বাঙালী কণ্ঠ ডেস্কঃ ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে করণীয় এবং পানি নিষ্কাশন প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের প্রতিনিধিরা এবারের বর্ষায় জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
উল্লেখ্য, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং বিআরটি প্রকল্পের উন্নয়ন কাজের জন্য ইতিমধ্যেই রাজধানীর অনেক স্থানে পানি নিষ্কাশন ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক অকেজো হয়ে পড়েছে।
এ প্রেক্ষাপটে সরকারি প্রতিনিধিদের এ আশঙ্কা যে অমূলক নয় তা বলাই বাহুল্য। বস্তুত জলাবদ্ধতায় প্রতিবছর রাজধানীর জনজীবন স্থবির হয়ে পড়লেও এ থেকে উত্তরণের কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
বর্ষা মৌসুমে টানা বৃষ্টির ফলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থাই শুধু ভেঙে পড়ে না, পাশাপাশি রাস্তায় আটকে পড়েন শ্রমজীবী-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। মূলত সমন্বয়হীনতা, পরিকল্পনাহীনতা এবং অদূরদর্শী পদক্ষেপের কারণেই ঢাকা শহরে জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।
এর সঙ্গে যোগ হয়েছে নগরবাসীর অসচেতনতা। এই বাস্তবতা আমাদের সামনে যে সত্যটি তুলে ধরছে তা হল- উন্নয়নের নামে প্রতিবছর হাজার কোটি টাকা ব্যয় হলেও এর কোনো সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী।
রাজধানীর ২৬টি খাল, তিন হাজার কিলোমিটার ড্রেন ও জলাশয়গুলো পৌনঃপুনিকভাবে আবর্জনায় ভরাট হচ্ছে এবং অবধারিতভাবে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে।
নগরীর পানি নিষ্কাশনের মূল দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসা এবং ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের। দুই সিটি কর্পোরেশন ও ঢাকা ওয়াসার কার্যক্রমে কেবল সমন্বয়হীনতা নয়, পরিকল্পনা ও দূরদর্শিতার অভাবও লক্ষ করা যায়।
২০১১ সালে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন দু’ভাগ করার সময় বলা হয়েছিল, উন্নত নাগরিক সেবা প্রদানই বিভাজনের মূল্য উদ্দেশ্য। কিন্তু সময় যত গড়াচ্ছে, নাগরিকদের ভোগান্তির মাত্রা হ্রাসের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বর্তমানে দুই ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে দু’জন নির্বাচিত মেয়র রয়েছেন। তাদের সঙ্গে রয়েছেন কাউন্সিলররা।
তাদের উচিত সমন্বিত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নত করা এবং তা সার্বক্ষণিকভাবে পরিষ্কার রাখা। একই সঙ্গে আরও একটি কাজ করা জরুরি- রাজধানীর চারপাশের নদ-নদীগুলো সংস্কার করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা এবং দখলকৃত খালগুলো পুনরুদ্ধার করা।
নয়তো বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার কবল থেকে মুক্তি মিলবে না রাজধানীবাসীর। এবারের বর্ষায় জলাবদ্ধতা যাতে প্রকট আকার ধারণ করতে না পারে, সে লক্ষ্যে আগাম প্রস্তুতির পাশাপাশি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে স্থায়ীভাবে এ সমস্যা নিরসনের উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।