ঢাকা , বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রতিশ্রুতিতে সীমাবদ্ধ রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসন

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ রাজধানী ঢাকায় সামান্য বৃষ্টিতে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র জলাবদ্ধতা। নিঁচু উঁচু সব স্থানেই সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র জলাবদ্ধতা। কখনও কখনও এটি স্থায়ীভাবেও রুপ নিচ্ছে। সঠিক নিয়মে পয়ঃবর্জ্য এবং পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না হওয়ায় দিনের পর দিন জলাবদ্ধতায় নাকাল হয়ে পড়ছেন রাজধানীর সাধারণ জনগণ। অথচ এ দুর্ভোগ লাঘবের জন্য দায়িত্বরত দুই মেয়র সাঈদ খোকন ও অানিসুল হক জলাবদ্ধতা নিরসনে নানান প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়নের সুফল জনগণ এখনো পাচ্ছেন না। কবে নাগাদ এ সমস্যার সমাধানে হবে সেটিও সঠিকভাবে বলতে পারছেন দুই সিটি করপোরেশনের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা।

জলাবদ্ধতার জন্য সাধারণ মানুষ দায়ী করছেন ঢাকার দক্ষিণ সিটি ও উত্তর সিটি করপোরেশনকে। অাবার এ দুই সিটি করপোরেশন জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী করছেন ঢাকা ওয়াসাকে। কিন্তু ওয়াসা বলছেন এ দায় তাদের নয়। এমন পাল্টা পাল্টা অজুহাতে ক্রমেই দুর্ভোগ চরম অাকার ধারণ করছে। যানজটের এ শহর এখন জলজটের কারণে দুর্ভোগ বহুগুণ বেড়ে গেছে।

অন্যদিকে ঢাকার দুই মেয়র নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে বলেছিলেন, রাজধানীর উল্লেখ্যযোগ্য সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। তার মধ্যে জলাবদ্ধতা ও যানজটকে প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন তারা। তখন তারা বলেছিলেন, এসমস্যা সমাধান এখন সময়ের অপেক্ষামাত্র। কিন্তুু  নির্বাচিত হওয়ার দুবছর দুমাস অতিক্রম হলেও জলাবদ্ধতা নিরসনে দুই মেয়রের দেয়া প্রতিশ্রুতির ন্যুনতম সুফলও জনগণ এখনো পাচ্ছেন না। তাই ক্রমেই জনগনের মাঝে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। সাধারণ মানুষ বলছেন, সবাই প্রতিশ্রুতি দেয় কিন্তু বাস্তবায়নে নেই কোন কার্যকরী পদক্ষেপ।

দুই সিটি করপোরেশন থেকে বলা হচ্ছে জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রধান দায়িত্ব ওয়াসার। ১৯৮৯ সালে সংস্থাটিকে পানি নিষ্কাশনের জন্য মূল দায়িত্ব দেয়া হয়। সেই সঙ্গে এ কাজে যুক্ত হয় সিটি বরপোরেশন ও অারো কয়েকটি সেবা সংস্থা। কিন্তুু অন্যান্য সেবা সংস্থাগুলো এ দায়িত্বপালন করলেও এর প্রধান দায়িত্বে থাকা ঢাকা ওয়াসা তার মূল দায়িত্ব থেকে সরে গিয়ে কোটি কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ণ নিয়ে ব্যস্ত। এ কারনে ওয়াসার এমন ব্যর্থতার দায় সরাসরি যাচ্ছে দুই সিটি করপোরেশনের ওপরে। ফলে দুই সিটি করপোরেশনও চাচ্ছে জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব অাইনীভাবে তারা নিয়ে নিতে। কিন্তু সেটিও হচ্ছেনা।

সম্প্রতি ব্যর্থতার দায় ঢাকতে ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন বলেছেন, ড্রেনের দায়িত্ব নিতে চাই ডিএসসিসি। তবে সেটি ঠিক করে দিতে হবে। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত জনবলও দিতে হবে ডিএসসিসিকে। তাহলে এর রক্ষনাবেক্ষণ করবে তারা। অন্যদিকে ডিএনসিসির মেয়র অানিছুল হক বলছেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে খালগুলো উদ্ধার করতে সক্ষম হচ্ছে ডিএনসিসি। কিন্তু ওয়াসার ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারনে সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। তাই তারা ওয়াসার ড্রেনের দায়িত্ব নিবে।

তিন সংস্থার এমন পাল্টা পাল্টি দোষারপের কারণে জনগন পুরোই ভ্যাবাচ্যাকা খাচ্ছেন। তাদের হেয়ালীপনায় সমাধানের কোনো লক্ষন পাচ্ছেন না জনগন। তাই অাপাদত জনগনকে প্রতিশ্রুতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হচ্ছে। তবে কবে নাগাদ এ জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান মিলবে তার কোনো লক্ষন নেই। কেননা গতকাল সচিবালয়ে এ সমস্যা সমাধানে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে অাইন পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে অাগামী একমাসের মধ্যে সব অাইন পর্যালোচনা করে সমন্বয়হীনতার কারণ চিহ্নিত করে নতুন অাইন বিষয়ক সুপারিশ করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

বিঅাইডব্লিউটিএর অবসর প্রাপ্ত কর্মকর্তা ও পরিবেশ বাঁচাও অান্দোলনের নির্বাহী সদস্য তোয়েল অাহমেদ বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের অাগে অবশ্যই পরিকল্পনাকারীকে পানির সঠিক রুপান্তর করার বিষয়টি নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে। শুধু শুধু খাল বিল অার ড্রেন নিয়ে কাজ করলে জলাবদ্ধতার সমাধান হবেনা।

এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব জানান, যেভাবে দুই সিটি করপোরেশন ও ওয়াসা এগোচ্ছে তাতে পরিস্থিতি খারাপের দিকেই যাচ্ছে। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যৎতে পরিস্থিতি অারো ভয়াবহ হওয়ার অাশঙ্কা রয়েছে।  তিনি মনে করেন, রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে দুইটি পথ অবলম্বন করা যেতে পারে। প্রথমত- ভূগর্ভে পানি শোষণ করে নেয়া এবং দ্বিতীয়টি খাল-বিল ও ড্রেন দিয়ে পানি নদীতে চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করা। কিন্তু রাজধানীকে এ দুইটির একটি পদ্ধতিও কার্কর নেই। যে কারনে জলাবদ্ধতা সহজে নিরসন হবে না।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

প্রতিশ্রুতিতে সীমাবদ্ধ রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসন

আপডেট টাইম : ০৪:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২ অগাস্ট ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ রাজধানী ঢাকায় সামান্য বৃষ্টিতে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র জলাবদ্ধতা। নিঁচু উঁচু সব স্থানেই সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র জলাবদ্ধতা। কখনও কখনও এটি স্থায়ীভাবেও রুপ নিচ্ছে। সঠিক নিয়মে পয়ঃবর্জ্য এবং পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না হওয়ায় দিনের পর দিন জলাবদ্ধতায় নাকাল হয়ে পড়ছেন রাজধানীর সাধারণ জনগণ। অথচ এ দুর্ভোগ লাঘবের জন্য দায়িত্বরত দুই মেয়র সাঈদ খোকন ও অানিসুল হক জলাবদ্ধতা নিরসনে নানান প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়নের সুফল জনগণ এখনো পাচ্ছেন না। কবে নাগাদ এ সমস্যার সমাধানে হবে সেটিও সঠিকভাবে বলতে পারছেন দুই সিটি করপোরেশনের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা।

জলাবদ্ধতার জন্য সাধারণ মানুষ দায়ী করছেন ঢাকার দক্ষিণ সিটি ও উত্তর সিটি করপোরেশনকে। অাবার এ দুই সিটি করপোরেশন জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী করছেন ঢাকা ওয়াসাকে। কিন্তু ওয়াসা বলছেন এ দায় তাদের নয়। এমন পাল্টা পাল্টা অজুহাতে ক্রমেই দুর্ভোগ চরম অাকার ধারণ করছে। যানজটের এ শহর এখন জলজটের কারণে দুর্ভোগ বহুগুণ বেড়ে গেছে।

অন্যদিকে ঢাকার দুই মেয়র নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে বলেছিলেন, রাজধানীর উল্লেখ্যযোগ্য সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। তার মধ্যে জলাবদ্ধতা ও যানজটকে প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন তারা। তখন তারা বলেছিলেন, এসমস্যা সমাধান এখন সময়ের অপেক্ষামাত্র। কিন্তুু  নির্বাচিত হওয়ার দুবছর দুমাস অতিক্রম হলেও জলাবদ্ধতা নিরসনে দুই মেয়রের দেয়া প্রতিশ্রুতির ন্যুনতম সুফলও জনগণ এখনো পাচ্ছেন না। তাই ক্রমেই জনগনের মাঝে চাপা ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। সাধারণ মানুষ বলছেন, সবাই প্রতিশ্রুতি দেয় কিন্তু বাস্তবায়নে নেই কোন কার্যকরী পদক্ষেপ।

দুই সিটি করপোরেশন থেকে বলা হচ্ছে জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রধান দায়িত্ব ওয়াসার। ১৯৮৯ সালে সংস্থাটিকে পানি নিষ্কাশনের জন্য মূল দায়িত্ব দেয়া হয়। সেই সঙ্গে এ কাজে যুক্ত হয় সিটি বরপোরেশন ও অারো কয়েকটি সেবা সংস্থা। কিন্তুু অন্যান্য সেবা সংস্থাগুলো এ দায়িত্বপালন করলেও এর প্রধান দায়িত্বে থাকা ঢাকা ওয়াসা তার মূল দায়িত্ব থেকে সরে গিয়ে কোটি কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ণ নিয়ে ব্যস্ত। এ কারনে ওয়াসার এমন ব্যর্থতার দায় সরাসরি যাচ্ছে দুই সিটি করপোরেশনের ওপরে। ফলে দুই সিটি করপোরেশনও চাচ্ছে জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব অাইনীভাবে তারা নিয়ে নিতে। কিন্তু সেটিও হচ্ছেনা।

সম্প্রতি ব্যর্থতার দায় ঢাকতে ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন বলেছেন, ড্রেনের দায়িত্ব নিতে চাই ডিএসসিসি। তবে সেটি ঠিক করে দিতে হবে। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত জনবলও দিতে হবে ডিএসসিসিকে। তাহলে এর রক্ষনাবেক্ষণ করবে তারা। অন্যদিকে ডিএনসিসির মেয়র অানিছুল হক বলছেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে খালগুলো উদ্ধার করতে সক্ষম হচ্ছে ডিএনসিসি। কিন্তু ওয়াসার ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারনে সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। তাই তারা ওয়াসার ড্রেনের দায়িত্ব নিবে।

তিন সংস্থার এমন পাল্টা পাল্টি দোষারপের কারণে জনগন পুরোই ভ্যাবাচ্যাকা খাচ্ছেন। তাদের হেয়ালীপনায় সমাধানের কোনো লক্ষন পাচ্ছেন না জনগন। তাই অাপাদত জনগনকে প্রতিশ্রুতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হচ্ছে। তবে কবে নাগাদ এ জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান মিলবে তার কোনো লক্ষন নেই। কেননা গতকাল সচিবালয়ে এ সমস্যা সমাধানে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে অাইন পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে অাগামী একমাসের মধ্যে সব অাইন পর্যালোচনা করে সমন্বয়হীনতার কারণ চিহ্নিত করে নতুন অাইন বিষয়ক সুপারিশ করে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

বিঅাইডব্লিউটিএর অবসর প্রাপ্ত কর্মকর্তা ও পরিবেশ বাঁচাও অান্দোলনের নির্বাহী সদস্য তোয়েল অাহমেদ বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের অাগে অবশ্যই পরিকল্পনাকারীকে পানির সঠিক রুপান্তর করার বিষয়টি নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে। শুধু শুধু খাল বিল অার ড্রেন নিয়ে কাজ করলে জলাবদ্ধতার সমাধান হবেনা।

এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব জানান, যেভাবে দুই সিটি করপোরেশন ও ওয়াসা এগোচ্ছে তাতে পরিস্থিতি খারাপের দিকেই যাচ্ছে। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যৎতে পরিস্থিতি অারো ভয়াবহ হওয়ার অাশঙ্কা রয়েছে।  তিনি মনে করেন, রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে দুইটি পথ অবলম্বন করা যেতে পারে। প্রথমত- ভূগর্ভে পানি শোষণ করে নেয়া এবং দ্বিতীয়টি খাল-বিল ও ড্রেন দিয়ে পানি নদীতে চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করা। কিন্তু রাজধানীকে এ দুইটির একটি পদ্ধতিও কার্কর নেই। যে কারনে জলাবদ্ধতা সহজে নিরসন হবে না।