বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ প্রশ্ন: আমাদের এলাকায় জমি বন্ধকের দুটি প্রচলন রয়েছে- এক. বন্ধকদাতা বন্ধক গ্রহীতার কাছ থেকে নির্ধারিত পরিমাণ টাকা গ্রহণ করে আর বন্ধকগ্রহীতা জমি ভোগ করতে থাকে। যখন টাকা ফিরিয়ে দেয় তখন জমি হস্তান্তর করে।
দুই. এটিও অনেকটা আগেরটার মতোই। তবে পার্থক্য হল, এক্ষেত্রে যখন টাকা ফিরিয়ে দেয় তখন বছর হিসাব করে বন্ধকগ্রহীতা কিছু টাকা কম নেয়। যেমন-কেউ এক কাঠা জমি বন্ধক নিল দশ হাজার টাকায় এবং সে দু’বছর এ জমি ভোগ করলো। দু’ বছর পর টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার সময় পাঁচশ টাকা করে এক হাজার টাকা কম নেয়। এ সুরতগুলো সহীহ কি না? উত্তম পন্থা কোনটি জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর: ঋণদাতার জন্য বন্ধকি জমি ভোগ করা সম্পূর্ণ নাজায়েজ। এটি মূলত ঋণ প্রদান করে বিনিময়ে সুদ গ্রহণেরই একটি প্রকার। সুতরাং প্রশ্নোল্লেখিত প্রথম পদ্ধতিটি নাজায়েজ হওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্ট।
আর দ্বিতীয় পদ্ধতিটি মূলত ঋণ প্রদান করে বন্ধকি জমি ভোগ করার একটি অবৈধ ছুতা। কারণ এক্ষেত্রে আলাদাভাবে ইজারা (ভাড়া) চুক্তি করা হয় না; বরং জমি ভোগ করার শর্তেই ঋণ দেওয়া হয় এবং ঋণের সুবিধা পাওয়ার কারণেই জমির মালিক নামমাত্র ভাড়া গ্রহণ করে থাকে।
সুতরাং প্রশ্নোল্লেখিত দুটি কারবারই নাজায়েজ। প্রকাশ থাকে যে, উক্ত কারবার বৈধভাবে করতে চাইলে শুরু থেকেই বন্ধকি চুক্তি না করে ভাড়া বা লীজ চুক্তি করতে হবে।
যার বিবরণ হল, জমির মালিক জমি ভাড়া দেবে। তার যত টাকা প্রয়োজন সেজন্য যত বছর ভাড়া দিতে হয় একত্রে তত বছরের জন্য ভাড়া দিবে। যেমন-এক বিঘা জমির বার্ষিক ভাড়া ৫ হাজার টাকা। মালিকের ২০ হাজার টাকা প্রয়োজন। তাহলে সে ৪ বছরের জন্য জমি ভাড়া দেবে এবং অগ্রিম ২০ হাজার টাকা নিয়ে নিবে।
এক্ষেত্রে জমির ভাড়া স্থানীয় ভাড়া থেকে সামান্য কম বেশিও হতে পারে। এরপর ভাড়ার মেয়াদ শেষ হলে অর্থ দাতা জমি ফেরত দিবে, কিন্তু প্রদেয় টাকা ফেরত পাবে না। অবশ্য সময়ের আগে ফেরত দিলে যে কয়দিন ভাড়ায় ছিল সে পরিমাণ ভাড়া কর্তন করে অবশিষ্ট টাকা ভাড়াটিয়া ফেরত পাবে।
সূত্র: মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ৮/২৪৪-২৪৫; শরহু মুখতাসারিত তহাবী ৩/১৪৯; রদ্দুল মুহতার ৬/৪৮২; বাদায়েউস সানায়ে ৫/২১২; শরহুল মাজাল্লা, খালেদ আতাসী ৩/১৯৬-১৯৭; ইলাউস সুনান ১৮/৬৪