বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ সাহাবায়ে কেরামের অবস্থা তো এমনই ছিল, তারা প্রিয় নবীজি (সা.) এর অনুসরণ করতে গিয়ে নিজেদের জানমাল, কামনা-বাসনা, ইচ্ছা-আগ্রহ সবকিছু বিসর্জন দিতে সদাসর্বদা প্রস্তুত থাকতেন। নিজেদের প্রতিটি পদক্ষেপ যেন প্রিয় নবীজির আদর্শের অনুগামী হয় সেজন্য সবসময় সচেষ্ট থাকতেন। এ বিষয়ে তাদের গভীর আবেগের একটি নমুনা দেখুন রাসুলুল্লাহ (সা.) একদিন জুমার নামাজের খুতবার জন্য মসজিদে গেলেন।
মিম্বরে বসে তিনি দাঁড়িয়ে থাকা সবাইকে সম্বোধন করে বললেন, তোমরা বসে যাও। ঘটনাচক্রে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) তখন মসজিদে আসছিলেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন সবাইকে বসে যেতে বললেন, তিনি তখন মসজিদের দরজায়। প্রিয় নবীজির মুখ থেকে বসে পড়ার কথা শোনামাত্র তিনি দরজায়ই বসে পড়লেন, এক পা-ও আর সামনে অগ্রসর হলেন না। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর এই সাহাবির আবেগ ও আনুগত্যের প্রশংসা করে তাকে ভেতরে ডেকে নিলেন। (কানজুল উম্মাল, খ. ৭, পৃ. ৩৩৮)।
প্রিয় নবীজি (সা.) এর পবিত্র জীবনের অনুসরণ, তাঁর প্রিয় সুন্নতের অনুসরণ, তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপের অনুসরণে সাহাবায়ে কেরামের আবেগ ও আগ্রহ এতটাই প্রবল ছিল, এ প্রসঙ্গে তারা কারও পক্ষ থেকে কোনো তিরস্কারের ভয় করতেন না। এমনকি চরম বিরুদ্ধ পরিবেশেও তারা নিজেদের আচরণ ও আদর্শের ওপর থাকতেন স্থির অবিচল।
খলিফাতুল মুসলিমিন হজরত ওমর (রা.) হজরত জুসামা ইবনে মুসাহিক (রা.) কে রোমের বাদশাহ হিরাক্লিয়াসের কাছে রাজদূত করে পাঠিয়েছিলেন। তিনি যখন হিরাক্লিয়াসের দরবারে পৌঁছেন তখন তারা তাকে পূর্ণ সম্মানের সঙ্গে স্বর্ণের সিংহাসনে বসান। হজরত জুসামা বলেন, আমি তো প্রথমে খেয়াল করিনি, তাই স্বর্ণের সেই চেয়ারে বসেছিলাম; কিন্তু যখনই আমি তা টের পেলাম, তৎক্ষণাৎ চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম।
হিরাক্লিয়াস আমার এই অবস্থা দেখে হেসে বললেন, আমরা তো সম্মান করতে গিয়েই আপনার জন্য স্বর্ণের চেয়ারের ব্যবস্থা করেছি; আপনি তা থেকে উঠে গেলেন কেন? প্রত্যুত্তরে আমি বললাম, রাসলুল্লাহ (সা.) কে আমি নিজেই বলতে শুনেছি, তিনি এরকম আসনে বসতে নিষেধ করেছেন। (কানজুল উম্মাল, খ. ৭, পৃ. ১৫; আলইসাবা, খ. ২, পৃ. ২২৭)।