ঢাকা , বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

হজ থেকে মানুষ নিষ্পাপ হয়ে ফেরে

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ হজ ইসলামি সমাজব্যবস্থার অন্যতম ভিত্তি। এটা শারীরিক ও আর্থিক ইবাদতের অনন্য সমন্বয়। বিশ^ মুসলিমের মহাসম্মেলন হিসেবে এর রয়েছে অশেষ ধর্মীয় গুরুত্ব। হজের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার সান্নিধ্য লাভ করা যায়। কেননা হজযাত্রীরা আল্লাহর মেহমানস্বরূপ। এছাড়াও হজের সময় নবী করিম (সা.) এর রওজা জিয়ারতসহ কোরবানির মতো মহান ত্যাগের উৎসব পালন একজন মুসলিম ব্যক্তিকে ইসলামি বিধিনিষেধ পালনে অনুপ্রাণিত করে। আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি সামর্থ্যবান মোমিন ব্যক্তির ওপর হজ ফরজ করে দিয়েছেন। কিন্তু উপার্জিত সম্পদ হালাল হতে হবে। কারণ, হারাম তরিকায় অর্জিত সম্পদের ওপর হজ ফরজ হয় না। সুতরাং হজ একটি পবিত্র ইবাদত এবং এর সম্পাদনের সম্পদও পবিত্র হতে হবে। হজের ফজিলত সম্পর্কে কোরআন শরিফে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর এ ঘরের হজ করা হলো মানুষের ওপর আল্লাহর প্রাপ্য; যে লোকের সামর্থ্য রয়েছে এ পর্যন্ত পৌঁছার। আর যে লোক তা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও অস্বীকার করে, তবে অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা বিশ^বাসী থেকে অমুখাপেক্ষী।’ (সূরা আলে ইমরান : ৯৭)।

পাপ মোচনে হজের গুরুত্ব
হজ শুধু শারীরিক ইবাদতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং হজ পালন বান্দার পাপও মোচন করে দেয়। এর ফলে হজ পালনকারীর পাপের বোঝা হালকা হয় এবং দরিদ্রতা দূর হয়। তবে হজ পালন একমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে হতে হবে। এতে কোনো ধরনের লৌকিকতা থাকতে পারবে না। এ মর্মে রাসুল (সা.) বলেন, ‘হজ ও ওমরা সঙ্গে সঙ্গে করো। কেননা, এগুলো দারিদ্র্য ও গোনাহ দূর করে, যেভাবে হাঁপর লোহা, সোনা ও রুপার ময়লা দূর করে। আর কবুল হজের সওয়াব জান্নাত ব্যতীত আর কিছুই নয়।’ (তিরমিজি : ৮১৫; নাসায়ি : ২৬৪৩)। তিনি আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ করেছে এবং তাতে অশ্লীল কথা বলেনি বা অশ্লীল কাজ করেনি, সে হজ থেকে ফিরবে সেই দিনের মতো, যে দিন তার মা তাকে প্রসব করেছে।’ (বোখারি : ১৫৪৬; মুসলিম : ৩৩৫৭)।

জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ
পবিত্র হজ জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের অন্যতম সোপান। মহান আল্লাহ যাকে হজ পালনের সামর্থ্য দিয়েছেন, যদি সে হজ না করে ওই অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, তাহলে সে জাহান্নামের ভীষণ যন্ত্রণাদায়ক আগুনে পতিত হবে। তাই হজের পরম লক্ষ্য হচ্ছে মোমিন বান্দাকে জাহান্নামের আজাব থেকে পরিত্রাণ করে জান্নাতে উপনীত করা। এ প্রসঙ্গে হজরত রাসুল (সা.) বলেন, ‘এক ওমরা অপর ওমরা পর্যন্ত সময়ের জন্য কাফফারাস্বরূপ এবং কবুল হজের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া ভিন্ন কিছুই নয়।’  (বোখারি : ১৮০০; মুসলিম : ৩৩৫৫)। রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘যখন তুমি কোনো হাজীর সাক্ষাৎ পাবে তাকে সালাম করবে, করমর্দন করবে এবং তাকে অনুরোধ করবে যেন তোমার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান তাঁর ঘরে প্রবেশের আগে। কেননা, হাজী হলো গোনাহ ক্ষমা করা পবিত্র ব্যক্তি।’(আহমদ)

হজ পালনকারীর দোয়া মুহূর্তেই কবুল হয়
হজ ও ওমরা পালনকারীর দোয়া আল্লাহর দরবারে মুহূর্তেই কবুল হয়। তাদের দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না। কারণ, তারা হজ ও ওমরা পালন করা অবস্থায় আল্লাহর ঘরের মেহমান। তাই হজ পালন অবস্থায় প্রত্যেক মোমিন নিজের সদিচ্ছামূলক বিষয় নিয়ে এবং মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও কল্যাণের জন্য আল্লাহর কাছে মোনাজাত করা উচিত।  এ মর্মে হজরত রাসুল (সা.) বলেন, ‘হজ ও ওমরা পালনকারীরা হচ্ছে আল্লাহর দাওয়াতি যাত্রীদল। অতএব, তারা যদি তাঁর কাছে দোয়া করে তিনি তা কবুল করেন এবং যদি তাঁর কাছে ক্ষমা চান তিনি তাদের ক্ষমা করে দেন।’ (ইবনে মাজাহ : ৩০০৪)।

হজ না করার পরিণাম
যেসব মুসলমানের ওপর ইসলামী শরিয়তের শর্ত অনুযায়ী হজ ফরজ হয়েছে, তারা যদি হজ পালন না করে, তাহলে পরকালে তাদের কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। তবে শরিয়ত নির্দেশিত সমাস্যার কারণে হজ পালনে বাধার সম্মুখীন হলে, তখন হজ অনাদায়ে কোনো ধরনের গোনাহগার হবে না। কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই হজ পালন না করলে অবশ্য গোনাহগার হবে। এমনকি ইহুদি বা খ্রিস্টান হয়ে মৃত্যু বরণ করার সম্ভাবনাও রয়েছে। এ প্রসঙ্গে হজরত রাসুল (সা.) বলেন, ‘যাকে শক্ত অভাব অথবা অত্যাচারী শাসক অথবা গুরুতর রোগ বাধা দেয়নি, অথচ সে হজ না করে মরতে বসেছে, মরুক সে যদি চাই ইহুদি হয়ে আর যদি চাই নাসারা হয়ে।’ (দারেমি)।

লেখক : শিক্ষক, নাজিরহাট বড় মাদ্রাসা ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে একসাথে সাকিব-তামিম

হজ থেকে মানুষ নিষ্পাপ হয়ে ফেরে

আপডেট টাইম : ০৩:০০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুলাই ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ হজ ইসলামি সমাজব্যবস্থার অন্যতম ভিত্তি। এটা শারীরিক ও আর্থিক ইবাদতের অনন্য সমন্বয়। বিশ^ মুসলিমের মহাসম্মেলন হিসেবে এর রয়েছে অশেষ ধর্মীয় গুরুত্ব। হজের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার সান্নিধ্য লাভ করা যায়। কেননা হজযাত্রীরা আল্লাহর মেহমানস্বরূপ। এছাড়াও হজের সময় নবী করিম (সা.) এর রওজা জিয়ারতসহ কোরবানির মতো মহান ত্যাগের উৎসব পালন একজন মুসলিম ব্যক্তিকে ইসলামি বিধিনিষেধ পালনে অনুপ্রাণিত করে। আল্লাহ তায়ালা প্রতিটি সামর্থ্যবান মোমিন ব্যক্তির ওপর হজ ফরজ করে দিয়েছেন। কিন্তু উপার্জিত সম্পদ হালাল হতে হবে। কারণ, হারাম তরিকায় অর্জিত সম্পদের ওপর হজ ফরজ হয় না। সুতরাং হজ একটি পবিত্র ইবাদত এবং এর সম্পাদনের সম্পদও পবিত্র হতে হবে। হজের ফজিলত সম্পর্কে কোরআন শরিফে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর এ ঘরের হজ করা হলো মানুষের ওপর আল্লাহর প্রাপ্য; যে লোকের সামর্থ্য রয়েছে এ পর্যন্ত পৌঁছার। আর যে লোক তা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও অস্বীকার করে, তবে অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা বিশ^বাসী থেকে অমুখাপেক্ষী।’ (সূরা আলে ইমরান : ৯৭)।

পাপ মোচনে হজের গুরুত্ব
হজ শুধু শারীরিক ইবাদতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং হজ পালন বান্দার পাপও মোচন করে দেয়। এর ফলে হজ পালনকারীর পাপের বোঝা হালকা হয় এবং দরিদ্রতা দূর হয়। তবে হজ পালন একমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে হতে হবে। এতে কোনো ধরনের লৌকিকতা থাকতে পারবে না। এ মর্মে রাসুল (সা.) বলেন, ‘হজ ও ওমরা সঙ্গে সঙ্গে করো। কেননা, এগুলো দারিদ্র্য ও গোনাহ দূর করে, যেভাবে হাঁপর লোহা, সোনা ও রুপার ময়লা দূর করে। আর কবুল হজের সওয়াব জান্নাত ব্যতীত আর কিছুই নয়।’ (তিরমিজি : ৮১৫; নাসায়ি : ২৬৪৩)। তিনি আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ করেছে এবং তাতে অশ্লীল কথা বলেনি বা অশ্লীল কাজ করেনি, সে হজ থেকে ফিরবে সেই দিনের মতো, যে দিন তার মা তাকে প্রসব করেছে।’ (বোখারি : ১৫৪৬; মুসলিম : ৩৩৫৭)।

জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ
পবিত্র হজ জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের অন্যতম সোপান। মহান আল্লাহ যাকে হজ পালনের সামর্থ্য দিয়েছেন, যদি সে হজ না করে ওই অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, তাহলে সে জাহান্নামের ভীষণ যন্ত্রণাদায়ক আগুনে পতিত হবে। তাই হজের পরম লক্ষ্য হচ্ছে মোমিন বান্দাকে জাহান্নামের আজাব থেকে পরিত্রাণ করে জান্নাতে উপনীত করা। এ প্রসঙ্গে হজরত রাসুল (সা.) বলেন, ‘এক ওমরা অপর ওমরা পর্যন্ত সময়ের জন্য কাফফারাস্বরূপ এবং কবুল হজের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া ভিন্ন কিছুই নয়।’  (বোখারি : ১৮০০; মুসলিম : ৩৩৫৫)। রাসুল (সা.) আরও বলেন, ‘যখন তুমি কোনো হাজীর সাক্ষাৎ পাবে তাকে সালাম করবে, করমর্দন করবে এবং তাকে অনুরোধ করবে যেন তোমার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান তাঁর ঘরে প্রবেশের আগে। কেননা, হাজী হলো গোনাহ ক্ষমা করা পবিত্র ব্যক্তি।’(আহমদ)

হজ পালনকারীর দোয়া মুহূর্তেই কবুল হয়
হজ ও ওমরা পালনকারীর দোয়া আল্লাহর দরবারে মুহূর্তেই কবুল হয়। তাদের দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না। কারণ, তারা হজ ও ওমরা পালন করা অবস্থায় আল্লাহর ঘরের মেহমান। তাই হজ পালন অবস্থায় প্রত্যেক মোমিন নিজের সদিচ্ছামূলক বিষয় নিয়ে এবং মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও কল্যাণের জন্য আল্লাহর কাছে মোনাজাত করা উচিত।  এ মর্মে হজরত রাসুল (সা.) বলেন, ‘হজ ও ওমরা পালনকারীরা হচ্ছে আল্লাহর দাওয়াতি যাত্রীদল। অতএব, তারা যদি তাঁর কাছে দোয়া করে তিনি তা কবুল করেন এবং যদি তাঁর কাছে ক্ষমা চান তিনি তাদের ক্ষমা করে দেন।’ (ইবনে মাজাহ : ৩০০৪)।

হজ না করার পরিণাম
যেসব মুসলমানের ওপর ইসলামী শরিয়তের শর্ত অনুযায়ী হজ ফরজ হয়েছে, তারা যদি হজ পালন না করে, তাহলে পরকালে তাদের কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। তবে শরিয়ত নির্দেশিত সমাস্যার কারণে হজ পালনে বাধার সম্মুখীন হলে, তখন হজ অনাদায়ে কোনো ধরনের গোনাহগার হবে না। কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই হজ পালন না করলে অবশ্য গোনাহগার হবে। এমনকি ইহুদি বা খ্রিস্টান হয়ে মৃত্যু বরণ করার সম্ভাবনাও রয়েছে। এ প্রসঙ্গে হজরত রাসুল (সা.) বলেন, ‘যাকে শক্ত অভাব অথবা অত্যাচারী শাসক অথবা গুরুতর রোগ বাধা দেয়নি, অথচ সে হজ না করে মরতে বসেছে, মরুক সে যদি চাই ইহুদি হয়ে আর যদি চাই নাসারা হয়ে।’ (দারেমি)।

লেখক : শিক্ষক, নাজিরহাট বড় মাদ্রাসা ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম