ঢাকা , বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সোয়া দুই শ’ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক মসজিদটি কি রক্ষা পাবে

কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলায় মোগল আমলের প্রায় সোয়া দুই শ’ বছরের পুরনো সেকান্দরনগর জামে মসজিদটি আজো দাঁড়িয়ে আছে। মসজিদটির মূল অবয়ব অত থাকলেও সঠিক পরিচর্যার অভাবে তা এখন ভঙ্গুর হতে চলেছে।

মসজিদটি বাইরে থেকে বিশাল আকার দেখা গেলেও ভেতরে খুব বেশি বড় নয়। মসজিদের ছাদের ওপরে রয়েছে মোট আটটি মিনার। মসজিদের উত্তর-দেিণর দেয়াল ভেদ করে রয়েছে একটি করে প্রবেশপথ। সম্মুখ দেয়ালে প্রবেশপথ বরাবর পশ্চিম দেয়ালে রয়েছে মেহরাব। মসজিদের ভেতরে ইমাম বাদে তিনটি কাতারে ১২ জন করে মোট ৩৬ জন মুসল্লি একত্রে নামাজ আদায় করতে পারেন।

তবে মসজিদের বাইরের অংশে অর্থাৎ বারান্দায় আরো প্রায় অর্ধশত মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। আয়তাকারে এই মসজিদের দৈর্ঘ্য ৪৪ ফুট ও প্রস্থ ২৫ ফুট। সম্মুখ দেয়াল ভেদ করে রয়েছে পত্রখিলানসমৃদ্ধ তিনটি প্রবেশপথ। মধ্যের প্রবেশপথটি কিছুটা বড়। এ মসজিদের সম্মুখের সাহনের পরিমাণ ৫৪ ফুট বাই ৩৬ ফুট। মসজিদের আকার বা পরিধি যাই হোক মসজিদে প্রবেশ করে নামাজ আদায়ের সময় মনে হয় যেন ২০০ বছর আগের মোগল আমলে চলে গেছি। নিজে উপস্থিত হয়ে নামাজ না পড়লে বিশ্বাস করা বা বোঝা সম্ভব নয়।ঐতিহাসিক সেকান্দরনগর মসজিদটি কিশোরগঞ্জ
জেলার তাড়াইল উপজেলা ধলা ইউনিয়নের সেকান্দরনগর গ্রামে অবস্থিত। কালের আবর্তে এ মসজিদ শাহ সেকান্দরনগর জামে মসজিদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। কিশোরগঞ্জ জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব ২৮ কিলোমিটার। মসজিদের গায়ে বর্তমানে যেসব নিদর্শন পাওয়া গেছে সে অনুসারে ধারণা করা হয় অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। কেননা ১৭৯৬ সালের পর সেকান্দরনগরে আগমন ঘটে বিখ্যাত ইসলাম প্রচারক হজরত সৈয়দ শাহ জামানের রহ:। তারই সমসাময়িক ও আত্মীয় হজরত শাহ সেকান্দর রহ:। ওই আমলে এ দেশে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে ৩৬০ জন আউলিয়ার আগমন ঘটে। তাদেরই একজন শাহ সেকান্দর রহ:। শাহ সেকান্দর এখানে এসে বসতি স্থাপন করেন এবং পরে এ গ্রামটি তার নিজ নামেই নামকরণ হয় সেকান্দরনগর। হজরত শাহ সেকান্দরের অবস্থানকে কেন্দ্র করেই এ মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। মসজিদের পাশেই রয়েছে শাহ সেকান্দর রহ:-এর মাজার।

কথিত আছে, হজরত শাহ সেকান্দরের রহ: দুই ভ্রাতুষ্পুত্র ছিলেন। তারা হলেন হজরত শাহ জলিল রহ: ও হজরত শাহ খলিল রহ:। হজরত শাহ জলিল রহ:-এর একটিমাত্র মেয়ে ছিলেন। মেয়েটি বয়ঃপ্রাপ্ত হলে বিয়ে দেয়া হয় সিলেটের ঝরনার পাড়ের সৈয়দ পরিবারের অধস্তন এবং বিশিষ্ট আলেম সৈয়দ আবদুল হেকিম রহ:-এর সাথে। এই বিয়ে সূত্রেই তিনি সেকান্দরনগরে চলে আসেন। পরবর্তীকালে তারই অধীনস্থরা বর্তমানে মসজিদসংলগ্ন সাহেব বাড়িতে বাস করছেন বংশপরম্পরায়। তাদেরই একজন বর্তমান মসজিদের ইমাম মাওলানা সৈয়দ আবু সায়েম। তিনিই এখন এ মসজিদে জুমার নামাজসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ান।

সৈয়দ সায়েম এ প্রতিনিধিকে বলেন, ১৯ বছর আগে জাতীয় জাদুঘরের প্রতœতত্ত্ব বিভাগ মসজিদটির দায়িত্ব নেয়। ঢাকা বিভাগীয় জাতীয় জাদুঘর ও প্রতœতত্ত্ব বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক ড. আতাউর রহমান পাঁচ-ছয় মাস আগে মসজিদটি পরিদর্শন করে মসজিদের উন্নয়নের জন্য সব রকমের সাহায্য-সহযোগিতার আশ্বাস দেন। বর্তমানে ১৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি পরিচালনা কমিটি রয়েছে, যার সভাপতি সৈয়দ বশির আহম্মেদ। মসজিদের গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় কাজ বা কোনো সিদ্ধান্ত তাদের মতামতের ভিত্তিতেই হয়ে থাকে।

স্থানীয়রা জানান, ২০০০ সালে ঢাকা জাতীয় জাদুঘরের প্রতœতত্ত্ব বিভাগের লোকজন এসে মসজিদের ধোয়ামোছা ও সংস্কারকাজ করে যান। বর্তমানে মসজিদটির মেঝে দেবে যাচ্ছে। দেয়ালে ফাটল ধরেছে। দ্রুত সংস্কার না করলে কালের এ নীরব সাী হয়তো নীরবেই হারিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের।-নয়াদিগন্ত

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

সোয়া দুই শ’ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক মসজিদটি কি রক্ষা পাবে

আপডেট টাইম : ০৫:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ অগাস্ট ২০১৭

কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলায় মোগল আমলের প্রায় সোয়া দুই শ’ বছরের পুরনো সেকান্দরনগর জামে মসজিদটি আজো দাঁড়িয়ে আছে। মসজিদটির মূল অবয়ব অত থাকলেও সঠিক পরিচর্যার অভাবে তা এখন ভঙ্গুর হতে চলেছে।

মসজিদটি বাইরে থেকে বিশাল আকার দেখা গেলেও ভেতরে খুব বেশি বড় নয়। মসজিদের ছাদের ওপরে রয়েছে মোট আটটি মিনার। মসজিদের উত্তর-দেিণর দেয়াল ভেদ করে রয়েছে একটি করে প্রবেশপথ। সম্মুখ দেয়ালে প্রবেশপথ বরাবর পশ্চিম দেয়ালে রয়েছে মেহরাব। মসজিদের ভেতরে ইমাম বাদে তিনটি কাতারে ১২ জন করে মোট ৩৬ জন মুসল্লি একত্রে নামাজ আদায় করতে পারেন।

তবে মসজিদের বাইরের অংশে অর্থাৎ বারান্দায় আরো প্রায় অর্ধশত মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। আয়তাকারে এই মসজিদের দৈর্ঘ্য ৪৪ ফুট ও প্রস্থ ২৫ ফুট। সম্মুখ দেয়াল ভেদ করে রয়েছে পত্রখিলানসমৃদ্ধ তিনটি প্রবেশপথ। মধ্যের প্রবেশপথটি কিছুটা বড়। এ মসজিদের সম্মুখের সাহনের পরিমাণ ৫৪ ফুট বাই ৩৬ ফুট। মসজিদের আকার বা পরিধি যাই হোক মসজিদে প্রবেশ করে নামাজ আদায়ের সময় মনে হয় যেন ২০০ বছর আগের মোগল আমলে চলে গেছি। নিজে উপস্থিত হয়ে নামাজ না পড়লে বিশ্বাস করা বা বোঝা সম্ভব নয়।ঐতিহাসিক সেকান্দরনগর মসজিদটি কিশোরগঞ্জ
জেলার তাড়াইল উপজেলা ধলা ইউনিয়নের সেকান্দরনগর গ্রামে অবস্থিত। কালের আবর্তে এ মসজিদ শাহ সেকান্দরনগর জামে মসজিদ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। কিশোরগঞ্জ জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব ২৮ কিলোমিটার। মসজিদের গায়ে বর্তমানে যেসব নিদর্শন পাওয়া গেছে সে অনুসারে ধারণা করা হয় অষ্টাদশ শতকের শেষ দিকে মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। কেননা ১৭৯৬ সালের পর সেকান্দরনগরে আগমন ঘটে বিখ্যাত ইসলাম প্রচারক হজরত সৈয়দ শাহ জামানের রহ:। তারই সমসাময়িক ও আত্মীয় হজরত শাহ সেকান্দর রহ:। ওই আমলে এ দেশে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে ৩৬০ জন আউলিয়ার আগমন ঘটে। তাদেরই একজন শাহ সেকান্দর রহ:। শাহ সেকান্দর এখানে এসে বসতি স্থাপন করেন এবং পরে এ গ্রামটি তার নিজ নামেই নামকরণ হয় সেকান্দরনগর। হজরত শাহ সেকান্দরের অবস্থানকে কেন্দ্র করেই এ মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। মসজিদের পাশেই রয়েছে শাহ সেকান্দর রহ:-এর মাজার।

কথিত আছে, হজরত শাহ সেকান্দরের রহ: দুই ভ্রাতুষ্পুত্র ছিলেন। তারা হলেন হজরত শাহ জলিল রহ: ও হজরত শাহ খলিল রহ:। হজরত শাহ জলিল রহ:-এর একটিমাত্র মেয়ে ছিলেন। মেয়েটি বয়ঃপ্রাপ্ত হলে বিয়ে দেয়া হয় সিলেটের ঝরনার পাড়ের সৈয়দ পরিবারের অধস্তন এবং বিশিষ্ট আলেম সৈয়দ আবদুল হেকিম রহ:-এর সাথে। এই বিয়ে সূত্রেই তিনি সেকান্দরনগরে চলে আসেন। পরবর্তীকালে তারই অধীনস্থরা বর্তমানে মসজিদসংলগ্ন সাহেব বাড়িতে বাস করছেন বংশপরম্পরায়। তাদেরই একজন বর্তমান মসজিদের ইমাম মাওলানা সৈয়দ আবু সায়েম। তিনিই এখন এ মসজিদে জুমার নামাজসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ান।

সৈয়দ সায়েম এ প্রতিনিধিকে বলেন, ১৯ বছর আগে জাতীয় জাদুঘরের প্রতœতত্ত্ব বিভাগ মসজিদটির দায়িত্ব নেয়। ঢাকা বিভাগীয় জাতীয় জাদুঘর ও প্রতœতত্ত্ব বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক ড. আতাউর রহমান পাঁচ-ছয় মাস আগে মসজিদটি পরিদর্শন করে মসজিদের উন্নয়নের জন্য সব রকমের সাহায্য-সহযোগিতার আশ্বাস দেন। বর্তমানে ১৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি পরিচালনা কমিটি রয়েছে, যার সভাপতি সৈয়দ বশির আহম্মেদ। মসজিদের গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় কাজ বা কোনো সিদ্ধান্ত তাদের মতামতের ভিত্তিতেই হয়ে থাকে।

স্থানীয়রা জানান, ২০০০ সালে ঢাকা জাতীয় জাদুঘরের প্রতœতত্ত্ব বিভাগের লোকজন এসে মসজিদের ধোয়ামোছা ও সংস্কারকাজ করে যান। বর্তমানে মসজিদটির মেঝে দেবে যাচ্ছে। দেয়ালে ফাটল ধরেছে। দ্রুত সংস্কার না করলে কালের এ নীরব সাী হয়তো নীরবেই হারিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের।-নয়াদিগন্ত