুই বছর পর থেকে কোনো ধরনের পুরোনো কাপড় আমদানি করা যাবে না। বর্তমানে প্রতিবছর প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার বেশি পুরোনো কাপড় আমদানি করা হলেও এ কাপড় আমদানি বন্ধে নতুন আমদানি নীতি আদেশে (২০২৪-২৭) স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, কয়েক মাস ধরে ২০২৪-২৭ মেয়াদের জন্য নতুন আমদানি নীতি আদেশ সংশোধনের কাজ চলছে। দ্রুতই এ নীতি আদেশের খসড়া মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। দুই মাসের মধ্যেই এ আদেশ জারির বিষয়ে কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পণ্য আমদানিতে উদার দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ। আমদানি নীতি অনুসরণ করে বিশ্বের যেকোনো দেশ থেকে পণ্য আমদানি করা হয়। তবে কিছু পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ২০২৪-২৭ সালের জন্য করা আমদানি নীতি আদেশেও আমদানি-নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকা থাকবে। এ নিয়ে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ  বলেন, নতুন আমদানি নীতি আদেশ জারি নিয়ে আমরা কাজ করছি। বিদ্যমান আদেশের মেয়াদ থাকতেই এটি হয়ে যাবে, কার্যকর হবে আগামী ১ জুলাই থেকে। পুরোনো কাপড় আমদানি বন্ধের বিধান আমদানি নীতি আদেশে রাখা হবে বলেও জানান বাণিজ্যসচিব। এদিকে শীতের গরম পোশাক, কম্বল, সোয়েটার, লেডিস কার্ডিগান, জিপার জ্যাকেটসহ পুরুষের জ্যাকেট, পুরুষের ট্রাউজার, সিনথেটিক ও ব্লেন্ডেড কাপড়ের শার্ট ইত্যাদি প্রতিবছর আমদানি করেন কয়েক হাজার ক্ষুদ্র আমদানিকারক। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা প্রধান আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় এ অনুমতি দিয়ে থাকে। বর্তমানে আমদানিকারকেরা সর্বোচ্চ দুই টন কম্বল, ছয় টন সোয়েটার, ছয় টন লেডিস কার্ডিগান, ছয় টন জিপার জ্যাকেটসহ পুরুষের জ্যাকেট, ছয় টন পুরুষের ট্রাউজার ও দুই টন সিনথেটিক এবং ব্লেন্ডেড কাপড়ের শার্ট আমদানি করতে পারেন। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে। বাড়ছে মাথাপিছু আয় ও ক্রয়ক্ষমতা। এসব কারণে মানুষ বিদেশে ব্যবহৃত পুরোনো কাপড় আর কিনতে চায় না। আমরা উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণ করছি। এমন অবস্থায় পুরাতন কাপড় আমদানি বাংলাদেশের মর্যাদাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। এখন নতুন আমদানি নীতিতে পুরোনো কাপড় আমদানির পথ সংকুচিত করা হচ্ছে। এটাকে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হবে ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে চূড়ান্তভাবে পদার্পণের পর। এ নিয়ে পুরোনো কাপড় আমদানিকারকেরাও বলছেন, বিদেশি কাপড়ের আগের বাজার আর নেই তাই তারাও চান, আমদানি বন্ধ হোক। আর ধীরে ধীরে বন্ধ করা হবে পুরোনো কাপড় বিক্রি।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

বন্ধ হচ্ছে পুরোনো পোশাক আমদানি

আপডেট টাইম : ০৪:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

এক সময় দেশে পুরোনো কাপড়ের চাহিদা ছিল। তবে তৈরি পোশাকখাতের সমৃদ্ধিতে গত এক দশকে কমেছে পুরোনো পোশাক আমদানি। প্রায় অর্ধেক কমেছে এ ধরনের পোশাক আমদানিকারকের সংখ্যা। তবে ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে চূড়ান্তভাবে পদার্পণের পর এ ধরনের কাপড়ের আমদানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। জানা যায়, দেশে বর্তমানে প্রায় শতকোটি টাকার পুরোনো পোশাক আমদানি করা হয়।  সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুরোনো কাপড় আমদানির ব্যবসা অন্য ব্যবসার মতো নয়। এতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগে। একদিকে দেশের বাজারে পুরোনো পোশাকের চাহিদা কমে যাওয়া, অন্যদিকে সরকারের বিধিনিষেধ কঠোর করার কারণে এ ধরনের কাপড় আমদানি কমছে। এ ছাড়া এখন দেশেও তৈরি হচ্ছে ভালো মানের শীতবস্ত্র। আগে কম দামের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলে পুরোনো কাপড়ের ব্যাপক চাহিদা ছিল। এখন দেশে উৎপাদিত শীতবস্ত্রই কম দামে মিলছে। তাই চাহিদা থাকছে না আমদানি কাপড়ের। এ বিষয়ে পুরোনো কাপড় আমদানিকারকরা বলেন, বছরের শুরুতে ব্যবসায়ীরা কাপড় আমদানির জন্য এলসি করেন। শীতের আগে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরের মধ্যে কাপড় চলে আসে। এখন আর পুরোনো কাপড়ের সেই বাজারটা নেই। বাজারে পুরোনো শীতবস্ত্রের চাহিদা নেমে এসেছে অর্ধেকে। গত বছরের আমদানি করা কাপড় এখনো অনেকের গোডাউনে পড়ে আছে।  বাংলাদেশ পুরাতন কাপড় আমদানিকারক সমিতির সূত্রে জানা যায়, একটা লাইসেন্সে এখন এক লাখ টাকার মাল আনা যায়। জাপান, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, আমেরিকা থেকে আমদানিকারকরা কম্বল, সোয়েটার, লেডিস কার্ডিগান, জিপার জ্যাকেট, পুরুষদের ট্রাউজার, সিনথেটিক, ব্লেন্ডেড কাপড়ের শার্ট ও পশমের জ্যাকেট আমদানি করেন। তবে এই ব্যবসাটা পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করে সরকার। ইচ্ছে করলেই যে কেউ পুরাতন কাপড় আমদানি করতে পারে না। প্রত্যেক জেলায় ডিসিরা কমিটি করে দেন। সেই কমিটির মাধ্যমে জেলা কোটায় পোশাক আমদানি করতে হয়। আমদানিকারকের লাইসেন্স থাকলেই যে তারা ১২ মাস কাপড় আনতে পারবেন না।  স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ, মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি ও পোশাকখাতের ক্রমবর্ধমান উন্নতিতে আগামী ২০২৭ সালের মধ্যে পুরোনো কাপড় আমদানি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে চায় সরকার। সে লক্ষ্যে ক্ষুদ্র আমদানিকারকদের মাধ্যমে দেশে পুরোনো কাপড় আমদানি বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তাতে দুই বছর পর থেকে কোনো ধরনের পুরোনো কাপড় আমদানি করা যাবে না। বর্তমানে প্রতিবছর প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার বেশি পুরোনো কাপড় আমদানি করা হলেও এ কাপড় আমদানি বন্ধে নতুন আমদানি নীতি আদেশে (২০২৪-২৭) স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, কয়েক মাস ধরে ২০২৪-২৭ মেয়াদের জন্য নতুন আমদানি নীতি আদেশ সংশোধনের কাজ চলছে। দ্রুতই এ নীতি আদেশের খসড়া মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। দুই মাসের মধ্যেই এ আদেশ জারির বিষয়ে কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। পণ্য আমদানিতে উদার দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ। আমদানি নীতি অনুসরণ করে বিশ্বের যেকোনো দেশ থেকে পণ্য আমদানি করা হয়। তবে কিছু পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ২০২৪-২৭ সালের জন্য করা আমদানি নীতি আদেশেও আমদানি-নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকা থাকবে। এ নিয়ে বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ  বলেন, নতুন আমদানি নীতি আদেশ জারি নিয়ে আমরা কাজ করছি। বিদ্যমান আদেশের মেয়াদ থাকতেই এটি হয়ে যাবে, কার্যকর হবে আগামী ১ জুলাই থেকে। পুরোনো কাপড় আমদানি বন্ধের বিধান আমদানি নীতি আদেশে রাখা হবে বলেও জানান বাণিজ্যসচিব। এদিকে শীতের গরম পোশাক, কম্বল, সোয়েটার, লেডিস কার্ডিগান, জিপার জ্যাকেটসহ পুরুষের জ্যাকেট, পুরুষের ট্রাউজার, সিনথেটিক ও ব্লেন্ডেড কাপড়ের শার্ট ইত্যাদি প্রতিবছর আমদানি করেন কয়েক হাজার ক্ষুদ্র আমদানিকারক। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা প্রধান আমদানি ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় এ অনুমতি দিয়ে থাকে। বর্তমানে আমদানিকারকেরা সর্বোচ্চ দুই টন কম্বল, ছয় টন সোয়েটার, ছয় টন লেডিস কার্ডিগান, ছয় টন জিপার জ্যাকেটসহ পুরুষের জ্যাকেট, ছয় টন পুরুষের ট্রাউজার ও দুই টন সিনথেটিক এবং ব্লেন্ডেড কাপড়ের শার্ট আমদানি করতে পারেন। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে। বাড়ছে মাথাপিছু আয় ও ক্রয়ক্ষমতা। এসব কারণে মানুষ বিদেশে ব্যবহৃত পুরোনো কাপড় আর কিনতে চায় না। আমরা উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণ করছি। এমন অবস্থায় পুরাতন কাপড় আমদানি বাংলাদেশের মর্যাদাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। এখন নতুন আমদানি নীতিতে পুরোনো কাপড় আমদানির পথ সংকুচিত করা হচ্ছে। এটাকে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হবে ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে চূড়ান্তভাবে পদার্পণের পর। এ নিয়ে পুরোনো কাপড় আমদানিকারকেরাও বলছেন, বিদেশি কাপড়ের আগের বাজার আর নেই তাই তারাও চান, আমদানি বন্ধ হোক। আর ধীরে ধীরে বন্ধ করা হবে পুরোনো কাপড় বিক্রি।