ঢাকা , রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এমপিও পাবেন আরও ৪৩১২টি ইবতেদায়ি শিক্ষকরা

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ নয় বছর পর বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত হচ্ছেন। এ সংখ্যা অন্তত তিন হাজার। নীতিমালায় নেই তবু এমপিও পাবেন আরও ৪৩১২টি ইবতেদায়ি মাদ্রাসার সাড়ে ২১ হাজার শিক্ষক। এই শিক্ষকরা এমপিওভুক্তির জন্য প্রায় তিন যুগ ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন। এ ছাড়া বেসরকারি শিক্ষকদের বৈশাখী ভাতা এবং ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের স্বীকৃতিও মিলেছে প্রস্তাবিত বাজেটে। ইতঃপূর্বে তারা এই দুই সুবিধা পেয়েছেন বিশেষ বরাদ্দের আওতায়।

এবারের বাজেটে মানসম্মত শিক্ষার ব্যাপারেও সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে জাপানের সাবেক সম্রাট মেইজির মতো বিদেশ থেকে শিক্ষক আমদানির ঘোষণাও এসেছে। আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির শিক্ষা (পাঠদান) ও প্রশিক্ষণের জন্যই মূলত এ উদ্যোগ।

এ ছাড়া প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন ও আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির ছোঁয়া দিতে ‘ডিজিটাল প্রাথমিক শিক্ষা’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণের ঘোষণা এসেছে। শিক্ষকদের চলমান দেশি-বিদেশি প্রশিক্ষণও অব্যাহত থাকছে।

এসব কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ৫০ শতাংশ। তবে সার্বিকভাবে এবারের বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ গত বছরের তুলনায় কমেছে। শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এ বরাদ্দের পরিমাণ বাজেটের মাত্র ১০ দশমিক ২৬ শতাংশ।

অথচ চলতি অর্থবছরে (২০১৮-১৯) সংশোধিত বাজেটের ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ ব্যয় হয়েছে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ে।

জানতে চাইলে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য- জাতীয় প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচন, দক্ষতা উন্নয়ন, বেকারত্ব নিরসন তথা সার্বিক উন্নতির মাধ্যমে দেশকে মধ্যম আয়ে পৌঁছানো। এটা করতে গিয়ে সরকার এবারের বাজেটে শিক্ষার জন্য বরাদ্দ করেছে। শিক্ষা বলতে শুধু পুঁথিগত শিক্ষা নয়। এ জন্য মানসম্মত ও কারিগরি শিক্ষার প্রতি জোর দেয়া হয়েছে। শুধু শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ নিয়ে কাজ করছে না। এর বাইরে আরও ২৬টি মন্ত্রণালয় কাজ করছে। শুধু দুটি মন্ত্রণালয়ের দিকে তাকালে বরাদ্দ কমেছে বলে মনে হতে পারে। শিক্ষা নিয়ে কাজ করা সব মন্ত্রণালয়ের বাজেটের দিকে নজর দিলে দেখা যাবে বরাদ্দ শতাংশের হিসাবে গত বছরের চেয়ে অনেক বেড়েছে।’

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবার শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি আলাদাভাবে নিশ্চিত করেছেন। তিনি চান শিক্ষকরা তাদের শতভাগ শিক্ষার জন্য উজাড় করে দেবেন। শিক্ষকরা প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাশা পূরণ করবেন বলে আমাদের প্রত্যাশা।

৪৩১২ ইবতেদায়ি মাদ্রাসা : ১৯৮৪ সালে সরকারি এক সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তারের জন্য দেশে বেসরকারি বিদ্যালয় ও ইবতেদায়ি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা শুরু হয়। এর মধ্যে ২৬ হাজার ১৯৩ প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০১৩ সালে জাতীয়করণ হয়েছে। এর আগে এগুলো ধাপে ধাপে জাতীয় বেতন স্কেলের অধীনে আসে। কিন্তু একই সময়ে অভিন্ন আইনের বলে প্রতিষ্ঠা সত্ত্বেও উপেক্ষিত থাকে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি (যা পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত) মাদ্রাসা। তারা মাত্র ৫শ’ টাকা করে মাসোহারা পেয়ে আসছিলেন।

এমন অবস্থায় ২০১০ সালে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কপাল খোলে। প্রথমে মাসোহারা ১ হাজার টাকা করা হয়। পরে দ্বিতীয় দফায় তা বাড়িয়ে দেড় হাজার টাকা করা হয়। এরপর তৃতীয় দফায় সহকারী শিক্ষকদের (মৌলভী) সম্মানী ২৩শ’ আর প্রধান শিক্ষকদের ২৫শ’ টাকা করা হয়।

এমন পরিস্থিতিতে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের প্রত্যাশা আরও বেড়ে যায়। স্কুলের মতো মাদ্রাসাও জাতীয়করণের জন্য তারা দাবি তোলেন। দাবি আদায়ে সর্বশেষ গত এপ্রিলে আন্দোলনে নামেন তারা। শিক্ষামন্ত্রী তখন প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ওপর আস্থা রেখে ঘরে ফিরে যেতে শিক্ষকদের আহ্বান জানান। সেই আশ্বাস পূরণ হচ্ছে বলে জানা গেছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নতুন ৩ হাজার মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল ও মাদ্রাসা এবং উচ্চ স্তরের কলেজ-মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির বিষয়টি অনুমোদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেগুলোর সঙ্গে ৪৩১২টি ইবতেদায়ি মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত করার সারসংক্ষেপও অনুমোদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

সূত্র আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপিত এ সংক্রান্ত সারসংক্ষেপে বলা হয়, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার আলাদা নীতিমালা-২০১৮ ইতিমধ্যে তৈরি করা হয়েছে। যদিও এমপিও নীতিমালায় স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা অন্তর্ভুক্ত নেই। তবু এ ধরনের প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলে ৩১০ কোটি ৯৭ লাখ ৭১ হাজার ২৮০ টাকা বছরে প্রয়োজন হবে।

এক মাস আগে গত ৮ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ প্রস্তাব চূড়ান্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠায়। প্রধানমন্ত্রী এ প্রস্তাব ১২ জুন অনুমোদন করেন। এর ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের ৫ জন করে শিক্ষকসহ মোট ২১ হাজার ৫৬০ এমপিওভুক্ত হওয়ার পথ সুগম হয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রস্তাব অনুযায়ী শিক্ষকরা মাসিক মাসোহারার পরিবর্তে জাতীয় বেতন স্কেলের বিভিন্ন গ্রেডে বেতন পাবেন। সেই অনুযায়ী মাদ্রাসার প্রধানরা ১১ কোডে ১২ হাজার ৫০০ টাকা করে পাবেন।

এ ছাড়া দেড় হাজার টাকা বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা এবং ২৫শ’ টাকা বৈশাখী ও ৬২৫০ টাকা উৎসব-ভাতা পাবেন। আর মৌলভীরা পাবেন ১৬ কোডে ৯ হাজার ৩শ’ টাকা করে। এ ছাড়া মাসে বেতনের সঙ্গে দেড় হাজার টাকা করে বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা এবং ১৮৬০ টাকা করে বৈশাখী ও ৪৬৫০ টাকা উৎসব-ভাতা পাবেন।

ইবতেদায়ি শিক্ষকদের অধিকার আদায়ে এই আন্দোলন করেছিল বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতি। সমিতির মহাসচিব কাজী মোখলেছুর রহমান শুক্রবার বলেন, ‘২৪ বছর অবহেলিত ও মানবেতর জীবনযাপন করলেও কোনো সরকার নজর দেয়নি। ২০০৯ সালের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাসোহারা বৃদ্ধি করেন। এরপর তিন ধাপে তা বাড়ানোর পর এবার বেতন স্কেলেই এমপিও দেয়ার যে উদ্যোগ নিলেন তা ইতিহাসে অক্ষয় হয়ে থাকবে।’

তিনি প্রধানমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, যেহেতু এমপিও হিসেবে বেতন-ভাতা দেয়া হবে, তাই তাদেরও ওই (এমপিও) নীতিমালায় ঢুকতে হবে। এ জন্য হয়তো ২০১৮ সালের এমপিও নীতিমালা সংশোধন করা হবে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কিছুটা সময় লাগতে পারে। তবে যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন হয়ে গেছে তাই সুবিধা পাওয়া সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

এমপিওভুক্তির তালিকায় সাড়ে ৭ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান : উল্লিখিত ৪৩১২টি মাদ্রাসাসহ মোট সাড়ে ৭ হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবার এমপিওভুক্ত হচ্ছে। এর মধ্যে বাকি ৩ হাজার মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল-মাদ্রাসা, উচ্চস্তরের কলেজ-মাদ্রাসা। এ ছাড়া আছে বিভিন্ন ধরনের কারিগরি প্রতিষ্ঠান।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এমপিওর তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর সারসংক্ষেপ আলাদাভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ। এর মধ্যে কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ-দুই ভাগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা তুলে ধরা হয়েছে। সে অনুযায়ী এমপিওর জন্য সব ধরনের (৪টি) শর্ত পূরণ করা মাদ্রাসা ৪৯৪টি। আর যদি স্বীকৃতির মেয়াদ বিবেচনা করা না হয় তাহলে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৫১টি।

অপরদিকে সব শর্ত বিবেচনায় নিলে এমপিওর জন্য বিবেচনায় আসা কারিগরি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৩৬টি। আর স্বীকৃতির মেয়াদের শর্ত শিথিল করলে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৪৫টি। সারসংক্ষেপে ৮ ধরনের মাদ্রাসা এবং ৬ ধরনের কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে।

অপরদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগও আলাদাভাবে এমপিওভুক্তির তালিকা তৈরি করছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এমপিওভুক্তির চার যোগ্যতার মানদণ্ড পূরণ করে যোগ্য হিসেবে বাছাই তালিকায় ইতিমধ্যে নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল ৬১৫টি, মাধ্যমিক স্কুল ৭৯৮টি, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ৯১টি ও ডিগ্রি কলেজ ৪৪টি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ তালিকায় আরও আছে দাখিল মাদ্রাসা ৩৬২টি, আলিম মাদ্রাসা ১২২টি, ফাজিল মাদ্রাসা ৩৮টি এবং কামিল ২৯টি।

এসবের বাইরে আরও অন্তত ২শ’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষ বিবেচনায় তালিকাভুক্ত করা হবে বলে জানা গেছে। বিশেষ বিবেচনায় হাওর-বাঁওড়, চরাঞ্চল, পাহাড়িসহ দুর্গম এলাকার এবং নারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তালিকায় ঠাঁই পেতে পারে বলে জানিয়েছেন একজন অতিরিক্ত সচিব।

এ ছাড়া যেসব উপজেলা থেকে শর্ত অনুযায়ী কোনো প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত করা যায়নি সেসব উপজেলা থেকেও কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষ বিবেচনায় তালিকাভুক্ত করা হবে। এ লক্ষ্যে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার দু’দিন মন্ত্রণালয়ে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। তবে তালিকা তৈরির কাজ শেষ করতে আরও দু-একটি বৈঠক লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন কমিটির প্রধান অতিরিক্ত সচিব জাভেদ আহমেদ।

এমপিওভুক্তির চার শর্ত হচ্ছে- প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক স্বীকৃতি, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এবং পরীক্ষায় পাসের হার। প্রতিটি মানদণ্ডের জন্য ২৫ নম্বর রাখা হয়।

উল্লেখ্য, এমপিওভুক্তির লক্ষ্যে গত আগস্টে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আবেদন নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তখন ৯ হাজার ৬১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবেদন করেছিল। এসব প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে লাগবে ৪ হাজার ৩৯০ কোটি ১২ লাখ ৫ হাজার টাকা। তবে যোগ্য বিবেচিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে যদি এমপিও দেয়া হয় তাহলে লাগবে ১ হাজার ২০৭ কোটি ৬৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা।

আর স্বীকৃতির মেয়াদ বিবেচনা না করে যদি এমপিও দেয়া হয় তাহলে লাগবে ১ হাজার ২১০ কোটি ৩৭ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। তবে শর্ত শিথিল করে আরও ২শ’ প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দেয়ার চিন্তা থাকায় মন্ত্রণালয় থেকে মোট ১ হাজার ২৪৭ কোটি টাকার প্রয়োজনীয়তার কথা অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।

ইনক্রিমেন্ট ও বৈশাখী ভাতা : শিক্ষকদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বিগত জাতীয় নির্বাচনের আগে শিক্ষকদের ইনক্রিমেন্ট (বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি) সরকারি চাকরিজীবীদের মতোই ৫ শতাংশ বাড়ানো ও বৈশাখী ভাতা দেয়ার আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী। সেটা ইতিমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। কিন্তু এই বাড়তি ব্যয় বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে পরিচালন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। চলতি বাজেটে এই দুই সুবিধার স্বীকৃতি মিলেছে।

ডিজিটাল প্রাথমিক শিক্ষা : আইসিটি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘ডিজিটাল প্রাথমিক শিক্ষা’ শীর্ষক একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। ওই প্রকল্পের আওতায় ৫০৩টি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইন্টারঅ্যাকটিভ ক্লাসরুম তৈরি করা হবে। এ ছাড়া এতে পুরনো অন্যান্য কর্মসূচি চালু করার কথা বলা হয়েছে।

স্কুল ফিডিং : বর্তমানে দেশের কিছু উপজেলায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিস্কুট দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কয়েকটি উপজেলায় দুপুরে রান্না করা খাবারও দেয়া হচ্ছে। এই কর্মসূচি সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ চলছে। এ লক্ষ্যে তৈরি হচ্ছে খসড়া নীতিমালা। সরকারি অর্থায়নে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানা গেছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে এ ব্যাপারেও নির্দেশনা এসেছে। এ ব্যাপারে বলা হয়, স্কুল ফিডিং কার্যক্রমে স্থানীয় ব্যক্তিসহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের (এনজিও) সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি এবং সামগ্রিক কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও সমন্বিতভাবে বাস্তবায়নের জন্য আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে জাতীয় স্কুল ফিডিং নীতি প্রণয়ন করা হবে। যার প্রক্রিয়া চলমান আছে।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

এমপিও পাবেন আরও ৪৩১২টি ইবতেদায়ি শিক্ষকরা

আপডেট টাইম : ০৬:২৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ জুন ২০১৯

বাঙালী কণ্ঠ নিউজঃ নয় বছর পর বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত হচ্ছেন। এ সংখ্যা অন্তত তিন হাজার। নীতিমালায় নেই তবু এমপিও পাবেন আরও ৪৩১২টি ইবতেদায়ি মাদ্রাসার সাড়ে ২১ হাজার শিক্ষক। এই শিক্ষকরা এমপিওভুক্তির জন্য প্রায় তিন যুগ ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন। এ ছাড়া বেসরকারি শিক্ষকদের বৈশাখী ভাতা এবং ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্টের স্বীকৃতিও মিলেছে প্রস্তাবিত বাজেটে। ইতঃপূর্বে তারা এই দুই সুবিধা পেয়েছেন বিশেষ বরাদ্দের আওতায়।

এবারের বাজেটে মানসম্মত শিক্ষার ব্যাপারেও সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে জাপানের সাবেক সম্রাট মেইজির মতো বিদেশ থেকে শিক্ষক আমদানির ঘোষণাও এসেছে। আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির শিক্ষা (পাঠদান) ও প্রশিক্ষণের জন্যই মূলত এ উদ্যোগ।

এ ছাড়া প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন ও আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির ছোঁয়া দিতে ‘ডিজিটাল প্রাথমিক শিক্ষা’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণের ঘোষণা এসেছে। শিক্ষকদের চলমান দেশি-বিদেশি প্রশিক্ষণও অব্যাহত থাকছে।

এসব কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ৫০ শতাংশ। তবে সার্বিকভাবে এবারের বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ গত বছরের তুলনায় কমেছে। শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এ বরাদ্দের পরিমাণ বাজেটের মাত্র ১০ দশমিক ২৬ শতাংশ।

অথচ চলতি অর্থবছরে (২০১৮-১৯) সংশোধিত বাজেটের ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ ব্যয় হয়েছে শিক্ষার দুই মন্ত্রণালয়ে।

জানতে চাইলে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘আমাদের মূল লক্ষ্য- জাতীয় প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচন, দক্ষতা উন্নয়ন, বেকারত্ব নিরসন তথা সার্বিক উন্নতির মাধ্যমে দেশকে মধ্যম আয়ে পৌঁছানো। এটা করতে গিয়ে সরকার এবারের বাজেটে শিক্ষার জন্য বরাদ্দ করেছে। শিক্ষা বলতে শুধু পুঁথিগত শিক্ষা নয়। এ জন্য মানসম্মত ও কারিগরি শিক্ষার প্রতি জোর দেয়া হয়েছে। শুধু শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ নিয়ে কাজ করছে না। এর বাইরে আরও ২৬টি মন্ত্রণালয় কাজ করছে। শুধু দুটি মন্ত্রণালয়ের দিকে তাকালে বরাদ্দ কমেছে বলে মনে হতে পারে। শিক্ষা নিয়ে কাজ করা সব মন্ত্রণালয়ের বাজেটের দিকে নজর দিলে দেখা যাবে বরাদ্দ শতাংশের হিসাবে গত বছরের চেয়ে অনেক বেড়েছে।’

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবার শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি আলাদাভাবে নিশ্চিত করেছেন। তিনি চান শিক্ষকরা তাদের শতভাগ শিক্ষার জন্য উজাড় করে দেবেন। শিক্ষকরা প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাশা পূরণ করবেন বলে আমাদের প্রত্যাশা।

৪৩১২ ইবতেদায়ি মাদ্রাসা : ১৯৮৪ সালে সরকারি এক সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক শিক্ষা বিস্তারের জন্য দেশে বেসরকারি বিদ্যালয় ও ইবতেদায়ি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা শুরু হয়। এর মধ্যে ২৬ হাজার ১৯৩ প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০১৩ সালে জাতীয়করণ হয়েছে। এর আগে এগুলো ধাপে ধাপে জাতীয় বেতন স্কেলের অধীনে আসে। কিন্তু একই সময়ে অভিন্ন আইনের বলে প্রতিষ্ঠা সত্ত্বেও উপেক্ষিত থাকে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি (যা পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত) মাদ্রাসা। তারা মাত্র ৫শ’ টাকা করে মাসোহারা পেয়ে আসছিলেন।

এমন অবস্থায় ২০১০ সালে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কপাল খোলে। প্রথমে মাসোহারা ১ হাজার টাকা করা হয়। পরে দ্বিতীয় দফায় তা বাড়িয়ে দেড় হাজার টাকা করা হয়। এরপর তৃতীয় দফায় সহকারী শিক্ষকদের (মৌলভী) সম্মানী ২৩শ’ আর প্রধান শিক্ষকদের ২৫শ’ টাকা করা হয়।

এমন পরিস্থিতিতে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের প্রত্যাশা আরও বেড়ে যায়। স্কুলের মতো মাদ্রাসাও জাতীয়করণের জন্য তারা দাবি তোলেন। দাবি আদায়ে সর্বশেষ গত এপ্রিলে আন্দোলনে নামেন তারা। শিক্ষামন্ত্রী তখন প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ওপর আস্থা রেখে ঘরে ফিরে যেতে শিক্ষকদের আহ্বান জানান। সেই আশ্বাস পূরণ হচ্ছে বলে জানা গেছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নতুন ৩ হাজার মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল ও মাদ্রাসা এবং উচ্চ স্তরের কলেজ-মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির বিষয়টি অনুমোদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেগুলোর সঙ্গে ৪৩১২টি ইবতেদায়ি মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত করার সারসংক্ষেপও অনুমোদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

সূত্র আরও জানায়, প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপিত এ সংক্রান্ত সারসংক্ষেপে বলা হয়, স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার আলাদা নীতিমালা-২০১৮ ইতিমধ্যে তৈরি করা হয়েছে। যদিও এমপিও নীতিমালায় স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা অন্তর্ভুক্ত নেই। তবু এ ধরনের প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলে ৩১০ কোটি ৯৭ লাখ ৭১ হাজার ২৮০ টাকা বছরে প্রয়োজন হবে।

এক মাস আগে গত ৮ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ প্রস্তাব চূড়ান্ত করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠায়। প্রধানমন্ত্রী এ প্রস্তাব ১২ জুন অনুমোদন করেন। এর ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের ৫ জন করে শিক্ষকসহ মোট ২১ হাজার ৫৬০ এমপিওভুক্ত হওয়ার পথ সুগম হয়েছে।

সূত্র জানায়, প্রস্তাব অনুযায়ী শিক্ষকরা মাসিক মাসোহারার পরিবর্তে জাতীয় বেতন স্কেলের বিভিন্ন গ্রেডে বেতন পাবেন। সেই অনুযায়ী মাদ্রাসার প্রধানরা ১১ কোডে ১২ হাজার ৫০০ টাকা করে পাবেন।

এ ছাড়া দেড় হাজার টাকা বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা এবং ২৫শ’ টাকা বৈশাখী ও ৬২৫০ টাকা উৎসব-ভাতা পাবেন। আর মৌলভীরা পাবেন ১৬ কোডে ৯ হাজার ৩শ’ টাকা করে। এ ছাড়া মাসে বেতনের সঙ্গে দেড় হাজার টাকা করে বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা এবং ১৮৬০ টাকা করে বৈশাখী ও ৪৬৫০ টাকা উৎসব-ভাতা পাবেন।

ইবতেদায়ি শিক্ষকদের অধিকার আদায়ে এই আন্দোলন করেছিল বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতি। সমিতির মহাসচিব কাজী মোখলেছুর রহমান শুক্রবার বলেন, ‘২৪ বছর অবহেলিত ও মানবেতর জীবনযাপন করলেও কোনো সরকার নজর দেয়নি। ২০০৯ সালের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাসোহারা বৃদ্ধি করেন। এরপর তিন ধাপে তা বাড়ানোর পর এবার বেতন স্কেলেই এমপিও দেয়ার যে উদ্যোগ নিলেন তা ইতিহাসে অক্ষয় হয়ে থাকবে।’

তিনি প্রধানমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, যেহেতু এমপিও হিসেবে বেতন-ভাতা দেয়া হবে, তাই তাদেরও ওই (এমপিও) নীতিমালায় ঢুকতে হবে। এ জন্য হয়তো ২০১৮ সালের এমপিও নীতিমালা সংশোধন করা হবে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কিছুটা সময় লাগতে পারে। তবে যেহেতু প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন হয়ে গেছে তাই সুবিধা পাওয়া সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

এমপিওভুক্তির তালিকায় সাড়ে ৭ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান : উল্লিখিত ৪৩১২টি মাদ্রাসাসহ মোট সাড়ে ৭ হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবার এমপিওভুক্ত হচ্ছে। এর মধ্যে বাকি ৩ হাজার মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল-মাদ্রাসা, উচ্চস্তরের কলেজ-মাদ্রাসা। এ ছাড়া আছে বিভিন্ন ধরনের কারিগরি প্রতিষ্ঠান।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এমপিওর তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর সারসংক্ষেপ আলাদাভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ। এর মধ্যে কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ-দুই ভাগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা তুলে ধরা হয়েছে। সে অনুযায়ী এমপিওর জন্য সব ধরনের (৪টি) শর্ত পূরণ করা মাদ্রাসা ৪৯৪টি। আর যদি স্বীকৃতির মেয়াদ বিবেচনা করা না হয় তাহলে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৫১টি।

অপরদিকে সব শর্ত বিবেচনায় নিলে এমপিওর জন্য বিবেচনায় আসা কারিগরি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৩৬টি। আর স্বীকৃতির মেয়াদের শর্ত শিথিল করলে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৪৫টি। সারসংক্ষেপে ৮ ধরনের মাদ্রাসা এবং ৬ ধরনের কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে।

অপরদিকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগও আলাদাভাবে এমপিওভুক্তির তালিকা তৈরি করছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এমপিওভুক্তির চার যোগ্যতার মানদণ্ড পূরণ করে যোগ্য হিসেবে বাছাই তালিকায় ইতিমধ্যে নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল ৬১৫টি, মাধ্যমিক স্কুল ৭৯৮টি, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ৯১টি ও ডিগ্রি কলেজ ৪৪টি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এ তালিকায় আরও আছে দাখিল মাদ্রাসা ৩৬২টি, আলিম মাদ্রাসা ১২২টি, ফাজিল মাদ্রাসা ৩৮টি এবং কামিল ২৯টি।

এসবের বাইরে আরও অন্তত ২শ’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষ বিবেচনায় তালিকাভুক্ত করা হবে বলে জানা গেছে। বিশেষ বিবেচনায় হাওর-বাঁওড়, চরাঞ্চল, পাহাড়িসহ দুর্গম এলাকার এবং নারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তালিকায় ঠাঁই পেতে পারে বলে জানিয়েছেন একজন অতিরিক্ত সচিব।

এ ছাড়া যেসব উপজেলা থেকে শর্ত অনুযায়ী কোনো প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত করা যায়নি সেসব উপজেলা থেকেও কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষ বিবেচনায় তালিকাভুক্ত করা হবে। এ লক্ষ্যে গত বুধ ও বৃহস্পতিবার দু’দিন মন্ত্রণালয়ে কয়েক দফা বৈঠক হয়েছে। তবে তালিকা তৈরির কাজ শেষ করতে আরও দু-একটি বৈঠক লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন কমিটির প্রধান অতিরিক্ত সচিব জাভেদ আহমেদ।

এমপিওভুক্তির চার শর্ত হচ্ছে- প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক স্বীকৃতি, শিক্ষার্থীর সংখ্যা, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এবং পরীক্ষায় পাসের হার। প্রতিটি মানদণ্ডের জন্য ২৫ নম্বর রাখা হয়।

উল্লেখ্য, এমপিওভুক্তির লক্ষ্যে গত আগস্টে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আবেদন নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তখন ৯ হাজার ৬১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবেদন করেছিল। এসব প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে লাগবে ৪ হাজার ৩৯০ কোটি ১২ লাখ ৫ হাজার টাকা। তবে যোগ্য বিবেচিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে যদি এমপিও দেয়া হয় তাহলে লাগবে ১ হাজার ২০৭ কোটি ৬৬ লাখ ৬৭ হাজার টাকা।

আর স্বীকৃতির মেয়াদ বিবেচনা না করে যদি এমপিও দেয়া হয় তাহলে লাগবে ১ হাজার ২১০ কোটি ৩৭ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। তবে শর্ত শিথিল করে আরও ২শ’ প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দেয়ার চিন্তা থাকায় মন্ত্রণালয় থেকে মোট ১ হাজার ২৪৭ কোটি টাকার প্রয়োজনীয়তার কথা অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে।

ইনক্রিমেন্ট ও বৈশাখী ভাতা : শিক্ষকদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে বিগত জাতীয় নির্বাচনের আগে শিক্ষকদের ইনক্রিমেন্ট (বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি) সরকারি চাকরিজীবীদের মতোই ৫ শতাংশ বাড়ানো ও বৈশাখী ভাতা দেয়ার আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী। সেটা ইতিমধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। কিন্তু এই বাড়তি ব্যয় বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে পরিচালন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। চলতি বাজেটে এই দুই সুবিধার স্বীকৃতি মিলেছে।

ডিজিটাল প্রাথমিক শিক্ষা : আইসিটি ব্যবহারের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ‘ডিজিটাল প্রাথমিক শিক্ষা’ শীর্ষক একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। ওই প্রকল্পের আওতায় ৫০৩টি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইন্টারঅ্যাকটিভ ক্লাসরুম তৈরি করা হবে। এ ছাড়া এতে পুরনো অন্যান্য কর্মসূচি চালু করার কথা বলা হয়েছে।

স্কুল ফিডিং : বর্তমানে দেশের কিছু উপজেলায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিস্কুট দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া কয়েকটি উপজেলায় দুপুরে রান্না করা খাবারও দেয়া হচ্ছে। এই কর্মসূচি সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে কাজ চলছে। এ লক্ষ্যে তৈরি হচ্ছে খসড়া নীতিমালা। সরকারি অর্থায়নে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানা গেছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে এ ব্যাপারেও নির্দেশনা এসেছে। এ ব্যাপারে বলা হয়, স্কুল ফিডিং কার্যক্রমে স্থানীয় ব্যক্তিসহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের (এনজিও) সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি এবং সামগ্রিক কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও সমন্বিতভাবে বাস্তবায়নের জন্য আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে জাতীয় স্কুল ফিডিং নীতি প্রণয়ন করা হবে। যার প্রক্রিয়া চলমান আছে।