ঢাকা , বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

মহানবীর আদর্শই পারে বিশ্বময় শান্তি ফেরাতে

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন হিসেবে আল্লাহতায়ালা মনোনীত করেছেন আর বিশ্বনবী ও শ্রেষ্ঠনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে বানিয়েছেন সাদা-কালো সবার জন্য অনুসরণীয় আদর্শ। আল্লাহতায়ালার ভালোবাসা এবং সন্তুষ্টি পেতে হলে বিশ্বনবীর (সা.) পরিপূর্ণ আনুগত্য ও অনুসরণ ছাড়া সম্ভব নয়।

গোটা বিশ্বে আজ একপ্রকার অশান্তি বিরাজ করছে। অথচ বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সমগ্র বিশ্বময় শান্তির বার্তা নিয়েই এসেছেন। আর তিনি নিজ কর্ম দ্বারা পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে দেখিয়েছেনও। কিন্তু আজ সর্বত্র কেন অশান্তি? এর মূল কারণ হলো আমরা সেই মহান ও শ্রেষ্ঠ রাসুলের আদর্শ ভুলে গিয়ে জগতের মোহে ডুবে আছি আর এর ফলেই জগতময় বিরাজ করছে বিশৃঙ্খলা আর অশান্তি।

আমরা যদি হজরত রাসুল করিম (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করে চলি তাহলে অবশ্যই পৃথিবীতে আবার শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে। বিশ্বময় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য চাই মহানবীর আদর্শের ওপর জীবন পরিচালনা করা।

আল্লাহতায়ালা কোরআন কারিমে ইরশাদ করেছেন, ‘হে রাসুল! তুমি লোকদের বলে দাও, যদি তোমরা আল্লাহতায়ালাকে ভালোবাস তবে আমার অনুসরণ কর, তবে আল্লাহও তোমাদের ভালোবাসবেন’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত:৩১)।

আমরা সেই শ্রেষ্ঠ নবীর (সা.) উম্মত, যার পরিপূর্ণ আনুগত্যের মাধ্যমে আল্লাহর ভালোবাসা লাভ করা সম্ভব। তাহলে ভেবে দেখুন, আমরা কতটা সৌভাগ্যবান, আলহামদুলিল্লাহ।

তাই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তার পরিপূর্ণ আনুগত্য ও অনুসরণের মাধ্যমে নিজেদেরকে কল্যাণ মণ্ডিত করা প্রয়োজন। এই মহান রাসুলের সব কিছুই আমাদের জন্য আদর্শ।

রাসুলের (সা.) পারিবারিক জীবন সম্বন্ধে হজরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বর্ণনা করেন, ‘মহানবী (সা.) খুব সাদা সিধা জীবন যাপন করতেন। গৃহস্থালীর কোনো কাজ করতে তিনি লজ্জাবোধ করতেন না। তার (সা.) উটকে তিনি নিজেই তৃণ জাতীয় উদ্ভিদ প্রভৃতি খাওয়াতেন। ঘরের কাজকর্ম করতেন। নিজের জুতা নিজেই মেরামত করতেন। কাপড় সেলাই করতেন। বকরীর দুধ দোহাতেন। ভৃত্যদের নিজের সাথে বসিয়ে খাবার খাওয়াতেন। আটা পিষতে পিষতে তারা ক্লান্ত হয়ে গেলে তাদের সাহায্য করতেন। বাজার থেকে ঘরের জিনিষপত্র ক্রয় করে আনতে লজ্জা বোধ করতেন না। ধনী গরীব সবার সাথে মোসাফাহা (আলিঙ্গন) করতেন। সর্বদা প্রথমে সালাম দিতেন। কেউ খেজুরের দাওয়াত দিলেও সাদরে গ্রহণ করতেন, তুচ্ছ জ্ঞান করতেন না।

তিনি (সা.) অত্যন্ত নম্র স্বভাবের, সহানুভূতিশীল ও দয়ার্দ্র চিত্তের অধিকারী ছিলেন। তিনি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করতেন। সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলতেন, তার চেহারায় সর্বদা মৃদু হাসি লেগেই থাকত। তিনি কখনো অট্টহাসি হাসতেন না। খোদা ভয়ে চিন্তিত থাকতেন, কিন্তু তার মধ্যে রুক্ষতা ও বদমেজাজির চিহ্নও ছিল না।

বিনয়ী স্বভাবের ছিলেন, কিন্তু তার (সা.) মধ্যে ভীরুতা, কাপুরুষতা ছিল না। খুব দানশীল ছিলেন, কিন্তু অপচয় করতেন না। নরম মনের, দয়ালু প্রকৃতির ছিলেন। সব মুসলমানের সাথে দয়ার্দ্র আচরণ করতেন। এত বেশী পেট ভরে খেতেন না যে, ঢেকুর উঠতে থাকে। লোভ লালসার দিকে কখনো আকৃষ্ট হতেন না, বরং ধৈর্য্যশীল, কৃতজ্ঞ ও স্বল্পে তুষ্ট ছিলেন’ (আসাদুল গাবা, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-২৯)।

হজরত রাসুল করিম (সা.)-এর বিছানা-পত্রও ছিল নিতান্ত সাদাসিধে। সাধারণতঃ একটি চামড়া কিংবা উটের পশম দিয়ে তৈরী একটি কাপড়। হজরত আয়শা (রা.) বলেন, ‘আমাদের বিছানা এত ছোট ছিল যে, যখন রাসুলুল্লাহ (সা.) রাত্রে ইবাদত করার জন্য উঠতেন তখন আমি এক পাশে সরে গিয়ে জড়ো হয়ে থাকতাম। কারণ, বিছানা ছিল ছোট। যখন ইবাদতের সময় তিনি দাঁড়াতেন তখন আমি হাটু সোজা করতে পারতাম, আর যখন তিনি সিজদা করতেন তখন আমি হাটু জড়ো করে নিতাম (বোখারি)।

স্ত্রী ও ভৃত্যদের সঙ্গে এই শ্রেষ্ঠ নবীর আচরণ কেমন ছিল এ সম্বন্ধে হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘হজরত রাসুল করিম (সা.) কখনো কাউকে মারেননি। কোন স্ত্রীকেও নয়, কোন ভৃত্যকেও নয়। কিন্তু আল্লাহর পথে তিনি বীরত্বের সাথে লড়াই করেছেন। তাকে কখনো কেউ কষ্ট দিলে তিনি এর প্রতিশোধ নেননি। কিন্তু যখনই আল্লাহতায়ালার মর্যাদা ও সম্মানের ওপর কোন আঘাত আসত, তখন তিনি আল্লাহর খাতিরে প্রতিশোধ নিতেন’ (বোখারি)।

আজ আমরা যদি এই মহান ও শ্রেষ্ঠ রাসুলের জীবনাদর্শ অনুসরণ করে চলি তাহলে আমাদের প্রতিটি পরিবার জান্নাতে পরিণত হতে পারে, সেই সঙ্গে বিশ্বময় প্রবাহিত হবে শান্তির সুবাতাস।

আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে মহানবীর (সা.) জীবনাদর্শ অনুসরণ করে চলার তাওফিক দান করুন, আমিন।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে একসাথে সাকিব-তামিম

মহানবীর আদর্শই পারে বিশ্বময় শান্তি ফেরাতে

আপডেট টাইম : ০৮:২৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুন ২০২১

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন হিসেবে আল্লাহতায়ালা মনোনীত করেছেন আর বিশ্বনবী ও শ্রেষ্ঠনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে বানিয়েছেন সাদা-কালো সবার জন্য অনুসরণীয় আদর্শ। আল্লাহতায়ালার ভালোবাসা এবং সন্তুষ্টি পেতে হলে বিশ্বনবীর (সা.) পরিপূর্ণ আনুগত্য ও অনুসরণ ছাড়া সম্ভব নয়।

গোটা বিশ্বে আজ একপ্রকার অশান্তি বিরাজ করছে। অথচ বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সমগ্র বিশ্বময় শান্তির বার্তা নিয়েই এসেছেন। আর তিনি নিজ কর্ম দ্বারা পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে দেখিয়েছেনও। কিন্তু আজ সর্বত্র কেন অশান্তি? এর মূল কারণ হলো আমরা সেই মহান ও শ্রেষ্ঠ রাসুলের আদর্শ ভুলে গিয়ে জগতের মোহে ডুবে আছি আর এর ফলেই জগতময় বিরাজ করছে বিশৃঙ্খলা আর অশান্তি।

আমরা যদি হজরত রাসুল করিম (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করে চলি তাহলে অবশ্যই পৃথিবীতে আবার শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে। বিশ্বময় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য চাই মহানবীর আদর্শের ওপর জীবন পরিচালনা করা।

আল্লাহতায়ালা কোরআন কারিমে ইরশাদ করেছেন, ‘হে রাসুল! তুমি লোকদের বলে দাও, যদি তোমরা আল্লাহতায়ালাকে ভালোবাস তবে আমার অনুসরণ কর, তবে আল্লাহও তোমাদের ভালোবাসবেন’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত:৩১)।

আমরা সেই শ্রেষ্ঠ নবীর (সা.) উম্মত, যার পরিপূর্ণ আনুগত্যের মাধ্যমে আল্লাহর ভালোবাসা লাভ করা সম্ভব। তাহলে ভেবে দেখুন, আমরা কতটা সৌভাগ্যবান, আলহামদুলিল্লাহ।

তাই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তার পরিপূর্ণ আনুগত্য ও অনুসরণের মাধ্যমে নিজেদেরকে কল্যাণ মণ্ডিত করা প্রয়োজন। এই মহান রাসুলের সব কিছুই আমাদের জন্য আদর্শ।

রাসুলের (সা.) পারিবারিক জীবন সম্বন্ধে হজরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বর্ণনা করেন, ‘মহানবী (সা.) খুব সাদা সিধা জীবন যাপন করতেন। গৃহস্থালীর কোনো কাজ করতে তিনি লজ্জাবোধ করতেন না। তার (সা.) উটকে তিনি নিজেই তৃণ জাতীয় উদ্ভিদ প্রভৃতি খাওয়াতেন। ঘরের কাজকর্ম করতেন। নিজের জুতা নিজেই মেরামত করতেন। কাপড় সেলাই করতেন। বকরীর দুধ দোহাতেন। ভৃত্যদের নিজের সাথে বসিয়ে খাবার খাওয়াতেন। আটা পিষতে পিষতে তারা ক্লান্ত হয়ে গেলে তাদের সাহায্য করতেন। বাজার থেকে ঘরের জিনিষপত্র ক্রয় করে আনতে লজ্জা বোধ করতেন না। ধনী গরীব সবার সাথে মোসাফাহা (আলিঙ্গন) করতেন। সর্বদা প্রথমে সালাম দিতেন। কেউ খেজুরের দাওয়াত দিলেও সাদরে গ্রহণ করতেন, তুচ্ছ জ্ঞান করতেন না।

তিনি (সা.) অত্যন্ত নম্র স্বভাবের, সহানুভূতিশীল ও দয়ার্দ্র চিত্তের অধিকারী ছিলেন। তিনি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করতেন। সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলতেন, তার চেহারায় সর্বদা মৃদু হাসি লেগেই থাকত। তিনি কখনো অট্টহাসি হাসতেন না। খোদা ভয়ে চিন্তিত থাকতেন, কিন্তু তার মধ্যে রুক্ষতা ও বদমেজাজির চিহ্নও ছিল না।

বিনয়ী স্বভাবের ছিলেন, কিন্তু তার (সা.) মধ্যে ভীরুতা, কাপুরুষতা ছিল না। খুব দানশীল ছিলেন, কিন্তু অপচয় করতেন না। নরম মনের, দয়ালু প্রকৃতির ছিলেন। সব মুসলমানের সাথে দয়ার্দ্র আচরণ করতেন। এত বেশী পেট ভরে খেতেন না যে, ঢেকুর উঠতে থাকে। লোভ লালসার দিকে কখনো আকৃষ্ট হতেন না, বরং ধৈর্য্যশীল, কৃতজ্ঞ ও স্বল্পে তুষ্ট ছিলেন’ (আসাদুল গাবা, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-২৯)।

হজরত রাসুল করিম (সা.)-এর বিছানা-পত্রও ছিল নিতান্ত সাদাসিধে। সাধারণতঃ একটি চামড়া কিংবা উটের পশম দিয়ে তৈরী একটি কাপড়। হজরত আয়শা (রা.) বলেন, ‘আমাদের বিছানা এত ছোট ছিল যে, যখন রাসুলুল্লাহ (সা.) রাত্রে ইবাদত করার জন্য উঠতেন তখন আমি এক পাশে সরে গিয়ে জড়ো হয়ে থাকতাম। কারণ, বিছানা ছিল ছোট। যখন ইবাদতের সময় তিনি দাঁড়াতেন তখন আমি হাটু সোজা করতে পারতাম, আর যখন তিনি সিজদা করতেন তখন আমি হাটু জড়ো করে নিতাম (বোখারি)।

স্ত্রী ও ভৃত্যদের সঙ্গে এই শ্রেষ্ঠ নবীর আচরণ কেমন ছিল এ সম্বন্ধে হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘হজরত রাসুল করিম (সা.) কখনো কাউকে মারেননি। কোন স্ত্রীকেও নয়, কোন ভৃত্যকেও নয়। কিন্তু আল্লাহর পথে তিনি বীরত্বের সাথে লড়াই করেছেন। তাকে কখনো কেউ কষ্ট দিলে তিনি এর প্রতিশোধ নেননি। কিন্তু যখনই আল্লাহতায়ালার মর্যাদা ও সম্মানের ওপর কোন আঘাত আসত, তখন তিনি আল্লাহর খাতিরে প্রতিশোধ নিতেন’ (বোখারি)।

আজ আমরা যদি এই মহান ও শ্রেষ্ঠ রাসুলের জীবনাদর্শ অনুসরণ করে চলি তাহলে আমাদের প্রতিটি পরিবার জান্নাতে পরিণত হতে পারে, সেই সঙ্গে বিশ্বময় প্রবাহিত হবে শান্তির সুবাতাস।

আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে মহানবীর (সা.) জীবনাদর্শ অনুসরণ করে চলার তাওফিক দান করুন, আমিন।