বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ উসকানি ও উত্তেজনা সৃষ্টি এমন এক ব্যাধি, যা সব ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়ে, সব পথে কড়া নাড়ে। আরোপিত আকাশ সংস্কৃতির বাস্তবতায় এটি খুব বেশি বিস্তৃত হয়েছে, যা অজ্ঞাত নানা কৌশল ও অজানা চক্রান্তে স্থান-কাল ছাড়িয়ে গেছে। তা মনের মধ্যে নষ্টামি ঢুকিয়েছে, মস্তিষ্ককে কলুষিত করেছে এবং সহজাত স্বাভাবিক প্রকৃতিকে বিনষ্ট করেছে। উত্তেজনা ছড়ানোর অন্যতম ধরন হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় অশ্লীল ও বাজে ভিডিও ক্লিপ ছড়িয়ে দেয়ার প্রবণতা
ইসলাম মানবজাতিকে স্থিতিশীল জীবন, নিরাপত্তা ও শান্তির মূলমর্ম দিয়ে মহিমান্বিত করেছে। শরিয়ত ও তার বিধানগুলো সামগ্রিকতার বৈশিষ্ট্যধারী। শরিয়ত উম্মাহকে মূল্যবোধের সীমা দিয়ে বেষ্টন করে রেখেছে, যা তার সব দিক সুরক্ষিত রাখে। তাকে উন্নত চরিত্র ও মহৎ কর্মের দিকে আহ্বান করে। তাকে হীন আচরণ ও মন্দ স্বভাব থেকে দূরে রাখে। সমাজের শান্তি রক্ষা ও ব্যক্তির অধিকার সংরক্ষণের জন্য ইসলামের শিক্ষাদীক্ষা অপরাধের যাবতীয় মূল কারণ ও উপাদান সমূলে ধ্বংস করে অঙ্কুরেই তা দমনের যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তদ্রƒপ সমাজে উন্নত মূল্যবোধ ও নৈতিক পরিবেশ নির্মাণের শিক্ষা দিয়ে ইসলাম অপরাধের সব উৎস শুকিয়ে দেয়। গোটা সমাজের শান্তির জন্য শরিয়ত বিভিন্ন দ-, শাস্তি ও কেসাস ধার্য করে দিয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘হে বুদ্ধিমানরা! কেসাসের মধ্যে তোমাদের জন্য জীবন রয়েছে, যাতে তোমরা সাবধান হতে পার।’ (সূরা বাকারা : ১৭৯)।
যে অপরাধগুলোর ভয়াবহতা দেখে সমাজ-সংসার চিৎকার করতে থাকে এবং বিবেকবানরা যেগুলোর বাস্তবতা পর্যবেক্ষণ করার গুরুত্ব দিতে একমত পোষণ করে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ইজ্জত-আবরু নিয়ে উসকানি দেয়া, উত্ত্যক্ত করা ও হয়রানি করা, যা ভ্রষ্টতা, নিপীড়ন ও প্রতারণার মাধ্যমে নিষিদ্ধ কাজে জড়িয়ে ফেলে। এটা একটা গর্হিত আচরণ ও ঘৃণিত অনাচার, যা আবেগকে তাড়িত করে ও প্রবৃত্তিকে উসকে দেয়।
এ অপরাধের নানাবিধ ক্ষতি ও কুফল রয়েছে। এর সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা নিহিত থাকে হারাম কাজে জড়িয়ে পড়া, সমাজের ধস নামা ও অপরাধীর বিভিন্ন মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার মাঝে, যা কখনও অনিষ্টের অতল খাদে তলিয়ে যেতে কিংবা আত্মহত্যা পর্যন্ত নিয়ে যায়। উত্ত্যক্তকারী মোহগ্রস্ত বখাটেদের প্রতিরোধ করা শরিয়তের জরুরি নির্দেশ।
আল্লাহ বলেন, ‘যারা বিনা অপরাধে মোমিন পুরুষ ও মোমিন নারীদের কষ্ট দেয় তারা মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের বোঝা বহন করে।’ (সূরা আহজাব : ৫৮)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট মানুষ সে ব্যক্তি, লোকেরা যাকে তার অপকর্মের ভয়ে পরিত্যাগ বা বর্জন করেছে।’
উসকানিমূলক ও উত্তেজনাকর আচরণের শাস্তি দেয়া এবং প্রতিরোধ করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ। পৃথিবীতে যে অনিষ্ট সৃষ্টি করতে চায়, অশান্তি ও ফেতনার আগুন জ্বালায়, নিরাপত্তা বিঘিœত করে এবং অন্যায় কাজে লেগে থাকে তাকে প্রতিহত করে শাস্তি দিলে আল্লাহর বিধান কার্যকর হয়। আল্লাহর বিধান মানুষের মান-সম্মান, সুনাম ও গৌরব রক্ষা করে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘পৃথিবীতে একটি দ-বিধি কার্যকর করা পৃথিবীবাসীর জন্য চল্লিশ দিন বৃষ্টি হওয়ার চেয়ে বেশি উত্তম।’
শয়তানের পদাঙ্ক ও পথ অনুসরণ পরিহার করতে মোমিনদের জন্য পবিত্র কোরআনের এটাই আহ্বান। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা প্রকাশ্য ও গোপন কোনো ধরনের অশ্লীল কাজের কাছে যেও না।’ (সূরা আনআম : ১৫১)। তিনি আরও বলেন, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। যে শয়তানের অনুসরণ করবে, তখন তো শয়তান নির্লজ্জতা ও মন্দ কাজেরই আদেশ করবে।’ (সূরা নূর : ২১)।
মন্দের ফাঁকগুলো বন্ধ করতে এবং ঈমানদারদের মাঝে যারা অশ্লীলতা ছড়ানোর চেষ্টা করে তাদের থামাতেই এসব বিধান। উসকানি ও উত্তেজনা একটি জঘন্য দোষ, যাতে নির্বোধ দুর্বল, মানসিক রোগী, স্বল্প মূল্যবোধসম্পন্ন মনুষ্যত্বহীন লোকরা জড়িত হয়, যারা অশ্লীল কর্মকা- ঘটায়।
উসকানিমূলক অপরাধ নানা রূপ ও বিভিন্ন প্রবণতা ধারণ করেছে। আজেবাজে কথাবার্তা ও খিস্তিখেউড় দিয়ে তা শুরু হয়, অপরাধীরা যা বলে বেড়ায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা অশ্লীলতা থেকে বিরত থাক। কেননা আল্লাহ নির্লজ্জ ব্যক্তি ও অশ্লীল বস্তু পছন্দ করেন না।’ তিনি আরও বলেন, ‘মোমিন ব্যক্তি অভিসম্পাতকারীও না নিন্দাকারীও না, সে নির্লজ্জ লম্পটও না।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘প্রতিটি আদম সন্তানের কিছু ব্যভিচারের ভাগ আছে। কেননা দুই চোখ ব্যভিচার করে, চোখের ব্যভিচার হলো তাকিয়ে থাকা। দুই হাত জিনা করে, হাতের জিনা হলো ধরা। দুই পা জিনা করে, পায়ের জিনা হলো চলা। মুখ জিনা করে, মুখের জিনা হলো চুম্বন।’
মানুষ যখন তার জিহ্বাকে বেপরোয়া হতে অনুমতি দেয়, তখন নিজেকে সে পৃথিবীতে ধ্বংসের ও পরকালে রিক্ততার সম্মুখীন করে। আল্লাহ বলেন, ‘সে যে কথাই উচ্চারণ করে তাই গ্রহণ করার জন্য সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে।’ (সূরা কাফ : ১৮)।
উসকানি ও উত্তেজনা সৃষ্টি এমন এক ব্যাধি, যা সব ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়ে, সব পথে কড়া নাড়ে। আরোপিত আকাশ সংস্কৃতির বাস্তবতায় এটি খুব বেশি বিস্তৃত হয়েছে, যা অজ্ঞাত নানা কৌশল ও অজানা চক্রান্তে স্থান-কাল ছাড়িয়ে গেছে। তা মনের মধ্যে নষ্টামি ঢুকিয়েছে, মস্তিষ্ককে কলুষিত করেছে এবং সহজাত স্বাভাবিক প্রকৃতিকে বিনষ্ট করেছে। উত্তেজনা ছড়ানোর অন্যতম ধরন হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় অশ্লীল ও বাজে ভিডিও ক্লিপগুলোর প্রবণতা। যাতে মন্দের প্রচার হয়, অশ্লীলতার প্রসার ঘটে, যা জঘন্য প্ররোচনা ও সীমাহীন অবর্ণনীয় বিরাট কুফল বয়ে আনে। আল্লাহ বলেন, ‘যারা ঈমানদারদের মাঝে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়া পছন্দ করে তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে আছে যন্ত্রণাকর শাস্তি। আল্লাহ জানেন আর তোমরা জানো না।’ (সূরা নূর : ১৯)।
যারা এ ভিডিওগুলো প্রচার করে ও ছড়িয়ে দিতে তৎপর থাকে তাদের পরিণতি খুবই নোংরা। তাদের ফল দুঃখজনক ও মর্মবিদারক। আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের মন্দ পরিণতি থেকে রক্ষা করুন। আল্লাহ বলেন, ‘ফলে কেয়ামতের দিন তারা নিজেদের পাপের ভার পূর্ণমাত্রায় বহন করবে এবং তাদের পাপের ভারও যাদের তারা তাদের অজ্ঞতাহেতু বিপথগামী করে।’ (সূরা নাহল : ২৫)।
প্রদর্শনের মনোভাব, শিথিলতা, আত্মম্ভরিতা ও মন্দকে শোভিত করার ফলে উত্তেজনা ও উসকানির ব্যাধি বিস্তার লাভ করেছে। বাসাবাড়িতে আবেগের শুষ্কতাও তদ্রƒপ যুবতী, শিশু ও নারীদের উত্তেজনা সৃষ্টিকারী বখাটেদের প্রবৃত্তির নাগালে সহজ শিকারে পরিণত করেছে।
চিন্তাশীল শরিয়ত পালনকারী ব্যক্তি ও সুস্থ বিবেকবানরা জানেন এ দুরারোগ্য মহামারীর সবচেয়ে উত্তম প্রতিষেধক হলো ধর্মীয় পরিবেশ সৃষ্টি করা, ঈমান মজবুত করা, কোরআনের দিকনির্দেশনা গ্রহণ করা, কথায় ও আচরণে তাকওয়া অবলম্বন করা, দৃষ্টি অবনত রাখা, পর্দাবৃত থাকা এবং আল্লাহর ভয় ও পবিত্রতা দ্বারা নিজেকে পরিশুদ্ধ করা।
১৬ মহররম ১৪৩৯ হিজরি মসজিদে নববির জুমার খুতবার সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর করেছেন মাহমুদুল হাসান জুনাইদ