ঢাকা , মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শাপলায় আসছে অর্থ

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ  মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় খালবিল, নদীনালায় ব্যাপকভাবে ফুটেছে শাপলা। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়া ধান ও পাটক্ষেত এবং খালবিল ও ইছামতি নদীতে ফুটে থাকা এসব শাপলা একদিকে যেমন নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা করছে; অন্যদিকে ক্ষুধা নিবারণ ও জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হয়ে উঠেছে। শাপলা বিক্রি করে উপজেলার শতাধিক পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছে। সাধারণত জ্যৈষ্ঠ থেকে শুরু করে কার্তিক মাস পর্যন্ত শাপলা পাওয়া যায়। এ সময় কৃষক ভোর থেকে নৌকা নিয়ে খালবিল, নদীনালা এবং ডুবে যাওয়া জমিতে ঘুরে ঘুরে শাপলা সংগ্রহ করেন। দুপুরের দিকে কাঁড়ি কাঁড়ি শাপলা নিয়ে তারা ফিরে আসেন।

শাপলা সংগ্রহকারীরা জানান, জাতীয় ফুল শাপলা দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি তরকারি হিসেবে এটি খেতেও সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। কেউ খায় শখ করে, আবার কেউ খায় ক্ষুধা নিবারণের জন্য। অভাবগ্রস্ত বা নিতান্ত গরিব লোকজন এ বর্ষা মৌসুমে জমি থেকে শাপলা তুলে তা দিয়ে ভাজি বা ভর্তা তৈরি খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করেন। আর শহরে লোকজন শখের বশে শাপলার তরকারি বা ভাজি খেয়ে থাকেন। তারা আরও জানান, বর্ষা মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষি জমি পানিতে তলিয়ে থাকায় কৃষকের তেমন কোনো কাজ থাকে না। তাই এলাকার অনেক কৃষক বর্তমানে এ পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন। এ পেশায় কোনো পুঁজির প্রয়োজন না হওয়ায় বিভিন্ন বয়সের লোক এ পেশায় অংশ নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

উপজেলার লতব্দী ইউনিয়নের চরনিমতলার বিল থেকে শাপলা সংগ্রহকারী রবিউল ইসলাম জানান, এ সময়ে একেকজনে কমপক্ষে ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ আঁটি (৬০ পিস শাপলায় এক আঁটি ধরা হয়) সংগ্রহ করতে পারেন। পাইকাররা সংগ্রহকারীর কাছ থেকে এসব শাপলা সংগ্রহ করে রাজধানীসহ আশপাশের জেলায় নিয়ে যান। সিরাজদিখানের রসুনিয়া, ইমামগঞ্জ ও তালতলায় শাপলার পাইকারি ক্রয় কেন্দ্র রয়েছে।

উপজেলার চরনিমতলী গ্রামের পাইকার বাবুল খান বাঙালী কণ্ঠকে জানান, সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে প্রতিদিন প্রায় দেড় থেকে ২ হাজার আঁটি শাপলা ক্রয় করেন। এক আঁটি শাপলা ১০ টাকা দরে ক্রয় করেন। তারপর গাড়ি ভাড়া, লেবার, আড়তদারিসহ মোট ১৭ থেকে ১৮ টাকা খরচ পড়ে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী আড়তে এক আঁটি শাপলা বিক্রি করেন ২৫ থেকে ২৭ টাকায়।

তিনি আরও জানান, শাপলা তরকারি হিসেবে খুবই মজাদার একটি খাদ্য। কয়েক বছর ধরে এ ব্যবসা এলাকায় বেশ প্রসার লাভ করেছে। এ থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে এখন অনেকেই সংসার চালাচ্ছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হুমায়ন কবির জানান, সিরাজদিখান উপজেলায় কিছু নিম্নাঞ্চল রয়েছে, সেখানে প্রতি বছর এ মৌসুমে খালবিলে ও ডুবে যাওয়া জমিতে শাপলা জন্মে। এ শাপলা বিক্রি করে এখানকার অনেক কৃষান-কৃষানি জীবিকা নির্বাহ করেন। অনেকের সংসারে সচ্ছলতাও ফিরে এসেছে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

শাপলায় আসছে অর্থ

আপডেট টাইম : ০৭:৫৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩০ জুলাই ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ  মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় খালবিল, নদীনালায় ব্যাপকভাবে ফুটেছে শাপলা। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়া ধান ও পাটক্ষেত এবং খালবিল ও ইছামতি নদীতে ফুটে থাকা এসব শাপলা একদিকে যেমন নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা করছে; অন্যদিকে ক্ষুধা নিবারণ ও জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হয়ে উঠেছে। শাপলা বিক্রি করে উপজেলার শতাধিক পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছে। সাধারণত জ্যৈষ্ঠ থেকে শুরু করে কার্তিক মাস পর্যন্ত শাপলা পাওয়া যায়। এ সময় কৃষক ভোর থেকে নৌকা নিয়ে খালবিল, নদীনালা এবং ডুবে যাওয়া জমিতে ঘুরে ঘুরে শাপলা সংগ্রহ করেন। দুপুরের দিকে কাঁড়ি কাঁড়ি শাপলা নিয়ে তারা ফিরে আসেন।

শাপলা সংগ্রহকারীরা জানান, জাতীয় ফুল শাপলা দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি তরকারি হিসেবে এটি খেতেও সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। কেউ খায় শখ করে, আবার কেউ খায় ক্ষুধা নিবারণের জন্য। অভাবগ্রস্ত বা নিতান্ত গরিব লোকজন এ বর্ষা মৌসুমে জমি থেকে শাপলা তুলে তা দিয়ে ভাজি বা ভর্তা তৈরি খেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করেন। আর শহরে লোকজন শখের বশে শাপলার তরকারি বা ভাজি খেয়ে থাকেন। তারা আরও জানান, বর্ষা মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষি জমি পানিতে তলিয়ে থাকায় কৃষকের তেমন কোনো কাজ থাকে না। তাই এলাকার অনেক কৃষক বর্তমানে এ পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন। এ পেশায় কোনো পুঁজির প্রয়োজন না হওয়ায় বিভিন্ন বয়সের লোক এ পেশায় অংশ নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

উপজেলার লতব্দী ইউনিয়নের চরনিমতলার বিল থেকে শাপলা সংগ্রহকারী রবিউল ইসলাম জানান, এ সময়ে একেকজনে কমপক্ষে ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ আঁটি (৬০ পিস শাপলায় এক আঁটি ধরা হয়) সংগ্রহ করতে পারেন। পাইকাররা সংগ্রহকারীর কাছ থেকে এসব শাপলা সংগ্রহ করে রাজধানীসহ আশপাশের জেলায় নিয়ে যান। সিরাজদিখানের রসুনিয়া, ইমামগঞ্জ ও তালতলায় শাপলার পাইকারি ক্রয় কেন্দ্র রয়েছে।

উপজেলার চরনিমতলী গ্রামের পাইকার বাবুল খান বাঙালী কণ্ঠকে জানান, সংগ্রহকারীদের কাছ থেকে প্রতিদিন প্রায় দেড় থেকে ২ হাজার আঁটি শাপলা ক্রয় করেন। এক আঁটি শাপলা ১০ টাকা দরে ক্রয় করেন। তারপর গাড়ি ভাড়া, লেবার, আড়তদারিসহ মোট ১৭ থেকে ১৮ টাকা খরচ পড়ে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী আড়তে এক আঁটি শাপলা বিক্রি করেন ২৫ থেকে ২৭ টাকায়।

তিনি আরও জানান, শাপলা তরকারি হিসেবে খুবই মজাদার একটি খাদ্য। কয়েক বছর ধরে এ ব্যবসা এলাকায় বেশ প্রসার লাভ করেছে। এ থেকে উপার্জিত অর্থ দিয়ে এখন অনেকেই সংসার চালাচ্ছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা হুমায়ন কবির জানান, সিরাজদিখান উপজেলায় কিছু নিম্নাঞ্চল রয়েছে, সেখানে প্রতি বছর এ মৌসুমে খালবিলে ও ডুবে যাওয়া জমিতে শাপলা জন্মে। এ শাপলা বিক্রি করে এখানকার অনেক কৃষান-কৃষানি জীবিকা নির্বাহ করেন। অনেকের সংসারে সচ্ছলতাও ফিরে এসেছে।