এই সুরা নবম হিজরিতে নাজিল হয়েছে। রাসুল (সা.) যখন তাবুক যুদ্ধের জন্য রওনা হন তখন মুনাফিকরা পেরেশান হয়ে যায়। তারা আদাজল খেয়ে মাঠে নেমে বিভিন্ন প্রকার ভিত্তিহীন খবর প্রচার করে। গুজব রটাতে থাকে, যেন মুসলমানদের মধ্যে অশান্তির আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
সুরা তাওবার মাধ্যমে ইসলামের দুশমনদের ব্যাপারে অসন্তুষ্টির কথা ঘোষণা করা হয়েছে। কোথাও কোথাও ঘোষণা করা হয়েছে মুশরিকরা হলো নিতান্ত অপবিত্র। তাই মসজিদুল হারামের নিকট তারা যেন না আসতে পারে তা নিশ্চিত করা মুসলমানদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু বকর (রা.) নবম হিজরির হজে আমাকে এ নির্দেশ দিয়ে পাঠিয়ে দেন যে আমি কোরবানির দিন ঘোষণাকারীদের সঙ্গে মিনায় সমবেত লোকদের এ ঘোষণা করে দিই যে এ বছরের পর আর কোনো মুশরিক হজ করার জন্য আসবে না। আল্লাহর ঘর উলঙ্গ অবস্থায় তাওয়াফ করবে না। হুমাইদ ইবনে আব্দুর রহমান (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) আলী (রা.)-কে আবার এ নির্দেশ দিয়ে প্রেরণ করলেন যে তুমি সুরা বারাআতের বিধানসমূহ ঘোষণা করে দাও। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, মিনায় অবস্থানকারীদের মধ্যে (কোরবানির পর) আলী (রা.) আমাদের সঙ্গে ছিলেন এবং সুরা বারাআতের বিধানগুলো ঘোষণা করলেন—এ বছরের পর কোনো মুশরিক হজ করার জন্য আসবে না। কেউ উলঙ্গ অবস্থায় আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করবে না। (বুখারি, হাদিস : ৪২৯৯)
সুরা তাওবার গুরুত্ব ও আমল
সুরা তাওবা কোরআনের সর্বশেষ সুরা না হলেও সংকলনের সময় সর্বশেষ এ সুরার দুটি আয়াত লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল। ওহি লেখক জায়িদ ইবনে সাবিত (রা.), ওমর (রা.) ও আবু বকর (রা.)-এর তাগাদায় কোরআন সংকলন আরম্ভ করেছিলেন। তিনি বলেন, এরপর আমি কোরআন সংগ্রহে লেগে গেলাম এবং হাড়, চামড়া, খেজুর ডালে ও বাকলে এবং মানুষের বক্ষস্থল অর্থাৎ মানুষের কাছে যা মুখস্থ ছিল তা থেকে সংগ্রহ করলাম। পরিশেষে খুজায়মা আনসারী (রা.)-এর কাছে সুরায়ে তাওবার দুটি আয়াত (লিখিত) পেয়ে গেলাম, যা অন্য কারো কাছ থেকে সংগ্রহ করতে পারিনি। এরপর এই জমাকৃত কোরআনের কপিটি আবু বকর (রা.)-এর ইন্তেকাল পর্যন্ত তাঁর কাছেই জমা ছিল। তারপর ওমর (রা.)-এর কাছে এলো। তাঁর ইন্তেকাল পর্যন্ত তাঁর কাছেই এটি জমা ছিল। তারপর এটি হাফসা বিনতে ওমর (রা.)-এর কাছে এলো। (বুখারি, হাদিস : ৪৩২২)
সুরা তাওবার গুরুত্ব ও আমল প্রসঙ্গে আবু আতিয়া হামদানি (রা.) বর্ণনা করেন, ওমর (রা.) একটি ফরমানে লিখেছেন, তোমরা নিজেরা সুরা তাওবা শেখো আর তোমাদের স্ত্রীলোকদের সুরা নুর শিক্ষা দাও। এর কারণ, সুরা তাওবায় জিহাদের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। আর সুরা নুরে পর্দা প্রথা প্রচলনের তাগিদ করা হয়েছে। প্রথমে পুরুষদের এবং পরে স্ত্রীলোকদের কর্তব্য পালনের নির্দেশ আছে। (তাফসিরে জালালাইন : ২/ ৬২০)