ঢাকা , সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিজ্ঞানী এ পি জে আবদুল কালামের চিরবিদায়

বিখ্যাত ভারতীয় বিজ্ঞানী ও রাজনীতিবিদ এ পি জে আবদুল কালাম। ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। আজকের এই দিনে, অর্থাৎ ২০১৫ সালের ২৭ জুলাই পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন তিনি।

আবুল পাকির জয়নুল-আবেদীন আবদুল কালামের জন্ম ১৯৩১ সালের ৫ অক্টোবর, ভারতের তামিলনাড়ুর প্রত্যন্ত এলাকা রামেশ্বরমে। বাবা আবুল পাকির জয়নুলাবেদিন ছিলেন নৌকামালিক ও স্থানীয় মসজিদের ইমাম। রামেশ্বরম ও ধনুষ্কোডির মধ্যে হিন্দু তীর্থযাত্রীদের নৌকায় পারাপার করাতেন। মা অশিয়াম্মা গৃহবধূ। দুই বেলা খাবার জোগানোই ছিল মুশকিল পরিবারটির। তবে এর মধ্যেই পড়ালেখা চালিয়ে যান প্রচণ্ড মেধাবী এ পি জে আবদুল কালাম।

পাখিদের ওড়া দেখে উড়োজাহাজের প্রতি আগ্রহ জন্মে তাঁর মনে। তারপর ব্রিটিশ যুদ্ধবিমান নিয়ে পত্রিকায় একটি লেখা পড়ে উড়োজাহাজ চালনাকে জীবনের লক্ষ্য স্থির করলেন।

ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞান ও গণিতে তাঁর দক্ষতা প্রমাণ করেন তিনি।  সেন্ট জোসেফ কলেজে পড়ালেখা করার পর মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তবে যুদ্ধবিমানের পাইলট হওয়ার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যায় অল্পের জন্য ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্সের পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে মনোনীত হতে ব্যর্থ হওয়ায়। ১৯৫৮ সালে ডিফেন্স  রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনে (ডিআরডিও) জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক সহকারী হিসেবে যোগদান করেন এ পি জে আবদুল কালাম।

গুয়াহাটির ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে বক্তব্য রাখছেন এ পি জে আবদুল কালাম১৯৬৯ সালে নবগঠিত ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন বা  ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থায় (ইসরো) যোগ দেন এ পি জে আবদুল কালাম। ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও উৎক্ষেপক যান রকেটের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এ সময়। পরিচালক হিসেবে ডিআরডিওতে ফিরে এসেও ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নয়নে কাজ করেন। এরপর তিনি ১৯৯২ সালে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা হন। পারমাণবিক পরীক্ষা চালানোর অবস্থায় ভারতকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য এ সময় কাজ করেন তিনি।

১৯৯৮ সালের মে মাসে রাজস্থানের মরুভূমিতে পোখরান-২ নামের পারমাণবিক পরীক্ষা চালানোর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল এ পি জে আবদুল কালামের। দেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষায় অবদানের জন্য একজন জাতীয় বীরের আসনেই তাঁকে বসায় সাধারণ মানুষ।  বিশ্বজুড়ে ‘মিসাইল ম্যান অব ইন্ডিয়া’ নামেও পরিচিতি পান।

২০০২ সালে বিজেপির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের সমর্থনে ভারতের ১১তম রাষ্ট্রপতি হন এ পি জে আবদুল কালাম।

জনগণের রাষ্ট্রপতি হিসেবে পরিচিত কালাম পাঁচ বছরের মেয়াদে তরুণদের নিয়ে অনেক কাজ করেন। তাঁর সততা মুগ্ধ করে সংস্পর্শে যাঁরা এসেছেন তাঁদের সবাইকে। এ পি জে আবদুল কালামের ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে তাঁকে এমটিভি ২০০৩ এবং ২০০৬ সালে ইয়ুথ আইকন অব দ্য ইয়ার পুরস্কারের জন্য মনোনীত করে।

এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন এ পি জে আবদুল কালাম২০০৭ সালে প্রেসিডেন্ট অফিস ছাড়ার পর, কালাম বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একটি সহানুভূতিশীল সমাজ তৈরির লক্ষ্যে ২০১১ সালে ‘আমি কী দিতে পারি’ বা ‘হোয়্যাট কেন আই গিভ’ প্রচারণা শুরু করেন। ভারতের বিভিন্ন এলাকা চষে বেড়িয়েছেন তরুণ শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে, স্বপ্ন দেখাতে।

২০১৫ সালের ২৭ জুলাই নিঃসন্দেহে ভারতবাসীর জন্য একটি হৃদয়বিদারক দিন। কারণ এদিন মেঘালয়ের শিলংয়ের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টে বক্তৃতা দেওয়ার সময় বড় ধরনের একটি হার্ট অ্যাটাক হয় আবদুল কালামের। হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ওই সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।

৪০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেটসহ পদ্মভূষণ (১৯৮১), পদ্মবিভূষণ (১৯৯০) এবং ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ভারতরত্নে (১৯৯৭) ভূষিত হন এ পি জে আবদুল কালাম। ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর আত্মজীবনী উইংস অব ফায়ার।

সূত্র: বায়োগ্রাফি ডট কম, ব্রিটানিকা ডট কম

Tag :
আপলোডকারীর তথ্য

Bangal Kantha

ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিজ্ঞানী এ পি জে আবদুল কালামের চিরবিদায়

আপডেট টাইম : ০৭:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

বিখ্যাত ভারতীয় বিজ্ঞানী ও রাজনীতিবিদ এ পি জে আবদুল কালাম। ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। আজকের এই দিনে, অর্থাৎ ২০১৫ সালের ২৭ জুলাই পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন তিনি।

আবুল পাকির জয়নুল-আবেদীন আবদুল কালামের জন্ম ১৯৩১ সালের ৫ অক্টোবর, ভারতের তামিলনাড়ুর প্রত্যন্ত এলাকা রামেশ্বরমে। বাবা আবুল পাকির জয়নুলাবেদিন ছিলেন নৌকামালিক ও স্থানীয় মসজিদের ইমাম। রামেশ্বরম ও ধনুষ্কোডির মধ্যে হিন্দু তীর্থযাত্রীদের নৌকায় পারাপার করাতেন। মা অশিয়াম্মা গৃহবধূ। দুই বেলা খাবার জোগানোই ছিল মুশকিল পরিবারটির। তবে এর মধ্যেই পড়ালেখা চালিয়ে যান প্রচণ্ড মেধাবী এ পি জে আবদুল কালাম।

পাখিদের ওড়া দেখে উড়োজাহাজের প্রতি আগ্রহ জন্মে তাঁর মনে। তারপর ব্রিটিশ যুদ্ধবিমান নিয়ে পত্রিকায় একটি লেখা পড়ে উড়োজাহাজ চালনাকে জীবনের লক্ষ্য স্থির করলেন।

ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞান ও গণিতে তাঁর দক্ষতা প্রমাণ করেন তিনি।  সেন্ট জোসেফ কলেজে পড়ালেখা করার পর মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তবে যুদ্ধবিমানের পাইলট হওয়ার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যায় অল্পের জন্য ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্সের পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে মনোনীত হতে ব্যর্থ হওয়ায়। ১৯৫৮ সালে ডিফেন্স  রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনে (ডিআরডিও) জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক সহকারী হিসেবে যোগদান করেন এ পি জে আবদুল কালাম।

গুয়াহাটির ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে বক্তব্য রাখছেন এ পি জে আবদুল কালাম১৯৬৯ সালে নবগঠিত ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন বা  ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থায় (ইসরো) যোগ দেন এ পি জে আবদুল কালাম। ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও উৎক্ষেপক যান রকেটের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এ সময়। পরিচালক হিসেবে ডিআরডিওতে ফিরে এসেও ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নয়নে কাজ করেন। এরপর তিনি ১৯৯২ সালে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা হন। পারমাণবিক পরীক্ষা চালানোর অবস্থায় ভারতকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য এ সময় কাজ করেন তিনি।

১৯৯৮ সালের মে মাসে রাজস্থানের মরুভূমিতে পোখরান-২ নামের পারমাণবিক পরীক্ষা চালানোর পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল এ পি জে আবদুল কালামের। দেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষায় অবদানের জন্য একজন জাতীয় বীরের আসনেই তাঁকে বসায় সাধারণ মানুষ।  বিশ্বজুড়ে ‘মিসাইল ম্যান অব ইন্ডিয়া’ নামেও পরিচিতি পান।

২০০২ সালে বিজেপির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের সমর্থনে ভারতের ১১তম রাষ্ট্রপতি হন এ পি জে আবদুল কালাম।

জনগণের রাষ্ট্রপতি হিসেবে পরিচিত কালাম পাঁচ বছরের মেয়াদে তরুণদের নিয়ে অনেক কাজ করেন। তাঁর সততা মুগ্ধ করে সংস্পর্শে যাঁরা এসেছেন তাঁদের সবাইকে। এ পি জে আবদুল কালামের ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে তাঁকে এমটিভি ২০০৩ এবং ২০০৬ সালে ইয়ুথ আইকন অব দ্য ইয়ার পুরস্কারের জন্য মনোনীত করে।

এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন এ পি জে আবদুল কালাম২০০৭ সালে প্রেসিডেন্ট অফিস ছাড়ার পর, কালাম বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একটি সহানুভূতিশীল সমাজ তৈরির লক্ষ্যে ২০১১ সালে ‘আমি কী দিতে পারি’ বা ‘হোয়্যাট কেন আই গিভ’ প্রচারণা শুরু করেন। ভারতের বিভিন্ন এলাকা চষে বেড়িয়েছেন তরুণ শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে, স্বপ্ন দেখাতে।

২০১৫ সালের ২৭ জুলাই নিঃসন্দেহে ভারতবাসীর জন্য একটি হৃদয়বিদারক দিন। কারণ এদিন মেঘালয়ের শিলংয়ের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টে বক্তৃতা দেওয়ার সময় বড় ধরনের একটি হার্ট অ্যাটাক হয় আবদুল কালামের। হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ওই সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।

৪০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেটসহ পদ্মভূষণ (১৯৮১), পদ্মবিভূষণ (১৯৯০) এবং ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ভারতরত্নে (১৯৯৭) ভূষিত হন এ পি জে আবদুল কালাম। ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর আত্মজীবনী উইংস অব ফায়ার।

সূত্র: বায়োগ্রাফি ডট কম, ব্রিটানিকা ডট কম