বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ জনস্বার্থকে ‘সর্বোচ্চ গুরুত্ব’ দিয়ে জনগণের দোরগোড়ায় সরকারি সেবা পৌঁছে দিতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) আরও আন্তরিক হওয়ার তাগিদ জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি বলেছেন, আমরা, আপনারা জনগণের প্রভু নই। তাই জনগণের সেবক হিসেবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করবেন। ডিসি সম্মেলন উপলক্ষে সোমবার বঙ্গভবনে এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি হামিদের এ আহবান আসে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, সঠিক ও সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য ক্ষমতা প্রয়োগ অত্যাবশ্যক। কিন্তু ক্ষমতা যাতে অপপ্রয়োগ না হয় তা নিশ্চিত করা আরও বেশি জরুরি। তাই কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব ও ক্ষমতার পার্থক্য সচেতনভাবে বজায় রাখবেন। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশটা স্বাধীন হয়েছিল বলেই আজ আমি রাষ্ট্রপতি, আপনারা সচিব, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক হয়েছেন। একবার ভেবে দেখুন তো, দেশ স্বাধীন না হলে আমরা কে কী হতে পারতাম? তাই দেশ ও জনগণের স্বার্থকে সবার উর্ধ্বে স্থান দেবেন।
জেলা প্রশাসনের কর্ণধার হিসেবে ডিসিরা তাদের দায়িত্ব আরও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি। সাধারণ চাষীরা যাতে ফসলের ন্যায্যমূল্য পায়, সেদিকে নজর রাখতেও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রতি আহবান জানান তিনি।
আবদুল হামিদ বলেন, সরকারের কৃষিবান্ধব নীতিকৌশলের কারণে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। খাদ্যশস্য, শাকসবজি ও ফলমূল উৎপাদনে বাংলাদেশের সাফল্য প্রশংসনীয়। কিন্তু কৃষক পর্যায়ে উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য নিশ্চিত করতে না পারলে ভবিষ্যতে উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমাতে হবে। এ ব্যাপারে আপনাদের তত্ত্বাবধান কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। সেইসঙ্গে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার তাগিদ দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, মনে রাখতে হবে, কৃষক বাঁচলেই তবে বাঁচবে দেশ। ধান চাষীগণ যাতে ধানের ন্যায্যমূল্য পায় তা নিশ্চিত করতে সর্বাত্মক প্রয়াস চালাতে হবে।
অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে বন, নদী, পাহাড় রক্ষার আহবান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি জেলা প্রশাসকদের বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ধরন পাল্টাচ্ছে এবং এর তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সামাজিক বনায়ন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন, জলাভূমির উন্নয়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস ও দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারের চলমান কর্মসূচির বাস্তবায়নে আপনাদেরকে আরও সক্রিয় হতে হবে।
অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে বন, নদী ও পাহাড় রক্ষা করতে হবে। এটা করতে পারলেই উন্নয়ন সুষম ও জনমুখী হবে। মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থানের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, দেশের আনাচে কানাচে মাদকের অপব্যবহার যুব সমাজকে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করে। মাদকদ্রব্য যাতে যুব সমাজকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে না দেয় সে দিকেও আপনাদেরকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। সরকার এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে। তাই মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।
বঙ্গভবনের দরবার হলে এই অনুষ্ঠানে দুর্নীতিকে দেশের উন্নয়নের ‘সবচেয়ে বড় অন্তরায়’ হিসেবে বর্ণনা করেন রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেন, দুর্নীতির কারণে টেকসই উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই মাঠ প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।
অন্যদের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান এবং সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমাদুল ইসলাম অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।