ঢাকা , শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোজা চরিত্র ও মূল্যবোধের শিক্ষা দেয়

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ রমজান মাসের রোজায় রয়েছে মানুষকে বিভিন্ন নিকৃষ্ট কর্ম থেকে দূরে থাকা ও মনকে যাবতীয় মন্দ বিষয় এবং কুৎসিত আচরণ থেকে বিরত রাখার শিক্ষা ও অনুশীলন ইসলামে চারিত্রিক মূল্যবোধ ও মহৎ গুণাবলির বিশেষ কদর এবং বিরাট মর্যাদা রয়েছে। সুন্দর চরিত্র ও ভালো স্বভাবের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে শরিয়তে লাগাতার অনেক বক্তব্য এসেছে। সর্বশ্রেষ্ঠ মানব মুহাম্মদ (সা.) এর বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।’ (সূরা কলম : ৪)। শরিয়ত কর্তৃক প্রবর্তিত বিভিন্ন বৈচিত্র্যপূর্ণ ইবাদতের আনুষঙ্গিক উদ্দেশ্যাবলি ও তার বিপুল লক্ষ্যের মাঝে এমন অনেক কিছুই আছে, যা মুসলিমকে মহৎ চরিত্রে ভূষিত হতে ও উন্নত আদর্শে সজ্জিত হতে প্রেরণা দেয়। যাতে সামগ্রিকভাবে সমাজ জীবনটা একটা মহৎ নৈতিক গুণাবলিসম্পন্ন ও সুন্দর স্বভাবধারী সংগঠিত দলের রূপ পরিগ্রহ করতে পারে। যা তাকে একটি সুখী উন্নত সমাজে পরিণত করবে। সেখানে যাবতীয় মহৎ বৈশিষ্ট্য ও সবধরনের উত্তম চরিত্র সুবাস ছড়াবে।

রমজান মাসে এমন কিছু ইবাদত-বন্দেগি আছে, যা মনকে পরিশীলিত করে ও পরিশুদ্ধ করে। অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে মার্জিত করে ও সংশোধন করে। ফলে গোটা মুসলিম সমাজ এমন প্রশিক্ষণ পায়, যা তাকে শ্রেষ্ঠ আদর্শ ও মহৎ মূল্যবোধের দিকে পরিচালিত করে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সবচেয়ে মহানুভব মানুষ। রমজান মাসে যখন তাঁর সঙ্গে জিবরাইল (আ.) এর সাক্ষাৎ হতো, তখন তিনি আরও বেশি মহৎ হয়ে ওঠতেন। রমজানের প্রত্যেক রাতে জিবরাইল তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কোরআনের পাঠ-পর্যালোচনা করতেন। তখন আল্লাহর রাসুল (সা.) মুক্ত বাতাসের চেয়েও বেশি কল্যাণের বাহক ও মহৎ হয়ে যেতেন।’ (বোখারি ও মুসলিম)। মহত্ত্ব এমন ব্যাপক তাৎপর্যবাহী একটি বিষয়, যা যাবতীয় উন্নত গুণাবলি, ভালো স্বভাব ও সুন্দর চরিত্রকে ধারণ করে।

রমজান মাসের রোজায় রয়েছে মানুষকে বিভিন্ন নিকৃষ্ট কর্ম থেকে দূরে থাকা ও মনকে যাবতীয় মন্দ বিষয় এবং কুৎসিত আচরণ থেকে বিরত রাখার শিক্ষা ও অনুশীলন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে লোক মিথ্যা কথা বলা ও তদনুযায়ী কাজ করা ছাড়তে পারেনি তার পানাহার বর্জন করার কোনো প্রয়োজন আল্লাহর কাছে নেই।’ (বোখারি)।
এ পরিপ্রেক্ষিতে এ দৃষ্টিকোণ থেকে জাবের (রা.) বলেন, ‘তুমি যখন রোজা রাখবে, তখন যেন তোমার কান, চোখ ও জিহ্বা মিথ্যা ও অন্যায় থেকে বিরত থাকে। তুমি কাজের লোককে কষ্ট দিও না। তোমার রোজা রাখার দিনে তোমার মধ্যে যেন একটা গাম্ভীর্য ও প্রশান্তির ভাব থাকে।’ এ কথার উদ্দেশ্য হলো সবসময় ধারাবাহিক এসব ভালো কাজে অবিচল থাকা ও মহৎ চরিত্রের পথে চলতে যাত্রা অব্যাহত রাখা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ নিজের রোজা রাখার দিনে যেন অনৈতিক কাজ না করে, চিল্লাচিল্লি না করে। কেউ তাকে গালি দিলে বা তার সঙ্গে ঝগড়া করলে, সে যেন বলে, আমি রোজাদার ব্যক্তি।’

রমজান মাসে মুসলিমের জন্য বিভিন্ন ধরনের দয়া ও অনুগ্রহের বিশেষ প্রশিক্ষণ রয়েছে। এ মাসে দানখয়রাতের ফজিলত, রোজাদারের মর্যাদা, ক্ষুধার্তকে আহার করানো ও অভাবীর প্রয়োজন পূরণ করা বিষয়ে যেসব কথা বর্ণিত আছে, সেগুলো দয়া ও অনুগ্রহ প্রদর্শনের সুস্পষ্ট উদাহরণ। এর দ্বারা মুসলিম ব্যক্তি স্মরণ করে ও শিক্ষা লাভ করে, দয়া বিষয়টি সর্বোচ্চ অর্থে তার যাবতীয় রূপ, সব ধরনের পন্থা ও সবচেয়ে সুন্দর পদ্ধতিসহ একটি মহান চরিত্র ও গুণ। মুসলিমের উচিত ও কর্তব্য হলো প্রত্যেক মুহূর্তে ও প্রতিটি আচার-আচরণে দয়ার গুণে ভূষিত হওয়া। আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর তাদের মাঝে এমন লোক আছে, যারা ঈমান এনেছে, পরস্পর ধৈর্যের উপদেশ দিয়েছে এবং পরস্পর দয়া প্রদর্শনের উপদেশ দিয়েছে।’ (সূরা বালাদ : ১৭)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘পরস্পর দয়া দেখানো, ভালোবাসা ও সহানুভূতি প্রকাশের ক্ষেত্রে মোমিনদের তুমি একটি দেহের মতো দেখতে পাবে।

তাদের একটি অঙ্গ আক্রান্ত হলে গোটা দেহটাই বিনিদ্র থেকে ও উত্তাপ অনুভব করে তার ডাকে সাড়া দেবে।’ (বোখারি ও মুসলিম)। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘দয়াকারীদের আল্লাহ দয়া করেন। যারা পৃথিবীতে আছে তোমরা তাদের প্রতি দয়া কর, তাহলে যিনি আকাশে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।’ (বোখারি ও মুসলিম)। সৃষ্টির প্রতি দয়া দেখানো একটি মহৎ গুণ ও সেটি রোজাসহ যাবতীয় ইবাদতের অন্যতম একটি উদ্দেশ্য। আল্লাহ বলেন, ‘আমি আপনাকে সারা বিশ্বের জন্য রহমত ও দয়াস্বরূপই প্রেরণ করেছি।’ (সূরা আম্বিয়া : ১০৭)। আল্লাহ তাঁর নবীর গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘তিনি মোমিনদের প্রতি দয়াশীল ও সহানুভূতিশীল।’ (সূরা তওবা : ১২৮)।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘বলা হলো, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি মোশরেকদের বিরুদ্ধে বদদোয়া করুন, তখন তিনি বললেন, আমি অভিশম্পাতকারী হিসেবে প্রেরিত হইনি। আমি তো রহমতস্বরূপই প্রেরিত হয়েছি।’ (মুসলিম)।
রমজান মাস ও হজের মতো কিছু ইবাদত হলো মানুষের সম্মেলন ও যোগাযোগের ক্ষেত্র। তারা ফরজ নামাজ, তারাবি, ইফতার ইতিকাফ ও ওমরায় সমবেত হয়ে থাকে। তাই এসব ক্ষেত্রে করণীয় হলো পরস্পর দয়া প্রদর্শন, উষ্ণ মনোভাব, প্রশান্তি, স্থিতিশীলতা, সুন্দরের চর্চা ও অন্যান্য মহৎ আচরণের সর্বোচ্চ সুন্দর দিকগুলো প্রকাশ করা। যেগুলো এ মহান ধর্মের মহত্ত্ব ও সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলে। নবী করিম (সা.) সতর্ক করে দিয়েছেন, জীবনের সব কর্মকা-ে ও প্রত্যেক ক্ষেত্রে আমাদের আচরণ ও ব্যবহার যেন এসব সুন্দর গুণাবলি ও মহৎ মূল্যবোধ থেকে বিচ্ছিন্ন না থাকে।

তিনি বলেছেন, ‘যে মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন না।’ (বোখারি ও মুসলিম)। মুসলিম যখন তার আচরণে ও সম্পর্কের ক্ষেত্রে এসব সুন্দর বৈশিষ্ট্য থেকে দূরে সরে যাবে, তখন সে দুর্ভোগ ও যাতনায় পতিত হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘দুর্ভাগা লোক থেকেই দয়াকে সরিয়ে দেওয়া হয়।’ (তিরমিজি)। তাই আমরা ছোটকে দয়া করব, বড়কে শ্রদ্ধা করব, দুর্বল অভাবী লোককে সাহায্য করব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের দয়া করে না ও আমাদের বড়দের সম্মান বজায় রাখে না, সে আমাদের অনুসারী নয়।’ (আহমাদ ও তিরমিজি)। হে ইমাম সাহেবরা, আপনারা রহমত, দয়া বা অনুগ্রহের বিষয় স্মরণ করুন। আপনাদের নামাজ, তাহাজ্জুদ, রমজানের তারাবিতে লোকদের এ বিষয়ে উপদেশ দিন। যথাসম্ভব সুন্নতের প্রতি যত্মশীল হোন। দোয়ায়ে কুনুতের ক্ষেত্রে বেশি দীর্ঘতা পরিহার করুন। কারণ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ লোকদের নিয়ে নামাজ পড়লে সে যেন সহজ করে, কেননা মানুষের মাঝে দুর্বল, রোগী ও অভাবী লোক আছে।’ (বোখারি ও মুসলিম)।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি নামাজে দাঁড়িয়ে তা অনেক দীর্ঘ করতে ইচ্ছা করি, পরে বাচ্চার কান্না শুনি; তাই আমি আমার নামাজ সংক্ষেপ করি, বাচ্চার মাকে আমি কষ্ট দিতে অপছন্দ করার কারণে।’ (বোখারি ও মুসলিম)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকের রাতগুলোতে এত বেশি চেষ্টা-সাধনা করতেন, যা অন্য সময়ে করতেন না। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘শেষ দশক এলে রাসুলুল্লাহ (সা.) রাত জেগে ইবাদত করতেন, নিজের পরিবারকে জাগাতেন এবং যারপরনাই চেষ্টা-সাধনা করতেন।’ (বোখারি ও মুসলিম)। তাই আপনারা আপনাদের দিন-রাতের সময়গুলোকে কল্যাণকর কাজ দ্বারা জীবন্ত করুন। সৎকাজে প্রতিযোগিতা করুন। তাহলে আসমান ও জমিনে রবের সন্তোষ অর্জন করবেন।

১৯ রমজান ১৪৪০ হিজরি মসজিদে নববির জুমার খুতবার সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর করেছেন মাহমুদুল হাসান জুনাইদ।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

রোজা চরিত্র ও মূল্যবোধের শিক্ষা দেয়

আপডেট টাইম : ০৮:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ মে ২০১৯

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ রমজান মাসের রোজায় রয়েছে মানুষকে বিভিন্ন নিকৃষ্ট কর্ম থেকে দূরে থাকা ও মনকে যাবতীয় মন্দ বিষয় এবং কুৎসিত আচরণ থেকে বিরত রাখার শিক্ষা ও অনুশীলন ইসলামে চারিত্রিক মূল্যবোধ ও মহৎ গুণাবলির বিশেষ কদর এবং বিরাট মর্যাদা রয়েছে। সুন্দর চরিত্র ও ভালো স্বভাবের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে শরিয়তে লাগাতার অনেক বক্তব্য এসেছে। সর্বশ্রেষ্ঠ মানব মুহাম্মদ (সা.) এর বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।’ (সূরা কলম : ৪)। শরিয়ত কর্তৃক প্রবর্তিত বিভিন্ন বৈচিত্র্যপূর্ণ ইবাদতের আনুষঙ্গিক উদ্দেশ্যাবলি ও তার বিপুল লক্ষ্যের মাঝে এমন অনেক কিছুই আছে, যা মুসলিমকে মহৎ চরিত্রে ভূষিত হতে ও উন্নত আদর্শে সজ্জিত হতে প্রেরণা দেয়। যাতে সামগ্রিকভাবে সমাজ জীবনটা একটা মহৎ নৈতিক গুণাবলিসম্পন্ন ও সুন্দর স্বভাবধারী সংগঠিত দলের রূপ পরিগ্রহ করতে পারে। যা তাকে একটি সুখী উন্নত সমাজে পরিণত করবে। সেখানে যাবতীয় মহৎ বৈশিষ্ট্য ও সবধরনের উত্তম চরিত্র সুবাস ছড়াবে।

রমজান মাসে এমন কিছু ইবাদত-বন্দেগি আছে, যা মনকে পরিশীলিত করে ও পরিশুদ্ধ করে। অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে মার্জিত করে ও সংশোধন করে। ফলে গোটা মুসলিম সমাজ এমন প্রশিক্ষণ পায়, যা তাকে শ্রেষ্ঠ আদর্শ ও মহৎ মূল্যবোধের দিকে পরিচালিত করে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন সবচেয়ে মহানুভব মানুষ। রমজান মাসে যখন তাঁর সঙ্গে জিবরাইল (আ.) এর সাক্ষাৎ হতো, তখন তিনি আরও বেশি মহৎ হয়ে ওঠতেন। রমজানের প্রত্যেক রাতে জিবরাইল তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কোরআনের পাঠ-পর্যালোচনা করতেন। তখন আল্লাহর রাসুল (সা.) মুক্ত বাতাসের চেয়েও বেশি কল্যাণের বাহক ও মহৎ হয়ে যেতেন।’ (বোখারি ও মুসলিম)। মহত্ত্ব এমন ব্যাপক তাৎপর্যবাহী একটি বিষয়, যা যাবতীয় উন্নত গুণাবলি, ভালো স্বভাব ও সুন্দর চরিত্রকে ধারণ করে।

রমজান মাসের রোজায় রয়েছে মানুষকে বিভিন্ন নিকৃষ্ট কর্ম থেকে দূরে থাকা ও মনকে যাবতীয় মন্দ বিষয় এবং কুৎসিত আচরণ থেকে বিরত রাখার শিক্ষা ও অনুশীলন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে লোক মিথ্যা কথা বলা ও তদনুযায়ী কাজ করা ছাড়তে পারেনি তার পানাহার বর্জন করার কোনো প্রয়োজন আল্লাহর কাছে নেই।’ (বোখারি)।
এ পরিপ্রেক্ষিতে এ দৃষ্টিকোণ থেকে জাবের (রা.) বলেন, ‘তুমি যখন রোজা রাখবে, তখন যেন তোমার কান, চোখ ও জিহ্বা মিথ্যা ও অন্যায় থেকে বিরত থাকে। তুমি কাজের লোককে কষ্ট দিও না। তোমার রোজা রাখার দিনে তোমার মধ্যে যেন একটা গাম্ভীর্য ও প্রশান্তির ভাব থাকে।’ এ কথার উদ্দেশ্য হলো সবসময় ধারাবাহিক এসব ভালো কাজে অবিচল থাকা ও মহৎ চরিত্রের পথে চলতে যাত্রা অব্যাহত রাখা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ নিজের রোজা রাখার দিনে যেন অনৈতিক কাজ না করে, চিল্লাচিল্লি না করে। কেউ তাকে গালি দিলে বা তার সঙ্গে ঝগড়া করলে, সে যেন বলে, আমি রোজাদার ব্যক্তি।’

রমজান মাসে মুসলিমের জন্য বিভিন্ন ধরনের দয়া ও অনুগ্রহের বিশেষ প্রশিক্ষণ রয়েছে। এ মাসে দানখয়রাতের ফজিলত, রোজাদারের মর্যাদা, ক্ষুধার্তকে আহার করানো ও অভাবীর প্রয়োজন পূরণ করা বিষয়ে যেসব কথা বর্ণিত আছে, সেগুলো দয়া ও অনুগ্রহ প্রদর্শনের সুস্পষ্ট উদাহরণ। এর দ্বারা মুসলিম ব্যক্তি স্মরণ করে ও শিক্ষা লাভ করে, দয়া বিষয়টি সর্বোচ্চ অর্থে তার যাবতীয় রূপ, সব ধরনের পন্থা ও সবচেয়ে সুন্দর পদ্ধতিসহ একটি মহান চরিত্র ও গুণ। মুসলিমের উচিত ও কর্তব্য হলো প্রত্যেক মুহূর্তে ও প্রতিটি আচার-আচরণে দয়ার গুণে ভূষিত হওয়া। আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর তাদের মাঝে এমন লোক আছে, যারা ঈমান এনেছে, পরস্পর ধৈর্যের উপদেশ দিয়েছে এবং পরস্পর দয়া প্রদর্শনের উপদেশ দিয়েছে।’ (সূরা বালাদ : ১৭)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘পরস্পর দয়া দেখানো, ভালোবাসা ও সহানুভূতি প্রকাশের ক্ষেত্রে মোমিনদের তুমি একটি দেহের মতো দেখতে পাবে।

তাদের একটি অঙ্গ আক্রান্ত হলে গোটা দেহটাই বিনিদ্র থেকে ও উত্তাপ অনুভব করে তার ডাকে সাড়া দেবে।’ (বোখারি ও মুসলিম)। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘দয়াকারীদের আল্লাহ দয়া করেন। যারা পৃথিবীতে আছে তোমরা তাদের প্রতি দয়া কর, তাহলে যিনি আকাশে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন।’ (বোখারি ও মুসলিম)। সৃষ্টির প্রতি দয়া দেখানো একটি মহৎ গুণ ও সেটি রোজাসহ যাবতীয় ইবাদতের অন্যতম একটি উদ্দেশ্য। আল্লাহ বলেন, ‘আমি আপনাকে সারা বিশ্বের জন্য রহমত ও দয়াস্বরূপই প্রেরণ করেছি।’ (সূরা আম্বিয়া : ১০৭)। আল্লাহ তাঁর নবীর গুণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘তিনি মোমিনদের প্রতি দয়াশীল ও সহানুভূতিশীল।’ (সূরা তওবা : ১২৮)।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘বলা হলো, হে আল্লাহর রাসুল, আপনি মোশরেকদের বিরুদ্ধে বদদোয়া করুন, তখন তিনি বললেন, আমি অভিশম্পাতকারী হিসেবে প্রেরিত হইনি। আমি তো রহমতস্বরূপই প্রেরিত হয়েছি।’ (মুসলিম)।
রমজান মাস ও হজের মতো কিছু ইবাদত হলো মানুষের সম্মেলন ও যোগাযোগের ক্ষেত্র। তারা ফরজ নামাজ, তারাবি, ইফতার ইতিকাফ ও ওমরায় সমবেত হয়ে থাকে। তাই এসব ক্ষেত্রে করণীয় হলো পরস্পর দয়া প্রদর্শন, উষ্ণ মনোভাব, প্রশান্তি, স্থিতিশীলতা, সুন্দরের চর্চা ও অন্যান্য মহৎ আচরণের সর্বোচ্চ সুন্দর দিকগুলো প্রকাশ করা। যেগুলো এ মহান ধর্মের মহত্ত্ব ও সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলে। নবী করিম (সা.) সতর্ক করে দিয়েছেন, জীবনের সব কর্মকা-ে ও প্রত্যেক ক্ষেত্রে আমাদের আচরণ ও ব্যবহার যেন এসব সুন্দর গুণাবলি ও মহৎ মূল্যবোধ থেকে বিচ্ছিন্ন না থাকে।

তিনি বলেছেন, ‘যে মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন না।’ (বোখারি ও মুসলিম)। মুসলিম যখন তার আচরণে ও সম্পর্কের ক্ষেত্রে এসব সুন্দর বৈশিষ্ট্য থেকে দূরে সরে যাবে, তখন সে দুর্ভোগ ও যাতনায় পতিত হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘দুর্ভাগা লোক থেকেই দয়াকে সরিয়ে দেওয়া হয়।’ (তিরমিজি)। তাই আমরা ছোটকে দয়া করব, বড়কে শ্রদ্ধা করব, দুর্বল অভাবী লোককে সাহায্য করব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের দয়া করে না ও আমাদের বড়দের সম্মান বজায় রাখে না, সে আমাদের অনুসারী নয়।’ (আহমাদ ও তিরমিজি)। হে ইমাম সাহেবরা, আপনারা রহমত, দয়া বা অনুগ্রহের বিষয় স্মরণ করুন। আপনাদের নামাজ, তাহাজ্জুদ, রমজানের তারাবিতে লোকদের এ বিষয়ে উপদেশ দিন। যথাসম্ভব সুন্নতের প্রতি যত্মশীল হোন। দোয়ায়ে কুনুতের ক্ষেত্রে বেশি দীর্ঘতা পরিহার করুন। কারণ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ লোকদের নিয়ে নামাজ পড়লে সে যেন সহজ করে, কেননা মানুষের মাঝে দুর্বল, রোগী ও অভাবী লোক আছে।’ (বোখারি ও মুসলিম)।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি নামাজে দাঁড়িয়ে তা অনেক দীর্ঘ করতে ইচ্ছা করি, পরে বাচ্চার কান্না শুনি; তাই আমি আমার নামাজ সংক্ষেপ করি, বাচ্চার মাকে আমি কষ্ট দিতে অপছন্দ করার কারণে।’ (বোখারি ও মুসলিম)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকের রাতগুলোতে এত বেশি চেষ্টা-সাধনা করতেন, যা অন্য সময়ে করতেন না। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘শেষ দশক এলে রাসুলুল্লাহ (সা.) রাত জেগে ইবাদত করতেন, নিজের পরিবারকে জাগাতেন এবং যারপরনাই চেষ্টা-সাধনা করতেন।’ (বোখারি ও মুসলিম)। তাই আপনারা আপনাদের দিন-রাতের সময়গুলোকে কল্যাণকর কাজ দ্বারা জীবন্ত করুন। সৎকাজে প্রতিযোগিতা করুন। তাহলে আসমান ও জমিনে রবের সন্তোষ অর্জন করবেন।

১৯ রমজান ১৪৪০ হিজরি মসজিদে নববির জুমার খুতবার সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর করেছেন মাহমুদুল হাসান জুনাইদ।