টিউশনি করে স্নাতকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধা তালিকায় প্রথম সীমা

বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ প্রতিনিয়ত অভাব আর দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে আধার ঘরে আলোর রোশনাই ছড়ালেন কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার এক হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে সীমা আক্তার। ২০১৭ সালের (২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত) ডিগ্রী (পাস) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করেছেন তিনি।

কিশোরগঞ্জ জেলার ঐতিহ্যবাহী হোসেনপুর আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজের বিএসএস শাখার শিক্ষার্থী সীমা আক্তারের এই তাক লাগানো ফলাফলে তার বাড়িতে বইছে আনন্দের ফল্গুধারা। পাশাপাশি উচ্ছ্বসিত তার শিক্ষক-শিক্ষিকা ও এলাকাবাসী।

সীমা উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ গোবিন্দপুর গ্রামের চাঁন মিয়া ও রুকুন্নাহার দম্পতির সন্তান। সাত ভাই-বোনের মধ্যে সীমা তৃতীয়। বাবা চাঁন মিয়া পুরাতন কাপড়ের ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী।

অভাবের সংসারে আর্থিক সংকট ও প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন সীমা। নিজের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় টিউশনি করে পড়ালেখার খরচ চালিয়েছেন সীমা।

অবশেষে স্নাতক পরীক্ষায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করার মধ্য দিয়ে নিজের অধ্যাবসায় ও পরিশ্রমের সফলতা লাভ করেছেন।

সীমা স্থানীয় গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৩.৭৫ ও হোসেনপুর মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৪.৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।

তার স্বপ্ন ছিল ইংরেজিতে অনার্স পড়ার। কিন্তু আর্থিক অসচ্ছলতা ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার জন্য অনার্সে পড়ার স্বপ্ন পূরণ হয়নি তার।

দরিদ্র বাবার ইচ্ছায় হোসেনপুর মহিলা ডিগ্রী কলেজে পাস কোর্সে বিএসএস শাখায় ভর্তি হন তিনি।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী (পাস) পরীক্ষায় তার রোল নং-৭৩৬৯৫৩৬, রেজিঃ নং-১৪১০২২৩৭২৬৪। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর প্রকাশিত ফলাফলে সীমা আক্তার সিজিপিএ ৪ এর মধ্যে ৩.৭৫ অর্জন করে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন।

মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আগামী ১০ই ফেব্রুয়ারী সীমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা ও পদক প্রদান করবে।

সীমার প্রিয় শিক্ষক অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক আশরাফ আহমেদ জানান, সীমা নিয়মিত ছাত্রী ও পড়াশোনায় খুবই মনোযোগী ছিল। সে এত ভাল রেজাল্ট করায় আমরাও খুবই আনন্দিত।

স্বভাবতই সীমার এমন সাফল্যে উচ্ছ্বসিত তার মা-বাবা। তারা বলেন, “আমাদের মাইয়া হারারাত জাইগ্যা লেহাপড়া করত। দীর্ঘ ১২ মাইল রাস্তা পায় হাইট্যা প্রত্যেক দিন কলেজে যাইত। তার সব চাওয়া আমরা পূরণ করতে পারি নাই। আল্লায় মুখ তুইল্লা তাকায়ছে।”

হোসেনপুর আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. মোসলেম উদ্দিন খান বলেন, সীমা কলেজের নিয়মিত একজন ছাত্রী। তার এ সাফল্যে শিক্ষক পর্ষদ ও কলেজ পরিচালনা পর্ষদসহ আমরা খুবই আনন্দিত।

ফলাফল জানার পর এক প্রতিক্রিয়ায় সীমা আক্তার বলেন, কলেজের অধ্যক্ষ ও শিক্ষকগণের অনুপ্রেরণা ও দিকনির্দেশনা মোতাবেক অধ্যয়ন করায় এত ভালো রেজাল্ট করা সম্ভব হয়েছে। ভবিষ্যতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা হয়ে দেশের সেবায় আত্মনিযোগ করার ইচ্ছা রয়েছে।

এ জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন সীমা।

Print Friendly, PDF & Email

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর