ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাওরে হাহাকার

কৃষকের ঘরে খাবার নেই। হাওরের এক মাত্র ফসল বোরো ধান হারিয়ে কৃষকদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে ধানক্ষেত, মারা পড়েছে জলের মাছ। মারা পড়েছে খামারের হাঁস। আর গরুর খাদ্য না থাকায় পানির দরে তাও বিক্রি করে দিয়েছে অনেক কৃষক। হাওরের বেশিরভাগ কৃষক সরকারি-বেসরকারি ও মহাজনি ঋণের জালে আবদ্ধ। বেঁঁচে থাকার তাগিদে ও গো-খাদ্যের অভাবে প্রায় সব কৃষক গৃহপালিত গবাদি পশু কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাওর পারে অসহায়ের মতো বসে বিলাপ করাই যেন তাদের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি ঘোষণায় সামান্য সহায়তায় কয়েক দিন চললেও সারাবছর পরিবারের লোকজন কীভাবে খেয়ে-পরে বাঁচবে সে প্রশ্নের কোনো উত্তর জানা নেই । কাঁচা সব ধান জমি তলিয়ে গেছে। খড় না থাকায় গরুকে খাওয়াতে পারছি না। এজন্য গরু দুটি বিক্রি করে দেব।’ শুধু সুনামগঞ্জই নয় কিশোরগঞ্জে , নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার ওসিলেট হাওরের কৃষকদের-সবারই এখন এক অবস্থা। সরকারি হিসাবে হাওরের আগাম বন্যায় ২ লাখ হেক্টর জমির প্রায় ৬ লাখ টন চালের উপযোগী ধান নষ্ট হয়েছে, ১২৭৬ টন মাছ মারা গেছে এবং কয়েক হাজার হাঁস মারা গেছে।  সরকার থেকে সাহায্যের ঘোষণা দেওয়া হলেও হাওরপারের কৃষকরা সারাবছর কীভাবে পার করবে সে চিন্তায়ই দিশেহারা তারা। অন্যদিকে জেলায় গতকাল দুপুরে মাছ ধরার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছে জেলা মত্স্য অফিস। বেশ কয়েকটি এলাকার অনেকেই ঘরে খাবার না থাকায় দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছেন। এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিলেন হাজার টাকা। মনে করেছিলেন ধান ওঠার পরই সব টাকা শোধ করে দেবেন। কিন্তু ফসল ডুবে যাওয়ায় তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। কান্নাজড়িত । তা ছাড়া তো কোনো উপায় ছিল না।গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে হাওরে অ্যামোনিয়া গ্যাস কমে যাওয়ায় মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। আগের সপ্তাহে হাওরের পানিতে অ্যামোনিয়া গ্যাসের পরিমাণ ছিল ১.১। প্রতিদিন পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ছে। এছাড়া হাওরের মরা মাছ না খেতে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। ‘হাওর বাঁচাও’ জেলার সব বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক সরকারি সহায়তা ও পুনর্বাসন কার্যক্রম ছাড়া কিছুতেই বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। যদিও সরকার কৃষকদের সহায়তার জন্য কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আমরা মনে করি সরকারের এই সাহায্য পর্যাপ্ত নয়। এ অবস্থায় কৃষকদের কাছ থেকে সরকারি খাজনা আদায় স্থগিত করা ও হাওরের ভাসান পানিতে মাছ ধরার সুযোগ করে দেওয়া দরকার।

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

জনপ্রিয় সংবাদ

হাওরে হাহাকার

আপডেট টাইম : ০৬:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ এপ্রিল ২০১৭

কৃষকের ঘরে খাবার নেই। হাওরের এক মাত্র ফসল বোরো ধান হারিয়ে কৃষকদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে ধানক্ষেত, মারা পড়েছে জলের মাছ। মারা পড়েছে খামারের হাঁস। আর গরুর খাদ্য না থাকায় পানির দরে তাও বিক্রি করে দিয়েছে অনেক কৃষক। হাওরের বেশিরভাগ কৃষক সরকারি-বেসরকারি ও মহাজনি ঋণের জালে আবদ্ধ। বেঁঁচে থাকার তাগিদে ও গো-খাদ্যের অভাবে প্রায় সব কৃষক গৃহপালিত গবাদি পশু কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত হাওর পারে অসহায়ের মতো বসে বিলাপ করাই যেন তাদের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি ঘোষণায় সামান্য সহায়তায় কয়েক দিন চললেও সারাবছর পরিবারের লোকজন কীভাবে খেয়ে-পরে বাঁচবে সে প্রশ্নের কোনো উত্তর জানা নেই । কাঁচা সব ধান জমি তলিয়ে গেছে। খড় না থাকায় গরুকে খাওয়াতে পারছি না। এজন্য গরু দুটি বিক্রি করে দেব।’ শুধু সুনামগঞ্জই নয় কিশোরগঞ্জে , নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার ওসিলেট হাওরের কৃষকদের-সবারই এখন এক অবস্থা। সরকারি হিসাবে হাওরের আগাম বন্যায় ২ লাখ হেক্টর জমির প্রায় ৬ লাখ টন চালের উপযোগী ধান নষ্ট হয়েছে, ১২৭৬ টন মাছ মারা গেছে এবং কয়েক হাজার হাঁস মারা গেছে।  সরকার থেকে সাহায্যের ঘোষণা দেওয়া হলেও হাওরপারের কৃষকরা সারাবছর কীভাবে পার করবে সে চিন্তায়ই দিশেহারা তারা। অন্যদিকে জেলায় গতকাল দুপুরে মাছ ধরার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছে জেলা মত্স্য অফিস। বেশ কয়েকটি এলাকার অনেকেই ঘরে খাবার না থাকায় দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছেন। এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিলেন হাজার টাকা। মনে করেছিলেন ধান ওঠার পরই সব টাকা শোধ করে দেবেন। কিন্তু ফসল ডুবে যাওয়ায় তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। কান্নাজড়িত । তা ছাড়া তো কোনো উপায় ছিল না।গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে হাওরে অ্যামোনিয়া গ্যাস কমে যাওয়ায় মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। আগের সপ্তাহে হাওরের পানিতে অ্যামোনিয়া গ্যাসের পরিমাণ ছিল ১.১। প্রতিদিন পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়ছে। এছাড়া হাওরের মরা মাছ না খেতে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। ‘হাওর বাঁচাও’ জেলার সব বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক সরকারি সহায়তা ও পুনর্বাসন কার্যক্রম ছাড়া কিছুতেই বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। যদিও সরকার কৃষকদের সহায়তার জন্য কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আমরা মনে করি সরকারের এই সাহায্য পর্যাপ্ত নয়। এ অবস্থায় কৃষকদের কাছ থেকে সরকারি খাজনা আদায় স্থগিত করা ও হাওরের ভাসান পানিতে মাছ ধরার সুযোগ করে দেওয়া দরকার।