ঢাকা , রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঢাকা মহানগর আ. লীগের কমিটিতে বিতর্কিতরা, নেপথ্যে অর্থ লেনদেন

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটিতে স্থান পেয়েছেন নানা অপরাধে জড়িত বিতর্কিত নেতারাও। এই বিতর্কিতরা কমিটি গঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতাদের বড় অঙ্কের টাকা দিয়ে কমিটিতে স্থান করে নিয়েছেন। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক সূত্র কালের কণ্ঠকে এমন তথ্য জানিয়েছে।

অর্থের জোরে প্রস্তাবিত কমিটিতে বিতর্কিত নেতারা স্থান পাওয়ায় ক্ষুব্ধ পদবঞ্চিত নেতারা।

তাঁরা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা করে অনুরোধ জানাচ্ছেন বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে যেন কমিটি ঘোষণা করা হয়।২০২২ সালের বিভিন্ন সময় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের থানা ও ওয়ার্ডগুলোর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুসারে সম্মেলনের ৪৫ দিনের মধ্যে কমিটি গঠনের বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন শাখার সম্মেলনের প্রায় পৌনে দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো কমিটি ঘোষণা করা হয়নি।

গত ৪ জুন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ২৬টি থানা ও ৬৪টি ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত কমিটি কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা দেন সংশ্লিষ্ট নেতারা। এরপর গত ১৬ জুন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ২৪টি থানা ও ৭৫টি ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত কমিটি কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা দেওয়া হয়।

দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত কমিটি কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা দেওয়ার পরপরই সংশ্লিষ্ট নেতাদের মাধ্যমে জেনে যান পদপ্রত্যাশীরা। বেশ কয়েকটি থানা ও ওয়ার্ডে বিতর্কিত ও অদক্ষ নেতাদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে রাখায় শুরু হয় সমালোচনা।

এরপর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ঢাকা-১৩ আসনের সংসদ সদস্য। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি ঢাকা মহানগরের একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকার নির্বাচিত সংসদ সদস্য। আমি চাইব ত্যাগী ও দলের আদর্শের প্রতি অনুগত নেতাদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হোক। কমিটিগুলোর শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ নয়, পূর্ণাঙ্গ কমিটির সব পদে ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা দরকার।

এর ব্যত্যয় হলে সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ঢাকা মহানগর দক্ষিণের শাহবাগ থানা এবং ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত কমিটিতে অর্থের বিনিময়ে বিতর্কিতদের স্থান দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শাহবাগ থানার প্রস্তাবিত কমিটিতে সভাপতি পদে জি এম আতিকুর রহমান আতিক ও সাধারণ সম্পাদক পদে আসাদুজ্জামান আসাদকে রাখা হয়েছে। এই দুই নেতার কাছ থেকে মহানগর কমিটির একজন শীর্ষ নেতা প্রায় এক কোটি টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

শাহবাগ থানার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত কমিটির সভাপতি পদে রাখা হয়েছে সাবেক ছাত্রদল নেতা হাসান মাহমুদকে। তিনি একসময় ২০ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত সাধারণ সম্পাদক শাহজালাল সোহেলের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ ও মামলা রয়েছে।

শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, ২১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রাখা হয়েছে শাখাওয়াত হোসেন শাওনকে। তাঁর বাবা ওয়ার্ড বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। শাওনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।

শাহজাহানপুর থানার প্রস্তাবিত কমিটিতে সভাপতি পদে রাখা হয়েছে এনায়েত কবিরকে। তিনি বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এ পদ পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

শাহজাহানপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী হয়েছিলেন ১২ নম্বর ওয়ার্ড (বর্তমানে ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড) আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হায়দার চৌধুরী। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এনায়েত কবির দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের টাকা দিয়ে শাহজাহানপুর থানার সভাপতির পদটি কিনেছেন। না হলে এ পদটি আমারই পাওয়ার কথা ছিল।’

দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, কদমতলী থানার প্রস্তাবিত সাধারণ সম্পাদক ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আকাশ কুমার ভৌমিক, শ্যামপুর থানার প্রস্তাবিত সভাপতি ও ৫১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান হাবু, ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্রস্তাবিত সভাপতি মো. মাসুদ, ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্রস্তাবিত সভাপতি শফিকুর রহমান সাইজুল বিগত জাতীয় নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। তাঁদের কারো বিরুদ্ধে ত্রাণের কম্বল চুরি, কারো বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী বলেন, ‘একেকটা পদে অনেক প্রার্থী থাকেন। কিন্তু পদ পান একজন। যাঁরা পান না তাঁরাই নানা অভিযোগ তোলেন। আমরা একটা কমিটির প্রস্তাব দিয়েছি। যাঁরা মাঠে সক্রিয় আছেন, যাঁদের ত্যাগ ও দক্ষতা আছে, তাঁদের কমিটিতে রেখেছি। এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।’

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকটি কমিটি নিয়েও অভিযোগ উঠেছে। তুরাগ থানার প্রস্তাবিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুহিবুল হাসানের পরিবারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। মহিবুলের মূল শক্তি হলেন তাঁর ছোট ভাই যুবলীগ নেতা নাজমুল হাসান। এই নাজমুলের বিরুদ্ধে জমি দখল ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের একাধিক মামলা রয়েছে। নিজের বদলে টাকা দিয়ে আরেকজনকে জেল খাটতে পাঠিয়ে আলোচিত হয়েছিলেন নাজমুল। বর্তমানে তিনি জালিয়াতির দায়ে জেলে আছেন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাসির উদ্দিন তুরাগ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদপ্রত্যাশী। তিনি বলেন, ‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, কিন্তু আমাকে বাদ দিয়ে থানা কমিটি দেওয়া হচ্ছে বলে শুনতে পেরেছি। যাঁদের পদ দেওয়া হচ্ছে তাঁরা অযোগ্য। থানা কমিটি সামলানোর সক্ষমতা তাঁদের নেই। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সবাই অবাক হয়েছেন। এলাকায় হাসিঠাট্টা তৈরি হয়েছে।’

সম্প্রতি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সঙ্গে ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা আকবর আলীর একটি কলরেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে আকবর আলী পদ পাওয়ার জন্য বজলুর রহমানকে ১০ লাখ টাকা দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন।

এ বিষয়ে পরে আরেকটি অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়। সেখানে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য হাবীব হাসানের সঙ্গে ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা আকবর আলীকে কথা বলতে শোনা যায়। সেখানে আকবর আলী জানান, তাঁর এবং শেখ বজলুর রহমানের কলরেকর্ডটি হাবীব হাসানকে দেওয়া হয়েছিল। আকবর আলী ইঙ্গিত করেন, বজলুর রহমানের সঙ্গে কথোপথনের রেকর্ডটি সাবেক এমপি হাবীব হাসান ফাঁস করেছেন।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, কমিটি গঠন বিরোধের জেরে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ঘায়েল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ কারণে মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতির কলরেকর্ডটি ফাঁস করেছে প্রতিপক্ষ।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, ‘আমরা যাচাই-বাছাই করে যাঁদের যোগ্য মনে করেছি তাঁদের নাম প্রস্তাব করেছি। এর মধ্যে দু-একটি ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকা অস্বাভাবিক নয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।’

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

ঢাকা মহানগর আ. লীগের কমিটিতে বিতর্কিতরা, নেপথ্যে অর্থ লেনদেন

আপডেট টাইম : ০৪:৪১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৭ জুলাই ২০২৪
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটিতে স্থান পেয়েছেন নানা অপরাধে জড়িত বিতর্কিত নেতারাও। এই বিতর্কিতরা কমিটি গঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতাদের বড় অঙ্কের টাকা দিয়ে কমিটিতে স্থান করে নিয়েছেন। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক সূত্র কালের কণ্ঠকে এমন তথ্য জানিয়েছে।

অর্থের জোরে প্রস্তাবিত কমিটিতে বিতর্কিত নেতারা স্থান পাওয়ায় ক্ষুব্ধ পদবঞ্চিত নেতারা।

তাঁরা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা করে অনুরোধ জানাচ্ছেন বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে যেন কমিটি ঘোষণা করা হয়।২০২২ সালের বিভিন্ন সময় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের থানা ও ওয়ার্ডগুলোর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুসারে সম্মেলনের ৪৫ দিনের মধ্যে কমিটি গঠনের বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন শাখার সম্মেলনের প্রায় পৌনে দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো কমিটি ঘোষণা করা হয়নি।

গত ৪ জুন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের ২৬টি থানা ও ৬৪টি ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত কমিটি কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা দেন সংশ্লিষ্ট নেতারা। এরপর গত ১৬ জুন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ২৪টি থানা ও ৭৫টি ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত কমিটি কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা দেওয়া হয়।

দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত কমিটি কেন্দ্রীয় দপ্তরে জমা দেওয়ার পরপরই সংশ্লিষ্ট নেতাদের মাধ্যমে জেনে যান পদপ্রত্যাশীরা। বেশ কয়েকটি থানা ও ওয়ার্ডে বিতর্কিত ও অদক্ষ নেতাদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে রাখায় শুরু হয় সমালোচনা।

এরপর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ঢাকা-১৩ আসনের সংসদ সদস্য। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি ঢাকা মহানগরের একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকার নির্বাচিত সংসদ সদস্য। আমি চাইব ত্যাগী ও দলের আদর্শের প্রতি অনুগত নেতাদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হোক। কমিটিগুলোর শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ নয়, পূর্ণাঙ্গ কমিটির সব পদে ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা দরকার।

এর ব্যত্যয় হলে সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ঢাকা মহানগর দক্ষিণের শাহবাগ থানা এবং ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত কমিটিতে অর্থের বিনিময়ে বিতর্কিতদের স্থান দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শাহবাগ থানার প্রস্তাবিত কমিটিতে সভাপতি পদে জি এম আতিকুর রহমান আতিক ও সাধারণ সম্পাদক পদে আসাদুজ্জামান আসাদকে রাখা হয়েছে। এই দুই নেতার কাছ থেকে মহানগর কমিটির একজন শীর্ষ নেতা প্রায় এক কোটি টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

শাহবাগ থানার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত কমিটির সভাপতি পদে রাখা হয়েছে সাবেক ছাত্রদল নেতা হাসান মাহমুদকে। তিনি একসময় ২০ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত সাধারণ সম্পাদক শাহজালাল সোহেলের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ ও মামলা রয়েছে।

শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, ২১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রস্তাবিত কমিটিতে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে রাখা হয়েছে শাখাওয়াত হোসেন শাওনকে। তাঁর বাবা ওয়ার্ড বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা। শাওনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।

শাহজাহানপুর থানার প্রস্তাবিত কমিটিতে সভাপতি পদে রাখা হয়েছে এনায়েত কবিরকে। তিনি বড় অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এ পদ পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

শাহজাহানপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী হয়েছিলেন ১২ নম্বর ওয়ার্ড (বর্তমানে ৩৫ নম্বর ওয়ার্ড) আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হায়দার চৌধুরী। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এনায়েত কবির দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের টাকা দিয়ে শাহজাহানপুর থানার সভাপতির পদটি কিনেছেন। না হলে এ পদটি আমারই পাওয়ার কথা ছিল।’

দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, কদমতলী থানার প্রস্তাবিত সাধারণ সম্পাদক ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আকাশ কুমার ভৌমিক, শ্যামপুর থানার প্রস্তাবিত সভাপতি ও ৫১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান হাবু, ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্রস্তাবিত সভাপতি মো. মাসুদ, ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও প্রস্তাবিত সভাপতি শফিকুর রহমান সাইজুল বিগত জাতীয় নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। তাঁদের কারো বিরুদ্ধে ত্রাণের কম্বল চুরি, কারো বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী বলেন, ‘একেকটা পদে অনেক প্রার্থী থাকেন। কিন্তু পদ পান একজন। যাঁরা পান না তাঁরাই নানা অভিযোগ তোলেন। আমরা একটা কমিটির প্রস্তাব দিয়েছি। যাঁরা মাঠে সক্রিয় আছেন, যাঁদের ত্যাগ ও দক্ষতা আছে, তাঁদের কমিটিতে রেখেছি। এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।’

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকটি কমিটি নিয়েও অভিযোগ উঠেছে। তুরাগ থানার প্রস্তাবিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুহিবুল হাসানের পরিবারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। মহিবুলের মূল শক্তি হলেন তাঁর ছোট ভাই যুবলীগ নেতা নাজমুল হাসান। এই নাজমুলের বিরুদ্ধে জমি দখল ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের একাধিক মামলা রয়েছে। নিজের বদলে টাকা দিয়ে আরেকজনকে জেল খাটতে পাঠিয়ে আলোচিত হয়েছিলেন নাজমুল। বর্তমানে তিনি জালিয়াতির দায়ে জেলে আছেন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাসির উদ্দিন তুরাগ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদপ্রত্যাশী। তিনি বলেন, ‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, কিন্তু আমাকে বাদ দিয়ে থানা কমিটি দেওয়া হচ্ছে বলে শুনতে পেরেছি। যাঁদের পদ দেওয়া হচ্ছে তাঁরা অযোগ্য। থানা কমিটি সামলানোর সক্ষমতা তাঁদের নেই। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সবাই অবাক হয়েছেন। এলাকায় হাসিঠাট্টা তৈরি হয়েছে।’

সম্প্রতি ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সঙ্গে ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা আকবর আলীর একটি কলরেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে আকবর আলী পদ পাওয়ার জন্য বজলুর রহমানকে ১০ লাখ টাকা দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন।

এ বিষয়ে পরে আরেকটি অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়। সেখানে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য হাবীব হাসানের সঙ্গে ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা আকবর আলীকে কথা বলতে শোনা যায়। সেখানে আকবর আলী জানান, তাঁর এবং শেখ বজলুর রহমানের কলরেকর্ডটি হাবীব হাসানকে দেওয়া হয়েছিল। আকবর আলী ইঙ্গিত করেন, বজলুর রহমানের সঙ্গে কথোপথনের রেকর্ডটি সাবেক এমপি হাবীব হাসান ফাঁস করেছেন।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, কমিটি গঠন বিরোধের জেরে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে ঘায়েল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ কারণে মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতির কলরেকর্ডটি ফাঁস করেছে প্রতিপক্ষ।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, ‘আমরা যাচাই-বাছাই করে যাঁদের যোগ্য মনে করেছি তাঁদের নাম প্রস্তাব করেছি। এর মধ্যে দু-একটি ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকা অস্বাভাবিক নয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।’