বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ বাংলাদেশ থেকে যে কয়টি দেশে সহজেই যাওয়া যায় তার মধ্যে থাইল্যান্ড একটি। থাইল্যান্ড দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি রাষ্ট্র। রাজধানীর নাম ব্যাংকক। ১৭৮২ সালে রাজা প্রথম রাম চাকরি সাম্রাজ্যের রাজধানী হিসেবে ব্যাংককে বেছে নেন প্রবাসীরা। থাইল্যান্ডের মধ্যভাগে রয়েছে একটি বিস্তীর্ণ উর্বর সমভূমি। এই সমভূমির মধ্য দিয়ে দেশের প্রধান নদী চাও ফ্রায়া এবং এর শাখানদী ও উপনদীগুলি প্রবাহিত হয়েছে। থাইল্যান্ডের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ থাই জাতির মানুষ অনেক বেশী। থাইল্যান্ডে বসবাসকারী অন্যান্য জাতির মধ্যে আছে চীনা, মালয় ও আদিবাসী পাহাড়ি জাতি, যেমন মং ও কারেন ভারতীয়। কৃষিপ্রধান দেশ হলেও ১৯৮০-র দশক থেকে থাইল্যান্ডের অর্থনীতির দ্রুত উন্নতি ঘটছে। থাইল্যান্ডে আন্ডারওয়ার না পরে বাইরে যাওয়া আইনত দণ্ডনীয়। আবার কোমরের ওপর খোলা শরীর নিয়ে গড়ি চালানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের গভর্নর জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন। কিন্তু থাইল্যান্ডের বাকী ৭৫টি প্রদেশের গভর্নর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নিযুক্ত হন। থাইল্যান্ডের ভিসা দেয়া হয় গুলশান স্টার সেন্টারে ভিএফএসের মাধ্যমে। দেশটার অর্থনীতিই দাঁড়িয়ে আছে পর্যটনের উপর। স্রেফ পর্যটনের উপর ভর করে কীভাবে একটা দেশের অর্থনীতি চলতে পারে, তা না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। দুহাজার আটার সালে থাইল্যান্ডে ঘুরতে আসা মোট বিদেশি পর্যটকের প্রায় তিরিশ শতাংশই ভারতীয়ও বাংলাদেশী কিছু অংশ। ইমিগ্রেশনের ঝামেলা মিটিয়ে বিমানবন্দরের বাইরে পা রাখলেই মনে হবে পৌঁছে গেছেন ইউরোপের কোনও শহরে। ঝকঝকে রাস্তা, ঝাঁ-চকচকে আকাশছোঁয়া বহুতল। অফিস বা বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে যেসব ফুটপাথ ফাকা, রাতে সেগুলো জমজমাট বাজার হয়ে যায়, চেনাই যায়না যে দিনে এলাকাটা এত ফাকা ছিল। এগুলো মূলতঃ নাইট বাজার। তবে রাত্রে বেলা চলাফেরা খুব মজা।
ব্যাংককে ফুটপাথের অন্যতম আকর্ষণ স্ট্রিট ফুড স্টল। দু-পা অন্তর চোখে পড়বে হরেক রকমের থাই-ফুডের পসরা। বেশির ভাগ স্ট্রিট ফুড বিক্রেতাই ইংরেজি জানেন না। পাহাড়, সমুদ্র ঘেরা ছোট্ট শহর পাটায়া। শহর ছোট হলেও, এর আকর্ষণ অপরিসীম। পর্যটকদের জন্য স্থানীয় গাইডদের পরামর্শ, সামলে রাখুন নিজের পাসপোর্ট এবং পকেট। বিপদ আসতে পারে যেকোনও সময়ে। রাতে পায়ে হেঁটে ব্যাংককে, পাটায়ায় ঘুরতে হলে সঙ্গে প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা রাখবেন না। এমনটাই পরামর্শ, স্থানীয় পুলিশ এবং গাইডদের। বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন প্রচুর পরিমান ভ্রমন পিয়াসী মানুষ থাইল্যান্ড ভ্রমনে যান। কেউ যান ব্যবসায়ীক কারনে, কেউবা চিকিৎসার জন্য এবং অনেকেই যান নিছক ভ্রমনের জন্য। ব্যাংকক শহরে বেশ কয়েকটি ব্রীজ আছে।
জানতে পারলাম ২০১০ সালে থাইল্যান্ডে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ রাজনৈতিক সংঘাত হয়। এতে অন্তত ৯০ জন প্রাণ হারায়। থাইল্যান্ডে বাংলাদেশ দুতাবাসের ঠিকানাঃ বাড়ি# ৭২৭, থংগলোর, সই-৫৫, সুলতুম্ভিট রোড, ব্যাংকক-১০১১০, থাইল্যান্ড। ফোনঃ- ৩৯২৯৩৭-৮, ফ্যাক্সঃ-৩৯১৮০৭০ । থাইল্যান্ডের দক্ষিনে মালেশিয়া, পশ্চিম-উত্তরে মায়ানমার, উত্তর-পুর্ব দিকে লাউস এবং দক্ষিন-পশ্চিমে কম্বোডিয়া। জনসংখ্যা- ৬৩,০৩৮,২৪৭ জন। জাতীয় ভাষা ইংরেজী। এখানকার গড় তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। থাইল্যান্ডে সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা যা দর্শকরা উপভোগ করে থাকেন তা হলো থাই কিকবক্সিং (মুয়েই থাই)। থাই কিকবক্সিং এর জন্য প্রতিযোগীদের গ্লাভযুক্ত পা, হাঁটু, কনুই ও মুষ্ঠি ব্যবহার করতে হয়।
১ থাই বাথ = প্রায় ৩ টাকা। অবাক হবেন যে পাতায়ার টুরিস্টের এটলিস্ট ৪০% হলো মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমান বদগুলা। আরব, আমিরাত, দুবাই, ইরাক, ইরান, সুদান, মিশর কোন দেশের লোক নাই! থাইল্যান্ডের সব গুরুত্বপূর্ণ নিদ্দেশিকাগুলো তিন ভাষায় লেখা। এক নাম্বার হলো থাই ভাষা, দুই নম্বর এরাবিক ভাষা, তিন নম্বর হলো ইংরেজদের ভাষা। ভ্রমণপিপাসুদের ভ্রমণের জন্য অতি আদর্শ একটি দেশ। পাতায়ায় মাদাম তুসুর অনুকরণে মোমের তৈরি সেলিব্রেটিদের একটি গ্যালারিও আছে। যেখানে বারাক ওবামা, মহাত্মা গান্ধী, মাও সে তুং, ডায়নাসহ প্রায় ১০০ জন সেলিব্রেটি আছেন। থাইল্যান্ড বস্তুত গৌতম বুদ্ধের দেশ। অসংখ্যক ছোট বড় বৌদ্ধ মুর্তি দিয়ে পুরো দেশ ভর্তি। বুদ্ধ ও রাজার প্রতি তাদের অকৃত্রিম ভক্তি-শ্রদ্ধা। একেবারে অন্তরের অন্তস্থল থেকে। ধর্ম নিয়ে তাদের কোন হানাহানি, বিবাদ/ মতভেদ নেই।
ট্যুর অপারেটর বা রাজধানী ব্যাংকক থেকে মাত্র ২০০ কিলোমিটার দূরে পাতায়া। পাতায়া থেকে সমুদ্রের ভেতরে তাকালেই দেখা যায় অসংখ্য কোরাল দ্বীপ। পাতায়ায় রয়েছে অসংখ্য হোটেল, রিসোর্ট, রেস্ট হাউস। খাবার হোটেল নিয়েও ভাবতে হবে না। বেশ কয়েকটি বাংলা-ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে। টাকি ভর্তা থেকে শুরু করে নানা স্বাদের সামুদ্রিক মাছও পাওয়া যায়। আবাসিক হোটেলগুলোতে ভাড়া খুবই কম। এসি ডাবল বেডের রুম পাওয়া যায় মাত্র ১৩০০ বাথে [বাংলাদেশি টাকায় আনুমানিক ৪ হাজার টাকা]।
ব্যাংককের আসল নাম ক্রুং থেপ বা দেবদূতের শহর। আত্বিকভাবে, বাহ্যিকভাবে এবং প্রতীকিভাবেও এখানকার মানুষ তাই বিশ্বাস। আপনি যখন এখানে প্রথম আসবেন আপনার মনে ব্যাংকক একটা আধুনিক মহানগরী হিসেবে ছাপ ফেলতে পারে গগনচুম্বী অট্টালিকা, কনডোজ, হোটেল, দোকান-পাট এবং আধুনিক শপিং মলের ছড়াছড়ি দেখে। এটা ব্যাংককের মাত্র একটি আকর্ষণীয় দিক। এই শহর সত্যিই প্রাচ্যের একটি বিচিত্র শহর। এই শহর সত্যিই প্রাচ্যের একটি বিচিত্র শহর। ব্যাংকক একটা উন্নত শহর হয়েও এর জনগন কখনো নিজেদের ঐতিহ্যগত দিকটি ভুলতে পারেন না যার কারণে ব্যাংকক একটা চমতকার শহর হিসেবে বিবেচিত। চারশ বিভিন্ন বৌদ্ধ মন্দিরের প্রতিটির চমতকারিত্ব আপনাকে জানিয়ে দেবে এর শিল্পোতকর্ষতা।