ঢাকা , বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :

জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ২০১৮ গাছ মানুষকে দীর্ঘজীবী করে

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ সবুজের দেশ বাংলাদেশ। এ দেশের মাটি ও মানুষের প্রাণের সঞ্চার হয় সবুজ প্রকৃতির মুক্ত নিশ্বাসে। প্রাণিকুলের জীবন-জীবিকা ও বৃহত্তর কল্যাণে গাছপালা, বৃক্ষলতা, ফল, ফুল ও ফসলের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। পৃথিবীতে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য মানুষ খাদ্যশস্য, ফলমূল উৎপাদনের যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে বৃক্ষরোপণ তার মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। গাছপালা ছাড়া মানুষের বেঁচে থাকার উপায় নেই। গাছ থেকে পাওয়া অক্সিজেন মানুষের জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য উপাদান। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় গাছ সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। তাই ইসলাম গাছ লাগানো ও পরিচর্যার বিষয়ে বিশেষ দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে।

পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ শস্যবীজ ও আঁটি বিদীর্ণকারী। তিনি প্রাণহীন বস্তু থেকে প্রাণবান বস্তু নির্গত করেন এবং তিনিই প্রাণবান বস্তু থেকে নিষ্প্রাণ বস্তুর নির্গতকারী। হে মানুষ! তিনিই আল্লাহ। সুতরাং তোমাদের বিভ্রান্ত করে কোন অজ্ঞাত দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? আর তিনিই ওই সত্তা, যিনি তোমাদের জন্য আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, তারপর আমি তা দ্বারা সর্বপ্রকার উদ্ভিদের চারা উদ্গত করেছি, তারপর তা থেকে সবুজ গাছপালা জন্মিয়েছি, যা থেকে আমি থরে থরে বিন্যস্ত শস্যদানা উৎপন্ন করি এবং খেজুর গাছের চুমরি থেকে (ফল-ভারে) ঝুলন্ত কাঁদি নির্গত করি এবং আমি আঙুর বাগান উদ্গত করেছি এবং জয়তুন ও আনারও। তার একটি অন্যটির সদৃশ ও বিসদৃশও। যখন সে বৃক্ষ ফল দেয়, তখন তার ফলের প্রতি ও তার পাকার অবস্থার প্রতি গভীরভাবে লক্ষ করো। এসবের মধ্যে সেই সব লোকের জন্য নিদর্শন রয়েছে, যারা ঈমান আনে।’ (সূরা আনআম : ৯৫-৯৯)।

ইসলামের দৃষ্টিতে গাছ লাগানো সওয়াবের কাজ। বৃক্ষরোপণ সদকায়ে জারিয়া। একটি গাছের ছায়া, ফল ও কাঠ থেকে যত লোক উপক্রিত হবে সবার আমলের সওয়াব পাবে গাছটির রোপণকারী ও পরিচর্যাকারী। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন কোনো মুসলিম গাছ লাগায়, অথবা কোনো ফসল বোনে, আর মানুষ, পাখি বা পশু তা থেকে খায়, এটা রোপণকারীর জন্য সদকা হিসেবে গণ্য হয়।’ (বোখারি : ২৩২০; মুসলিম : ১৫৫৩)। অন্য বর্ণনায় এসেছে ‘কেয়ামত পর্যন্ত (অর্থাৎ যতদিন গাছটি বেঁচে থাকবে বা তা থেকে উপকার গ্রহণ করা হবে) সে গাছ তার জন্য সদকায়ে জারিয়া হিসেবে গণ্য হবে।’ (মুসলিম : ১৫৫২)।

গাছ মানুষের শান্তি ও মঙ্গলের প্রতীক। আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সা.) সবসময়ই বৃক্ষরোপণে মানুষকে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করতেন। তিনি গাছের সঠিক পরিচর্যা ও যত করার উপদেশ দিতেন। বৃক্ষরোপণকারীর জন্য উত্তম সুসংবাদ দিয়েছেন তিনি। আবু হুরায়রা (রা.) একদিন গাছ লাগাচ্ছিলেন। এমন সময় নবীজি (সা.) পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আবু হুরায়রা! কী লাগাচ্ছ? তিনি বললেন, একটি চারা রোপণ করছি। নবীজি বললেন, আমি কি তোমাকে এর চেয়ে উত্তম রোপণের কথা বলে দেব? আবু হুরায়রা বললেন, আল্লাহর রাসুল! অবশ্যই বলুন। তখন নবীজি (সা.) বললেন, ‘এর প্রতিটির বিনিময়ে জান্নাতে তোমার জন্য একটি করে গাছ লাগানো হবে।’ (ইবনে মাজাহ : ৩৮০৭)।

আমরা গাছ থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করি আর গাছ আমাদের শরীর থেকে যে কার্বন ডাই-অক্সাইড বের হয়, তা শুষে নেয়। এভাবেই গাছ আমাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করে, পরিবেশে ভারসাম্য আনে। একটি গাছ বাতাস থেকে ৬০ পাউন্ডেরও বেশি ক্ষতিকারক গ্যাস শোষণ করে এবং ১০টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের সমপরিমাণ তাপ নিয়ন্ত্রণ করে। গাছ থেকে আমরা কাঠ পাই, যা দ্বারা আসবাবপত্র তৈরি করি। ঔষধি গাছ থেকে আমরা ওষুধ বানাই। ফুল গাছ আমাদের আঙিনা সুন্দর করে; রংবেরঙের ফুল আমাদের হৃদয়কে রাঙিয়ে দেয়। বিভিন্ন মৌসুমে নানারকম ফলের স্বাদে-ঘ্রাণে আমরা বিমোহিত হই।

এছাড়া গাছ ভূমি ক্ষয়রোধ, পরিবেশ সংরক্ষণ ও মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। গাছ বৃষ্টিপাত, বন্যা, ঝড়ঝঞ্ঝা ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস প্রতিরোধ করে মানবসমাজকে নানা ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে। তাই গাছ লাগানোর প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করে রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যদি কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার মুহূর্তেও তোমাদের কারও হাতে একটি চারাগাছ থাকে, তাহলে সে যেন সেই বিপদসংকুল মুহূর্তেও তা রোপণ করে দেয়।’ (আদাবুল মুফরাদ)।

আসুন! আমরা প্রত্যেকেই প্রতিজ্ঞা করি সুযোগ হলেই গাছ লাগাব। বছরে অন্তত একটি হলেও গাছ লাগাব। এর সঙ্গে আরও একটি প্রতিজ্ঞা করি, নিজে কখনও গাছ কাটব না। গাছের পাতা ছিঁড়ব না এবং অযথা কাউকে গাছ কাটতে দেব না। জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ২০১৮-এ আমাদের সোগান হোক ‘নিজের পরিবেশ নিজেই গড়ি, শান্তি-সুখে বাস করি।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে একসাথে সাকিব-তামিম

জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ২০১৮ গাছ মানুষকে দীর্ঘজীবী করে

আপডেট টাইম : ০৪:৪৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুলাই ২০১৮

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ সবুজের দেশ বাংলাদেশ। এ দেশের মাটি ও মানুষের প্রাণের সঞ্চার হয় সবুজ প্রকৃতির মুক্ত নিশ্বাসে। প্রাণিকুলের জীবন-জীবিকা ও বৃহত্তর কল্যাণে গাছপালা, বৃক্ষলতা, ফল, ফুল ও ফসলের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। পৃথিবীতে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য মানুষ খাদ্যশস্য, ফলমূল উৎপাদনের যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করে থাকে বৃক্ষরোপণ তার মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। গাছপালা ছাড়া মানুষের বেঁচে থাকার উপায় নেই। গাছ থেকে পাওয়া অক্সিজেন মানুষের জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য উপাদান। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় গাছ সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। তাই ইসলাম গাছ লাগানো ও পরিচর্যার বিষয়ে বিশেষ দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে।

পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ শস্যবীজ ও আঁটি বিদীর্ণকারী। তিনি প্রাণহীন বস্তু থেকে প্রাণবান বস্তু নির্গত করেন এবং তিনিই প্রাণবান বস্তু থেকে নিষ্প্রাণ বস্তুর নির্গতকারী। হে মানুষ! তিনিই আল্লাহ। সুতরাং তোমাদের বিভ্রান্ত করে কোন অজ্ঞাত দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? আর তিনিই ওই সত্তা, যিনি তোমাদের জন্য আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন, তারপর আমি তা দ্বারা সর্বপ্রকার উদ্ভিদের চারা উদ্গত করেছি, তারপর তা থেকে সবুজ গাছপালা জন্মিয়েছি, যা থেকে আমি থরে থরে বিন্যস্ত শস্যদানা উৎপন্ন করি এবং খেজুর গাছের চুমরি থেকে (ফল-ভারে) ঝুলন্ত কাঁদি নির্গত করি এবং আমি আঙুর বাগান উদ্গত করেছি এবং জয়তুন ও আনারও। তার একটি অন্যটির সদৃশ ও বিসদৃশও। যখন সে বৃক্ষ ফল দেয়, তখন তার ফলের প্রতি ও তার পাকার অবস্থার প্রতি গভীরভাবে লক্ষ করো। এসবের মধ্যে সেই সব লোকের জন্য নিদর্শন রয়েছে, যারা ঈমান আনে।’ (সূরা আনআম : ৯৫-৯৯)।

ইসলামের দৃষ্টিতে গাছ লাগানো সওয়াবের কাজ। বৃক্ষরোপণ সদকায়ে জারিয়া। একটি গাছের ছায়া, ফল ও কাঠ থেকে যত লোক উপক্রিত হবে সবার আমলের সওয়াব পাবে গাছটির রোপণকারী ও পরিচর্যাকারী। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন কোনো মুসলিম গাছ লাগায়, অথবা কোনো ফসল বোনে, আর মানুষ, পাখি বা পশু তা থেকে খায়, এটা রোপণকারীর জন্য সদকা হিসেবে গণ্য হয়।’ (বোখারি : ২৩২০; মুসলিম : ১৫৫৩)। অন্য বর্ণনায় এসেছে ‘কেয়ামত পর্যন্ত (অর্থাৎ যতদিন গাছটি বেঁচে থাকবে বা তা থেকে উপকার গ্রহণ করা হবে) সে গাছ তার জন্য সদকায়ে জারিয়া হিসেবে গণ্য হবে।’ (মুসলিম : ১৫৫২)।

গাছ মানুষের শান্তি ও মঙ্গলের প্রতীক। আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সা.) সবসময়ই বৃক্ষরোপণে মানুষকে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করতেন। তিনি গাছের সঠিক পরিচর্যা ও যত করার উপদেশ দিতেন। বৃক্ষরোপণকারীর জন্য উত্তম সুসংবাদ দিয়েছেন তিনি। আবু হুরায়রা (রা.) একদিন গাছ লাগাচ্ছিলেন। এমন সময় নবীজি (সা.) পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আবু হুরায়রা! কী লাগাচ্ছ? তিনি বললেন, একটি চারা রোপণ করছি। নবীজি বললেন, আমি কি তোমাকে এর চেয়ে উত্তম রোপণের কথা বলে দেব? আবু হুরায়রা বললেন, আল্লাহর রাসুল! অবশ্যই বলুন। তখন নবীজি (সা.) বললেন, ‘এর প্রতিটির বিনিময়ে জান্নাতে তোমার জন্য একটি করে গাছ লাগানো হবে।’ (ইবনে মাজাহ : ৩৮০৭)।

আমরা গাছ থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করি আর গাছ আমাদের শরীর থেকে যে কার্বন ডাই-অক্সাইড বের হয়, তা শুষে নেয়। এভাবেই গাছ আমাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করে, পরিবেশে ভারসাম্য আনে। একটি গাছ বাতাস থেকে ৬০ পাউন্ডেরও বেশি ক্ষতিকারক গ্যাস শোষণ করে এবং ১০টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের সমপরিমাণ তাপ নিয়ন্ত্রণ করে। গাছ থেকে আমরা কাঠ পাই, যা দ্বারা আসবাবপত্র তৈরি করি। ঔষধি গাছ থেকে আমরা ওষুধ বানাই। ফুল গাছ আমাদের আঙিনা সুন্দর করে; রংবেরঙের ফুল আমাদের হৃদয়কে রাঙিয়ে দেয়। বিভিন্ন মৌসুমে নানারকম ফলের স্বাদে-ঘ্রাণে আমরা বিমোহিত হই।

এছাড়া গাছ ভূমি ক্ষয়রোধ, পরিবেশ সংরক্ষণ ও মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। গাছ বৃষ্টিপাত, বন্যা, ঝড়ঝঞ্ঝা ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস প্রতিরোধ করে মানবসমাজকে নানা ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে রক্ষা করে। তাই গাছ লাগানোর প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করে রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যদি কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার মুহূর্তেও তোমাদের কারও হাতে একটি চারাগাছ থাকে, তাহলে সে যেন সেই বিপদসংকুল মুহূর্তেও তা রোপণ করে দেয়।’ (আদাবুল মুফরাদ)।

আসুন! আমরা প্রত্যেকেই প্রতিজ্ঞা করি সুযোগ হলেই গাছ লাগাব। বছরে অন্তত একটি হলেও গাছ লাগাব। এর সঙ্গে আরও একটি প্রতিজ্ঞা করি, নিজে কখনও গাছ কাটব না। গাছের পাতা ছিঁড়ব না এবং অযথা কাউকে গাছ কাটতে দেব না। জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ২০১৮-এ আমাদের সোগান হোক ‘নিজের পরিবেশ নিজেই গড়ি, শান্তি-সুখে বাস করি।