বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, একটা কথা দেশে বিদেশে সকলের মাথায় রাখা উচিত; আমি যখন রাজনীতি করি…আমার স্কুল জীবন থেকে রাজনীতি করি, বৈরী পরিবেশে। আইয়ুব খান পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ছিল। আমাদের বইয়ে একটা চ্যাপ্টার ছিল, পাকিস্তান চ্যাপ্টার ছিল। ২০ নাম্বার। আমি মেট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিলাম ওই ২০ নাম্বার বাদ দিয়ে কারণ আইয়ুব খানের প্রশংসা আমার হাত দিয়ে আমি লেখব না। আমি লিখতে পারি না। কাজেই আমি সেই মানুষ। এখানে ওই ২০ নন্বরের জন্য ফেলও করতে পারতাম। বা একেবারে থার্ড ডিভিশনও পেতে পরতাম। আমি পরোয়া করি না। নীতির প্রশ্নে আপোষ নাই এটাই হচ্ছে আমার কথা।
শুক্রবার (৩১ আগস্ট) জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নিজের রাজনীতির দর্শন তুলে ধরে তিনি বলেন, মানুষের জন্য কতটুকু দিতে পারলাম, তাদের ভাগ্যে কতটুকু পরিবর্তন করতে পারলাম সেটাই আমার লক্ষ্য। কারণ আমার আত্মবিশ্বাস যে আমি যেপথে যাচ্ছি, ন্যায় ও সত্যের পথে যাচ্ছি। আমার রাজনীতি বাংলার জনগণের জন্য। দু:খী মানুষের মুখে হাসি ফোটাবার জন্য আমার বাবা তাঁর জীবন দিয়ে গেছেন, আমার মা জীবন দিয়েছেন, আমার ভাইয়েরা জীবন দিয়েছেন সেই দু:খী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো এটাই আমার একমাত্র লক্ষ্য। সেটাই আমার একমাত্র রাজনীতি।
দেশ বিরোধী বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দুভার্গ্য এখনো কতগুলো আমি দেখি কিছু প্রেতাত্মা ঘুরে বেরায়, যারা দেশের স্বাধীনতা চায় নি, স্বাধীনতার বিরোধীতা করেছিল, যারা সব সময় স্বাধীনতার বিরুদ্ধেই ছিল, ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিল, ৭৫ এর পর স্বাধীনতার ইতিহাস পাল্টে ফেলতে চেয়েছিল তারা এখনো সক্রিয়। তাদের সেই ষড়যন্ত্র কিন্তু এখনো শেষ হয় নি। কিছুদিন আগেই ছোট শিশু মারা গেল। বিক্ষুব্ধ মন নিয়ে শিশুরা রাস্তায় আন্দোলনে নেমে এল। ওই ছোট ছোট শিশুদের ঘাড়ে পাড়া দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য এক দল নেমে পড়ল। তাদের মধ্যে অনেকেই খুব জ্ঞানীগুণী, অনেকেই একেবারে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন। ডিজিটাল বাংলাদেশ আমি করে দিয়েছি। আজ তারই সুযোগ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার চালিয়ে,মিথ্য কথা বলে বলে মানুষকে উষ্কানি দেওয়া। তাদের এই উষ্কানির জন্য কত শিশুর জীবন যেতে পারত, কত শিশুর ক্ষতি হতে পারত সেটা তারা একবারো চিন্তা করেনি। আর তাদের বিরুদ্ধে যখনি ব্যবস্থা নিলাম তখনি চারদিকে যেন হাহাকার। আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকেও বিভিন্ন চাপ।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সত্যকে কখনো কেউ মুছে ফেলতে পারেনা, সত্যকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারেনা, সত্য একদিন উদ্ভাসিত হবেই। জাতির পিতার নাম মুছে ফেলতে চেয়েছিল, কিন্তু সে নাম তারা মুছে ফেলতে পারেনি। আজ বিশ্ব তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। জাতির জনকের ৭মার্চের ভাষণ আজকে সারা বিশ্বে স্বীকৃত।
ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আদর্শ শুধু মুখে বলার জন্য নয়, আদর্শ অনুসরণ করা, অনুশীলন করা, মেনে নেওয়া, সেটা মেনে চলা। ছাত্রলীগকে একটি আদর্শকি সংগঠন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে; আর্দশের পতাকা ধারণের মাধ্যমেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মেনে চললে দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব। অথচ কেউ রাজনীতি করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য, কেউ রাজনীতি করে রাজনীতির ছত্রছায়ায় ধনসম্পদ অর্জন করার জন্য, কেউ রাজনীতি করে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য।
ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের লেখা পড়া শেখার পরামর্শও দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের প্রত্যেকটা নেতা-কর্মীকে সবার আগে শিক্ষাগ্রহণ করতে হবে। লেখাপড়া শিখে জাতির পিতার আদর্শকে সামনে রেখে রাজনীতি করতে হবে। তোমরাই দেশের ভবিষ্যত।’
বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জীবন আদর্শ, ত্যাগ ও সংগ্রামের কথা তুলে ধরেন। পাকিস্তান সময়, স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধু পরিবারের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস জানতে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ বই দুইটি ছাত্রলীগের প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে পড়ার পরামর্শ দেন।
ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের সভাপতিত্ব ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ, যুব লীগ ও ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।