বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার তার প্রথম একনেক বৈঠকে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা স্থগিত করায় রেলপথকেন্দ্রিক বিদায়ি সরকারের মহাপরিকল্পনাটি কার্যত থমকে গেছে। অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়টি আগামী দিনের রাজনৈতিক সরকারের হাতে ছেড়ে দিয়েছে। তবে ট্রেনে যাত্রীসেবার মানোন্নয়নে যা করা দরকার, রুটিনওয়ার্ক হিসেবে তা সরকার করে যাবে।
দেশের সব জেলাকে রেল নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে বিদায়ি আওয়ামী লীগ সরকার একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল।
পরিকল্পনার আওতায় প্রতি পাঁচ বছর ধাপে ধাপে ২০৪৫ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকতা আঁকা হয়। স্বাভাবিকভাবেই উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) চূড়ান্ত হয়ে আছে, রেলের এমন প্রকল্পগুলো এখন মাঠে না-ও গড়াতে পারে। এমনকি যেসব প্রকল্প চলমান রয়েছে সেগুলো পুনরায় যাচাই-বাছাই করে দেখতেও সরকার থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।গত বুধবার একনেক সভা শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এক ধরনের রাজনৈতিক দলিল।
আমরা বড় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেব না।’উল্লেখ্য, রেল অবকাঠামোর উন্নয়ন বাস্তবায়নে ২০১৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ৩০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে। মহাপরিকল্পনাটির আওতায় ২০৪৫ সালের মধ্যে ছয় ধাপে ২৩০টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ার কথা ছিল। তবে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপ পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়িত হয়নি।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল বাকী কালের কণ্ঠকে বলেন, আগের সরকারের সঙ্গে বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকার ভিন্ন হতে পারে। বর্তমান সরকার নিজেদের মতো করে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতেই পারে। কিন্তু কোনো কিছুই স্থবির হয়নি।
পরিকল্পনায় থাকা ৪৬ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রস্তাবিত খরচ ধরা হয় প্রায় পাঁচ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এসব প্রকল্পের সব অবকাঠামো নির্মাণকেন্দ্রিক নয়।
এর মধ্যে কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় কার্যক্রমসহ সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মতো প্রকল্পও রয়েছে। আর বেশ কিছু অবকাঠামোভিত্তিক প্রকল্পের নির্মাণকাজ বাস্তবায়নে অর্থায়ন খোঁজার পর্যায়ে ছিল।যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বর্তমান সরকার অরাজনৈতিক। ফলে তাদের ভাবনা ভিন্ন হবে। কিন্তু আমি বলব, যাচাই-বাছাই করে হলেও চলমান প্রকল্প শেষ করা উচিত। মহাপরিকল্পনা বাইবেল নয়। তবে পরিবর্তনের আগে গবেষণা করে বুঝে পরিবর্তন করা দরকার।’
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বুয়েটের অধ্যাপক শামছুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, বিদেশিরা অর্থায়ন করলেও সেই টাকা এখন নেওয়া উচিত হবে না। আপাতত অবকাঠামো উন্নয়ন বন্ধ থাকা দরকার। রেলের ক্ষেত্রে বরং ট্রেন পরিচালনার জন্য যা কিছু দরকার সেদিকে জোর দিতে হবে।