ঢাকা , শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৬ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অনিশ্চিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিল আগামী ২২-২৩ অক্টোবর

কার্যনির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ২২-২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হওয়ার কথা। সেই হিসেবে হাতে আছে মাত্র দু’মাস। কিন্তু দলের নেতা কর্মীদের মধ্যে সম্মেলন নিয়ে নেই কোন তোড়জোড়। কেন্দ্রীয় নেতাদের মাঝেও কাউন্সিলকে ঘিরে তেমন কোন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। ঈদুল ফিতরের পরে কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে গঠিত উপ-কমিটিগুলোরও কোন বৈঠক হয়নি। এসব দেখে কাউন্সিল আবারো পেছানোর আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে কথা জানা গেছে, সাম্প্রতিক কয়েকটি বড় ধরনের জঙ্গি হামলার ঘটনায় সব সেক্টরেই পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। এই পরিস্থিতিতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে দলের নেতাকর্মীরা। জনগনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটাই ক্ষমতাসীন দলটির প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে। ফলে স্বাভাবিক কর্মসূচিও কমে গেছে। দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডেও মনোযোগ কম দিচ্ছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। কাউন্সিল ঘোষণার পর নেতাকর্মীদের মধ্যে যে উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল, এখন তাতে অনেকটাই ভাটা পড়েছে। বরং বেড়েছে সতর্ক তৎপরতা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় কমিটি, সহযোগী সংগঠন, এমনকি জঙ্গিদমনে ব্যস্ত ১৪-দলীয় জোট নেতারাও। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সারা দেশে গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সমাবেশ করছেন তারা। শুধু রাজধানী নয় সারাদেশেই তৎপর রয়েছেন নেতাকর্মীরা। দলীয় নির্দশনা অনুযায়ী পাড়ায় মহল্লায় গঠন করা হচ্ছে সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি। এসব কমিটি গঠনের পাশাপাশি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জঙ্গি তৎপরতা রুখতে বিভিন্ন কার্যক্রমেও অংশ নিচ্ছেন দলটির নেতারা। ফলে কাউন্সিল কেন্দ্রীক আওয়াজটা অনেকটাংশেই ঝিমিয়ে গেছে।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জানিয়েছেন, ‘এই মুহুর্তে দলের চেয়ে দেশের কথা আগে বিবেচনা করতে হবে। কারণ, দেশের যা পরিস্থিতি- জঙ্গিবাদ একটা সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। এটা মোকাবেলা করতে আমাদের নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতে হচ্ছে। স্বাভাবিক সাংগঠনিক কার্যক্রমের বাইরে এসে জঙ্গিবাদ বিরোধী কার্যক্রম বাড়াতে হচ্ছে। ফলে কাউন্সিল কেন্দ্রীক তৎপরতাটা ঝিমিয়ে গেছে।’

ওই নেতা আরও জানান, ‘চাইলেই কয়েকটা মিটিং করে কাউন্সিল করে ফেলা যায়। তবে আমরা আপাতত সেটা নিয়ে ভাবছি না।’ অক্টোবরে সম্মেলন না হলে কখন হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে ওই নেতা অক্টোবরে না হলে আগামী বছরে পিছিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। দলটির সম্পাদকমন্ডলীর আরেকজন সদস্য জানিয়েছেন, ‘গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলার পর দলের কাউন্সিল উপ কমিটির কোনো সভা ডাকা হয়নি। এখন চলছে শোকের অগাস্ট। এ মাসে এ নিয়ে কোন বৈঠক ডাকার সম্ভাবনা নেই। ফলে মাত্র সেপ্টেম্বর থেকে মাত্র এক দেড় মাসে প্রস্তুতি নেয়াটা কঠিনই হবে।’

তবে ভিন্ন মত ব্যক্ত করেছেন দলের অন্য নেতারা। তারা দাবি করেছেন, এখন পর্যন্ত যেহেতু সম্মেলনের সিদ্ধান্ত আছে, সম্মেলন হবেই। জঙ্গি ইস্যুতে কাজ করার পাশাপাশি দলের নেতাকর্মীরা কাউন্সিলের কাজও গুছিয়ে নিচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই জঙ্গিবাদ দমন করা হবে এবং একই সঙ্গে দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। আমরা যথাসময়েই সম্মেলনের কাজ শুরু করব।’ ড আব্দুস সোবহান গোলাপ পূর্বপশ্চিমকে বলেন, ‘কাউন্সিল সময়মতোই হবে। শোকের মাস আগস্টে সাংগঠনিক কর্মসূচি কম থাকলেও পুরো সেপ্টেম্বর মাসজুড়েই প্রস্তুতি নেয়া হবে।’

উল্লেখ্য যে, ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিল হয়েছিল। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কমিটির মেয়াদ তিন বছর। তবে এর মধ্যে কয়েক দফা কমিটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। একইসাথে সম্মেলনের তারিখ দুইবার পরিবর্তন করে অক্টোবরে নির্ধারণ করা হয়েছে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

অনিশ্চিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিল আগামী ২২-২৩ অক্টোবর

আপডেট টাইম : ০৬:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ অগাস্ট ২০১৬

কার্যনির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ২২-২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হওয়ার কথা। সেই হিসেবে হাতে আছে মাত্র দু’মাস। কিন্তু দলের নেতা কর্মীদের মধ্যে সম্মেলন নিয়ে নেই কোন তোড়জোড়। কেন্দ্রীয় নেতাদের মাঝেও কাউন্সিলকে ঘিরে তেমন কোন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। ঈদুল ফিতরের পরে কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে গঠিত উপ-কমিটিগুলোরও কোন বৈঠক হয়নি। এসব দেখে কাউন্সিল আবারো পেছানোর আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে কথা জানা গেছে, সাম্প্রতিক কয়েকটি বড় ধরনের জঙ্গি হামলার ঘটনায় সব সেক্টরেই পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। এই পরিস্থিতিতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে দলের নেতাকর্মীরা। জনগনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাটাই ক্ষমতাসীন দলটির প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে। ফলে স্বাভাবিক কর্মসূচিও কমে গেছে। দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডেও মনোযোগ কম দিচ্ছেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। কাউন্সিল ঘোষণার পর নেতাকর্মীদের মধ্যে যে উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল, এখন তাতে অনেকটাই ভাটা পড়েছে। বরং বেড়েছে সতর্ক তৎপরতা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় কমিটি, সহযোগী সংগঠন, এমনকি জঙ্গিদমনে ব্যস্ত ১৪-দলীয় জোট নেতারাও। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সারা দেশে গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সমাবেশ করছেন তারা। শুধু রাজধানী নয় সারাদেশেই তৎপর রয়েছেন নেতাকর্মীরা। দলীয় নির্দশনা অনুযায়ী পাড়ায় মহল্লায় গঠন করা হচ্ছে সন্ত্রাস প্রতিরোধ কমিটি। এসব কমিটি গঠনের পাশাপাশি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জঙ্গি তৎপরতা রুখতে বিভিন্ন কার্যক্রমেও অংশ নিচ্ছেন দলটির নেতারা। ফলে কাউন্সিল কেন্দ্রীক আওয়াজটা অনেকটাংশেই ঝিমিয়ে গেছে।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জানিয়েছেন, ‘এই মুহুর্তে দলের চেয়ে দেশের কথা আগে বিবেচনা করতে হবে। কারণ, দেশের যা পরিস্থিতি- জঙ্গিবাদ একটা সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। এটা মোকাবেলা করতে আমাদের নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতে হচ্ছে। স্বাভাবিক সাংগঠনিক কার্যক্রমের বাইরে এসে জঙ্গিবাদ বিরোধী কার্যক্রম বাড়াতে হচ্ছে। ফলে কাউন্সিল কেন্দ্রীক তৎপরতাটা ঝিমিয়ে গেছে।’

ওই নেতা আরও জানান, ‘চাইলেই কয়েকটা মিটিং করে কাউন্সিল করে ফেলা যায়। তবে আমরা আপাতত সেটা নিয়ে ভাবছি না।’ অক্টোবরে সম্মেলন না হলে কখন হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে ওই নেতা অক্টোবরে না হলে আগামী বছরে পিছিয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। দলটির সম্পাদকমন্ডলীর আরেকজন সদস্য জানিয়েছেন, ‘গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলার পর দলের কাউন্সিল উপ কমিটির কোনো সভা ডাকা হয়নি। এখন চলছে শোকের অগাস্ট। এ মাসে এ নিয়ে কোন বৈঠক ডাকার সম্ভাবনা নেই। ফলে মাত্র সেপ্টেম্বর থেকে মাত্র এক দেড় মাসে প্রস্তুতি নেয়াটা কঠিনই হবে।’

তবে ভিন্ন মত ব্যক্ত করেছেন দলের অন্য নেতারা। তারা দাবি করেছেন, এখন পর্যন্ত যেহেতু সম্মেলনের সিদ্ধান্ত আছে, সম্মেলন হবেই। জঙ্গি ইস্যুতে কাজ করার পাশাপাশি দলের নেতাকর্মীরা কাউন্সিলের কাজও গুছিয়ে নিচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই জঙ্গিবাদ দমন করা হবে এবং একই সঙ্গে দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। আমরা যথাসময়েই সম্মেলনের কাজ শুরু করব।’ ড আব্দুস সোবহান গোলাপ পূর্বপশ্চিমকে বলেন, ‘কাউন্সিল সময়মতোই হবে। শোকের মাস আগস্টে সাংগঠনিক কর্মসূচি কম থাকলেও পুরো সেপ্টেম্বর মাসজুড়েই প্রস্তুতি নেয়া হবে।’

উল্লেখ্য যে, ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিল হয়েছিল। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কমিটির মেয়াদ তিন বছর। তবে এর মধ্যে কয়েক দফা কমিটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। একইসাথে সম্মেলনের তারিখ দুইবার পরিবর্তন করে অক্টোবরে নির্ধারণ করা হয়েছে।