চট্টগ্রামে ক্ষমতাসীন দলে এসব কী হচ্ছে? এমন প্রশ্ন এখন রাজনীতি সচেতন চট্টগ্রামবাসীর। গত সিটি করপোরেশন নির্বাচন থেকে শুরু এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছিরের দ্বন্দ্ব। কিন্তু তা প্রকাশ পায়নি। চাপা ক্ষোভ ছিল দুজনের মধ্যে। নেত্রীর (শেখ হাসিনা) অনুরোধে আ জ ম নাছিরকে মেনেও নেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। কিন্তু প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা নিয়ে সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের পর ফের দুজনের দ্বন্দ্ব দেখা দেয় । এ দ্বন্দ্ব প্রকাশ পায় সোহেল হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। এই নিয়ে তারা একে অন্যকে দোষারোপ করে বাকযুদ্ধে লিপ্ত হয়।
এরই মাঝে চট্টগ্রামে নতুন করে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ ও এমপি আফসারুল আমীনের মধ্যে। নগরীতে ফ্লাইওভার নির্মাণ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বৈঠকে দুজনের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। এ সময় দুজনের মধ্যে যুদ্ধংদেহী মনোভাব সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার পর দুজনের শাস্তি দাবি করে নিজ নিজ সমর্থকরা সভা সমাবেশ করে।
সর্বশেষ নতুন করে ইউপি নির্বাচনের মনোনয়ন নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন ও ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের মধ্যে। এ নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। এমনকি মোসলেম উদ্দিনের অপসারণ দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করা হয় জাবেদের পক্ষ থেকে। চট্টগ্রামের এ ছয় মহারথীর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব নিয়ে মহাযুদ্ধ চলছেই। চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের এসব ঘটনায় তৃণমূলে ক্ষোভ আর হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। তাই নেতাকর্মীরা সিনিয়র নেতাদের এসব কোন্দলের সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
জানা যায়, সম্প্রতি নানা অপ্রীতিকর ঘটনার কারণে টালমাটাল হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ। এসব বিষয় নিয়ে নানা গ্রুপ উপগ্রুপ সৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামে। ফলে বেসামাল হয়ে পড়েছে চট্টগ্রামের আওয়ামী রাজনীতি।
বিশেষ করে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা নিয়ে, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এবং সর্বশেষ সোহেল হত্যাকাণ্ড নিয়ে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সিটি মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী সঙ্গে বর্তমান সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের মধ্যকার দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে। তবে রোববার নগর আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় দুজনই উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে ফ্লাইওভার নিয়ে গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও সাবেক মন্ত্রী এমপি আফসারুল আমীনের মধ্যে বাগবিতণ্ডার জের ধরে দুজনের মধ্যে এখন সাপে-নেউলে সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে। তাদের দুজনের শাস্তি দাবি করে তাদের সমর্থকরা সভা সমাবেশ করেছে নিজ নিজ এলাকায় । একে অপরের শাস্তি দাবি করে যুদ্ধ চলছেই।
এদিকে কর্ণফুলী থানা ও আনোয়ারায় ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী নির্ধারণ নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আর আনোয়ারা-কর্ণফুলী আসনের সাংসদ ও ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের সঙ্গে। সম্প্রতি এ নিয়ে জাবেদ সমর্থকরা হামলা করে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা কার্যালয়ে। এ ঘটনায় থানায় মামলা করে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। পক্ষান্তরে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে মোসলেম উদ্দিনের অপসারণ দাবি করেন জাবেদ সমর্থকরা। পক্ষে-বিপক্ষে এসব ঘটনা নিয়ে দুজনের মধ্যে রীতিমতো মহাযুদ্ধ শুরু হয়েছে।
চট্টগ্রামে আওয়ামী রাজনীতির এরকম বেসামাল অবস্থা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত, নানা কারণে বেসামাল হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোন উদ্যোগ নেয়া না হলে চট্টগ্রামের আরো বড় ধরণের সংঘাতে আশঙ্কা রয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
সিনিয়র নেতাদের এসব বেসামাল আচরণে কারণে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের তৃণমূলে ক্ষোভ বাড়ছে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দরকার। সার্বিক বিষয় নিয়ে চট্টগ্রামের নেতাদের সঙ্গে বসে সমাধানের ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের এমন অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর এখন লুটেরাদের দখলে। তারা আবার বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করে পার পেয়ে যায়। কারণ আওয়ামী পরিবারের লোকেরা তাদের সহযোগিতা করছে। আমি কারও সঙ্গে বিরোধ রাখতে চাই না। তবে কেউ অন্যায় করলে আমি ছাড় দেই না।
এ বিষয়ে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, নগর আওয়ামী লীগের কোন গ্রুপিং নেই। এছাড়াও আমার সঙ্গে কারও দ্বন্দ্ব নেই। আমি মিলেমিশে কাজ করতে বিশ্বাসী। তবে অন্যায়ভাবে কেউ কিছু করলে এতে আমি প্রতিবাদ করি। আমার দলে কেউ ভুল করলে আমি তাদের শোধরানোর সুযোগ দেই। এতেও কাজ না হলে আমি তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে বাধ্য হই। তবে ছোটখাটো সম্যসা হলে তা আবার আমরা নিজেরায় ঠিক করি।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন বলেন, দলের চেয়ে ব্যক্তি বড় হতে পারে না। দল যাকে মনোনয়ন দিবে সেই ইউপি নির্বাচনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী হবে। এখানে কারও ব্যক্তিগত পছন্দকে প্রাধান্য দেওয়া যাবে না। এমনকি আমারও ব্যক্তিগত পছন্দও প্রাধান্য পাচ্ছে না। এ বিষয়ে সরাসরি নেত্রী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। কেউ আমাকে ভুল বুঝলে আমার কিছু করার নেই।