ঢাকা , রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নির্বাচনকালীন সরকারের ইসির সংলাপে বিএনপির আগ্রহ

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে চলমান সংলাপে কাল নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে বসছে অন্যতম প্রধান দল বিএনপি। এই সংলাপে দলটি তাদের প্রস্তাবে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার দাবি গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরবে বলে জানা গেছে।

নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেয়া, তফসিল ঘোষণার আগে সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি, প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল, নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের  দাবিও জানাবে দলটি।

বিএনপির নেতারা মনে করেন, এসব দাবি পূরণ না করে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়।

তবে নির্বাচন কমিশন বরাবর বলে আসছে, নির্বাচনকালীন সরকার কিংবা সংসদ ভেঙে দেয়ার এখতিয়ার তাদের নেই।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের মূল বক্তব্য হলো নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে সেটা নিয়ে আলোচনা করা। কারণ নির্বাচনকালীন সরকারের ওপরই সবকিছু নির্ভর করছে। তাদের কর্মকাণ্ড ওই সময় কেমন হবে, তারা কী ভূমিকা পালন করবে- এসব নিয়ে আমরা আলোচনা করব।’

এক প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনকে বলবে কীভাবে নির্বাচন করলে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে। সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার রূপরেখা আমরা নির্বাচন কমিশনকে দেব। কারণ নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে তো আর নির্বাচন করে লাভ নেই।’

সংলাপের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা সংসদ ভেঙে দেয়া, নির্বাচনের আগে ও পরে সেনা মোতায়েন, আরপিওর বিভিন্ন ধারা সংশোধনসহ আরো কিছু প্রস্তাব দেব।’

তারা বড় টিম নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সংলাপে যাবেন জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘সেখানে গিয়ে আমরা লিখিতভাবে আমাদের সব প্রস্তাব তাদের সামনে তুলে ধরব।’

তাদের প্রস্তাবের বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা সংসদ বিলুপ্তির কথা সুস্পষ্টভাবে বলব। সেনাবাহিনী নিয়োগের কথা বলব। নির্বাচনকালীন ও যখন তফসিল ঘোষণা হবে, তখন প্রশাসনকে যে ব্যবস্থাগুলো নিতে হবে সে বিষয়েও বলব। আরপিওর কোথায় সমস্যা আছে, সেটি বলব। ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে কী কী নিয়ম চালু করা উচিত এবং পর্যবেক্ষকদের ক্ষেত্রে কী কী নিয়ম থাকা উচিত- এসব নিয়ে বিস্তারিত থাকবে আমাদের প্রস্তাবে।

নির্বাচন কমিশনের নিজেদের ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন করা এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সহায়ক সরকারের বিষয়ে তাদের প্রস্তাব করা হতে পারে বলে জানান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু।

একাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জুলাই মাসের শেষের দিকে সংলাপ শুরু করে ইসি। তখন থেকেই বিএনপি সংলাপের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। এমনকি দলের  শীর্ষপর্যায়ের কজন নেতাকে নিয়ে এ বিষয়ে কমিটি গঠন করা হয়। দেশের বর্তমান বাস্তবতায় সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কী কী প্রস্তাব দেয়া যায় তার খসড়া প্রণয়নের জন্য তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়।

বিএনপির বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যমতে, তাদের প্রস্তাবমালায় মূল দাবি থাকবে সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা। নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন নিশ্চিত করা, নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করতে গণপ্রতিনিধিত্ব আইনের (আরপিও) পাঁচটি ধারা সংশোধনের প্রস্তাব করবে দলটি।

এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করতে কমিশনের নিজস্ব সচিবালয় গঠন, কমিশনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিতকরণ, কমিশনের আর্থিক স্বাধীনতা, দলীয় মনোভাবাপন্ন নির্বাচনী কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে তাদের অপসারণ, নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণার পর থেকে নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ পর্যন্ত সরকারের স্বরাষ্ট্র, অর্থ, তথ্য, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার, শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা, পররাষ্ট্র, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখা, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ, ভোটার তালিকা হালনাগাদ এবং নতুন ভোটার তালিকায় নিবন্ধীকরণযোগ্য সব নাগরিক যেমন রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, কারাবন্দি, নানা মামলায় যুক্ত ব্যক্তি ও নেতা-কর্মীদের ভোটার করার বিষয়ে প্রস্তাব থাকবে বিএনপির।

এর বাইরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাত দিন আগে আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিদেশি পর্যবেক্ষক সংস্থা এবং বিদেশি রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়োজিত পর্যবেক্ষকদের নাম ও তালিকা প্রকাশ করার প্রস্তাবও থাকতে পারে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

নির্বাচনকালীন সরকারের ইসির সংলাপে বিএনপির আগ্রহ

আপডেট টাইম : ০৭:১৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ অক্টোবর ২০১৭

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে চলমান সংলাপে কাল নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে বসছে অন্যতম প্রধান দল বিএনপি। এই সংলাপে দলটি তাদের প্রস্তাবে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার দাবি গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরবে বলে জানা গেছে।

নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেয়া, তফসিল ঘোষণার আগে সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি, প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল, নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের  দাবিও জানাবে দলটি।

বিএনপির নেতারা মনে করেন, এসব দাবি পূরণ না করে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়।

তবে নির্বাচন কমিশন বরাবর বলে আসছে, নির্বাচনকালীন সরকার কিংবা সংসদ ভেঙে দেয়ার এখতিয়ার তাদের নেই।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বাঙালী কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের মূল বক্তব্য হলো নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে সেটা নিয়ে আলোচনা করা। কারণ নির্বাচনকালীন সরকারের ওপরই সবকিছু নির্ভর করছে। তাদের কর্মকাণ্ড ওই সময় কেমন হবে, তারা কী ভূমিকা পালন করবে- এসব নিয়ে আমরা আলোচনা করব।’

এক প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনকে বলবে কীভাবে নির্বাচন করলে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে। সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনার রূপরেখা আমরা নির্বাচন কমিশনকে দেব। কারণ নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে তো আর নির্বাচন করে লাভ নেই।’

সংলাপের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা সংসদ ভেঙে দেয়া, নির্বাচনের আগে ও পরে সেনা মোতায়েন, আরপিওর বিভিন্ন ধারা সংশোধনসহ আরো কিছু প্রস্তাব দেব।’

তারা বড় টিম নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সংলাপে যাবেন জানিয়ে ফখরুল বলেন, ‘সেখানে গিয়ে আমরা লিখিতভাবে আমাদের সব প্রস্তাব তাদের সামনে তুলে ধরব।’

তাদের প্রস্তাবের বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা সংসদ বিলুপ্তির কথা সুস্পষ্টভাবে বলব। সেনাবাহিনী নিয়োগের কথা বলব। নির্বাচনকালীন ও যখন তফসিল ঘোষণা হবে, তখন প্রশাসনকে যে ব্যবস্থাগুলো নিতে হবে সে বিষয়েও বলব। আরপিওর কোথায় সমস্যা আছে, সেটি বলব। ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে কী কী নিয়ম চালু করা উচিত এবং পর্যবেক্ষকদের ক্ষেত্রে কী কী নিয়ম থাকা উচিত- এসব নিয়ে বিস্তারিত থাকবে আমাদের প্রস্তাবে।

নির্বাচন কমিশনের নিজেদের ক্ষমতা সম্পর্কে সচেতন করা এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সহায়ক সরকারের বিষয়ে তাদের প্রস্তাব করা হতে পারে বলে জানান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু।

একাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জুলাই মাসের শেষের দিকে সংলাপ শুরু করে ইসি। তখন থেকেই বিএনপি সংলাপের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। এমনকি দলের  শীর্ষপর্যায়ের কজন নেতাকে নিয়ে এ বিষয়ে কমিটি গঠন করা হয়। দেশের বর্তমান বাস্তবতায় সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কী কী প্রস্তাব দেয়া যায় তার খসড়া প্রণয়নের জন্য তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়।

বিএনপির বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যমতে, তাদের প্রস্তাবমালায় মূল দাবি থাকবে সব দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা। নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন নিশ্চিত করা, নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করতে গণপ্রতিনিধিত্ব আইনের (আরপিও) পাঁচটি ধারা সংশোধনের প্রস্তাব করবে দলটি।

এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করতে কমিশনের নিজস্ব সচিবালয় গঠন, কমিশনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিতকরণ, কমিশনের আর্থিক স্বাধীনতা, দলীয় মনোভাবাপন্ন নির্বাচনী কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে তাদের অপসারণ, নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণার পর থেকে নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ পর্যন্ত সরকারের স্বরাষ্ট্র, অর্থ, তথ্য, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার, শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা, পররাষ্ট্র, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখা, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ, ভোটার তালিকা হালনাগাদ এবং নতুন ভোটার তালিকায় নিবন্ধীকরণযোগ্য সব নাগরিক যেমন রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, কারাবন্দি, নানা মামলায় যুক্ত ব্যক্তি ও নেতা-কর্মীদের ভোটার করার বিষয়ে প্রস্তাব থাকবে বিএনপির।

এর বাইরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাত দিন আগে আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিদেশি পর্যবেক্ষক সংস্থা এবং বিদেশি রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়োজিত পর্যবেক্ষকদের নাম ও তালিকা প্রকাশ করার প্রস্তাবও থাকতে পারে।