বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিং ভোটিং মেশিন (ইভিএম) জোর করে চাপিয়ে দেয়া ঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশন এটিএম শামসুল হুদা। তিনি বলেন, ইভিএমের জন্য তাড়াহুড়ার কিছু নেই। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে এটি ব্যবহার করে সকলের মধ্যে বিশ্বাস স্থাপন করে জাতীয় নির্বাচনে পরীক্ষামুলকভাবে ইভিএম ব্যবহার করা যেতে পারে।
বুধবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর র্যাডিশন হোটেলে ফোরাম অব ইলেশন ম্যানেজমেন্ট বডিস অব সাউথ এশিয়া (ফেমবোসা) এর নবম সম্মেলন চলাকালে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
ইভিএম বিষয়ে তিনি বলেন,তাদের সময় চালু হওয়া ইভিএমের ধারাবাহিকতা থাকলে আজকের বিতর্কের জন্ম নিতো না মন্তব্য করে শামসুল হুদা বলেন, আমরা ইভিএম চালু করেছিলাম। কিন্তু তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়নি। আমাদের পরের কমিশন এটাকে কোলস্টরেজের মধ্যে ফেলে রাখল। আবার এই কমিশন চালু করেছে। আমরা যেটা শুরু করেছিলাম তার ধারবাহিকতা রাখা হলে এখন কোন অসুবিধা হতো না।
জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম বিতর্কের প্রশ্নে তিনি বলেন, এখন ইভিএম নিয়ে যে বিতর্কতা চলছে। এটা দেখে মনে হচ্ছে আমাদের সিদ্ধান্তটাই সঠিক ছিলো। আমরা বলেছিলাম আমরা ঝট করে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম নিয়ে যাব না। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এটা আমরা প্রথমে পরীক্ষা নিরীক্ষা করবো। স্থানীয় সরকারের কিছু কিছু জায়গায় এটা করবো এবং আমরা সেটা করেও ছিলাম। মানুষ তাতে ইতিবাচকভারো সাড়াও দিয়েছিল।
ইভিএমের মধ্যে কিছু সুবিধা অসুবিধা থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে মেশিনটা উদ্ভাবন করা হলো তাতে আরো কি কি নিরাপত্তা সংযুক্ত করা যায়- আরো কীভাবে তা উন্নতি করা যায়-এবং সমস্ত রাজনৈতিক দল যখন বিশ্বাস আনবে, সবাই যখন বলবে ঠিক আছে তখনই জাতীয় নির্বাচনে এর ব্যবহার করা উচিত।
ইভিএম কারো ওপর চাপিয়ে দেয়া ঠিক হবে না মন্তব্য করে তিনি আরো বলেন, এত তাড়াহুড়ার কি আছে। তাড়াহুড়ার তো কিছু নেই। এখনো এটি পুরোপুরিভাবে পরীক্ষা করা হয়নি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে আরো ব্যবহার করা উচিত। তারপর সেটা মনিটর করে, তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে কী হয়েছে কী সুবিধা অসুবিধা যাচাইবাছাই করে নিরবিচ্ছিন্নভাবে প্রযুক্তির উন্নয়ন গঠিয়ে কারিগরী ব্যবস্থাপনার আরো উন্নয়ন ঘটিয়ে যখন সফলতা আসবে তখনই জাতীয় নির্বাচনে এর ব্যবহার হবে। আর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একসাথে করা ঠিক নয়। পরীক্ষামুলকভাবে করা যেতে পারে।
জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের জন্য হঠাৎ আরপিও সংশোধন প্রশ্নে সাবেক সিইসি বলেন, এটা নিয়ে এখন মন্তব্য করে লাভ কি? যেকোন উদ্যোগ নেয়ার আগে তা যথোপযুক্ত কী না দেখা উচিত। যারা এটা করছেন এবং যারা ক্ষমতায় আছেন বিষয়টি তাদেরই দেখা উচিত ছিলো। নির্বাচন খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। এটা প্রতিযোগিতার বিষয়। ক্ষমতা দখলের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহন করে। রুলস অব দ্য গেম, লেভেল প্লেইং ফিল্ড এগুলো নিশ্চিত না করলে তো খেলা সমান হবে না। এটা নিশ্চিত করতে হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অংশগ্রহনমুলক নির্বাচনের নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করার দায়িত্ব মুলত সরকারের। সরকারই এটা করবে। তারা না করতে পারলে এটা অবশ্যই অসুবিধার কথা। কী করলে জনগণ আস্থা অর্জন করতে পারে সরকারকেই সেই পদক্ষেপ নিতে হবে।
ফেমবোসা কতটা সফল হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে এই আঞ্চলিক সংগঠনটির উদ্যোক্তা শামসুল হুদা বলেন, ২০১০ সালে ফেমবোসা গঠনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর থেকে ভালো সাড়া পাওয়া যায়। তারপর থেকে পর্যায়ক্রমে এটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়ে আজকে নবম সম্মেলন হচ্ছে। সব দেশ একই ধরনের মানে নির্বাচন করতে পারে না। যারা পারছে না তার পেছনের কারণ কী আর পারলেও কী কারণে সম্ভব হয়েছে। ভালো নির্বাচনের পেছনে কী কী সমস্যা রয়েছে তা রিভিউ করা হচ্ছে এর উদ্দেশ্য ছিলো। এবং আমি মনে করি ফেমবোসা সেই কাজটি করছে। তবে, এটার উদ্দেশ্য করতটা সফল হয়েছে তা অনেক বড় প্রশ্ন।
কারণ নির্বাচনে অনেকগুলো পক্ষ রয়েছে তারা সকলে নিয়ে নিয়ম অনুযায়ী খেলাটা না খেললে কেবল কমিশন একার পক্ষে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশন একা কখনোই ভারো নির্বাচন দিতে পারবে না। আর আমরা এই বিষয়টি ভুলে গিয়ে সবাই কমিশনের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করি। নির্বাচন কমিশন যতই ভালো চেষ্টা করুক রাজনৈতিক দলের ওপর যে দায়িত্বটা রয়েছে তারা যদি তা পালন না করে তাহলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।