বাবা-মা ভাইসহ স্বজন হারানোর সেই দিনের কথা স্মরণ করে কাঁদলেন, কাঁদালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী যখন এমন কথা বলেন তখন গোটা হল রুমে আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। উপস্থিত সবার চোখ ছল ছল করছিল। এসময় পিনপণ নীরবতা নেমে আসে সেখানে।
তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, বাংলার মানুষের জন্যই আমার বাবা সপরিবার জীবন দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমাদের পরিবারের প্রায় সবাইকে হত্যা করার পর দীর্ঘ সময় আমাদের দেশের বাইরে থাকতে হয়েছিল। আমাদের দুই বোনকে দেশে আসতে দেয়া হয়নি।
তিনি বলেন, আমি যেকোনো ত্যাগ শিকারে প্রস্তুত। বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে জীবন দিতেও প্রস্তুত।
শোকাবহ আগস্ট উপলক্ষে রাজধানীর ধানমন্ডির রাসেল স্কয়ারে সোমবার বিকেলে কৃষক লীগ আয়োজিত রক্তদান কর্মসূচিতে তিনি এসব কথা বলেন।
দীর্ঘ প্রবাস জীবন শেষে দেশে ফিরে আসার ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী
বলেন, একটি প্রতিজ্ঞা নিয়ে আমি দেশে ফিরে আসি। সেটি হচ্ছে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো।
তিনি বলেন, দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে গিয়ে আমার বাবা-মাসহ পরিবারের সবাইকে জীবন দিতে হয়েছে। ক্যান্টনমেন্ট থেকে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমান আমাদের দেশে ফেরায় বারবার বাধা দিয়েছেন। ওরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হননি, তাকে নিয়ে বহু অপপ্রচার চালানো হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শেষ পর্যন্ত দেশে আসার পর আমরা যখন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে যাই, তখন আমাদের ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়নি। বহু স্মৃতির ওই বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে আমাদের সেদিন মিলাদ পড়তে হয়েছিল। জিয়াউর রহমান আমাদের ওই বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি। এ নিয়ে বহু ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জিয়াউর রহমান দেশের স্বাধীনতা বিরোধীদের জায়গা করে দিয়েছে রাজনীতি করার জন্য। তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্বাধীনতা বিরোধীদের নিয়ে শাসন ক্ষমতায় বসেছিলেন।
যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি তারাই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, দেশ নিয়ে আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না। আপনাদের সহযোগিতা পেলে ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশে পরিণত করবো।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের নানা প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাজীবন তিনি কম জেল-জুলুমের শিকার হননি। এরপরও তিনি দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করে গেছেন। বাংলার মানুষের জন্য তিনি শেষপর্যন্ত জীবন দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলার মানুষকে এখন আর বিভ্রান্ত করা যাবে না। এ দেশের মানুষ এখন অনেক বেশি সতর্ক। বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকেই আমি শিখেছি-কীভাবে দেশের মানুষে ভাগ্যের পরিবর্তন করতে হবে। সে কারণেই কিছুটা হলেও মানুষের মনে শান্তি আনতে পেরেছি।