অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার অর্থনৈতিক সংস্কার। এ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের পাশে থাকতে চায় দেশটি। সংস্কারের বিষয়ে যেসব খাত চিহ্নিত করা হয়েছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। বিশেষ করে আর্থিক ও রাজস্ব খাতের সংস্কারের পাশাপাশি পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সহযোগিতা করবে যুক্তরাষ্ট্র।
দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, শ্রম পরিবেশ, মানবাধিকার সুরক্ষা ও রোহিঙ্গা সংকটসহ একাধিক ইস্যুতে সহযোগিতা করা হবে বলে জানিয়েছে দেশটি। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার দুই মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো দ্বিপক্ষীয় সফরে এসে বাংলাদেশকে ২০ কোটি ডলারেরও বেশি উন্নয়ন সহযোগিতা দেওয়ার চুক্তি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে প্রতিনিধি দলের সাক্ষাতে রাষ্ট্র পুনর্গঠন ও বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা অন্তর্বর্তী সরকার গৃহীত সংস্কার উদ্যোগের একটি রূপরেখা বর্ণনা করে বলেছে, ভোট কারচুপি প্রতিরোধ, বিচার বিভাগ, পুলিশ, বেসামরিক প্রশাসন, দেশের দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা এবং সংবিধান সংশোধনের প্রয়াসে এ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার কয়েক সপ্তাহ পরই ছয়টি কমিশন গঠন করেছে। আগের স্বৈরাচারী শাসনের সঙ্গে জড়িত দুর্নীতিবাজ ব্যক্তিদের চুরি করা সম্পদ ফেরত আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মার্কিন অর্থ দফতরের সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দলটি গত রোববার ঢাকায় দিনভর ব্যস্ত সময় পার করে। দলটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা মো. সালেহউদ্দিন আহমেদ, পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে দেখা করেন। এর আগে গত শনিবার ঢাকায় নেমে দলটি বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক পুরোনো। যেকোনো অর্থনৈতিক সহায়তায় যুক্তরাষ্ট্র বরাবর বাংলাদেশের পাশে থেকেছে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের সহায়তায় দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রেখেছে। ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হওয়ায় এই প্রথম যুক্তরাষ্টের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করল।
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি, জলবায়ু পরিবর্তন, মানবিক, উদ্বাস্তু, জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা, সন্ত্রাস দমন, সামুদ্রিক ও অন্যান্য নিরাপত্তা ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে অভিহিত হয়েছে। এ দেশে মার্কিন বিনিয়োগের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে পরিবর্তিত সময়ে সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে দেশটি। বিগত সরকারের ফেলে যাওয় ভঙ্গুর অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং রাষ্ট্র সংস্কারে বাংলাদেশের পাশে থাকার অঙ্গীকার করেছে দলটি। এটা অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য বলে দেশের মানুষ মনে করছেন। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান ক্রেতা। এর পরিমাণও বাড়ছে দিন দিন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত কয়েকটি দেশ বাংলাদেশকে আশ্বাস্ত করে বলেছে, তারা ক্রয়াদেশ বাতিল করবে না। নতুন ক্রয়াদেশও আসতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের এ সফরকে ঘিরে সংস্কারের পালে হাওয়া আরও জোরদার হবে। দেশের মানুষ যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছে, তা সংস্কারের পর সফলভাবে এগিয়ে যাবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।