বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। ২২ গজে তার চলার পথ বেশ মসৃণ। ২০০৭ সালের ২৫ জুলাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় টাইগার ক্রিকেটের এই সারথির। দেখতে দেখতে ক্যারিয়ারের দশম বছরে পা ফেলতে যাচ্ছেন সবার ‘প্রিয়’ মাহমুউল্লাহ। চলতি মাসের ২৫ জুলাই পূর্ণ হবে বাংলাদেশ দলের সাইলেন্ট কিলার খ্যাত মাহমুদউল্লাহর বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের দশ বছর।
দীর্ঘ এই পথ পরিক্রমায় অসংখ্য বাধা-বিপত্তির সঙ্গে লড়াই করেছেন মাহমুদউল্লাহ। কখনো উচ্ছ্বাস, কখনো হতাশা নিয়ে লাল-সবুজের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। বাংলাদেশ দলের মিডল অর্ডারে মাহমুদউল্লাহ আজ স্বস্তির নাম। যে নাম জপে বিজয়ের কেতন উড়ায় এ দেশের লক্ষ-কোটি ক্রিকেটপ্রেমী। ভালোবাসার পাত্র তিনি, বাহবা পাওয়ার যোগ্য তিনি, তাইতো পাগল সমর্থকরা তাকে নিয়ে আশার ভেলা ভাসান। কারণ দুর্দিনে তিনিই বাংলাদেশ দলের কান্ডারি।
২০০৭, দেশের হয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলবেন মাহমুদউল্লাহ। মনটা যেমন খুশি, তেমন ভয় ভয় ভাব। ‘কি জানি কি হয়, তাই মনে লাগে ভয়’ এমন মন্ত্র পাঠ করতে করতে লঙ্কানদের বিপক্ষে মাঠে নামেন ২১ বছরের তরুণ তুর্কী মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। প্রথম ম্যাচেই সবাইকে চমকে দেন। বল হাতে ২৮ রানে ২ উইকেটের পাশাপাশি করেন ৩৬ রান। ধীরে ধীরে এগোতে থাকে মাহমুদউল্লার ক্রিকেটতরী।
একই বছরে কেনিয়ায় অনুষ্ঠিত চার-জাতি সিরিজ এবং আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্কোয়াডে নাম লেখান মাহমুদউল্লাহ। ২০০৯ সালে গায়ে জড়ান সাদা জার্সি। আর্নোস ভ্যাল স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অনুষ্ঠিত ১ম টেস্টেই তাকে দলে নেয় নির্বাচকরা। আস্থার প্রতিদান দেন রিয়াদ। ক্যারিবীয় দুর্গে একের পর এক আঘাত হানেন মাহমুদউল্লাহ। তুলে নেন সে সময়কার পাঁচ তারকা ট্রাভিস ডাউলিন, ফ্লয়েড ল্যামন্ট রেইফার, চাদউইক ওয়ালটন, অস্টিন এবং ক্রেমার রোচের উইকেট। তৃতীয় বাংলাদেশি বোলার হিসেবে টেস্ট অভিষেকেই পাঁচ উইকেট নিয়ে প্রবেশ করেন রেকর্ডের ঘরে। ২০১৪ সালে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শততম ওডিআইয়ের মাইলফলক স্পর্শ করেন মাহমুদউল্লাহ। দশম বাংলাদেশি হিসেবে এ মর্যাদার আসনে বসেন তিনি।
বিশ্বমঞ্চেও মাহমুদউল্লাহর দাপট টের পেয়েছে ক্রিকেট বিশ্ব। ২০১৫ বিশ্বকাপে অ্যাডিলেড ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি হাঁকান তিনি। সেই সুবাদে বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে শতকের গৌরব অর্জন করেছেন মাহমুদউল্লাহ। ১৩ মার্চ সেডন পার্কে আবারও রিয়াদ ঝলক। গ্রুপ পর্বে দলের সর্বশেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ১২৮ রানের ইনিংস খেলেন মাহমুদউল্লাহ। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আরও ধারালো মাহমুদউল্লাহর ব্যাট। এখন পর্যন্ত ৫৮ ম্যাচে ৮১০ রান, সঙ্গে ২২ উইকেট। প্রথমবারের মত আইসিসি অলরাউন্ডার র্যাঙ্কিংয়ে পাঁচ নম্বর স্থান দখল করেছেন মাহমুদউল্লাহ।
চলতি বছরেও রিয়াদ আছেন ফর্মের তুঙ্গে। এখন অবধি ওয়ানডেতে ১১ ম্যাচের ৯ ইনিংসে ব্যাটিং করেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। সর্বশেষ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১০২ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন তিনি। এ বছর তার ব্যাটিং গড় ৭৪.২৫। রয়েছে ১টি করে শতক এবং অর্ধশতক। মাঝে কয়েকদিন ফর্মে ছিলেন না মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মতো বড় আসরে ঠিকই জ্বলে উঠেছে তার ব্যাট।
সামনে বড় দুইটি সিরিজ-অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে টেস্ট আর সাউথ আফ্রিকায় পূর্ণাঙ্গ সফর। কেমন করবেন বাংলাদেশ দলের এই অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার। ভক্তরা তার থেকে ভালো কিছুই আশা করছেন। রবিন মাওয়া, রিয়াদের বড় একজন ফ্যান। প্রিয় ক্রিকেটারকে নিয়ে তার আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন। ‘সামনে অস্ট্রেলিয়া ও সাউথ আফ্রিকা সফর। আপনার কাছ থেকে ভালো ইনিংসের আশায় রইলাম। বাংলাদেশকে ২০১৯ বিশ্বকাপ জেতাতে আপনিই আমাদের মূল ভরসা।’
কাগজে-কলমে মাহমুউল্লাহ
ম্যাচ রান সর্বোচ্চ গড় শতক অর্ধশতক
টেস্ট ৩৩ ১৮০৯ ১১৫ ৩০.১৫ ১ ১৩
ওয়ানডে ১৪৫ ৩১৫৫ ১২৮ ৩৪.৬৭ ৩ ১৭
টি-টোয়েন্টি ৫৮ ৮১০ ৬৪ ২০.২৫ ০ ৩