বাংলাদেশের মুফতিয়ে আজম, শীর্ষ আলেমে দ্বীন, জামিয়া ইসলামিয়া লালখান বাজার চট্টগ্রামের মুহতামিম ও শায়খুল হাদীস আল্লামা মুফতী ইজহারুল ইসলাম চৌধূরী তাবলীগ নিয়ে বিভ্রান্তি ও সংঘাত সৃষ্টিকারী বাংলাদেশের ১৭জন আলেমকে ওপেন বাহাসের চ্যালেঞ্জ করেছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশের ঐ শীর্ষ ১৭জন আলেম যৌথস্বাক্ষরে বাংলাদেশের আলেমদের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের সাবেক বিচারপতি, শায়খুল ইসলাম মুফতী তাকী উসমানীর কাছে মিথ্যাচারপূর্ণ একটি চিঠি লিখেন। এই চিঠির সত্যতা প্রমাণিত হওয়ার পর তাবলীগের মূলধারার উলামায়ে কেরাম এই মিথ্যাচারিতার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। গত সোমবার প্রায় আড়াই হাজার আহলে হক্ব উলামায়ে কেরামের সামনে মুফতি ইজহার এই ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, “তাবলীগের চলমান সংকটকে আরো গভীর ও সাংঘর্ষিক করে তুলতে বিভিন্ন জেলা ও থানায় ওজাহাতি আলেমরা তাবলীগের আলেমদের সাথে স্থানীয় পর্যায়ে বাহাসের জন্য বরাবরই আহ্বান ও মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালিয়ে আসছেন। তাবলীগের মুরুব্বীদের ইজাজত না থাকায় এবং স্থানীয় সংঘাত এড়িয়ে যাওয়ার স্বার্থে তারা এসব ওজাহাতি আলেমদের সাথে বিতর্কে জড়ান না। তাই আঞ্চলিকভাবে এসব বাহাসের আয়োজন করলে আপনাদের উগ্র আচরণের কারণে পরিস্থিতি সংঘর্ষের রূপ নিবে। তাই আসুন, আমরা জাতীয়ভাবে বসি। একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।”
তার ঘোষণার সাথে সাথে উপস্থিত আড়াই সহস্রাধিক উলামায়ে কেরাম সমস্বরে এই চ্যালেঞ্জের পক্ষে সায় দেন। তারা বলেন, একচেটিয়া মিথ্যাচারের সুযোগ নিয়ে বিপথগামী ওজাহাতি আলেমরা ভূঁইফোঁড় কথার ফাঁকফোঁকড়ে চ্যালেঞ্জের নামে উম্মতকে ধোঁকা দিচ্ছে। তাই জাতীয়ভাবে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়াই বিচক্ষণতার দাবী।
মুফতী ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী একাধিকবার জোর দিয়ে বলেন, তাবলীগের এই সংকট আঞ্চলিক কোন বিষয় নয়। এমনকি এটি শুধু জাতীয় ইস্যুও নয়। কেবল বাংলাদেশেরও নয়। এটি আলমী তথা আন্তর্জাতিক একটি সংকট। এই সঙ্কটের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে ‘আমীর ও আলমী শূরা’র বিরোধপূর্ণ মূলনীতি। যা খুব সহজেই মিমাংসাযোগ্য। কিন্তু বাংলাদেশে এটিকে পরিকল্পিতভাবে ‘আলেম ও আওয়াম’ নামে মিথ্যাচার করে সংঘাতের ক্ষেত্র বানানো হয়েছে। এখন তাবলীগের সাথে আপনাদের এই দ্বন্দ একটি জাতীয় সমস্যায় রূপ নিয়েছে। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। আপনাদের উস্কানীমূলক বক্তব্যের ফলে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংঘাত ও গৃহবিবাদ ছড়িয়ে পড়ছে। দেশ ও ইসলামের স্বার্থে এর সমাধান হওয়া দরকার। আপনাদের ওপেন চ্যলেঞ্জ করলাম। সত্যবাদী হলে আমাদের সাথে আলোচনায় বসুন।
তিনি চ্যালেঞ্জবার্তায় আরো বলেন, আপনারা বিশ্বআমীর হযরতজী মাওলানা সাদ কান্ধালভীকে নিয়ে যেসব মিথ্যা কথা বলে জনগণকে তাবলীগের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে উত্তেজিত করার চেষ্টা করছেন, যদি বাহাসে বসে এসব কথা সত্য প্রমাণ করতে পারেন তাহলে মুচলেকা দিয়ে বাংলাদেশ থেকে চলে যাবো।
তিনি আরো বলেন, আপনাদের এই ১৭জনের সাথে আমরা মূলধারার ১৭জন আলেম বসব। স্থান হবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এর চত্ত্বর। বিচারক থাকবেন, দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম মাওলানা আবুল কাসেম নুমানী, মাওলানা আরশাদ মাদানী (যেহেতু তাদের নাম ব্যবহার করেই আপনারা এসব মিথ্যাচার করছেন) ও মুফতী ত্বাকী উসমানী। অতিথি হিসাবে রাখতে হবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ধর্মমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ ও সকল বাহিনীর প্রধানগণ। অনুষ্ঠান মিডিয়ায় সরাসরি লাইভ হবে। অডিও/ভিডিও রেকর্ড হবে ও আলোচ্যবিষয় নিদৃষ্ট থাকবে।
মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরীর ব্যক্তিগত সহকারী আজ শুক্রবার এই প্রতিবেদককে বলেন, চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার পর ৩দিন অতিবাহিত হয়ে গেলো। কিন্তু ওজাহাতীদের পক্ষ থেকে চ্যালেঞ্জ গ্রহণের ব্যপারে কোন তৎপরতা দেখা যায় নি। যা তাদের দেওলিয়াত্ব প্রমাণ করে।
যে ১৭জন আলেমকে এই ওপেন বাহাসের চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে তারা হলেনঃ
(উল্লেখ যে এই ১৭জন আলেমই মুফতী ত্বাকী উসমানী সাহেবের কাছে স্বাক্ষর করে চিঠি লিখে বাংলাদেশের তাবলীগ সংকট নিয়ে মিথ্যাচার করেছেন)
১. হযরত মাওলানা আহমদ শফী সাহেব
২. হযরত মাওলানা আশরাফ আলী সাহেব
৩. হযরত মাওলানা নূর হুসাইন কাসেমী সাহেব
৪. হযরত মাওলানা আনোয়ার শাহ সাহেব
৫. হযরত মাওলানা মুফতি ওয়াক্কাস সাহেব
৬. হযরত মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরী সাহেব
৭. হযরত মাওলানা সাজিদুর রহমান সাহেব
৮. হযরত মাওলানা আনাস মাদানী সাহেব
৯. মাওলানা আবদুল কুদ্দুস সাহেব
১০. মাওলানা মুফতি ফয়যুল্লাহ সাহেব
১১. মাওলানা আবদুল কুদ্দুস সাহেব
১২ হযরত মাওলানা মাহফুযুল হক সাহেব
১৩. হযরত মাওলানা নূরুল আমীন সাহেব
১৪. হযরত মাওলানা শেখ আহমদ সাহেব
১৫. হযরত মাওলানা মুফতী মীযানুর রহমান সাঈদ সাহেব
১৬. হযরত মাওলানা মুফতি আরশাদ রহমানী সাহেব
১৭.হযরত মাওলানা মুফতি রূহুল আমীন ফরীদপুরী সাহেব