ঢাকা , রবিবার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ৩০ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফিলিস্তিনের পশুরাও রেহাই পাচ্ছে না ইসরায়েলি বর্বরতা থেকে

বোবা প্রাণিরা তো আর আর্তনাদ করতে পারে না! তাদের রয়েছে শুধু অসহায় চাহনি। তারা চেনে না বোমা, মিসাইল। মানুষের দয়ায় তাদের বেঁচে থাকা। কিন্তু ফিলিস্তিনের মাটিতে জন্ম নেওয়া প্রাণিগুলোর ওপর নেমে এসেছে পৈশাচিক বর্বরতা। কারণ, ইসরায়েলি দখলদাররা নির্বিচারে গাজার বুকে অনবরত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। সেই হামলায় মানুষ হত্যার পাশাপাশি হত্যা করা হচ্ছে অসহায় প্রাণিগুলোকেও।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ গণহত্যা চালাচ্ছে দখলদার ইসরেয়েলি বাহিনী। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে অসহায় নারী ও শিশুদের আর্তনাদ।
 যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে গাজা ও পশ্চিম তীরের হাজার হাজার মানুষ। প্রাণ নিয়ে ছুটে গেছেন নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে। এর ফলে ঘরছাড়া হয়ে যায় অসংখ্যা পোষা প্রাণীও।
আল অ্যারাবিয়া নিউজের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী কয়েক হাজার কুকুর, বিড়াল, ঘোড়া ও গাধা হারিয়েছে তাদের মনিব। গাজায় তিনটি বিড়ালের শেল্টার ছিল যেগুল ধ্বংস হয়েছে ইসরায়েলের বোমার আঘাতে।
জাইতুন শহরের একটি শেল্টার এক সময় প্রায় ৪০০ এরও বেশি কুকুরের আশ্রয়স্থল ছিল, সেটিও এখন পরিত্যক্ত। শেল্টারের একজন সেচ্ছা সেবক জানান, যখন বোমা বর্ষণ শুরু হয় তখন তারা শেল্টারের দড়জা খুলে দেন যেন কুকুরগুলো অন্তত পালিয়ে প্রাণে বাঁচতে পারে। ইসরায়েলি বাহিনী সবাইকে সরে যেতে নির্দেশ দিলে তাদের এক সহকর্মী কয়েকটি কুকুর নিয়ে সেখানেই থেকে যান। কিন্তু যখন আবারও হামলা শুরু হয় তখন সেই কুকুর গুলোকে তিনি আর বাঁচাতে পারেননি।
ফিলিস্তিনে বহু পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য মারা গেলেও তাদের সাথে কেবল রয়ে গেছে পোষা বিড়াল অথবা কুকুর। গাজা ও পশ্চিম তীরের বেওয়ারিশ কুকুর ও বিড়ালের অবস্থা আরও করুন। ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলায় প্রতিনিয়ত মারা পড়ছে এসব প্রাণী। তবে সবচেয়ে বেশি কষ্ট করছে হামলায় আহত হওয়া প্রাণিগুলো। যেখানে মানুষই চিকিৎসা পাচ্ছে না, সেখানে এসব প্রাণিদের চিকিৎসা তো বিলাসিতা।
যুদ্ধের কারণে ফিলিস্তিনে খাবার সংকটও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রচন্ড খাদ্যাভাবে মানুষের পাশাপাশি কষ্ট পাচ্ছে কুকুর-বিড়ালরাও। ফলে অপুষ্টিজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তারা। এমন অবস্থায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে পশু চিকিৎসা সেবা। কিন্তু পশু হাসপাতালগুলোও এখন মিশে গেছে মাটির সঙ্গে।
এমন মানবেতর পরিস্থিতিতেও ব্যক্তিগত উদ্যোগে এগিয়ে এসেছেন অনেকে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ধ্বংসস্তুপের ফাঁকে ফাঁকে তারা খুঁজে বেড়াচ্ছেন বেঁচে থাকা অসহায় বোবা প্রাণিদের। হেল্প এনিম্যাল গাজা, সালাম এনিম্যাল কেয়ার, এনিম্যাল ফ্রেন্ডস শেল্টার গাজাসহ বেশ কিছু সংস্থা নিজেদের উদ্যোগে সীমিত আকারে রাস্তায় ঘুরতে থাকা প্রাণিদের খাবারের ব্যবস্থা করছে। নিজেদের সাধ্যমত আহত ও অসুস্থ প্রাণিদের জন্য করছে চিকিৎসার ব্যবস্থা।
গাজার শিশুদের কান্নার শব্দ যেমন করুণ, তেমনই করুণ এসব বোবা প্রাণিদের অসহায় চাহনি।
Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

ফিলিস্তিনের পশুরাও রেহাই পাচ্ছে না ইসরায়েলি বর্বরতা থেকে

আপডেট টাইম : ০৪:৩৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৫
বোবা প্রাণিরা তো আর আর্তনাদ করতে পারে না! তাদের রয়েছে শুধু অসহায় চাহনি। তারা চেনে না বোমা, মিসাইল। মানুষের দয়ায় তাদের বেঁচে থাকা। কিন্তু ফিলিস্তিনের মাটিতে জন্ম নেওয়া প্রাণিগুলোর ওপর নেমে এসেছে পৈশাচিক বর্বরতা। কারণ, ইসরায়েলি দখলদাররা নির্বিচারে গাজার বুকে অনবরত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। সেই হামলায় মানুষ হত্যার পাশাপাশি হত্যা করা হচ্ছে অসহায় প্রাণিগুলোকেও।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ গণহত্যা চালাচ্ছে দখলদার ইসরেয়েলি বাহিনী। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে অসহায় নারী ও শিশুদের আর্তনাদ।
 যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছে গাজা ও পশ্চিম তীরের হাজার হাজার মানুষ। প্রাণ নিয়ে ছুটে গেছেন নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে। এর ফলে ঘরছাড়া হয়ে যায় অসংখ্যা পোষা প্রাণীও।
আল অ্যারাবিয়া নিউজের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী কয়েক হাজার কুকুর, বিড়াল, ঘোড়া ও গাধা হারিয়েছে তাদের মনিব। গাজায় তিনটি বিড়ালের শেল্টার ছিল যেগুল ধ্বংস হয়েছে ইসরায়েলের বোমার আঘাতে।
জাইতুন শহরের একটি শেল্টার এক সময় প্রায় ৪০০ এরও বেশি কুকুরের আশ্রয়স্থল ছিল, সেটিও এখন পরিত্যক্ত। শেল্টারের একজন সেচ্ছা সেবক জানান, যখন বোমা বর্ষণ শুরু হয় তখন তারা শেল্টারের দড়জা খুলে দেন যেন কুকুরগুলো অন্তত পালিয়ে প্রাণে বাঁচতে পারে। ইসরায়েলি বাহিনী সবাইকে সরে যেতে নির্দেশ দিলে তাদের এক সহকর্মী কয়েকটি কুকুর নিয়ে সেখানেই থেকে যান। কিন্তু যখন আবারও হামলা শুরু হয় তখন সেই কুকুর গুলোকে তিনি আর বাঁচাতে পারেননি।
ফিলিস্তিনে বহু পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য মারা গেলেও তাদের সাথে কেবল রয়ে গেছে পোষা বিড়াল অথবা কুকুর। গাজা ও পশ্চিম তীরের বেওয়ারিশ কুকুর ও বিড়ালের অবস্থা আরও করুন। ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলায় প্রতিনিয়ত মারা পড়ছে এসব প্রাণী। তবে সবচেয়ে বেশি কষ্ট করছে হামলায় আহত হওয়া প্রাণিগুলো। যেখানে মানুষই চিকিৎসা পাচ্ছে না, সেখানে এসব প্রাণিদের চিকিৎসা তো বিলাসিতা।
যুদ্ধের কারণে ফিলিস্তিনে খাবার সংকটও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রচন্ড খাদ্যাভাবে মানুষের পাশাপাশি কষ্ট পাচ্ছে কুকুর-বিড়ালরাও। ফলে অপুষ্টিজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তারা। এমন অবস্থায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে পশু চিকিৎসা সেবা। কিন্তু পশু হাসপাতালগুলোও এখন মিশে গেছে মাটির সঙ্গে।
এমন মানবেতর পরিস্থিতিতেও ব্যক্তিগত উদ্যোগে এগিয়ে এসেছেন অনেকে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ধ্বংসস্তুপের ফাঁকে ফাঁকে তারা খুঁজে বেড়াচ্ছেন বেঁচে থাকা অসহায় বোবা প্রাণিদের। হেল্প এনিম্যাল গাজা, সালাম এনিম্যাল কেয়ার, এনিম্যাল ফ্রেন্ডস শেল্টার গাজাসহ বেশ কিছু সংস্থা নিজেদের উদ্যোগে সীমিত আকারে রাস্তায় ঘুরতে থাকা প্রাণিদের খাবারের ব্যবস্থা করছে। নিজেদের সাধ্যমত আহত ও অসুস্থ প্রাণিদের জন্য করছে চিকিৎসার ব্যবস্থা।
গাজার শিশুদের কান্নার শব্দ যেমন করুণ, তেমনই করুণ এসব বোবা প্রাণিদের অসহায় চাহনি।