বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার করতেই আমরা ইভিএম সাপোর্ট করি। নির্বাচন সম্পর্কে মানুষের ‘খারাপ ধারণা’ দূর করতে ইভিএম প্রয়োজন। ইভিএম হচ্ছে আধুনিক ভোটিং পদ্ধতি। ইভিএম ব্যবহার করলে ভোট জালিয়াতি ও ভোট চুরি হবে না।
শুক্রবার (৩১ আগস্ট) সকালে সিলেট সার্কিট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। এসময় উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আহমদ হোসেন, অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, একেএম এনামূল হক শামীম, দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ।
বিএনপির ২০০১ সালের মতো আরেকটি পাতানো নির্বাচন চায় দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ইভিএমে সুষ্ঠু ও দ্রুত নির্বাচন করা যায়। সিলেটের দুটি কেন্দ্রে ইভিএমের ভোটে তো বিএনপি জিতেছে। তাহলে ইভিএমে তাদের সংশয় কেনো পাল্টা প্রশ্ন করেন মন্ত্রী।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার দেশের নির্বাচন সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করবে। ইভিএম এ নির্বাচনী ফলাফল টেম্পারিং করা অসম্ভব।’
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের আগে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে নির্বাচনে সীমিত পর্যায়ে হলেও ইভিএম ব্যবহারের প্রস্তাব করে। তবে বিএনপি তখন থেকেই এর বিরোধী ছিল। গত বছর জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন দলের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সংলাপের সময়ও এই বিষয়টি নিয়ে কথা হয়। আর তখনও বিএনপি বিরোধিতা করে, নির্বাচন কমিশনও সবার সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানায়।
সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন সচিব একশ আসনে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা এবং দেড় লাখ ইভিএম কেনার পরিকল্পনার কথা জানানোর পর থেকেই শুরু হয়েছে আলোচনা। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন ভোটে ইভিএম ব্যবহারের সুযোগ রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ-আরপিও সংশোধনীর প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে। যদিও নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার এই বৈঠক বর্জন করেছেন।
বিএনপির আশঙ্কা, এই যন্ত্র নিয়ে কারচুপি করা সম্ভব আর আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতেই যন্ত্রটির ব্যবহারের চেষ্টা করছে নির্বাচন কমিশন। যদিও চলতি বছর পাঁচ সিটি নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার নিয়ে কোনো বিতর্ক হয়নি, বরং ভোটাররা এই যন্ত্রকে তুলনামূলক ভালো বলেছেন। পাশাপাশি যেসব কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার হয়েছে, সেগুলোতে কোনো গোলযোগই হয়নি।
তবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ইভিএমে হেরে গেলে বিএনপির অযুহাত করার সুযোগ থাকবে না বলেই তারা এর বিরোধিতা করেছে। ‘জনগণের ওপর যাদের আস্থা নেই, তারা অজুহাত খুঁজে বেড়ায়’ মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘নিরপেক্ষ সরকারের চেয়েও বেশি দরকার নিরপেক্ষ ইলেকশন কমিশন, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ থাকলে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। যাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, তাঁদের দরকার নির্বাচনটা নিরপেক্ষ হবে কি না? নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তাঁদের ভয় কোথায়?’
নির্বাচন কমিশনে কমিশনার মাহবুব তালুকাদরের ইভিএম নিয়ে আপত্তির বিষয়ে এক প্রশ্নে কাদের বলেন, ‘একজন নোট অব ডিসেন্ট দিতেই পারে, ভিন্নমত থাকতেই পারে, এটাই গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য। নির্বাচন কমিশনেও গণতন্ত্র আছে। নোট অব ডিসেন্ট দেয়ার অধিকারই গণতন্ত্র।’ ‘কেউ যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে, তা হলে নির্বাচনের ট্রেন থেমে থাকবে না। বিএনপি যদি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে, আওয়ামী লীগের তাতে কিছু করার নেই।’
‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের ট্রেন কি থেমে থেকেছে কোনো একটা দলের জন্য? বিএনপি সেই নির্বাচনে অংশ নেয়নি, সেটা তাদের ভুল। সে ভুলের মাশুল তাঁরা আজও দিচ্ছে। সেই ভুলের জন্য যাঁরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন, তাঁদের অপরাধটা কোথায়?’
ওই নির্বাচনে দেড়শরও বেশি আসনে সংসদ সদস্যরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়া নিয়ে এখনও বিএনপি কথা শোনায় আওয়ামী লীগকে।
এর জবাবে কাদের বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী নির্বাচন হয়েছে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ফ্রি, ফেয়ার নির্বাচন করেছে। এখন একটা দল নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের একটা ফাঁদ তৈরি করেছিল। সেটা তো সংবিধানের দোষ নয়। সেটা তো যাঁরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন, ওই ফাঁদের মধ্যে আটকা পড়ে, সেটা তো তাঁদের দোষ নয়। ইলেকশনে তো যাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বী, তাঁরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্যই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল।’
‘এখন আপনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে গেলেন। এমন যদি হতো বিএনপি তখন নির্বাচনে যাতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা যাতে না করতে পারে, সে জন্য কেউ বাধা দিয়েছে-এ রকম অভিযোগ তো নেই। তা হলে আমাদের বিরুদ্ধে কেন এ অপবাদ?’-পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি আরও বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচন ২০১৮ সালে করার চেষ্টা করছে বিএনপি। তবে এই নীল নকশার নির্বাচন দেশে আর হতে দেওয়া হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশে আর আসবে না। নির্দিষ্ট একটা দলের জন্য নির্বাচন থেমে থাকবে না। গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিএনপির অধিকার, সুযোগ নয়। কোনো গণতান্ত্রিক দেশে সরকার কোনো দলকে সুযোগ দেয় না।