ঢাকা , বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেয়র এখনো বীমা কোম্পানির চেয়ারম্যান

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ  স্থানীয় সরকার আইনেই সিটি করপোরেশন মেয়রের লাভজনক কোনো পদে থাকার সুযোগ নেই। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী পদে নিযুক্ত বা কর্মরত ব্যক্তিদের কোনো কোম্পানি, সমিতি কিংবা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় অথবা পরিচালনায় থাকার সুযোগ রাখা হয়নি সংবিধানেও। তার পরও ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন মন্ত্রী পদমর্যাদায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন। একে আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

যদিও এর আগে শিল্পমন্ত্রী হওয়ার পর দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে দেন আমির হোসেন আমু। এশিয়া-প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক পদ থেকে অব্যাহতি নেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এছাড়া রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের স্বতন্ত্র পরিচালকের পদ ত্যাগ করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।

কোম্পানি আইন নিয়ে কাজ করেন এমন একাধিক আইনজীবী জানান, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রী সমপর্যায়ের কেউ কোম্পানির পরিচালক পদে থাকলে সেটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সংবিধানে কোম্পানির পরিচালক পদটি লাভজনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ পদটির সঙ্গে আর্থিক সুবিধা জড়িত। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ যেহেতু মন্ত্রীর পদমর্যাদার, তাই তাদের ক্ষেত্রেও কোম্পানির পরিচালক থাকার সুযোগ নেই।

১৯৯৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর নিবন্ধিত হয় ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেড। ২০০০ সালের ১ জানুয়ারি কার্যক্রম শুরু করে কোম্পানিটি। আর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০০৯ সালে। ২০১৫ সালের মে মাসে ডিএসসিসির মেয়রের দায়িত্ব নেয়ার পরও লাভজনক পদ হিসেবে ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যানের পদ ছাড়েননি সাঈদ খোকন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, আইনজীবীর পরামর্শ নিয়েই আমি ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান হিসেবে আছি। এতে আইনের কোনো লঙ্ঘন হচ্ছে না। বাংলাদেশের অনেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর বড় বড় ব্যবসা-বাণিজ্য আছে। তাদের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা না হলে আমার ক্ষেত্রে কেন?

আইনের লঙ্ঘন হচ্ছে না বলে সাঈদ খোকন দাবি করলেও মেয়রের যোগ্যতার বিষয়ে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯-এর ৯ ধারার (২) উপধারা ‘ছ’-এর ব্যাখ্যায় বলা আছে, ‘কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ (১৯৯৪ সনের ১৮ নং আইন)-এ সংজ্ঞায়িত কোনো পাবলিক কোম্পানির দ্বারা বা পক্ষে চুক্তি সম্পাদিত হইয়াছে যাহার তিনি একজন শেয়ারহোল্ডার মাত্র, তবে উহার অধীন তিনি কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত পরিচালকও নহেন বা ম্যানেজিং এজেন্টও নহেন।’

স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯-এর ৯ (২) ধারার ব্যাখ্যা-২ দ্বারা সাইদ খোকন মেয়র পদে নির্বাচিত হওয়ার ও দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বারিত বলে মন্তব্য করেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার-বিষয়ক সব আইনেই কোনো পাবলিক কোম্পানির চেয়ারম্যান, পরিচালক বা ব্যবস্থাপনার লাভজনক পদে থেকে দায়িত্ব পালনে বিধিনিষেধ রয়েছে। সেক্ষেত্রে মেয়র সাইদ খোকন যদি ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকেন, তাহলে আইনগতভাবেই তিনি মেয়রপদে দায়িত্ব পালনের অযোগ্য।

এদিকে সংবিধানের ১৪৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘সরকারের কোনো মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী পদে নিযুক্ত কিংবা কর্মরত ব্যক্তি কোনো লাভজনক পদ অথবা বেতনাদিযুক্ত পদ বা মর্যাদায় বহাল হইবেন না কিংবা মুনাফালাভের উদ্দেশ্যযুক্ত কোনো কোম্পানি, সমিতি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় অথবা পরিচালনায় কোনোরূপ অংশগ্রহণ করিবেন না।’ মন্ত্রী ছাড়াও রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, নির্বাচন কমিশনার ও সরকারি কর্মকমিশনের সদস্যের বেলায়ও সংবিধানের এ ধারা প্রযোজ্য।’ ডিএসসিসির মেয়র পদটি যেহেতু মন্ত্রীর সমমর্যাদার, তাই তাদেরও লাভজনক পদে থাকার সুযোগ নেই বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার এ প্রসঙ্গে বলেন, বীমা কোম্পানির চেয়ারম্যান বা পরিচালকের পদটি যদি লাভজনক হয়, তাহলে মেয়রের ওই পদে থাকার সুযোগ নেই।

মেয়র সাঈদ খোকনের বীমা কোম্পানির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে আইনের লঙ্ঘন হলেও এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ)। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আইডিআরএর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গকুল চাঁদ দাস বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে এখনো আমরা অবগত নই। আইন-কানুন দেখে অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হবে।

মেয়র সাঈদ খোকনের বীমা কোম্পানির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়েরও নজরে আসেনি বলে জানান আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান। তবে এখন বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে বলে জানান তিনি।

সূত্র: বণিকবার্তা

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

মেয়র এখনো বীমা কোম্পানির চেয়ারম্যান

আপডেট টাইম : ০৯:৪৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৭ অগাস্ট ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ  স্থানীয় সরকার আইনেই সিটি করপোরেশন মেয়রের লাভজনক কোনো পদে থাকার সুযোগ নেই। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী পদে নিযুক্ত বা কর্মরত ব্যক্তিদের কোনো কোম্পানি, সমিতি কিংবা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় অথবা পরিচালনায় থাকার সুযোগ রাখা হয়নি সংবিধানেও। তার পরও ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন মন্ত্রী পদমর্যাদায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন। একে আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

যদিও এর আগে শিল্পমন্ত্রী হওয়ার পর দেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে দেন আমির হোসেন আমু। এশিয়া-প্যাসিফিক ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক পদ থেকে অব্যাহতি নেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এছাড়া রিপাবলিক ইন্স্যুরেন্সের স্বতন্ত্র পরিচালকের পদ ত্যাগ করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।

কোম্পানি আইন নিয়ে কাজ করেন এমন একাধিক আইনজীবী জানান, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রী সমপর্যায়ের কেউ কোম্পানির পরিচালক পদে থাকলে সেটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। সংবিধানে কোম্পানির পরিচালক পদটি লাভজনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ পদটির সঙ্গে আর্থিক সুবিধা জড়িত। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ যেহেতু মন্ত্রীর পদমর্যাদার, তাই তাদের ক্ষেত্রেও কোম্পানির পরিচালক থাকার সুযোগ নেই।

১৯৯৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর নিবন্ধিত হয় ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেড। ২০০০ সালের ১ জানুয়ারি কার্যক্রম শুরু করে কোম্পানিটি। আর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০০৯ সালে। ২০১৫ সালের মে মাসে ডিএসসিসির মেয়রের দায়িত্ব নেয়ার পরও লাভজনক পদ হিসেবে ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যানের পদ ছাড়েননি সাঈদ খোকন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, আইনজীবীর পরামর্শ নিয়েই আমি ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান হিসেবে আছি। এতে আইনের কোনো লঙ্ঘন হচ্ছে না। বাংলাদেশের অনেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর বড় বড় ব্যবসা-বাণিজ্য আছে। তাদের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা না হলে আমার ক্ষেত্রে কেন?

আইনের লঙ্ঘন হচ্ছে না বলে সাঈদ খোকন দাবি করলেও মেয়রের যোগ্যতার বিষয়ে স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯-এর ৯ ধারার (২) উপধারা ‘ছ’-এর ব্যাখ্যায় বলা আছে, ‘কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ (১৯৯৪ সনের ১৮ নং আইন)-এ সংজ্ঞায়িত কোনো পাবলিক কোম্পানির দ্বারা বা পক্ষে চুক্তি সম্পাদিত হইয়াছে যাহার তিনি একজন শেয়ারহোল্ডার মাত্র, তবে উহার অধীন তিনি কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত পরিচালকও নহেন বা ম্যানেজিং এজেন্টও নহেন।’

স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯-এর ৯ (২) ধারার ব্যাখ্যা-২ দ্বারা সাইদ খোকন মেয়র পদে নির্বাচিত হওয়ার ও দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বারিত বলে মন্তব্য করেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার-বিষয়ক সব আইনেই কোনো পাবলিক কোম্পানির চেয়ারম্যান, পরিচালক বা ব্যবস্থাপনার লাভজনক পদে থেকে দায়িত্ব পালনে বিধিনিষেধ রয়েছে। সেক্ষেত্রে মেয়র সাইদ খোকন যদি ইসলামী ইন্স্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকেন, তাহলে আইনগতভাবেই তিনি মেয়রপদে দায়িত্ব পালনের অযোগ্য।

এদিকে সংবিধানের ১৪৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘সরকারের কোনো মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী পদে নিযুক্ত কিংবা কর্মরত ব্যক্তি কোনো লাভজনক পদ অথবা বেতনাদিযুক্ত পদ বা মর্যাদায় বহাল হইবেন না কিংবা মুনাফালাভের উদ্দেশ্যযুক্ত কোনো কোম্পানি, সমিতি বা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় অথবা পরিচালনায় কোনোরূপ অংশগ্রহণ করিবেন না।’ মন্ত্রী ছাড়াও রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, সুপ্রিম কোর্টের বিচারক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, নির্বাচন কমিশনার ও সরকারি কর্মকমিশনের সদস্যের বেলায়ও সংবিধানের এ ধারা প্রযোজ্য।’ ডিএসসিসির মেয়র পদটি যেহেতু মন্ত্রীর সমমর্যাদার, তাই তাদেরও লাভজনক পদে থাকার সুযোগ নেই বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার এ প্রসঙ্গে বলেন, বীমা কোম্পানির চেয়ারম্যান বা পরিচালকের পদটি যদি লাভজনক হয়, তাহলে মেয়রের ওই পদে থাকার সুযোগ নেই।

মেয়র সাঈদ খোকনের বীমা কোম্পানির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে আইনের লঙ্ঘন হলেও এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ)। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আইডিআরএর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গকুল চাঁদ দাস বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে এখনো আমরা অবগত নই। আইন-কানুন দেখে অভিযোগটি খতিয়ে দেখা হবে।

মেয়র সাঈদ খোকনের বীমা কোম্পানির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়েরও নজরে আসেনি বলে জানান আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান। তবে এখন বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে বলে জানান তিনি।

সূত্র: বণিকবার্তা