বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ নির্বাচনকালীন সরকারে টেকনোক্র্যাট কোটায় কোনো মন্ত্রী না রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অর্থাৎ সংসদে নেই—এমন কোনো দলের প্রতিনিধিত্ব নির্বাচনকালীন সরকারে থাকবে না। ফলে এই সরকারে বিএনপি বা সংসদের বাইরে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের কোনো প্রতিনিধি থাকছে না। এমনকি নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে কোনো ধরনের সংলাপ বা আলোচনায় যেতেও নারাজ ক্ষমতাসীনরা। সরকার ও দলের নীতি নির্ধারকরা জানিয়েছেন, নির্বাচনকালীন সরকার প্রশ্নে নিজেদের অবস্থান থেকে কোনোরকম ছাড় দেবে না আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ দলীয় সূত্রমতে, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিএনপি যে প্রস্তাব দিয়েছে তা মানা সম্ভব না। অর্থাৎ সংসদের বাইরে থাকায় বিএনপি কিংবা অন্য কোনো দলের কাউকে টেকনোক্র্যাট কোটায় নির্বাচনকালীন সরকারে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর ২৯ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হয়েছিল। সেখানে টেকনোক্র্যাট কেউই ছিলেন না। যারা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন, তাদের সবাই ছিলেন নবম সংসদের এমপি। এর মধ্যে মহাজোট শরিক জাতীয় পার্টি থেকে ছয়জন এবং ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদ থেকে একজন করে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বাকি ২১ জনই ছিলেন আওয়ামী লীগের। তবে গত নির্বাচনকালীন সরকারে থাকা ১১ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদের একজনও এমপি ছিলেন না।
গত নির্বাচনকালীন সরকারে অংশ নিতে সংসদে থাকা বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দলটি ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংলাপের প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এমনকি শেষ পর্যন্ত বিএনপি ও তার মিত্ররা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনও করে। ফলে এবার আর নির্বাচনী সরকার নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগ কোন ধরনের সংলাপ করবে না বলে জানান দলের নেতারা।
সরকার ও দলের নীতি নির্ধারকরা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছানুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে। এই সরকারের আকার ছোট, না বড় হবে—সে বিষয়েও প্রধানমন্ত্রীই সিদ্ধান্ত নেবেন।
এ ব্যাপারে দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সরকার ও দলের মনোভাব তুলে ধরেন। গতকাল তিনি বলেন, অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হবে। এ সরকারে বাইরের কেউ আসবে না। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করেছি, টেকনোক্র্যাট কেউ আসবে না, মন্ত্রিসভার আকার ছোট ও গেলবারের কাছাকাছি হবে।
ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, জাতীয় পার্টি তাদের আরো দুই-একজন অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছে। সেটাও প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার, তিনি কতটা বিবেচনা করবেন, সেটা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এগুলো আলাপ-আলোচনার পর্যায়ে আছে।
দলীয় সূত্রমতে, নির্বাচনকালীন সরকারের কাঠামো তৈরির কাজ প্রায় চূড়ান্ত। এই সরকারে পাঁচটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো হলো—বর্তমান প্রধানমন্ত্রী অর্থাৎ বিদায়ী সংসদ নেতার নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে, নির্বাচনকালীন সরকারে মন্ত্রিসভার আকার খুবই ছোট হবে, এই সরকার শুধু রুটিন কাজ করবে, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নির্বাচন কমিশনের কাছে চলে যাবে এবং নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান কাজ হবে নির্বাচন কমিশনকে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সহযোগিতা করা। এই সরকারের মন্ত্রিসভার সংখ্যা ও ব্যক্তিদের বাছাই করবেন প্রধানমন্ত্রী নিজে। এমনকি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য করতে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সরকারে বেশ কিছু চমক আনতে পারেন এবং নির্বাচনকালীন সরকারের এই রূপরেখা সকলে পছন্দ করবে বলে মনে করছেন দলের শীর্ষ নেতারা।
সরকার ও আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো থেকে জানা যায়, এ নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য গতবারের মতোই ২৫-২৬ জন, খুব বেশি হলে ৩০ জন হতে পারে। গত নির্বাচনের আগে যে নির্বাচনকালীন সরকার হয় তাতে মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন ২৯জন এবং প্রত্যেকেই ছিলেন নির্বাচিত প্রতিনিধি। তখন ওই মন্ত্রিসভায় ৬ জন মন্ত্রী এবং ২ প্রতিমন্ত্রীকে নতুন অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এবারও নতুন দুই-তিনজনকে এ মন্ত্রিসভার সদস্য করা হতে পারে। তবে সংবিধান অনুযায়ী মন্ত্রিসভায় শুধু নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই থাকবেন।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, জাতীয় সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার হবে। অনির্বাচিত কাউকে নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় থাকার সুযোগ নেই। সংবিধানে নির্বাচনকালীন সরকারের টেকনোক্র্যাট কোটায় কথা বলা নেই। নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার আগে নির্বাচনকালীন সরকার হবে, সেটা অক্টোবরেই হতে পারে।
সংবিধান অনুযায়ী, বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী নির্বাচন হতে হবে। সংবিধানের ১২৩ (৩) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে—‘সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে (ক) মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাংগিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাংগিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে;’। সে হিসাবে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে অর্থাৎ আগামী ২৯ অক্টোবর থেকে আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে যেকোনো দিন একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এই সময়কে বিবেচনায় রেখে ৩০ অক্টোবরের মধ্যেই নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা জানান, তফসিল ঘোষণার প্রায় ৪০-৪৫ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের একটা হিসাব করা হয়। ৩০ অক্টোবর বর্তমান মন্ত্রিসভা ভেঙে দিয়ে ছোট আকারের নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা গঠন করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। সে ক্ষেত্রে এর আগের দিন ২৯ অক্টোবরের মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে মন্ত্রিসভার সব সদস্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের পদত্যাগপত্র জমা দিতে পারেন। তার মধ্য থেকে কিছু পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে বাকিদের নিয়ে ছোট পরিসরের মন্ত্রিসভা হবে।