ঢাকা , বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ৮ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১৪ জেলায় বন্যা, লাখো মানুষ দুর্ভোগে

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ এক দফা বন্যার রেশ না কাটতেই ফের বানের পানিতে ভাসছে দেশের ১৪ জেলার নিম্নাঞ্চল। বসতভিটা থেকে রাস্তাঘাট সবখানেই এখন থৈথৈ পানি। মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে দিশেহারা লাখো মানুষ। আগস্টে আরেকটি বন্যা আসছে বলে আগেই সতর্ক করেছিলেন দেশের পানি বিশেষজ্ঞরা। গত মাসে অনুষ্ঠিত ডিসি সম্মেলনে পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদও বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা করে জেলা প্রশাসকদের সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢলে সুরমা, তিস্তা ও যমুনা নদীর পানি বেড়ে আবারও বিপদসীমার ওপরে। রংপুর, বগুড়া, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, শেরপুর, ঠাকুরগাঁও, নেত্রকোনা, কুড়িগ্রাম, নীলফামারীসহ বেশকিছু এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে নতুন করে দুর্ভোগে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। ভেসে গেছে ফসল ও পুকুরের মাছ। গতকাল শনিবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের ৯০টি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের মধ্যে ৮১টিতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। আর ১৭টি পয়েন্টে নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন জানান, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মা, গঙ্গা, সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি সমান তালে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

জেলা-উপজেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর: রংপুর :গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়ার নিচু এলাকার ১৫টি ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাটসহ ফসলি জমি। ভেসে গেছে কয়েকশ’ পুকুরের মাছ। পানিবন্দি মানুষ উঁচু জায়গাসহ তিস্তা প্রতিরক্ষা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। প্লাবিত এলাকার বিদ্যালয়গুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুুল আল হাদি জানান, তার ইউনিয়নের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তারা খেয়ে-না খেয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। তিনি দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদেরকে সরকারি সহায়তার অনুরোধ জানান। কাউনিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ১৫ হাজার মানুষ। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামিমুর রহমান জানান, এ পর্যন্ত ১২ হাজার হেক্টর আমন ক্ষেত, ১০ হাজার হেক্টর বীজতলা তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে ২০০ পুকুরের মাছ।

বগুড়া: ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি ৫৪ সেন্টিমিটার বেড়ে গতকাল বেলা ৩টার দিকে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। জেলার সারিয়াকান্দি পয়েন্টে যমুনা বিপদসীমার দুই সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত কয়েক দিনে অব্যাহত পানি বৃদ্ধির কারণে নদীতীরবর্তী এলাকায় দ্বিতীয় দফা বন্যার আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় অনেকে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটতে শুরু করেছে। সারিয়াকান্দি উপজেলার চর কর্ণিবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আজাহার আলী মণ্ডল জানান, পানি বেড়ে যাওয়ায় রোপা আমন ও বীজতলা তলিয়ে গেছে। বগুড়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আমিন বলেন, ‘আমরা যে পূর্বাভাস পেয়েছি, তাতে আগামী ১৬ আগস্ট পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।’

সিলেট: সিলেটের কানাইঘাটে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে উপজেলার সুরমা ডাইকের বিভিন্ন স্থানে ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। উপজেলা সদরের ডালাইচর, গৌরিপুর, লক্ষ্মীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নের কুওরগড়ি, সাতবাঁক ইউনিয়নের চরিপাড়া স্কুলের সম্মুখ, লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের নয়াবাজার ও মূলাগুল বাজারের সম্মুখ ভাগ যে কোনো সময় ভেঙে যেতে পারে। এ ছাড়াও সুরমার সঙ্গে মিলিত বিভিন্ন ছোট নদী, ছড়া ও খাল-বিল দিয়ে পানি ঢুকে মূলাগুল, কালিনগর, আসামপাড়া, কুওরগড়ি, বড়চতুল, লখাইরগ্রাম, বিষুষ্ণপুর ও রাজাগঞ্জের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। গোয়াইনঘাট উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাট প্লাবিত হওয়ায় উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বসতঘরে পানি ওঠায় অনেকেই গবাদি পশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে। গো-খাদ্যেরও দেখা দিয়েছে চরম সংকট। জৈন্তাপুর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের প্রায় সবক’টি এলাকা প্লাবিত। একই অবস্থা কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চলেও।

সুনামগঞ্জ: জেলার সব নদীর পানি ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সুরমা নদীর পানি গতকাল বেলা ৩টায় বিপদসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। জেলার সাত উপজেলার নিম্নাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ২৮৫টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান দু’দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সুরমা নদীর পানি কূল উপচে সুনামগঞ্জ-ধারারগাঁও সড়ক ডুবিয়ে দেওয়ায় কোরবাননগর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। সড়কটি ডুবে যাওয়ায় সুরমার উত্তর পাড়ের ৩ ইউনিয়নসহ কোরবাননগর ইউনিয়নের মানুষ যাতায়াতে ভোগান্তিতে পড়েছে। সুনামগঞ্জ-ধারারগাঁও-হালুয়ারঘাট সড়কের তিন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এলজিইডি ও কোরবাননগর ইউনিয়নের উদ্যোগে বালির বস্তা ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

মৌলভীবাজার: সদর উপজেলার কুশিয়ারা নদীর শেরপুর অংশে গতকাল বেলা ৩টায় মনু নদীর চাঁদনীঘাট ও রেলওয়ে ব্রিজের কাছে পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর সিলেটের শেওলা অংশে ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। রাজনগরের ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নকুল দাশ জানান, হাওরপাড়ের বেশিরভাগ মানুষ কৃষিনির্ভর। গত মার্চের আগাম বন্যায় বোরো ফসল হারিয়ে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এখন শেষ সময়ে রোপা আমন জমি পানির নিচে থাকায় তারা শঙ্কায় রয়েছেন। মৌলভীবাজার পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী বিজয় ইন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বলেন, অব্যাহত বৃষ্টিপাতের ফলে হাওরের নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে রোপা আমন তলিয়ে গেছে।

লালমনিরহাট: চার দিনের টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর ধরলার পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। এতে লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলায় দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বন্যা। বন্যাকবলিত মানুষ গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে বিপাকে পড়েছে। শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। পাউবো ও স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পাটগ্রামের দহগ্রাম, বুড়িমারী, শ্রীরামপুর, পাটগ্রাম পৌরসভা, জোংড়া ইউনিয়ন, বাউরা ইউনিয়ন; হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, ডাউয়াবাড়ী, সিঙ্গিমারী, পাটিকাপাড়া, সিন্দুর্না, টংভাঙ্গা, বড়খাতা; কালীগঞ্জের কাকিনা, তুষভাণ্ডার, ভোটমারী; আদিতমারীর মহিষখোচা; লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুণ্ডা, রাজপুর, খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন, মোগলহাট, কুলাঘাট, বড়বাড়ী ইউনিয়নে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

গাইবান্ধা: ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, করতোয়া, ঘাঘটসহ সবক’টি নদীর পানি হু হু করে বাড়ছে। জেলা পাউবো ও রেলওয়ে মেরিন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকেল ৫টা পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্রে ৭০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। এ ছাড়া তিস্তা ৪৫, করতোয়া ৫৯ ও ঘাঘটের পানি ৭৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। এতে তলিয়ে গেছে জেলার নিচু এলাকার বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট ও ফসলি জমি। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে রেকর্ড পরিমাণ বর্ষণে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর-ডোবাসহ নিচু এলাকা পানিতে থৈ থৈ করছে।

পঞ্চগড়: জেলার পাঁচ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। পৌরসভা এলাকার নিমনগর, ডিস্টিলারিজ খালপাড়া, পুরানা ক্যাম্প, জালাসীপাড়া, রামেরডাংগা, পৌর খালপাড়া, মিঠাপুকুর, রাজনগর খালপাড়াসহ বিভিন্ন মহল্লার তিন হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তেঁতুলিয়া উপজেলার মহানন্দা নদীপাড়ের গ্রামগুলো তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়েছে আটোয়ারী উপজেলার শলই শালশিরিসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম। পানিবন্দি অনেক পরিবার পাশের স্কুল-কলেজসহ আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। এদিকে, রেললাইনের ওপর দিয়ে প্রবল স্রোতে পানিপ্রবাহের কারণে নয়নীব্রুজ স্টেশন থেকে কিসমত স্টেশন পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রেলপথের পাথর সরে গেছে। এ কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে পঞ্চগড়-ঢাকা রেল যোগাযোগ। বালুর বস্তা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত স্থান সংরক্ষণের চেষ্টা করছে রেল কর্তৃপক্ষ।

দিনাজপুর: টানা দু’দিনের বৃষ্টিতে দিনাজপুরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে শত শত একর জমির ফসল। অনেক স্থানেই সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। খানসামাসহ বিভিন্ন এলাকার শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ২১৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের ইনচার্জ তোফাজ্জুর রহমান। তিনি জানান, আগামী দু’দিন এ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে।

শেরপুর: নালিতাবাড়ী উপজেলার ভোগাই নদীর অন্তত ১৩টি স্থানে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পৌরসভাসহ উপজেলার অন্তত অর্ধশত গ্রাম আকস্মিক বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এতে ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি ডুবে গেছে; ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।

ঠাকুরগাঁও: প্রবল বর্ষণে জেলার টাঙ্গন, শুক, সেনুয়া, ভূলি্ল, কুলিক, নাগরসহ ১০ নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আকস্মিক এ বন্যায় কমপক্ষে ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জেলা শহরের ডিসি বস্তি, খালপাড়া, হঠাৎপাড়া, পূর্ব গোয়ালপাড়া, মুন্সিপাড়া, টাঙ্গন ও সেনুয়া নদী সংলগ্ন পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছে।

নেত্রকোনা: সোমেশ্বরী নদীর পানি দুর্গাপুর পয়েন্টে ১৫০ সেন্টিমিটার, কংশ নদের পানি পূর্বধলার জারিয়া পয়েন্টে ১৩৫ সেন্টিমিটার, উদ্ধাখালী নদীর পানি কলমাকান্দা পয়েন্টে ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, সদর উপজেলা, বারহাট্টাসহ বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চলসহ অভ্যন্তরীণ সড়ক ও হাট-বাজার তলিয়ে গেছে। পানি উঠে যাওয়ায় গতকাল ৯টি বিদ্যালয়ের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

কুড়িগ্রাম: রৌমারী ও নাগেশ্বরী উপজেলার বেশির ভাগ নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বীজতলা, সবজি বাগান ও রোপা আমনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বেশি বিপাকে পড়েছে দিনমজুর, রিকশা-ভ্যান চালকসহ খেটে খাওয়া মানুষ। বৃষ্টির দিনে কোনো কাজ না থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা খেয়ে-না খেয়ে দিনাতিপাত করছে।

জলঢাকা (নীলফামারী): উপজেলার ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে আড়াই হাজার হেক্টর ফসলি জমি। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত তিস্তার পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে অনেক এলাকার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো মেরামতের কাজ চলছে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

১৪ জেলায় বন্যা, লাখো মানুষ দুর্ভোগে

আপডেট টাইম : ১১:১০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ অগাস্ট ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ এক দফা বন্যার রেশ না কাটতেই ফের বানের পানিতে ভাসছে দেশের ১৪ জেলার নিম্নাঞ্চল। বসতভিটা থেকে রাস্তাঘাট সবখানেই এখন থৈথৈ পানি। মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে দিশেহারা লাখো মানুষ। আগস্টে আরেকটি বন্যা আসছে বলে আগেই সতর্ক করেছিলেন দেশের পানি বিশেষজ্ঞরা। গত মাসে অনুষ্ঠিত ডিসি সম্মেলনে পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদও বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা করে জেলা প্রশাসকদের সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢলে সুরমা, তিস্তা ও যমুনা নদীর পানি বেড়ে আবারও বিপদসীমার ওপরে। রংপুর, বগুড়া, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, শেরপুর, ঠাকুরগাঁও, নেত্রকোনা, কুড়িগ্রাম, নীলফামারীসহ বেশকিছু এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে নতুন করে দুর্ভোগে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। ভেসে গেছে ফসল ও পুকুরের মাছ। গতকাল শনিবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের ৯০টি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের মধ্যে ৮১টিতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। আর ১৭টি পয়েন্টে নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন জানান, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মা, গঙ্গা, সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি সমান তালে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

জেলা-উপজেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর: রংপুর :গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়ার নিচু এলাকার ১৫টি ইউনিয়নের প্রায় ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাটসহ ফসলি জমি। ভেসে গেছে কয়েকশ’ পুকুরের মাছ। পানিবন্দি মানুষ উঁচু জায়গাসহ তিস্তা প্রতিরক্ষা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। প্লাবিত এলাকার বিদ্যালয়গুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুুল আল হাদি জানান, তার ইউনিয়নের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তারা খেয়ে-না খেয়ে খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। তিনি দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদেরকে সরকারি সহায়তার অনুরোধ জানান। কাউনিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ১৫ হাজার মানুষ। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামিমুর রহমান জানান, এ পর্যন্ত ১২ হাজার হেক্টর আমন ক্ষেত, ১০ হাজার হেক্টর বীজতলা তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে ২০০ পুকুরের মাছ।

বগুড়া: ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি ৫৪ সেন্টিমিটার বেড়ে গতকাল বেলা ৩টার দিকে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। জেলার সারিয়াকান্দি পয়েন্টে যমুনা বিপদসীমার দুই সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত কয়েক দিনে অব্যাহত পানি বৃদ্ধির কারণে নদীতীরবর্তী এলাকায় দ্বিতীয় দফা বন্যার আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় অনেকে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটতে শুরু করেছে। সারিয়াকান্দি উপজেলার চর কর্ণিবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান আজাহার আলী মণ্ডল জানান, পানি বেড়ে যাওয়ায় রোপা আমন ও বীজতলা তলিয়ে গেছে। বগুড়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রুহুল আমিন বলেন, ‘আমরা যে পূর্বাভাস পেয়েছি, তাতে আগামী ১৬ আগস্ট পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।’

সিলেট: সিলেটের কানাইঘাটে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে উপজেলার সুরমা ডাইকের বিভিন্ন স্থানে ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। উপজেলা সদরের ডালাইচর, গৌরিপুর, লক্ষ্মীপ্রসাদ পশ্চিম ইউনিয়নের কুওরগড়ি, সাতবাঁক ইউনিয়নের চরিপাড়া স্কুলের সম্মুখ, লক্ষ্মীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের নয়াবাজার ও মূলাগুল বাজারের সম্মুখ ভাগ যে কোনো সময় ভেঙে যেতে পারে। এ ছাড়াও সুরমার সঙ্গে মিলিত বিভিন্ন ছোট নদী, ছড়া ও খাল-বিল দিয়ে পানি ঢুকে মূলাগুল, কালিনগর, আসামপাড়া, কুওরগড়ি, বড়চতুল, লখাইরগ্রাম, বিষুষ্ণপুর ও রাজাগঞ্জের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। গোয়াইনঘাট উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাঘাট প্লাবিত হওয়ায় উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বসতঘরে পানি ওঠায় অনেকেই গবাদি পশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে। গো-খাদ্যেরও দেখা দিয়েছে চরম সংকট। জৈন্তাপুর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের প্রায় সবক’টি এলাকা প্লাবিত। একই অবস্থা কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চলেও।

সুনামগঞ্জ: জেলার সব নদীর পানি ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সুরমা নদীর পানি গতকাল বেলা ৩টায় বিপদসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। জেলার সাত উপজেলার নিম্নাঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ২৮৫টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান দু’দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সুরমা নদীর পানি কূল উপচে সুনামগঞ্জ-ধারারগাঁও সড়ক ডুবিয়ে দেওয়ায় কোরবাননগর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। সড়কটি ডুবে যাওয়ায় সুরমার উত্তর পাড়ের ৩ ইউনিয়নসহ কোরবাননগর ইউনিয়নের মানুষ যাতায়াতে ভোগান্তিতে পড়েছে। সুনামগঞ্জ-ধারারগাঁও-হালুয়ারঘাট সড়কের তিন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এলজিইডি ও কোরবাননগর ইউনিয়নের উদ্যোগে বালির বস্তা ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

মৌলভীবাজার: সদর উপজেলার কুশিয়ারা নদীর শেরপুর অংশে গতকাল বেলা ৩টায় মনু নদীর চাঁদনীঘাট ও রেলওয়ে ব্রিজের কাছে পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর সিলেটের শেওলা অংশে ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। রাজনগরের ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নকুল দাশ জানান, হাওরপাড়ের বেশিরভাগ মানুষ কৃষিনির্ভর। গত মার্চের আগাম বন্যায় বোরো ফসল হারিয়ে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। এখন শেষ সময়ে রোপা আমন জমি পানির নিচে থাকায় তারা শঙ্কায় রয়েছেন। মৌলভীবাজার পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী বিজয় ইন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বলেন, অব্যাহত বৃষ্টিপাতের ফলে হাওরের নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে রোপা আমন তলিয়ে গেছে।

লালমনিরহাট: চার দিনের টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর ধরলার পানি প্রবাহিত হচ্ছে বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। এতে লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলায় দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বন্যা। বন্যাকবলিত মানুষ গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে বিপাকে পড়েছে। শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। পাউবো ও স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পাটগ্রামের দহগ্রাম, বুড়িমারী, শ্রীরামপুর, পাটগ্রাম পৌরসভা, জোংড়া ইউনিয়ন, বাউরা ইউনিয়ন; হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, ডাউয়াবাড়ী, সিঙ্গিমারী, পাটিকাপাড়া, সিন্দুর্না, টংভাঙ্গা, বড়খাতা; কালীগঞ্জের কাকিনা, তুষভাণ্ডার, ভোটমারী; আদিতমারীর মহিষখোচা; লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুণ্ডা, রাজপুর, খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন, মোগলহাট, কুলাঘাট, বড়বাড়ী ইউনিয়নে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

গাইবান্ধা: ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, করতোয়া, ঘাঘটসহ সবক’টি নদীর পানি হু হু করে বাড়ছে। জেলা পাউবো ও রেলওয়ে মেরিন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গতকাল বিকেল ৫টা পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্রে ৭০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। এ ছাড়া তিস্তা ৪৫, করতোয়া ৫৯ ও ঘাঘটের পানি ৭৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। এতে তলিয়ে গেছে জেলার নিচু এলাকার বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট ও ফসলি জমি। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার মানুষ। এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে রেকর্ড পরিমাণ বর্ষণে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুর-ডোবাসহ নিচু এলাকা পানিতে থৈ থৈ করছে।

পঞ্চগড়: জেলার পাঁচ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। পৌরসভা এলাকার নিমনগর, ডিস্টিলারিজ খালপাড়া, পুরানা ক্যাম্প, জালাসীপাড়া, রামেরডাংগা, পৌর খালপাড়া, মিঠাপুকুর, রাজনগর খালপাড়াসহ বিভিন্ন মহল্লার তিন হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তেঁতুলিয়া উপজেলার মহানন্দা নদীপাড়ের গ্রামগুলো তলিয়ে গেছে। পানিবন্দি হয়েছে আটোয়ারী উপজেলার শলই শালশিরিসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম। পানিবন্দি অনেক পরিবার পাশের স্কুল-কলেজসহ আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। এদিকে, রেললাইনের ওপর দিয়ে প্রবল স্রোতে পানিপ্রবাহের কারণে নয়নীব্রুজ স্টেশন থেকে কিসমত স্টেশন পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রেলপথের পাথর সরে গেছে। এ কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে পঞ্চগড়-ঢাকা রেল যোগাযোগ। বালুর বস্তা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত স্থান সংরক্ষণের চেষ্টা করছে রেল কর্তৃপক্ষ।

দিনাজপুর: টানা দু’দিনের বৃষ্টিতে দিনাজপুরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে শত শত একর জমির ফসল। অনেক স্থানেই সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। খানসামাসহ বিভিন্ন এলাকার শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ২১৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের ইনচার্জ তোফাজ্জুর রহমান। তিনি জানান, আগামী দু’দিন এ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে।

শেরপুর: নালিতাবাড়ী উপজেলার ভোগাই নদীর অন্তত ১৩টি স্থানে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পৌরসভাসহ উপজেলার অন্তত অর্ধশত গ্রাম আকস্মিক বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এতে ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি ডুবে গেছে; ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।

ঠাকুরগাঁও: প্রবল বর্ষণে জেলার টাঙ্গন, শুক, সেনুয়া, ভূলি্ল, কুলিক, নাগরসহ ১০ নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আকস্মিক এ বন্যায় কমপক্ষে ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জেলা শহরের ডিসি বস্তি, খালপাড়া, হঠাৎপাড়া, পূর্ব গোয়ালপাড়া, মুন্সিপাড়া, টাঙ্গন ও সেনুয়া নদী সংলগ্ন পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছে।

নেত্রকোনা: সোমেশ্বরী নদীর পানি দুর্গাপুর পয়েন্টে ১৫০ সেন্টিমিটার, কংশ নদের পানি পূর্বধলার জারিয়া পয়েন্টে ১৩৫ সেন্টিমিটার, উদ্ধাখালী নদীর পানি কলমাকান্দা পয়েন্টে ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুর্গাপুর, কলমাকান্দা, সদর উপজেলা, বারহাট্টাসহ বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চলসহ অভ্যন্তরীণ সড়ক ও হাট-বাজার তলিয়ে গেছে। পানি উঠে যাওয়ায় গতকাল ৯টি বিদ্যালয়ের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

কুড়িগ্রাম: রৌমারী ও নাগেশ্বরী উপজেলার বেশির ভাগ নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বীজতলা, সবজি বাগান ও রোপা আমনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বেশি বিপাকে পড়েছে দিনমজুর, রিকশা-ভ্যান চালকসহ খেটে খাওয়া মানুষ। বৃষ্টির দিনে কোনো কাজ না থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে তারা খেয়ে-না খেয়ে দিনাতিপাত করছে।

জলঢাকা (নীলফামারী): উপজেলার ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে আড়াই হাজার হেক্টর ফসলি জমি। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত তিস্তার পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এতে অনেক এলাকার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো মেরামতের কাজ চলছে।